"নারী নির্যাতন" এর দায়ভার ইসলামের উপর চাপানো যুক্তিযুক্ত নয়
লিখেছেন লিখেছেন বান্দা ০৯ মে, ২০১৫, ১২:৪৪:৫৮ দুপুর
যেহেতু সমাজ চালনা এবং কর্তৃত্বের সাথে বর্তমানে ইসলামের আর কোন যোগসূত্র নেই, তাই মুসলিম ভূখণ্ড গুলোর অগণিত সমস্যার দায়ভার ইসলামেরও হতে পারে না, এ দায়ভার নিতে হবে জাতীয়তাবাদী সেকুলার ডেমোক্রেসির। বর্তমানে মুসলিম দেশ সমূহের এরকম একটি সমস্যা হল "নারী নির্যাতন", যার জন্য পশ্চিমা প্রেসক্রিপশন হচ্ছে তথাকথিত "নারী মুক্তি ও আন্দোলন"। প্রথমেই বলে নেয়া ভাল "নারী মুক্তির" ধারনাটা খুবই অস্বচ্ছ। অতি অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নারী মুক্তির ডিসকোর্স চালু রয়েছে অর্থাৎ বস্তুবাদী দুনিয়ায় অর্থই নারীদের জন্য মুখ্য, কিন্তু সামাজিক এবং পারিবারিক ফ্যাক্টরগুলো বিবেচনায় আনা হয় না। যেমন, একবার বিশ্ব ব্যাংকের একটি গবেষণা পত্র পড়ছিলাম যেখানে বলা হচ্ছিল অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতা মেয়েদের সংসার এখন অনেক ভঙ্গুর - স্বেচ্ছায় মেয়েদের ডিভোর্স দেয়ার মাত্রা বেড়ে গেছে। তাই অর্থনীতিবিদ এবং সামাজিক বিশ্লেষকরা প্রশ্ন করেন এটাকে নারী উন্নয়ন বলব কিনা যেখানে মেয়েরা তাদের সংসার টেকাতে পারছে না যার প্রভাব গিয়ে পরছে পরবর্তী প্রজন্মের ওপর। সব ক্ষেত্রে Stuart Mill দের নারী-পুরুষ সমতার আলোচনা টেনে আনলেই কিন্তু সমস্যার সমাধান হবে না কারন সমস্যা মানেই শুধু "অসমতা" না, আরও ব্যাপক এই আলোচনা।
আর যে পশ্চিমারা নারী সমস্যার সমাধান নিয়ে আসছে তাদের দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমতা তো আছেই, কিন্তু তার পরেও কি বলব যে তাদের নারীরা স্বাধীন?!
আজকেই পত্রিকায় এসেছে মার্কিন থিংক ট্যাংক র্যান্ড করপোরেশনের একটি জরিপঃ ২০১৪ সালে আমেরিকার সেনাবাহিনীতে ২০ হাজারের বেশি যৌন হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে। অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ঘটনাও এর মধ্যে রয়েছে বলে একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে। যৌন নির্যাতনের শিকার ৫৪ শতাংশ বলেছেন, তাদের চেয়ে উচ্চ পদের সেনা কর্মকর্তারা এ সব যৌন হেনস্তার সাথে জড়িত ছিলেন। ৬৫ শতাংশ যৌন হেনস্তার ঘটনা জাহাজ বা সেনা স্থাপনায় ঘটেছে বলে এ সমীক্ষায় উঠে এসেছে। এ ছাড়া, পুরুষের চেয়ে নারীরা বশি যৌন হেনস্তার মুখে পড়েছে বলেও এ সমীক্ষায় দেখা গেছে। মার্কিন সেনাবাহিনীতে যৌন নির্যাতন একটি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে এবং নারীরাই সাধারণভাবে এ ধরনের নির্যাতনের বেশি শিকার হয় বলে র্যান্ডের গবেষণায় দেখা গেছে
তাই "উন্নয়ন", "নির্যাতন" এই টার্ম গুলোকে যে পশ্চিমারা কয়েন করেছে সেগুলোর মর্মার্থ আগে বোঝা উচিৎ। আদৌ কি পশ্চিমাদের কাছে এসব সমস্যার কোন সমাধান রয়েছে, নাকি তারা নিজেরাই সেগুলোতে জর্জরিত। খিলাফতের পতনের পর আমাদের ভূখণ্ড গুলোকে ৫০ টুকরা করা হল (জাতীয়তাবাদ), বিভিন্ন টুকরা গুলো চলছে কার্যত পশ্চিমা আদর্শ ও চিন্তা দ্বারা। সেটারই অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হচ্ছে আমাদের নারীদের নানাবিধ আর্থ-সামাজিক দুরাবস্থা। তাই যারা "নারী মুক্তির" ধারণা দিচ্ছে তারা নিজেরাই আসলে "নারী নির্যাতন" করে যাচ্ছে, আবার তাদের কাছেই আমরা ধরনা দিচ্ছি প্রেসক্রিপশনের জন্য!!
বিষয়: বিবিধ
১৩৩১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন