লেখাটা মনে ধরেছে, একটু পড়ে দেখেন,দারুন

লিখেছেন লিখেছেন বান্দা ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১০:৩৭:২৭ সকাল



মানুষ অত্যধিক কলহপ্রিয়। অবিবাহিত পোলাপাইন! অথচ, আলাপ করতেছে সন্তানদের কোথায় পড়াবে, কি করাবে ইত্যাদি নিয়ে! থীওরেটিকাল আলোচনা চলতে চলতে সন্তানদের প্রফেশন পর্যন্ত চলে গেছে!

অমুক - “আমি ছেলেকে মাদ্রাসায় পড়াতে চাই (নিয়তের জন্যও নিঃসন্দেহে আজ্‌র [পুরষ্কার, আল্লাহর পক্ষ থেকে] লেখা হয়ে গেল!)”

তমুক -“আচ্ছা সব মানুষ যদি মাদ্রাসায় পড়ে তাহলে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার কে হবে?”

অমুক -“ওকে, তাহলে তুই ডাক্তারি পড়া, আমি মাদ্রাসায় পড়াই।”

দুই বন্ধুর সন্তান হওয়া দূরে থাক, কেউ বিয়েই করেনি। তবে হ্যাঁ, সামান্য নিয়তের কারণেও তাদের মধ্যে বিশাল পার্থক্য হয়ে গেল। একজন শুধু আলোচনাই করল, আরেকজন সেখান থেকেও আজর উঠিয়ে নিল নিজের সন্তানকে মাদ্রাসায় তথা আলেম বানানোর ইচ্ছা করে।

আসলে মূল সমস্যাটা হচ্ছে, আমার কাছে কোনটা সবচেয়ে দামী বলে মনে হয়।

অজুহাতের অভাব নেই। আসুন, নিজেদেরকে প্রশ্ন করি, যদি আমার সামনে দশটা টাকার ব্রিফকেস থাকে, যার সবগুলো নেয়াই আমার জন্যে হালাল, যার কমটাতে আছে ১০০ টাকা আর বেশিটায় আছে ১০০০ টাকা। মাত্র ৯০০ টাকার ডিফারেন্স! কোনটা নিবেন?

কেউ বলবে না, আমি ১০০ টাকারটা নিব, সবাই মাত্র ৯০০ টাকার কমবেশ এর জন্যেও লস করতে চাই না।

কিন্তু যদি বলা হয়, আচ্ছা হাদীস থেকে দেখলাম, যে চারজন জান্নাতী নারী অন্যান্য জান্নাতী নারীদের শ্রেষ্ঠ,সর্দারনী, তারা তো হলেন একজন আদর্শ স্ত্রী (খাদিজা), একজন আদর্শ সন্তান লালনপালনকারী-মা (মারিয়াম, আছিয়া), একজন আদর্শ কন্যা (ফাতিমা)।

- তারা জান্নাতী নারীদের সর্দারনী হয়েছেন ঘরের কাজ করেই !

ঘরের বাইরে পুরুষদের মত কোন কাজ তারা করেননি, একসাথে নারী পুরুষ কাজ তো প্রশ্নই আসে না !

এখন আপনি যদি একজন নারী হয়ে থাকেন-তাহলে নিজের জন্য কোনটা পছন্দ করবেন?

জান্নাতী নারীদের সর্দারনীর কাজকে পছন্দ করবেন? নাকি এই জাহেলি যুগে পুরুষদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পেশাগত জীবনের উৎকর্ষতাকে (!) বেছে নিবেন। “আরে, দাঁড়াও-দাঁড়াও- এত যে কথা বলছ, নিজের বাচ্চা ডেলিভারি করানোর সময় তো ঠিকই মহিলা ডাক্তার খুঁজতেছিলা, সব মেয়ে যদি ঘরে থাকে, তাহলে মহিলা ডাক্তার নার্স কই পাই!”

- ওকে, তুমি তাহলে মহিলা ডাক্তার নার্স হও, আর আমি একজন আদর্শ স্ত্রী, কন্যা আর মায়ের ভূমিকা পালন করি?

দুইটা কাজের চূড়ান্ত ফলাফল- ultimate success এর লেভেল দেখেও যদি নিজের জন্য উত্তম বেছে নিতে না পারি, তাহলে আর কথা বাড়িয়ে কি লাভ !

ঘরের কাজের মর্যাদা কি? জান্নাতের নারীদের সর্দারনী হওয়া! এটা মাত্রই বলেছি, আসুন আরেকটু প্রাকটিক্যাল উদাহরণ দেখি,

ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ঘরের কাজ করে ক্লান্ত, হাতে ফোসকা পড়ে গেছে, পিতার ঘরে এসে মুখ ফুটে বলতে পারলেন না। ফিরে গেলেন, “কেন এসেছো?” - আপনাকে সালাম করতে এসেছি।

আলী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু একটু পর নিজে স্ত্রী ফাতিমাকে নিয়ে এলেন- বললেন –কাজে কর্মে সহায়তার জন্য ফাতিমার একজন দাসী দরকার।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর কসম করে বললেন, তিনি তাদেরকে একটি দাসীও দিবেন না, তিনি অন্যত্র তাদেরকে নিয়োজিত করে দিলেন।

সন্ধ্যার পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই এলেন। নিজের কন্যার কষ্টের কথা ভুলে যাননি, তাই একজন দাসীর মাধ্যমে তাদেরকে উপকৃত করার চেয়েও উত্তম কিছু নিয়ে এলেন, সেটা কি ছিল? ফাতিমার ঘরের কাজের কিছু অংশ দূর করে দেয়া? কমিয়ে দেয়া??

... আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্য ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা গম পেষার চাক্কি ঘুরানোর কারণে ফোস্কা পড়া হাত নিয়ে তার কষ্টের কথা ব্যক্ত করলেন এবং একজন খাদেম দাবি করলেন, যে এসব কাজে তাঁকে সহযোগিতা করবে; তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় কন্যাকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ

“আমি তোমাদেরকে এমন একটি আমলের কথা বলে দেবনা, যা তোমাদের জন্য একটি খাদেমের চেয়েও অনেক বেশি উত্তম? যখন তোমরা শয্যা গ্রহণ করতে যাবে, তখন তোমরা ‘আল্লাহু আকবার’ তেত্রিশ বার, ‘সুবহানাল্লাহ’ তেত্রিশ বার এবং ‘আলহামদু লিল্লাহ’ তেত্রিশ বার পড়বে। এটা তোমাদের জন্য একটি খাদেমের চেয়েও অনেক বেশি উত্তম।” - [ইমাম বুখারী ও মুসলিম র. হাদিসখানা বর্ণনা করেন]

নোট- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের মেয়ে ফাতিমার ঘরের কাজ করার কষ্ট দূর করে দিলেন না, বরং তার থেকেও উত্তম নিয়ে এলেন –যা হাদীসে আমরা দেখলাম।

আসলে মূল সমস্যাটা হচ্ছে, আমরা কি সত্যি নিজেদের জন্য সবচেয়ে উত্তমটা চাই? জান্নাত চাই? তাহলে কেন জান্নাতী নারীদের সর্দারনীদের কাজ করতে এত অনাগ্রহ? কোন অজুহাতে বলতে চাই- ঘরের কাজ করেও যদি...

সবশেষে, আরও একবার-

“যখন নারী তার পাঁচ ওয়াক্তের সালাত আদায় করবে; তার (রমযান) মাসের সাওম পালন করবে; তার লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে এবং তার স্বামীর আনুগত্য করবে, তখন তাকে বলা হবে: তুমি জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা কর, সে দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবশে কর।” [#১৬৬১ মুসনাদে আহমাদ।]

বিষয়: বিবিধ

১৩৯২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

269472
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৫৫
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
269509
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:৫৪
আফরা লিখেছেন : অনেক ভাল লাগল ।সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ ।

কিন্তু যদি বলা হয়, আচ্ছা হাদীস থেকে দেখলাম, যে চারজন জান্নাতী নারী অন্যান্য জান্নাতী নারীদের শ্রেষ্ঠ,সর্দারনী, তারা তো হলেন একজন আদর্শ স্ত্রী (খাদিজা), একজন আদর্শ সন্তান লালনপালনকারী-মা (মারিয়াম, আছিয়া), একজন আদর্শ কন্যা (ফাতিমা)।

আর একজন কে আমি জানতে চাই দয়া করে বলবেন কি ?
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৭:২২
213682
কাহাফ লিখেছেন :
(১) আদর্শ স্ত্রী হযরত খাদিজা রাঃ
(২) আদর্শ সন্তান প্রতিপালন কারীনি মা হযরত মারিয়াম। ঈসা আঃ এর মা।
(৩) হযরত আছিয়া। ফেরাউনের স্ত্রী।
(৪) আদর্শ কন্যা হযরত ফাতিমা রাঃ।
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৯:০৭
245117
বান্দা লিখেছেন : ৫ নং হিসেবে আল্লাহ যেন আপনাকে কবুল করেন,সে দোয়া করেন

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File