প্রবাসীর যন্ত্রণা
লিখেছেন লিখেছেন বিবরনো ০৪ জুন, ২০১৩, ০২:০০:০০ দুপুর
প্রবাসীর বুকে কষ্টের আগুন বিরহের আগুন,এই কষ্টের অসহ্য যন্ত্রনা প্রবাসী ছাড়া আর কেউ বুঝবে না।আমাদের প্রতিদিনের কষ্ট কাহিনী অনেকেই জানে না, বেশীর ভাগ সময় আমরা নিজেই প্রকাশ করতে সাচ্ছন্দ বোধ করি না কারন কষ্টের কথা যন্ত্রনার কথা প্রকাশ করাও এক ধরনের কষ্ট।আমাদের বুকের যন্ত্রনা প্রতিটি ক্ষন মূহুর্তে অন্তরে অন্তরে অবলীলায় আমাদেরকে কাঁদিয়ে যায়। আমাদের চোখের জল চোখেই শুকায়, কেউ আদর করে মুছে দেয় না। বেঁচে থাকার জন্য, ভালো থাকার অভিনয় করে নিজেই নিজের সাথে ছলনা করি। দেশের পরিবার পরিজন যাহাতে ভালো থাকতে পারে এই চিন্তা মাথায় রেখেই আমাদেরকে অভিনয় করে হলেও সুখী মানুষের মত অভিনয় করতে হয়। একজন প্রবাসী আরো একজন প্রবাসীর সাথে যেভাবে জীবনের দুঃখ যন্ত্রনা ভাগাভাগি করে আপন পরিবার পরিজনের সাথে এই ভাবে প্রান খোলে কথা বলতে পারে না। কারন মাত্র একটা “পিছনে রেখে আসা মানুষ গুলো সুখে থাকুক আমাদের কষ্ট যেন ওদেরকে স্পর্শ করতে না পারে” দেশের মানুষ শুধুই আমাদের সুন্দর সাস্থ্য আর হাসি মাখটাই দেখে, তাই আসল সত্যটা হাসি আর চোখে দেখা সুখের আবরনে ঢাকা পড়ে যায়।আর এক ধরনের ভূ্ল ধারনা বদ্ধমূ্ল হয়।
প্রবাসে টাকা আছে তবে সুখ যে নেই তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। সবার ধারনা প্রবাস মানেই হলো সুখ আর সুখ। বাস্তব সত্য হলো আমরা নামে মাত্র শুধু বেঁচে থাকি তবে বেঁচে থাকার স্বাদ আমাদের ভাগ্যে নেই। ভালোবাসাহীন জীবন নিয়ে বুক ভরা কষ্টের পাহাড় নিয়ে সুখের আশে পাশেও যাবার ভাগ্য হয় না আমাদের। মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা বেঁচে নেই যাকে বলে জিন্দা লাশ। আমরা প্রবাসীরাও এক একটা জিন্দা লাশ। যে সুখের আশায় রক্ত বাঁধনের মানুষ গুলোকে পিছনে রেখে একদূর পথ পাড়ী দিলাম কিন্তু সুখের মুখ দেখা হলো না। বুক ভরা শুন্যতার শুন্যস্থান সঠিক ভাবে পুর্ণ হলোনা। কষ্ট আর হাহাকার বুকে নিয়ে সুখের আশায় বৃথা এই দৌড় ঝাঁপ দিতে দিতেই আমাদের জীবনে প্রদীপ নিভে যায়। (প্রবাসে কিছু মানুষ আছে যারা আমাদের মত অসুখী নয়, তাদের টাকা পয়সা সবই আছে তবে ওরা সংখ্যায় খুবই কম ওদের কথা আলাদা। আবার এই সুখী মানুষের অসুখের কাহিনীরও শেষ নেই) টাকা পয়সা সব সময় অসুখীর মূল বষ্য নয়। জীবনে টাকার প্রয়োজন তা আমি অস্বীকার করবো না, জীবনে টাকার প্রয়োজন আছে, জীবনকে সুন্দর ভাবে সাজাতে হলে টাকা অগ্রনী ভূমিকা পালন করে থাকে। টাকা যে আবার সব সমস্যার সমাধান তাও স্বীকার করবো না। যেখানে মানুষের প্রয়োজন সেখানে টাকা একেবারে অর্থহীন হয়ে যায়। জীবনে সুখী হবার জন্য হিসাবের কিছু বিষয় আছে আমাদের জ়িবনে প্রতিফলিত না হলে আমরা সুখের মুখ দেখতে পাই না। প্রবাসীরা কোন সময় পরিপূর্ন সুখী হবার স্বপ্ন দেখে না।
আমাদের চাহিদা একেবারে সিমীত, পরিবার পরিজন নিয়ে এক চিলতে হাসি ভাগাভাগি করে একই ছাদের নিচে হাতে হাত ধরে বসবাস করা। সুখে দুঃখে ভালোবাসার মানুষের বুকে মাথা রেখে আগামীদিনের স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকা। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আজ আমরা প্রবাসী, হিসাবের সুখটুকু আমাদের ভাগে আর পড়ে না। কাংগালের মত মানুষের সুখ দেখে দেখেই বেঁচে থাকতে হয়, চোখের জলে বুক ভাসাতে হয় দিনের পর দিন রাতের পর রাত। অনিশ্চয়্তার মাঝে কেটে যায় আমাদের জীবনের এক একটি দিন রাত বড়ো অবহেলায় বড় অনাদরে। বুকের মাঝে সমাহীত কষ্ট গুলো বুকের মাঝেই কেঁদে কেঁদে মরে। আমাদের চারপাশে শান্তনা দেবার কেউ নেই, আমাদের মা নেই ভাই বোন কেউ নেই যার সাথে এক দুঃখ কষ্টের কথা বলবো। সারাদিন কাজ শেষে বাসায় ফিরে যখন শুন্য চার দেয়ালের মধ্যে রাত পোহাতে হয় তখন শুরু হয় কাংখীত জীবনের চুলছেড়া হিসাব কিতাব। যোগ বিয়োগের হিসাব আর মিলে না, বড় ধরনের গড়মিল দেখা দেয়, হাহাকার ভরা অশান্ত মন হু হু করে কেঁদে উঠে গন্ড বেয়ে যন্ত্রনার বিষাক্ত জল ঝরতে থাকে। যন্ত্রনা ভূ্লে থাকার এই সহজ উপায় প্রতিটি প্রবাসী ভাই বোন বেশ ভালো করে রপ্ত করেছেন যা অনেকেই জানে না।
বিষয়: বিবিধ
১৯৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন