আবেগেও আমরা বিভক্ত

লিখেছেন লিখেছেন বান্দা ১৮ মার্চ, ২০১৫, ০৫:৩৫:২৬ সকাল



হতাশার সাথে একটা বিষয় সবসময় লক্ষ্য করি। ফিলিস্তিনে যখন ইসরায়েলি আক্রমন শুরু হয় তখন বাংলাদেশের বাম দলগুলো থেকে শুরু করে ইসলামিস্ট পর্যন্ত সকলেই প্রতিবাদী হয়ে উঠে। কিন্তু মার্কিন মদদপুষ্ট সিরিয়ার আসাদ বাহিনীর আক্রমণ মানবতার ইতিহাসের অন্যতম বর্বর আক্রমণে পরিণত হওয়ার পরও আমাদের দেশের ইসলামিস্টরা সেই অঞ্চলের উম্মাহর হাহাকার ও আর্তনাদের সমাধান নিয়ে আলোচনা করেন না।

ফিলিস্তিন আর সিরিয়া কিন্তু কাছাকাছি। তারপরেও কেন একদেশের মুসলিমদের জন্য এতো টান আর পাশের দেশটার জন্য একটা স্ট্যাটাসও শেয়ার দেয়া যায় না?! চিন্তা করে দেখেছেন কি কেউ?

একটা শক্তিশালী কারন হচ্ছে ফিলিস্তিনের মুসলিমদের জন্য কান্না করাও আমাদের শিখিয়েছে পশ্চিমা চিন্তাবিদরা (বিশেষ করে এডওয়ার্ড সাঈদ ও তার একোলাইটরা)। এডওয়ার্ড সাঈদ নিজেও কিন্তু ছিল ফিলিস্তিনি এবং ফিলিস্তিন নিয়ে তার লেখা তুমুল হট্টগোল সৃষ্টি করেছিল খোদ আমেরিকাতে। ইসরায়েলি দখলদারিত্বের করুন শিকার কিন্তু ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানরাও। স্বয়ং আমেরিকাতে খ্রিস্টানদের একটা অংশ এন্টি-ইহুদী। বিখ্যাত মার্কিন ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট (যার নামে আছে বিশ্বখ্যাত কার প্রস্তুতকারী কোম্পানি) Henry Ford এর লেখা একটি কুখ্যাত ইহুদি-বিরোধী বইও এক সময় হাতে পেয়েছিলাম The International Jew নামে। তাই শুধু মুসলিমরা না বরং খ্রিস্টানরাও এই বর্বরতার শিকার দেখে ফিলিস্তিন নিয়ে আমরা এতো সরব থাকি। সিরিয়া শুধু মুসলিমদের প্রজেক্ট; তাই আমাদের শেখানো হচ্ছে না ফিলিস্তিনের মতো এক্ষেত্রেও এতো মাতামাতির।

এক বার্মার মুসলমানদের ওপর পাশবিক জুলুমের সময়ও আমাদের অনেক “জাতীয়তাবাদী ইসলামিস্ট” অথবা “জাতীয়তাবাদ-দ্বারা-মনের-অজান্তেই-আক্রান্ত-ইসলামিস্ট”-দের যে ভুমিকা দেখেছি, তাই এটা খুবই অস্বাভাবিক না যে, দুরের ফিলিস্তিনের জন্যই শুধু আমাদের মন কাঁদে কিন্তু পাশের রোহিঙ্গাদের জন্য না?! মুসলমানদের জন্য কখন কান্না করবো আর কখন করবোনা তাও শিখতে হচ্ছে পশ্চিমাদের থেকে!

রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছিলেনঃ

"المسلمون تتكافأ دماؤهم، ويسعى بذمتهم أدناهم، وهم يد على من سواهم"

“সকল মুসলমানদের রক্ত হল এক সমান, তাদের ভেতরের অধীনস্তরা অন্যের সুরক্ষায় থাকবে এবং তারা একে অপরে হল এক ও অভিন্ন”

শুধু গ্লোবালাইজেশন চিনলেন, কিন্তু গ্লোবাল উম্মাহ কন্সেপ্ট বুঝলেন না

বিষয়: বিবিধ

১২৭০ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

309599
১৮ মার্চ ২০১৫ সকাল ০৬:২৭
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে প্রকৃত সত্য তুলে ধরেছেন।

আমাদের অনুভূতিগুলোও আজ পার্শিয়াল হয়ে গেছে। যখন অমুসলিমদের হাতে মুসলমানদের মরতে দেখি আমাদের বুক ভেঙ্গে যায় কিন্তু মুসলমানের হাতে মুসলমানের নির্বিচারে মরণ আমাদের ভাবায় না!

প্রতিবাদী মনতো সব সময়ই প্রতিবাদী হয়ে উঠে, অন্যায়ভাবে যেই মারুক আর যেই মরুক, হোক সে মুসলমান অথবা অন্য ধর্মালম্বী, সর্ববস্থায় প্রতিবাদ করা প্রতিবাদী মনের দাবী।
সুন্দর লিখেছেন। ধন্যবাদ
১৮ মার্চ ২০১৫ রাত ০৮:১১
250695
বান্দা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান
309631
১৮ মার্চ ২০১৫ দুপুর ১২:৪২
আবু জান্নাত লিখেছেন : হাদিসের বাণীগুলো আজ মুসলিম জাতি ভুলতে বসেছে। কথায় কথায় উদৃতি দেওয়া অমুক বিজ্ঞানী এটা বলেছেন, তমুক বিজ্ঞা সেটা বলেছেন। কিন্তু মুসলমানদের জিবন চলার পাথেয় হারিয়ে ফেলেছে। তাই আজ মুসলমান আছে সত্য কিন্তু মুসলমানিত্য নেই। সিরিয়া, জর্দান, মিসর, ফিলিস্তিন ও ইরাকের দিয়ে তাকিয়ে দেখুন খৃষ্টানদের কালচার যেমন মুসলমানদেরও তেমন। আজ আমাদের কৃতকর্মের কারণে আমাদের এই করুণাবস্থা। জাযাকাল্লাহ খাইর।
১৮ মার্চ ২০১৫ রাত ০৮:১১
250696
বান্দা লিখেছেন : আজ আমাদের কৃতকর্মের কারণে আমাদের এই করুণাবস্থা।
309675
১৮ মার্চ ২০১৫ বিকাল ০৪:৪৩
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : আসল কারণটা অন্য জায়গায়। বাস্তবতা হল সিরিয়ার শিয়া আসাদ ও তার শিয়া সেনাবাহিনী, ইয়েমেনের শিয়া হুতি, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইরাকের শিয়া মালিকি সরকার ও শিয়া আর্মি, মুকতাদা আল সদরের শিয়া মিলিশিয়া বাহিনী এরা সবাই ইরানের দ্বারা সৃষ্ট। তাদের আর্থিক, সামরিক সব রকম সাহায্য আসে ইরান থেকেই। সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরু হবার সাথে সাথে ইরান তার নিজস্ব সেনাবাহিনী পাঠায় আসাদের সাহায্যে, হিজবুল্লাহকে ডেকে আনে যে কোন মূল্যে সিরিয়ায় শিয়া আসাদের নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য। শিয়া জোটের হামলায় ৩ বছরে ৩,০০,০০০ এর অধিক মানুষ গণহত্যার শিকার হয়েছে। হাজার হাজার সুন্নী নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। রাসায়নিক অস্ত্র ব্যাবহার করে হত্যা করা হয়েছে হাজার হাজার সুন্নী শিশু যা এখনো চলমান। সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে সিরিয়ায় গড়ে প্রতিদিন ৭ জন শিশু হত্যার শিকার হচ্ছে। গতপরশুদিনও আসাদ বাহিনী রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যাবহার করে ইদলিবে হামলা চালিয়েছে। আইএসআইএস এর সাথে যুদ্ধে ইরাকের শিয়া মিলিশিয়া বাহিনীগুলোকে ইরান অস্ত্র সহায়তা ও সামরিক প্রশিক্ষণ ছিচ্ছে। ইরান তাদের সামরিক বাহিনীর অনেক উচ্চপদস্হ কর্মকর্তাকে ইরাকে পাঠিয়েছে ইরাকি বাহিনীর সামরিক পরামর্শক হিসেবে। আইএসআইএস যখন মসুল দখল করে ইরান তখন নিজের সেনাবাহিনী পাঠিয়ে দেয় বাগদাদ রক্ষার জন্য। বর্তমানে ইরান মার্কিনিদের সাথে পরমাণু ইস্যুতে আলোচনায় বসেছে, দূরত্ব কমিয়ে আনছে এমন অবস্হাতে হটাৎই জন কেরি ঘোষণা দিয়েছে তারা আসাদের সাথে সমঝোতার চিন্তা করছে। আমরা দেখেছি আফগান ও ইরাক যুদ্ধে মার্কিনিরা ইরানের সাহায্য পেয়েছে যদিও বলা হয় তারা শত্রু কিন্তু আসলেই কতটা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেই। তারা পাবলিক এনেমি কিন্তু প্রাইভেট ফ্রেন্ড। তার মানে এটা বাস্তবতা ইরান তার শিয়া নেতৃত্বকে মিডলইস্টে প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং সুন্নী নিধনই তার প্রধান লক্ষ। কিন্তু যে কোন আজানা কারণেই বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী নেতৃত্ব ইরানের প্রতি অনুরক্ত। তারা ইরানকে ইসলামের মানদন্ড ভাবেন। আমার মনে আছে গত বছর ফেসবুকে একটা লেখা পোস্ট করেছিলাম ইরান ও আমেরিকা ও ইজরাইলের সম্পর্ক নিয়ে। শিবিরের ভাইরা আমাকে যাচ্ছেতাই ভাবে গালাগালি করেছিলেন। মেসেজে অনেক ফালতু কথাও বলেছিলেন। একজনের মন্তব্য ছিল ইরান হল ইসলামের পতাকাবাহী আর হিজবুল্লাহ হল প্রকৃত মুজাহিদ। এই হল বাস্তবতা। সিরিয়া ইস্যু নিয়ে এজন্যই মডারেট ডেমোক্রেটিক ইসলামিক দলটি সবসময় চুপ থেকেছে। ইরানকে অখুশি তারা করতে চায়না। এটাই রহস্য।
১৮ মার্চ ২০১৫ রাত ০৮:১২
250697
বান্দা লিখেছেন : মনে হচ্ছে সঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ। মিডিয়া আমাদেরকে অন্ধকারে রাখে
309679
১৮ মার্চ ২০১৫ বিকাল ০৪:৫৮
সামছুল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১৮ মার্চ ২০১৫ রাত ০৮:১২
250698
বান্দা লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ
309747
১৯ মার্চ ২০১৫ রাত ০১:৪৩
আফরা লিখেছেন : আলোচনা খুব সুন্দর হয়েছে ।ধন্যবাদ ভাইয়া ।
২১ মার্চ ২০১৫ রাত ১২:১৭
251138
বান্দা লিখেছেন : জি সত্য উপস্থাপন করা হয়েছে এখানে। মুসলিমকে ভেতর থেকে বিভক্ত করার নানান চক্রান্ত রয়েছে। পূর্বে মুসলিমরা ভাবত তারা একটা দেহ,আর এখন ভাবে ওরা ওদেশী,আমরা এদেশী...ফলে তাদের ব্যাপারে নিজেদের দায়িত্ব উপেক্ষা করে। এটাই কাফিরদের বিশাল সফলতা। আপনাকে ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File