‘’রক্তের বিনিময়ে প্রাপ্ত কাঁঠাল এবং ডিজিটাল ফিল্টারের সফটওয়্যার আপডেট’’
লিখেছেন লিখেছেন বান্দা ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০২:২৩:৩৭ দুপুর
গতকালকের দুটি ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু নিষিদ্ধ(!) কথা বলা প্রয়োজন মনে করে নিষিদ্ধ ফেসবুকের সাহায্য নিলাম। কারণ আপাতত নিজের ভাবনা শেয়ার করার মত অন্য কোন ভাল মাধ্যম নাই।
প্রথমটি হল, এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তার পরীক্ষার খাতায় কাঁঠালের রচনা লিখতে গিয়ে অসংখ্য ভুল বানানে লিখেছে কাঁঠাল মুক্তিযুদ্ধ করে, রক্তের বিনিময়ে প্রাপ্ত ফল। এটা বীরের ফল এইরকম আরও কিছু কথা। মজার ব্যাপার হল শিক্ষক এতে নাম্বারও দিয়েছে। হাসি তো আসেইনি বরং আতঙ্কিত হয়ে যাচ্ছি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অবস্থা কি হবে সে চিন্তায়। ভারতীয় এক লোক ইংরেজি পরীক্ষায় কিছু না পেরে একটি গরুর ছবি এঁকে নিচে লিখে দিয়েছিল, ‘’গাই হামারা মাতা হ্যায়, আংরেজি নেহি আতা হ্যায়’’। তার আশা ছিল হিন্দু শিক্ষক গরুকে দেবতা মনে করে কাটবে না এবং তাকে পাশ করিয়ে দেবে। কিন্তু শিক্ষক একটি বলদের ছবি এঁকে নিচে লিখে দিল ‘’বলদ তোমহারা বাপ হ্যায়, নাম্বার দে না পাপ হ্যায়’’।
বাংলাদেশী শিক্ষকেরা ভারতীয়দের মত সাহস করে উঠতে পারেনি। তাই চেতনাকে কাটার সাহস হয়নি। উল্টা নাম্বার দিয়ে দিয়েছে। নয়ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ফিল্টারে আটকে মামলা খেয়ে বসত। অথবা হতে পারে ছাত্রটি কোন নেতার আত্মীয়। মানুষকে যখন ক্ষমতা ও তা প্রয়োগের যথেচ্ছ স্বাধীনতা দেয়া হয় তখন মানুষ কি করবে ভেবে পায় না। একসময় নিজে ধর্ম চালু করার সাহস দেখায় আর ধ্বংসের ঠিক আগে নিজেকে খোদা দাবী করে। এর ভিতর সে জনগণের প্রতিটি কাজে এমন তদারকি করে যাতে তার বিরুদ্ধে কোন শব্দ কেউ উচ্চারণ না করতে পারে। ফেরাউন যেমন শিশু জন্ম হচ্ছে কিনা তা দেখত। এখন আমাদের সরকার প্রতিটি মানুষের উপর গোয়েন্দা নজরদারী করছে, মসজিদে করছে, বাচ্চাদের শিক্ষা পাঠক্রমে এমন পরিবর্তন এনেছে যে বাচ্চারা রক্তের বিনিময়ে কাঁঠাল পায় আর শিক্ষকরা ঐ কাঁঠালের সত্যায়ন করে।
আহা! হয়ত কিছুদিন পর চেতনা আরও পরিপক্ক হবে। আর আমাদের বাচ্চাদের কারিকুলামে হাসি কান্নার চেতনাময় পদ্ধতি আবিষ্কৃত হবে। কেবল বাংলায় হা হা করে হাসতে হবে, বড়জোর ইংরেজিতে হি হি করে হাসবে কিন্তু হে হে করে হাসা যাবে না। কারণ উর্দু ভাষায় বাক্যের শেষে প্রায় হে থাকে। অথবা হে হে করে হেসে ব্র্যাকেটে সাব টাইটেল দিতে হবে, ‘’এটা হিন্দি ছিল’’। পরিচিত এক দাঁড়ি ওয়ালা বড় ভাই প্রায় হে হে করে হাসিওয়ালা কমেন্ট করেন। ভাই সাবধান, আপনার খবর আছে। একিভাবে বাংলায় আ আ করে কাঁদতে হবে কিংবা ইংরেজিতে ই ই ই করে কাঁদতে হবে। হুঁ হুঁ করে কাঁদা যাবে না। এটা উর্দু কান্না হিসাবে চেতনার ফিল্টারে আটকে যাবে।
দ্বিতীয়টি হল, গায়ক হায়দার হোসেনের গীতের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করছে চেতনাধারীগণ। যদিও ঐ গান একসময় চেতনার উৎস ছিল। কিন্তু সময় যত আগাচ্ছে, চেতনার ফিল্টারের সফটওয়্যার আপডেট হচ্ছে আর আরও সুচারুরূপে চেতনার সংজ্ঞা আবিষ্কৃত হচ্ছে। হায়দার সাহেব নিজে লম্বা দাঁড়ি রাখলেও চিন্তায় সেকুলার বলেই জানি। কিন্তু সেকুলারিজমের আওয়ামী ব্যাখ্যা ঠিক আত্মস্থ করতে না পেরে ধরা খেয়ে গেলেন। চেতনা ধর্মের কালেমা হল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও হাজার বছরের বাঙ্গালী ঐতিহ্য তবে কেবল হিন্দুয়ানী বাঙ্গালী। আর এই ধর্মের ইবাদাত হল বটমূলে আসন গ্রহণ, বেদীতে পুষ্প প্রদান আর কবিতা গীতে চেতনার চর্বিত চর্বণ, ঘর্ষণ মর্দন। তা এত খারাপ অবস্থায় পৌঁছে গেছে যে প্রতিটি দমে কালেমা উচ্চারণ না করলে আপনি দুর্বল ঈমানদার। তাছাড়া শাসক হিসাবে সবার উপরে থাকা চেতনা ধর্মের প্রবর্তকদের তৈল মর্দন, প্রশংসাবাক্যে সিক্ত না করলে সে প্র্যাকটিসিং বা ধার্মিক বিবেচিত হবে না। পূর্বযুগে রাজাগণ মোসাহেব, সভাকবি এসব পোস্ট রাখত। তাদের কাজ ছিল কেবল রাজার প্রশংসা করা বাক্যে, কর্মে, গীতে। এখনকার কবি, মোসাহেব নির্দিষ্ট পোস্ট ধারণ করে না তাই একের জায়গায় শত শত সভাকবি দেখা যায় শাসকের স্তুতিবাক্যে মত্ত।
হাজার বছরের বাঙ্গালী বলা হলেও হাজার বছরের ইতিহাস কেবল ৭১ এ এসে থেমে যায়। এর আগে কোন ইতিহাস নেই, এর আগের কোন শাসক, নেতা, পদ্ধতি কিছুই নেই। ভারতীয় লেখক রামচন্দ্র গুহ একপ্রকার অবাক হয়ে লিখেছেন যে ভারতীয়রা যদিও গান্ধীকে গান্ধী বলে ডাকতে পারে কিন্তু বাংলাদেশে নেতার নাম ধরে ডাকাও অপরাধ বিবেচিত হয়। আমিও নাম নিই নাই কিন্তু ।
সকল প্রশংসা কেবল সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার এটা প্রতিটি মুসলিমের আকিদাগত বিশ্বাস। অহংকার, নিজস্বতা, প্রশংসা এসব কেবল সৃষ্টির মালিকের সাথেই যায়। সৃষ্ট জীব তো উনার ইশারাতেই চলেন। সৃষ্ট জীব হিসাবে মানুষ কেবল ইচ্ছা প্রকাশ ও কর্ম সম্পাদনের চেষ্টা করে যেতে পারে যাতে তার ঐ চেষ্টা আল্লাহ্ কবুল করে তাকে মাফ করে দেয়। কিন্তু সমস্ত কাজ ও কাজের ফলাফল কেবলমাত্র আল্লাহর ইচ্ছাধীন। নিজেকে খোদা দাবী করার জন্য বলতে হয় না যে, আমিই খোদা। বরং আল্লাহর নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলো নিজের উপর প্রয়োগ করার দুঃসাহস দেখানোকেই নিজেকে খোদা দাবী করা বলা হয়। ফেরাউন তার সভাসদদের উদ্দেশ্যে কি একি রকম কথা বলেনি?
وَقَالَ فِرْعَوْنُ يَا أَيُّهَا الْمَلَأُ مَا عَلِمْتُ لَكُم مِّنْ إِلَهٍ غَيْرِي فَأَوْقِدْ لِي يَا هَامَانُ عَلَى الطِّينِ فَاجْعَل لِّي صَرْحًا لَّعَلِّي أَطَّلِعُ إِلَى إِلَهِ مُوسَى وَإِنِّي لَأَظُنُّهُ مِنَ الْكَاذِبِينَ
ফেরাউন বলল, হে পরিষদবর্গ, আমি জানি না যে, আমি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য আছে। হে হামান, তুমি ইট পোড়াও, অতঃপর আমার জন্যে একটি প্রাসাদ নির্মাণ কর, যাতে আমি মূসার উপাস্যকে উকি মেরে দেখতে পারি। ...সে একজন মিথ্যাবাদী। -সুরা কাসাস ৩৮
ফেরাউন কিন্তু একজন স্রষ্টা আছে তা মানত। কিন্তু আইন প্রণয়ন থেকে শুরু করে নিজেকে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বলত। মানে আল্লাহর উলুহিয়াত স্বীকার করত না। ইতিহাস ফেরাউনের মত আরও অনেক শাসকের নির্মম পরিণতির সাক্ষ্য দিলেও ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না, নিবে না এটাই বাস্তব সত্য। তবে আমাদের চিন্তা করতে হবে আমরা কি ফেরাউনের অনুসারীদের মত নীল নদে ডুবে মরতে চাই যাদের ঠিকানা জাহান্নাম? নাকি সত্য কথা বলে প্রয়োজন হলে ফেরাউনের হাতে মরতে চাই যার ফলাফল জান্নাতুল ফিরদাউস?
সংগৃহীত
বিষয়: বিবিধ
১৭৫০ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সত্যের বিজয় অনিবার্য,
মিথ্যার বিণাশ অবশ্যম্ভাবী,
সত্যের সাথে থাকাই "মানুষ"এর কর্তব্য!!
সুন্দর লেখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমাদের বোধোদয় হোক। শিক্ষা নিয়ে আমারও একটা লেখা আছে ইচ্ছে হলে পড়তে পারেন এখান থেকে- সাত নাম্বার বিপদ সংকেত
Akm Wahiduzzamanএর ফেসবুক থেকে
অনেক ধন্যবাদ
আমরা জীবন দিলেও জান্নাত পাব বলে মনে করিনা, বড় জোর আরাফ পেতে পারি কারণ কুড়ুলটাতো আমি আপনি বা আমাদের বাপ চাচারাই পায়ে মেরেছে৷ মানে মুক্তযোদ্ধা হয়ে লাঠিটা তাদের হাতে দিয়েছি৷ এখন আমাদেরই পেটাই আল্লাহই করাচ্ছেন৷ কেননা আল্লাহই সব কাজ সম্পাদন করেন৷ ধন্যবাদ৷
মন্তব্য করতে লগইন করুন