আমার দেশ-এর দশম বর্ষপূর্তি আজ

লিখেছেন লিখেছেন মাজহারুল ইসলাম ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৭:১৭:৪১ সন্ধ্যা



দৈনিক আমার দেশ-এর দশম বর্ষপূর্তি আজ । এক দশক পূর্ণ হয়েছে এমন এক সময়ে যখন পত্রিকার ছাপা বন্ধ রয়েছে ফ্যাসিস্ট সরকারের রোষানলে পড়ে। গত বছরের (২০১৩ সাল) ১১ এপ্রিল সরকার জোরপূর্বক আমার দেশ এর প্রেস তালা মেরে দেয়। আইনের তোয়াক্কা না করে স্কাইপ কেলেঙ্কারি প্রকাশের অভিযোগে সার্চ ওয়ারেন্টের নামে আমার দেশ এর প্রেসে পুলিশ তল্লাশি চারায়। ভবিষ্যতে আরও তল্লাশির প্রয়োজন পড়তে পারে-এই অজুহাত দিয়ে প্রেস তালা মেরে রেখে যায়। প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন্স অ্যাক্ট অনুযায়ী আমরা বিকল্প প্রেস আল-ফালাহ থেকে দু’দিন পত্রিকা ছাপালেও তৃতীয় দিনে সেখানেও পুলিশ হানা দিয়ে আমার দেশ এর কর্মীদের গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। হাইকোর্ট এটাকে অবৈধ বলার পরও জেলা প্রশাসক আমাদের চিঠি দিয়ে বলেন, আবারও আমরা ছাপার উদ্যোগ নিলে তারা পুলিশ পাঠিয়ে বাধা দিবেন। এভাবে বন্দুুকের নলের মুখে সরকার আমার দেশ এর ছাপা বন্ধ রেখেছে। নিজস্ব প্রেস খুলে দেয়া হয়নি। অন্য প্রেস থেকে পত্রিকা ছাপতেও বাধা দিচ্ছে। এভাবে নতুন প্রক্রিয়ায় সরকার একটি জাতীয় পত্রিকা বন্ধের খারাপ নজির স্থাপন করেছে। আমার দেশ এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকেও একই দিন (১১ এপ্রিল, ২০১৩ ইং) পুলিশ পত্রিকা অফিস থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। দেড় বছর থেকে তিনি কারারুদ্ধ আছেন। তাকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়েছে। এর আগে ২০১০ সালের ১ জুন রাতে অফিস থেকে প্রথম দফায় মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে ১০ মাস কারারুদ্ধ করে রাখে সরকার। তখনও আমার দেশ বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশে আমরা তখন ৪৭ দিনের মাথায় পুনরায় আমার দেশ বের করতে সক্ষম হয়েছিলাম। এবার উচ্চ আদালতও ন্যায়ের পক্ষে দাড়াতে সাহস করেনি। নানা অজুহাতে আমাদের মূল মামলার শুনানি করা হচ্ছে না।

দশ বছর আগে আজকের এই দিনে ২০০৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রথম পাঠকের হাতে পৌছেছিল দৈনিক আমার দেশ। তার আগে প্রায় ৯ মাস থেকে আমার দেশ প্রকাশের প্রস্তুতিমূলক কাজ চলে। ডামি বের হয়। কাওরান বাজারে ১০২, কাজী নজরুল ইসরাম এভিনিউয়ের বিএসইসি ভবনের ১১ তলায় গত প্রায় ১১ বছর থেকে আমার দেশ এর ভাড়া অফিস। তেজগাওয়ে নিজস্ব যায়গায় প্রেস রয়েছে। আজকে এমন এক সময়ে আমার দেশ পাঠকের হাতে যাওয়ায় এক দশক পূর্ণ করছে, যখন পত্রিকার চাপা বন্ধ রয়েছে। অনলাইন চালু থাকলেও যারা এখনও এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তারা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। আর এক সপ্তাহ পর কারওয়ান বাজারের অফিসটিও মালিকপক্ষ ছেড়ে দিচ্ছে। যখন এই প্রতিবেদন লিখছি তখনও জানিনা আমাদের নতুন ঠিকানা কী হবে? এ অবস্থায় কিভাবে চলবে অনলাইন।

সরকারের রোষনলে পড়ে আমার দেশ পরিবারের ঢাকা অফিস ও প্রেসের প্রায় তিনশ’ পূর্ণকালীন স্টাফ এবং ঢাকার বাইরের আরও প্রায় ৫শ’ সাংবাদিক কর্মচারী ও তাদের পরিবার গত প্রায় দেড় বছর থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এর বাইরে আরও কয়েকশ’ এজেন্ট ও হাজার হাজার হকার, যারা আমার দেশ এর ওপর নির্ভর করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করত- তাদের আজ নিদারুণ কষ্টে খেয়ে- না খেয়ে সময় পার করতে হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানা ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করে এগিয়ে চলেছে আমার দেশ। এরই ধারাবাহিকতায় একে একে দীর্ঘ ১০টি বছর পার হলো পত্রিকার। বর্তমান সরকারের আগেও পত্রিকাটি দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থার সরকারের সময়ও রোষানলে পড়ে আমার দেশ। তত্কালীন পরিচলনা কমিটির চেয়ারম্যান ও এক পরিচালক গ্রেফতার হন। আরেক পরিচালক ছিলেন পলাতক। তখন প্রায় দুই বছর অনিয়মিত ছিল সাংবাদিকদের বেতনভাতাদি। একঝাঁক প্রতিশ্রুতিশীল সংবাদ কর্মীর দৃঢ়তার কারণে তখন পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যাওয়া থেকে রেহাই পায়। তখন পত্রিকাটির উপদেষ্টা সম্পাদক সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রয়াত আতাউস সামাদের অবদান অনস্বীকার্য হয়ে থাকবে।

ওই অবস্থা উত্তরণের জন্যই পত্রিকার তত্কালীন পরিচালনা পরিষদ সিদ্ধান্ত নেয়, কোম্পানির মালিকানা বিক্রি করা হবে। এগিয়ে আসেন বর্তমান কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

সময়ের আবর্তে এবার এমন একটি সময় প্রতিষ্ঠারদশম বর্ষপূর্তির দিনটি আমাদের কাছে উপস্থিত হয়েছে যখন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কারাগারে এবং আমার দেশ’র প্রেসে ঝুলছে তালা। সত্য প্রকাশের অপরাধে সরকার প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা, ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে কারাগারে রেখেছে এবং রিমান্ডে নির্মম নির্যাতন করেছে। বর্তমানে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ৬৯ টি মামলা রয়েছে। পত্রিকার অন্য সংবাদ কর্মীদের বিরুদ্ধেও বেশ কিছু মামলা রয়েছে। অন্যদিকে সরকার মাহমুদুর রহমানের কণ্ঠরোধ করতে আমার দেশ-এর প্রেসে তালা দিয়েছে এবং আইন অনুযায়ী অন্য প্রেসে পত্রিকা ছাপতে দিচ্ছে না। এরই প্রতিবাদে দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকরা বিবৃতি দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার সম্পাদকদের এ আকুতি তোয়াক্কা করেনি।

সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বার বার আক্রান্ত হয়েছেন পত্রিকাটির বর্তমান কর্ণধার আমার দেশ পাবলিকেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। ২০১০ সালে সরকারী দলের ক্যাডার বাহিনী তাঁর প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। এরপর তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং রিমান্ডে নিয়েও চালানো হয় বর্বর নির্যাতন। কারাগারে থাকতে হয়েছে ৯ মাস ১৬ দিন। তারপরও পাঠক শুভানুধ্যায়ীদের দোয়া এবং সহযোগিতায় পত্রিকাটির প্রকাশনা অব্যাহত রয়েছে।

দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দুর্নীতি, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম-লড়াইয়ে অবিচল আমার দেশ। গণতন্ত্র, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেম আমার দেশ-এর এগিয়ে যাওয়ার চেতনার মূল উত্স। শত বাধার মধ্যেও সত্য প্রকাশ অব্যাহত রাখার পেছনে আমার দেশ-এর মূল প্রেরণা হচ্ছে সততা ও সত্যনিষ্ঠা।

শাসকগোষ্ঠী ও তাদের সহযোগিরা মনে করেছিল, সম্পাদকের ওপর হামলা হলে বা মামলার পর মামলা দিয়ে সত্য প্রকাশ থেকে বিরত রাখা যাবে। তারপরও সত্য প্রকাশে অবিচল-অটল থাকে আমার দেশ। এতে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ২০১০ সালের ১ জুন রাতে হঠাত্ করে আমার দেশ-এর প্রকাশনা সনদটি বাতিল করা হয়। কোনো রকমের পূর্ব নোটিশ ছাড়াই অতর্কিত পুলিশি হামলা চালিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় পত্রিকাটির ছাপাখানা। বন্ধ করে দেয়া হয় আমার দেশ-এর প্রকাশনাও। প্রতিবাদে ফেটে পড়ে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী মানুষ। সারাদেশে পাড়া-মহল্লায় প্রতিবাদ হয় আমার দেশ বন্ধের বিরুদ্ধে; সম্পাদকের মুক্তির দাবিতে।

সবার দোয়া এবং সংগ্রামের একপর্যায়ে আল্লাহর রহমতে হাইকোর্ট বিভাগ পত্রিকাটি বন্ধের সরকারি নোটিশ স্থগিত করে। এতে পত্রিকা প্রকাশে বাধা সাময়িক দূর হয়। সরকার তাতেও থামেনি। আপিল বিভাগে আবেদন জানায়, হাইকোর্ট বিভাগের রায় স্থগিত করার জন্য। আপিলটি গ্রহণ করে তত্কালীন চেম্বার জজ আদালতের বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা) আবারও পত্রিকাটি বন্ধ করে দেন। এ পর্যায়ে এক মাস পর আবার আপিল বিভাগের ফুলকোর্টে শুনানি হয়। এতে হাইকোর্ট বিভাগের আদেশকে বহাল করা হয়; বাতিল করা হয় চেম্বার জজ আদালতের স্থগিতাদেশ। তত্কালীন চেম্বার জজ আদালতের বিচারপতি এস কে সিনহার আদেশে পত্রিকাটি ৩০ দিন বন্ধ থাকে।

সত্য প্রকাশের কারণে এ পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে ৬৯টি মামলা দায়ের হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় মামলাগুলো দায়ের হয়। এতে মামলার হাজিরা দিতে দৌড়াতে হয় এক জেলা থেকে আরেক জেলায়। বিভিন্ন মামলায় বিদায়ী প্রকাশক আলহাজ হাসমত আলীকে বিবাদী করায় তাকেও হাজিরায় উপস্থিত থাকতে হয়। পত্রিকাটির সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক ও প্রকাশকের বিরুদ্ধে মামলা করে সত্যের পথ থেকে পিছু হটাতে পারেনি শাসকগোষ্ঠী।

আমার দেশ সত্য প্রকাশে কখনও পিছপা হয়নি; ভবিষ্যতেও হবে না। সম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদের কালো থাবা থেকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দৈনিক আমার দেশ লড়াই চালিয়ে যাবে—এটাই সবার দৃঢ় প্রত্যয়। পাঠক, শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতা ও দোয়ায় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং দেশপ্রেমের চেতনায় আরও এগিয়ে যাবে আমার দেশ। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী মানুষের মনের খোরাক ও চেতনা জাগিয়ে তুলবে প্রতিদিন। এজন্যই স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী দেশপ্রেমিক মানুষের প্রিয় পত্রিকা আমার দেশ।

উৎস আমার দেশ অনলাইন

বিষয়: বিবিধ

১১৯৩ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

267914
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আমার দেশ আমরা পড়তে চাই।
মাহমুদুর রহমান এর মুক্তি চাই।
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৪
211693
মাজহারুল ইসলাম লিখেছেন : অনলাইনে পড়া যায় ভাই
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৫৬
211740
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনলাইন এ পড়ি কিন্তু সেটা তো পুর্নাঙ্গ এডিশন নয়।
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১০:২৩
211745
মাজহারুল ইসলাম লিখেছেন : হুম
267940
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৪২
শেখের পোলা লিখেছেন : চেতনার বাস্তবায়ন৷ হচ্ছে এসময় সহ্য করেই থাকতে হবে৷ কি আর করা৷
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১০:২৪
211748
মাজহারুল ইসলাম লিখেছেন : Happy
267950
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:১৪
বুড়া মিয়া লিখেছেন : মাহমুদুর রহমানের লেখাগুলো ভালো লাগতো অনেক; উনার আশুমুক্তির দাবী জানাই আবারও ...
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১০:২৩
211746
মাজহারুল ইসলাম লিখেছেন : নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে
267958
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৩৯
আরাফাত হোসাইন লিখেছেন : আমার দেশের সেরা পত্রিকা "আমার দেশ"
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১০:২৪
211749
মাজহারুল ইসলাম লিখেছেন : Thumbs Up Thumbs Up
267994
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৫৪
ফেরারী মন লিখেছেন : সাবাস আমারদেশ। ইতিহাসের পাতায় তোমার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৩:১৫
211805
মাজহারুল ইসলাম লিখেছেন : ঠিক ভাই

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File