ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম আওয়ামী লীগ

লিখেছেন লিখেছেন মাজহারুল ইসলাম ০৩ নভেম্বর, ২০১৩, ০৩:৪০:৪১ দুপুর

বিশ্বাস ও আদর্শগত দিক দিয়ে আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী। তারা গভীরভাবে বিশ্বাস করে যে, ইসলাম একটি মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, প্রতিক্রিয়াশীল, স্বেচ্ছামূলক, বর্তমান যুগে অনুপযোগী, মহাজঘন্য, রাজাকারী, আলবদর ও আল শামসের মতো ব্যাপার। আর তাদের জোটের দল সবই বাম ও নাস্তিক মার্কা। বিশ্বের বৃহত্ ডিকশনারি অক্সফোর্ড ডিকশনারি, এতে সেক্যুলারের অর্থে বলা হয়েছে ধর্মহীনতা। আওয়ামী লীগ সর্বদাই নিজেদের ধর্মনিরেপেক্ষ বলে দাবি করতে অহংবোধ করে। তবে বিজ্ঞ ব্যক্তিরা জানে যে, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা। ঊনবিংশ শতাব্দীতে দার্শনিক বাকুনিন-এর আদর্শে উদ্বুদ্ধ রাশিয়ার নিহিলিস্টরা এবং বিশ্বব্যাপী তাদের উত্তরসূরি সন্ত্রাসবাদীরা যেমন বলত, ‘শত্রুর রক্তে হাত রাঙাতে পেরেছি বলেই আমরা বিপ্লবী— ঠিক তদ্রূপ আওয়ামী ও বামদের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, আল্লাহ্ এবং তার প্রিয় নবী ও নবীর স্ত্রী, হজ, যাকাত, কোরবানি, রোজা ইত্যাদির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পারলে কিংবা লিখে প্রকাশ করতে পারলেই প্রগতিশীল।’ কিন্তু তাদের অধিকাংশ নেতার নামগুলো আরবিতে, পিতৃপ্রদত্ত নামগুলো ইসলামী। কিন্তু তাদের সংজ্ঞা অনুযায়ী তারাই ঘোরতর সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী। তাই এই নামগুলো দ্রুত পরিবর্তন করা উচিত।

ওই বাম মার্কা লোকগুলো নিজেদের ধর্মনিরেপেক্ষ বলে পরিচয় দিতে খুবই মজা পায় ও গর্বিত হয়। তারা কোরআন-সুন্নাহ্র বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়ছে। তারা দাবি করে ও ভাবে যে, দেশের অধিকাংশ জনগণ তাদের পক্ষে, কিন্তু বিগত নির্বাচনে শুধু বামদের ভোটারের গড় হার শতকরা ১৭/১৮ মতো। এই নির্বাচনে যদি মোট পরিমাপক ধরা হয় তবে তা মোট জনসংখ্যার ২০% হবে কিনা সন্দেহ আছে। অমুসলিম বাদ দিলে তা ১৪% হবে কিনা তাতেও সন্দেহ আছে। আওয়ামী লীগ ও বামদলগুলো আদর্শগত দিক দিয়ে এক ও একক। বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৭১ ভাগ মানুষ বিশ্বাস করে যে, স্বাধীনতা অর্জনের নেপথ্যে আওয়ামী লীগ একা দাবিদার নয়। যদিও তারা জোর গলায় স্বাধীনতা অর্জনের নেপথ্যে একমাত্র তাদের অবদানের কথা মানুষের সামনে বলতে ও বিশ্বাস করাতে বাধ্য করে। স্বাধীনতা কী শুধু আওয়ামী লীগের হাত ধরেই এসেছে? নাকি সর্বস্তরের মানুষের জান-মালের বিনিময়ে এসেছে। মানুষকে বোকা বানাতে আওয়ামী লীগ শুধু পুরনো একই গান গায়।

স্বাধীনতা যুদ্ধে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান, মেজর জিয়াউর রহমান, আতাউল গণি ওসমানীসহ হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধার অবদান কোনো দল বা পক্ষ অস্বীকার করে না তবে ঘোর সমালোচনা করে ক্ষমতাপ্রাপ্তের পরবর্তী কাজের জন্য। সমালোচনা করে বাক-স্বাধীনতা হরণ করার জন্যে, বাকশাল কায়েমের জন্যে, সব রাজনীতি নিষিদ্ধের জন্যে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তিনদিকের তিন মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমান, ইন্দিরা গান্ধী ও জুলফিকার আলী ভুট্টো—এই তিনজনকেই বরণ করতে হয়েছে ইতিহাসের নির্মম মৃত্যু। এদের দুজনের বুকে চালানো হয়েছে ব্রাশ ফায়ার আর অন্যজনের গলায় পরানো হয়েছে ফাঁসির দড়ি। এই মৃত্যু কী কাকতালীয় ব্যাপার? শুধুমাত্রই কো-ইন্সিডেন্স? এর পেছনে প্রকৃতি ও ইতিহাসের কোনো অমোঘ নিয়ম বলবত্ নেই? কিছুই নেই আপনাদের শিক্ষা নেয়ার জন্যে?

যে দলটি আজ একাকি মুক্তিযুদ্ধের ও স্বাধীনতার সমস্ত কৃতৃত্ব আত্মসাত্ করতে চাইছে সে দলটির অধিকাংশ নেতাই যুদ্ধ করেনি, ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল প্রাণ বাঁচাতে। কিন্তু তারা আজ মিথ্যে দাবিদার, মানুষকে মিথ্যে কথা শুনিয়ে ইসলামপন্থীদের স্বাধীনতা বিরোধী বলে প্রচার করছে। ক্ষমতার লোভে আলেমদের কে বিভক্ত করতে চাইছে জনগণের পক্ষ থেকে। এই আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা অর্জনের পর পরিত্যক্ত বিভিন্ন ব্যবসা, প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, গুদাম ইত্যাদি দখল করে নেয়।

যাই হোক, এখন বর্তমানে ফিরে আসি। আওয়ামী লীগ যখন বামদের সঙ্গে জোট বাঁধে তখন লেলিন, কার্ল মার্কস, স্ট্যালিন, মুসোলীনি, বার্নাড রাসেলের মৃত প্রেতাত্মা আওয়ামীর ঘাড়ে সাওর হয়। শাহবাগিদের আন্দোলনে তাই প্রমাণ হয়। তারা স্বাধীনতা ও দেশপ্রেম দেখাতে গিয়ে বেশ অন্যায় ও অমানবিক কাজ করে ফেলে। মহানবী মুহাম্মদ (সা.)কে খুবই জঘন্য মন্তব্য করে, আলেম-ওলামাদের কুশপুত্তলিকা দাহ করে, দাড়ি-টুপি পড়ে গলায় জুতো পরে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানোর অভিনয় করে। তার প্রত্যক্ষ মদত দেয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী নিহত নাস্তিক ব্লগার রাজিবকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ ঘোষণা করেন। দেশের খ্যাতিমান সাংবাদিক ও সম্পাদক সাহসী কলম সৈনিক মাহমুদুর রহমানকে পল্টন ট্র্যাজেডির ঘাতক বাম রাজনীতির বিশ্বাসী বাপ্পাদিত্যবসু হত্যার হুমকি দেয়।

বাংলাদেশে যত অঘটন ঘটে তথা হত্যা, খুন, হামলা সবই দায়দায়িত্ব তারা ইসলামপন্থীদের কাঁধে চাপায়। রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুর মতো ঘোর অবিশ্বাসীরা ক্ষমতা পেয়ে পাগল হয়ে গেছেন। কখন কী বলেন হুশ থাকে না। মূলত দুষ্কৃতকারীদের মদত দিচ্ছেন আর দায় সারাচ্ছেন ইসলামপন্থীদের নামে। এই বামদের প্রতিনিধি তসলিমা নাসরীন, আহম্মদ শরীফ, আবদুল গাফ্ফার-এর মতো বাম লেখকরা। যদিও তারা নিজদের প্রকাশ্যেই দাবি করেছেন যে, আস্তিকতা হলো বিজ্ঞানের বাইরে। যদিও তারা বিখ্যাত বিশ্ব কাঁপানো অ্যালবার্ট আইনস্টাইন-এর থিউরি জানেন না। যদিও তাদের আদর্শের বাহকগণ যেমন, রাসেল, সক্রেটিস, প্লেটো স্রষ্টা নেই এ কথা একবারও বলেননি। তবে জাগতিক ভিন্ন মতবাদ প্রচার করেছেন। বিজ্ঞানী ক্যালভীনও স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসী ছিলেন।

বামদের উত্তরসুরি ভারতের সাবেক উপরাষ্ট্রপতি ও সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি হেদায়েত উল্ল্যাহ মারা গেছেন ১৯৯২ সালে, নামে মুসলমান হলেও নাস্তিক ছিলেন। তার মৃতদেহ বৈদ্যুতিক চুল্লিতে পুড়িয়ে ফেলা হয়। ঠিক একই ভাবে প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম করিম চগলাকে একইভাবে পুড়ানো হয়। কমরেড মোজাফ্ফরকে লাল কাপড় পেঁচিয়ে পুঁতে ফেলা হয়। ঠিক তদ্রূপ বর্তমানে একই আদর্শ বিশ্বসীদের এই রকম সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন, না হলে আদর্শের বেঈমানী হবে। আর বামরা খুবই নীতিবান হয়। বর্তমানে আওয়ামীরাও একই ধারায় অগ্রসরমান। সকল ধর্মের অনুষ্ঠানে মিলেমিশে উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন সরকার প্রধান। মা দুর্গা বলে সম্বোধন করেছেন। সকল ধর্মেই নীতিগত দিক এক আর ধর্মের কালো ছায়া রাখব না, কেননা আমরা ধর্মনিরেপেক্ষ। এই ভাষণও মানুষ শুনেছে।

আজ যে দল ও গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার সব কৃতিত্ব আত্মসাত্ করতে চাইছে, এই দল ও গোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় বা জেলা পর্যায়ে কোনো নেতা বা সংসদ সদস্যই মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দেননি। বাংলাদেশের অকুতোভয় তরুণ ও জাওয়ানরা যখন হানাদারদের সঙ্গে মরণপণ যুদ্ধে লিপ্ত, তখন এরা যুদ্ধের ময়দান থেকে নিরাপদ দূরত্বে বসে জীবন-যৌবনকে উপভোগ করছিলেন, সম্পদ ও ক্ষমতার ভাগাভাগিতে ব্যস্ত ছিলেন। বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক, লেখক, ঔপন্যাসিক ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান এদের ভারতে অবস্থানকালীন যাবতীয় কর্মকাণ্ডের প্রামাণ্য চিত্র তুলে ধরেন আর তাই বিজয়ের দীর্ঘদিন পর তিনি নিখোঁজ হন। তার নির্মিত ওই দালিলিক রিলগুলো আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। শহীদ বুদ্ধিজীবীরাও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি, তারা সবাই ঢাকার নিজ নিজ বাসায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছিলেন। অনেকেই ক্লাস নেয়ার জন্য রীতিমত বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করতেন।

গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ এ দুটি মাস ঢাকা ছিল অবরুদ্ধ, সরকারের অবৈধ সন্তানরা শাহবাগে আন্দোলন করে। মূলত শাহবাগি পুরো আন্দোলনের মদত ছিল ভারতের। টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রধান শিরোনাম হয়—“ঢ়ত্ড়ঃবংঃবত্ং ধঃ ঝযধনধময রহ ইধহমষধফবংয নধপশবফ নু ওহফরধ”। আর ইসলামবিদ্বেষী ব্লগারদের ধরতে গোয়েন্দা সুপারিশ আমলে নেয়নি সরকার। এ কোন আলামত? গত মে মাসে আমার দেশ পত্রিকায় সরকার কী ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত? এই শিরোনামে একটি আর্টিকেল ছাপা হয় আমার। সেখানে ইসলামের বিদ্বেষের কথা আমি লিখেছিলাম। কুখ্যাত নাস্তিক ব্লগার আসিফকে আটকের পর সরকারের পক্ষে লেখা ও বিয়ে করার পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় প্রথমবার। পরে জনমানুষের ঘোর দাবি ও সাংবাদিকদের লেখালেখির পর আবার গ্রেফতার করা হয়। ধর্মীয় বিষয়ে বিশেষ করে ইসলাম ধর্মের উপর এত কুরুচিপূর্ণ লেখা, মন্তব্য, আর্টিকেল কোনো বিধর্মী বা ইহুদি, খ্রিস্টান লেখার সাহস করেনি। যদিও সরকারের বিরুদ্ধে মন্তব্য, সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধরপাকরের অন্ত নেই। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পক্ষ নিয়ে বিচারপতি মিজান ঈমানী দায়িত্ব পালন করেছেন। আর এই নাস্তিক ও ইসলামবিদ্বেষীর মুখোশ উন্মোচন করেছেন কলম সৈনিক দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। আর তাই সরকারের এত জ্বালা ও মাথাব্যথা। অতঃপর বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার। এই হলো নাস্তিকতার আসল রূপ।

বিষয়: রাজনীতি

১১৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File