মাহে রমজান আল্লাহর বিশেষ উপহার। প্রফেসর ড. মাওলানা আবদুল মতিন আল-আজহারি।

লিখেছেন লিখেছেন মাজহারুল ইসলাম ০৯ জুলাই, ২০১৩, ১১:১৭:২১ রাত

মাহে রমজান মুসলমানদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ উপহার। রহমত, মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির অমীয় বাণী নিয়ে আসা এই মাস আমাদের আত্মসংযম ও খোদাভীরুতা অর্জনের দিকে অনুপ্রাণিত করে। এটি আল্লাহ প্রদত্ত এমন একটি মহিমাময়ী ইবাদত, যা শুধু আমাদের মুসলমানদের ওপর অপরিহার্য করা হয়নি, বরং প্রত্যেক যুগে, পূর্বেকার নবী-রাসুল ও তাদের উম্মতদের ওপরও তা পালন করা অবধারিত ছিল, এরশাদ হচ্ছে : ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা অবশ্যম্ভাবী করা হয়েছে যেরূপ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে করে তোমরা আল্লাহভীতি অর্জন করতে পার।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)

ইহুদি, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের লোকেরা তাদের বিশেষ বিশেষ উদ্দেশ্য হাছেল করা, হাছেলকৃত উদ্দেশ্যের কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রোজা রেখেছিল। যেমন : হজরত মুসা (আ.) ৪০ দিন রোজা পালন করে তুর পাহাড়ে আল্লাহর ওহি লাভ করেন। তার উম্মতেরাও তার এই ওহি লাভের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রোজা রাখত। হজরত ইসা (আ.)-ও ৪০ দিন রোজা পালন করে ইঞ্জিল কিতাব লাভ করেন এবং তার অনুসারীদেরও তা যথাযথভাবে পালন করার নির্দেশ দেন। এভাবে আদি যুগ থেকে সিয়ামসাধনা বিশেষভাবে এক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে পরিগণিত হয়। তবে অন্যান্য ধর্মের লোকেরা রোজা পালন করলেও তা থেকে এমন মহত্ত্ব লাভ করতে পারেনি, যা উম্মতে মোহাম্মদিয়া অর্জন করতে পেরেছে ও পারছে। যেমন প্রিয়নবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে ৭০টি ফরজ ইবাদত আদায় করল, যে ব্যক্তি এই মাসে একটি নফল ইবাদাত সম্পাদন করল, সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল।’ (সহীহ ইবনে খুজাইমা)। এ ছাড়া আরো অনেক নেক আমল রয়েছে, যেগুলোর জন্যও আল্লাহ তায়ালা বিরাট প্রতিদানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। এরই আলোকে আজকের প্রবন্ধে নিম্নে কতিপয় উল্লেখযোগ্য ইবাদতের আলোচনা করা হলো, যাতে বিরাট মহত্ত্ব রয়েছে।

তারাবিহর নামাজ বা কিয়ামুল্লাইল : এই নামাজ সর্বসাধারণের কাছে সুন্নাত হিসেবে পরিচিত হলেও আসলে এর বিধান স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এসেছে। রাসুল (দ.) এরশাদ করেন : ‘মহান আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসের রোজা ফরজ করেছেন এবং এর রাত্রি জাগরণ অর্থাত্ তারাবিহর নামাজকে পুণ্যের কাজ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।’

এর দ্বারা তারাবিহর নামাজের বিশেষ গুরুত্ব প্রমাণিত হয়েছে। এ নামাজের মহত্ত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুল (দ.) আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি এ মাসের (দিনে) রোজা রাখবে এবং রাতে ঈমান ও সওয়াবের আশা নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এবাদাত করবে, অর্থাত্ তারাবিহর নামাজ আদায় করবে, সে ব্যক্তি গুনাহ থেকে এমনভাবে মুক্ত হবে যেমন তার মা তাকে সদ্য ভূমিষ্ঠ করেছে।’ (নাসায়ী শরিফ)। অন্য হাদিসে এরশাদ হয়েছে, হজরত আমর বিন মুররা আল জুহানী (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (দ.)-এর কাছে এসে বলল : ইয়া রাসুলাল্লাহ! ‘আমি যদি সাক্ষ্য দিই যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই এবং আপনি আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি, জাকাত দিই, রোজা রাখি এবং রাতে তারাবিহর নামাজ আদায় করি তাহলে (পরকালে) আমার অবস্থান কোথায় হবে? রাসুল (দ.) উত্তরে বললেন : সিদ্দিকিন (সত্যবাদী) এবং শহীদদের সঙ্গে তোমার অবস্থান হবে। (সহিহ ইবনে হিববান)।

কোরআন তেলাওয়াত করা : মাহে রমজানের সঙ্গে পবিত্র কোরআনের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। কারণ এই মাসেই মহান আল্লাহ তায়ালা এই পবিত্র গ্রন্থ অবতীর্ণ করেন। তাছাড়া অন্য সবকটি আসমানি কিতাবও এই মাসে অবতীর্ণ হয়। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন... জিবরাইল (আ.) রমজান মাসের প্রতি রাতে রাসুল (দ.)-এর সঙ্গে মিলিত থেকেন এবং মাসব্যাপী একে অপরকে পবিত্র কোরআন একবার শোনাতেন, কিন্তু যে বছর রাসুল (দ.) ইন্তেকাল করেন, সে বছর দুবার কোরআন মজিদ শোনা ও শোনানো হয়। (বুখারি)। হাদিস বিশারদদের মতে এর দ্বারা রমজান মাসে কোরআন মজিদ বারবার তেলাওয়াত করা মোস্তাহাব হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। ফলে এ মাসে যথাসম্ভব বেশি বেশি কোরআন তেলায়াতের ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিত।

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া : প্রতিরাতের শেষ ভাগে বিশেষ করে রমজান মাসের রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার বিরাট মহত্ত্ব রয়েছে। রাসুল করিম (দ.) বলেন, মহান আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক রমজানের রাতে (প্রথম আসমানে এসে তার বান্দাদের লক্ষ্য করে বলেন, কোনো সাহায্য প্রার্থনাকারী আছে কি? প্রার্থনা করলে আমি তাকে সাহায্য করব। কোনো তওবাকারী আছে কি? তওবা করলে আমি তার তওবা কবুল করব। কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? তাহলে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।

অন্য হাদিসে রাসুল (দ.) এরশাদ করেন : যদি কোনো মোমেন বান্দা রমজানের রাতে নামাজ পড়ে, তাহলে আল্লাহতায়ালা তার প্রত্যেকটি সেজদার বিনিময়ে পনেরো শ’ সওয়াব দান করেন এবং বেহেস্তে তার জন্য লাল ইয়াকুত পাথর দিয়ে একটি ঘর তৈরি করেন, যাতে ৬০টি দরজা রয়েছে। (বায়হাকী)।

সাহরি খাওয়া : কেউ কেউ মনে করে ক্ষুধার কষ্ট থেকে বাঁচার জন্যই সাহরি খেতে হয়। কথাটি সম্পূর্ণ ঠিক নয়। ক্ষুধার কষ্ট নিবারণে এটা কিছুটা সহায়তা করলেও আসলে সাহরি খাওয়ার মধ্যে বিরাট মহত্ত্ব ও রহস্য রয়েছে। প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত : রাসুল করিম (দ.) এরশাদ করেন, তোমরা সাহরি খাও, কেননা সাহরির মধ্যে বরকত রয়েছে। (বুখারি ও মুসলিম)

সাহরি খেয়ে আমাদের আহলে কিতাবদের থেকে আলাদা করার জন্যও রাসুল (দ.) সাহরি খাওয়ার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। হজরত আমর বিন আস (রা.) বলেন, রাসুল (দ.) এরশাদ করেন : আমাদের আর আহলে কিতাবদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া। (মুসলিম)। অর্থাত্ তারা সাহরি খায় না, ফলে আমাদের অবশ্যই সাহরি খেতে হবে। অন্যদিকে হাতে সময় নিয়ে সাহরি খেতে উঠলে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায় এবং ফজর নামাজ কাজা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। সাহরির আরো ফজিলতের ব্যাপারে রাসুল (দ.) এরশাদ করেন : যারা সাহরি খায় আল্লাহ তাদের রহমত করেন এবং ফেরেস্তারা তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন। (তাবারানি, ইবনে হিববান)।

অন্যকে ইফতার করানো : মাহে রমজানে অনেক সময় ছোটখাটো খেদমত করেও বিরাট বিনিময় পাওয়ার আল্লাহতায়ালা ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সেসব আমলের অন্যতম হলো কোনো রোজাদারকে ইফতার করানো। নবী করিম (দ.) এরশাদ করেন : যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, এটা তার মাগফিরাত বা ক্ষমা পাওয়ার উছিলা হবে, এটা তার জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার কারণ হবে। এই ইফতার করানো দ্বারা আল্লাহ তায়ালা তাকে ওই রোজাদারের রোজার সমতুল্য সওয়াব দান করবেন। এতে ওই রোজাদারের সওয়াব কমানো হবে না। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ ইফতার করানোর সংগতি আমাদের সবার নেই। রাসুল (দ.) বললেন, একটা খোরমা খাওয়ালে বা এক ঢোক পানি পান করালে বা এক চুমুক দুধ পান করালেও এই সওয়াব পাওয়া যাবে। রাসুল (দ.) আরও বলেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পান করাবে, আল্লাহ পাক এর বদৌলতে কিয়ামতের ময়দানে আমার হাউসে কাওছার থেকে তাকে শরবত পান করাবেন। এ হাউসে কাওছার থেকে পানি পান করার পর জান্নাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তার আর কোনো তৃষ্ণা লাগবে না (ইবনে খুজাইমা)।

এতেকাফ করা : এতেকাফকে সুন্নাতে মোয়াককাদা কেফায়া বলা হয়। স্থানীয় কিছু লোক অন্তত এতেকাফ করতে হবে, নতুবা সবাই গুনাহগার হবে। রাসুল (দ.) এতেকাফের প্রতি বিরাট গুরুত্ব দিয়েছেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (দ.) আজীবন রমজানের শেষ ১০ দিন এতেকাফ করেছেন। এরপর তার স্ত্রীরা এতেকাফ করেছেন। (বুখারি)। এতেকাফের মধ্যে অনেক উপকার রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফায়দা হলো : লাইলাতুল কদর পাওয়ার সম্ভাবনা। মসজিদের বাইরে থাকলে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। কিন্তু মসজিদে এতেকাফ অবস্থায় থাকলে পুরো সময় ইবাদাত বন্দেগির মধ্যে থাকা যায়। এতেকাফের মহত্ত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুল (দ.) এরশাদ করেন : এতেকাফকারী গুনাহ থেকে বিরত থাকতে পারে এবং বাইরে থেকে নেক কাজ করলে যে সওয়াব পেত এতেকাফে থেকে তা না করলেও সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। (ইবনে মাজা)

উবাই বিন কাব (রা.) বলেন, রাসুল (দ.) প্রত্যেক রমজানের শেষ ১০ দিন এতেকাফ করতেন, একবার (কোনো কারণবশত) এতেকাফ করতে পারেননি, পরের বছর ২০ দিন এতেকাফ করেছেন।

শবেকদর : এটি একটি মহিমান্বিত ও রহস্যময়ী রাত, যাকে আল্লাহ স্বয়ং নিজেই হাজার মাস থেকে উত্তম বলে ঘোষণা দিয়েছেন। উম্মতে মোহাম্মদিয়ার জন্য এটি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এক বিশেষ নেয়ামত, যা পূর্বেকার কোনো নবীর উম্মতকে দেয়া হয়নি। খোদাভীরু ও আল্লাহর প্রিয় বান্দারা এই রাতকে পাওয়ার জন্য সব সময় অস্থির থাকেন। এর সন্ধানে তারা সর্বদা ইবাদতে মগ্ন থাকেন, যার ভাগ্যে এ রাত জুটেছে সে নিঃসন্দেহে একজন সৌভাগ্যবান ব্যক্তি। এ রাতের মহত্ত্বের কথা বলতে গিয়ে রাসুল (দ.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সওয়াবের আশা নিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে শবেকদরে ইবাদাত করবে, তার বিগত সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। (বুখারি ও মুসলিম)।

যে এ রাতের মহত্ত্ব থেকে বঞ্চিত হলো সে সত্যিই হতভাগা। রাসুল (দ.) এরশাদ করেন, যে লাইলাতুল কদরের মহত্ত্ব থেকে বঞ্চিত হলো সে সব কল্যাণ থেকে মাহরুম হলো। তাই পুরো রমজান মাস বিশেষ করে রমজানের শেষ ১০ দিন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, যখন রমজানের শেষ ১০ দিন শুরু হতো তখন রাসুল (দ.) নিজের কোমরকে বেঁধে নিতেন, নিজে সারা রাত ইবাদাত করতেন ও পরিবারকে ইবাদতের জন্য জাগ্রত রাখতেন। (বুখারি)।

স্বেচ্ছাসেবকমূলক কাজ করা : স্বেচ্ছাসেবকমূলক কাজ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন খাবার, ওষুধপত্র, কাপড়চোপড় বিতরণ, শিক্ষা-সংস্কৃতি প্রসারে প্রচেষ্টা চালানো, পরিবেশকে দূষণমুক্ত ও পরিষ্কার রাখার জন্য কাজ করা, রমজানে বিভিন্ন জায়গায় রোজদারদের ইফতারি দেয়ার ব্যবস্থা করা, অসুস্থ ব্যক্তিদের দেখতে যাওয়া এবং জানাজায় শরিক হওয়া। এ-জাতীয় স্বেচ্ছাসেবকমূলক কাজ বিশেষ করে রমজান মাসে করা হলে তার বিরাট প্রতিদান রয়েছে। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, একদা রাসুল (দ.) সাহাবাদের (রা.) সমাবেশে জিজ্ঞাসা করেন, তোমাদের মধ্যে আজ কে রোজা রেখেছে? হজরত আবু বকর (রা.) বললেন, আমি। এরপর জিজ্ঞাসা করলেন, কে জানাজায় শরিক হয়েছে? হজরত আবু বকর (রা.) বললেন, আমি। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে কে কোন মিসকিনকে খাবার খাইয়েছে? আবু বকর (রা.) বললেন, আমি... এরপর রাসূল (দ.) বললেন, যার মধ্যে এসব কাজ (গুণগুলো) পাওয়া গিয়েছে, সে বেহেস্তে প্রবেশ করবে। (মুসলিম)।

তাসবিহ তাহলিল করা : অন্যান্য মাসের তুলনায় রমজান মাসে তাসবিহ তাহলিল পড়া ও জিকির-আজকারের বিরাট ফজিলত রয়েছে। রাসুল (দ.) এরশাদ করেন, রমজান মাসে তোমরা চারটি আমল বেশি বেশি করে করবে। দুটো আমল এমন যাতে আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হন। আর দুটো আমল যা না করে তোমাদের কোনো উপায় নেই। অতঃপর রাসুল (দ.) বলেন, যে দুটো আমল করলে আল্লাহ পাককে সন্তুষ্ট করা যাবে সে দুটো হলো, বেশি বেশি করে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু পড়া এবং বেশি বেশি আল্লাহর কাছে এস্তেগফার করা, অর্থাত্ ক্ষমা চাওয়া। এরপর রাসুল (দ.) এরশাদ করেন, আর যে দুটো হলো, আল্লাহর কাছে জান্নাত চাওয়া এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া। (সহিহ ইবনে খুজায়মা)

হজরত ইবনে শিহাব আলজুহরি (রা.) বলেন, রমজান মাসে একটি তাসবিহ অন্য মাসের এক হাজার তাসবিহ থেকে উত্তম।

(আল-আসবাহানি)

দান-খয়রাত করা : এ মাসে দান-খয়রাতের বিরাট ফজিলত রয়েছে। রাসুল (দ.) নিজেও এ মাসে বেশি বেশি করে দান করতেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (দ.) সত্ কাজে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উদার ছিলেন। তিনি রমজান মাসে বেশি উদারতা দেখাতেন যখন জিবরাইল (আ.) তার সঙ্গে সাক্ষাত্ করতেন। জিবরাইল (আ.) রমজানের শেষ পর্যন্ত প্রতি রাতে রাসুল (দ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাত্ করতেন এবং রাসুল (দ.) তার নিকট কোরআন তেলাওয়াত করতেন। আর যখন জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন, তখন রাসুল (দ.) প্রবাহিত বাতাসের চেয়েও বেশি প্রবাহে দান করতেন (বুখারি)। অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (দ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো সবচেয়ে উত্তম ছাদাকাহ কী? তিনি (দ.) বললেন, রমজান মাসের ছাদাকাহ। (আল তিরমিজি)

ওমরাহ আদায় করা : এ মাসে ওমরাহ আদায় করলে একটি হজের সওয়াব পাওয়া যায়। যেমন, রাসুল (দ.) এরশাদ করেন, ‘রমজান মাসের ওমরাহ হজের সমতুল্য।’ (আহমদ, ইবনে মাজাহ)। অন্য হাদিসে দেখা যায়, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যখন রাসুল (দ.) বিদায় হজ থেকে প্রত্যাবর্তন করেন, তখন উম্মে সিনান নামক এক আনসার মহিলাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি আমাদের সঙ্গে হজ করতে যাওনি কেন? সে বলল, ইয়া রাসুলল্লাহ, আমাদের পানি বহনকারী একটি উট ছিল। তাতে উমুকের পিতা (অর্থাত্ তার স্বামী) ও তার পুত্র আরোহণ করে চলে গেছে। অপর একটি পানিবহনকারী উট রেখে গেছে, যার দ্বারা আমরা পানি বহন করে থাকি। এসব শুনে রাসুল (দ.) বললেন, তাহলে রমজান মাসে তুমি ওমরা আদায় করো। কেননা রমজান মাসে ওমরা আদায় করলে হজের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। (বুখারী)। আলোচ্য হাদিসে দেখা যায়, রাসুল (দ.) ওই মহিলাকে তার ছুটে যাওয়া হজের সমতুল্য সওয়াব পাওয়ার জন্য রমজান মাসে ওমরা করার পরামর্শ দিয়েছেন। এর দ্বারা তিনি রমজান মাসের বৈশিষ্ট্যের দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন।

কর্মচারীদের কর্ম শিথিল করা : আমরা অনেক সময় রোজা রেখে ক্লান্তি অনুভব করে কাজ করা বন্ধ করে দেই, কিন্তু যারা আমাদের অধীনে চাকরি করেন তাদের কষ্টের দিকে আমরা খেয়াল করি না। অথচ এ মাসে তাদের কাজের বোঝা হালকা করে বিরাট সওয়াব অর্জন করা যায়। যেমন, প্রিয় নবী (দ.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে তার চাকর-চাকরানিদের কাজের বোঝা হালকা করে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেন এবং জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি দান করেন। (সহিহ ইবনে খোজাইমা)।

এছাড়া আরও বহু আমল রয়েছে, যা রমজান মাসে করলে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অফুরন্ত বিনিময় পাওয়ার অঙ্গীকার রয়েছে। যেমন—পিতামাতার সেবা করা, জ্ঞান চর্চা করা ইত্যাদি।

মোটকথা, রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্তে মুসলমানদের অগণিত সওয়াব অর্জনের এক সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। আমরা যদি এর সদ্ব্যবহার করি, তাহলে পাপমুক্ত হয়ে দুনিয়ায় পাব আত্মিক ও মানসিক শান্তি এবং পরকালে পাব মুক্তি ইনশাআল্লাহ।

লেখক : দারুল উলুম ইসলামিক হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, বার্মিংহাম, যুক্তরাজ্য

বিষয়: বিবিধ

১২৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File