আমরা ব্যর্থ দুদক চেয়ারম্যান : এতদিন কই ছিলেন কাকু?
লিখেছেন লিখেছেন মাজহারুল ইসলাম ২১ জুন, ২০১৩, ১২:৪৩:৩০ দুপুর
দেশজুড়ে যখন দুর্নীতির মচ্ছব চলছে, দুর্নীতিবাজ রাঘববোয়ালদের একের পর এক রেকর্ড সৃষ্টিকারী অঘটনে যখন মানুষ স্তম্ভিত, তখন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ব্যস্ততার ফলাফল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। হাজারো জনবল, আইনজীবীদের পেছনেই কোটি টাকা ব্যয়, সারা দেশে ২২টি সমন্বিত কার্যালয়, ৬টি বিভাগীয় অফিস, ৩০০ তদন্ত কর্মকর্তাসহ বিশাল লটবহর ঠিক কি করছে সেটা নিয়েও প্রশ্নের শেষ ছিল না। তবে লোকদেখানো আনুষ্ঠানিকতা আর মিডিয়ায় নিয়মিত হাজিরা দিয়ে যে দুর্নীতির রাশ টেনে ধরা যায় না, সেটা বুঝতে দুদক চেয়ারম্যানের একটু বেশিই সময় লেগে গেছে অস্বীকার করা যাবে না। চার বছরের মেয়াদ শেষ উপলক্ষে আয়োজিত মিট দ্য প্রেসে তার মন্তব্য থেকে এমন কথা উঠতেই পারে।
২০০৯ সালে দুদকে যোগদানের পরপরই চেয়ারম্যান গোলাম রহমান একইভাবে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, দুদক একটি নখদন্তহীন ব্যাঘ্র, যার নখগুলো কেটে দেয়ার মাধ্যমে ক্ষমতাহীন করার প্রক্রিয়া চলছে। একথা বলে তখন চারদিকে আলোচনার ঝড় তুললেও পরবর্তী সময়ে এই প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি মুখ বন্ধ করে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ মনে করেছিলেন। দীর্ঘ চার বছর তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। নিজের ও দুদকের কাজের সমালোচনার জবাব দিতে কখনও চেষ্টার ত্রুটি করেননি। যদিও চাঞ্চল্যকর দুর্নীতির একটিরও তদন্ত শেষে দোষীদের শাস্তি হয়নি। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে রেলের নিয়োগ বাণিজ্য, পদ্মা সেতু, ডেসটিনি, হলমার্কের মতো একটার পর একটা মহাদুর্নীতি দেশের অর্থনীতি ও মানুষের পকেট ফোকলা করে দিলেও দুর্নীতিবাজ রাঘববোয়াল কাউকেই শনাক্ত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে পারেনি দুদক। ক্ষমতাসীনরাও এক্ষেত্রে থেমে থাকার প্রয়োজন বোধ করেনি। ফলে ক্ষমতার সঙ্গে যে কোনোভাবে জড়িতদের মধ্যে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে মহামারীর মতো। দুর্নীতিবাজদের দাপটের মুখে অন্য সবার কোণঠাসা অবস্থা যখন রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বত্র প্রকটভাবে দৃশ্যমান, ঠিক তখনই আবার বোমা ফাটালেন দুদক চেয়ারম্যান। হিসাব করে ঠিক চার বছর পর মেয়াদের শেষে তিনি আবারও বললেন, দুদক সব সময় নখদন্তহীন বাঘই ছিল, এখনও আছে। তাই দুর্নীতি দমনে অগ্রগতি নেই। আইনের অপূর্ণতা ও সীমাবদ্ধতা দূর না হলে এক্ষেত্রে কিছুই আশা করা যায় না। বিষয়টি নিয়ে চার বছর তিনি বা সরকার কি করেছে সেটা নিয়ে অবশ্য মুখ খোলেননি তিনি। তবে বলার চেষ্টা করেছেন বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণে দুর্নীতির মামলাগুলোর অগ্রগতি হয় না। কেউ দোষী সাব্যস্ত হয় না। কারও শাস্তিও হয় না। ফলে দুদকের সব উদ্যোগই ভেস্তে যায়। আইনের এই প্রক্রিয়া যতদিন অব্যাহত থাকবে, ততদিন দুদক নখদন্তহীন বাঘ হয়েই থাকবে। তিনি খোলাখুলিভাবে আরও বলেছেন, বিদ্যমান আইনের কারণে উচ্চ আদালতে দুদককে পক্ষভুক্ত করা হচ্ছে না। দুদক আইনের সংশোধনের প্রস্তাব পাঠানো হলেও সেটি আটকে আছে। জাতীয় সংসদে এটি পাস হলে দুদক আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। বিদায়ী দুদক চেয়ারম্যানের মতে, দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করতে হলে বিদ্যমান আইনের সংস্কার ও দুদককে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই।
বিষয়গুলো মোটেই নতুন কিছু নয়। তার দীর্ঘ মেয়াদকালে নানা ঘটনায় নানাভাবে এমন কথা বারবারই উচ্চারিত হয়েছে, পত্র-পত্রিকায় লেখাও হয়েছে। তখন দুদক চেয়ারম্যানের মতো ক্ষমতাসীনরাও সেসবকে বিবেচনায় নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। তাই বলা যায়, দুদকের অকার্যকর ভূমিকা ও দুর্নীতির মহাবিস্তারে তাদের ভূমিকাও কম নয়। এ পর্যন্ত কত আইন পাস হয়েছে, দুদক আইন সংশোধন হলো না কেন? দুর্নীতি দমনকে অগ্রাধিকার দেয়া হলে নিশ্চয়ই আজকের অবস্থা সৃষ্টি হতো না। অন্যদের দুর্নীতি-লুটপাটের কথায় যাদের মুখে খই ফোটে তাদের শাসনামলে কেন দুর্নীতি এমন অবাধ হবে? গত সংসদ নির্বাচনের আগে প্রকাশিত আওয়ামী লীগের ইশতেহার ‘দিনবদলের সনদে’ মোটা হরফে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অঙ্গীকার করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে শক্তিশালী করা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। ক্ষমতাধরদের বার্ষিক সম্পদ বিবরণ দিতে হবে। রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরের ঘুষ, দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয়, ঋণখেলাপি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কালো টাকা ও পেশিশক্তি প্রতিরোধ এবং নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ এসব একটি অঙ্গীকারও যদি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়া হতো তবে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও ভিন্ন হতো—এটা জোর দিয়েই বলা যায়। মেয়াদের শেষ সময়ে এসে দুদক চেয়ারম্যানের ব্যর্থতা স্বীকারের পেছনে কারণ যাই হোক এক্ষেত্রে মহাজোট সরকার কি করবে সেটা এখনও দেখার বাকি। ক্ষমতাসীনরাও কি নিজেদের নখদন্তহীন উল্লেখ করে ব্যর্থতা স্বীকারের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন
বিষয়: রাজনীতি
১০৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন