তাকওয়া

লিখেছেন লিখেছেন বান্দা ১৯ মে, ২০১৩, ০৬:১০:৩০ সন্ধ্যা



খলিফা হযরত ওমর(রাঃ)এর দুই পুত্র আব্দুল্লাহ এবং ওবায়দুল্লাহ বিখ্যাত যোদ্ধা ছিলেন। তারা ইরাকে জীহাদে অংশ নিয়ে দীর্ঘদিন পর যখন মদীনায় ফিরছেন তখন ইরাকের গভর্ণর হযরত আবু মুসা আশআরী(রাঃ) তাদের হাতে বায়তুল মালে(রাষ্ট্রীয় কোষাগার) জমা দেওয়ার জন্যে কিছু অর্থ দিলেন। গভর্ণর জানতেন হযরত ওমর এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর । তাই তাদেরকে তাদেরকে তিনি পরামর্শ দিলেন বায়তুল মালের এই অর্থ দিয়ে কিছু জিনিস কিনে মদীনায় নিয়ে যেতে ,যাতে সেটা বিক্রী করে কিছু লাভ করা যায়। আসলটা বায়তুল মালে জমা দিয়ে লভ্যাংশটা তারা নিবে। সে মোতাবেক তারা উক্ত অর্থ দিয়ে কিছু জিনিস কিনে মদীনায় গিয়ে বিক্রী করে কিছু লভ্যাংশও পেল। আসল অর্থটা নিয়ে তারা যখন বায়তুল মালে জমা দিতে গেলেন,তখন হযরত ওমর(রাঃ) বললেন, আমি জেনে ফেলেছি যে খলিফার পুত্রগণ রাষ্ট্রীয় সম্পদে ব্যবসা করেছে। এটা ঠিক হয়নি। তিনি ইরকের গভর্ণরকে জিজ্ঞেস করলেন ইরাক থেকে ফেরার সময় সকল সৈনিকের কাছে কি আপনি এভাবে আর্থ প্রেরণ করেছেন ? সকলের কাছে যে এভাবে অর্থ দেওয়া হয়নি তা তিনি জানতেন। কিন্তু কড়া ভাষায় এই ঘটনার জন্যে তিনি কৈফিয়ৎ নেন। আর দুই পুত্রকে বলেন লাভের অর্ত কোথায় ? তারা লাভের াংশটি নিয়ে াাসেন। হযরত ওমর(রাঃ) লাভ এবং আসল দুটিই বায়তুল মালে জমা করে দেন। তার এ আচরনে আব্দুল্লাহ কিছু না বললেও ওবায়দুল্লাহ বলেন, কিন্তু আমরা তো অন্যায় করিনি(আসলে আইনানুগভাবে বিশ্লেষণ করলে এটাকে খারাপ বলা যায়না কিন্তু খলিফা ওমর তার অত্যন্ত উচু স্তরের তাকওয়ার কারনে এটা করেছিলেন)। হযরত ওমর(রাঃ) ওবায়দুল্লাহর কথার উত্তরে বললেন, চুপ ! একদম কথা বলবে না।

মদীনায় দূর্ভীক্ষের সময় গরিব মানুষের জন্যে রুটি,ঘি,মাংস সবরাহ করা হত। কিন্তু জনতার প্রতিনিধি আমিরূল মুমিনীন ওমর(রাঃ) নিজের জন্যে নির্ধারণ করলেন এই চাইতেও সস্তা খাবার-অমসৃন যবের রুটি এবং যয়তুনের তেল। এতে তার স্বাস্থ্যও খানিক ভেঙ্গে পড়ে। কিন্তু তিনি নিজে পেটের দিকে আঙ্গুলী নির্দেশ করে বলতেন-তোমাকে এটাই গ্রহন করতে হবে। এমতাবস্থায় একদিন যখন নিজের শিশুপুত্রের হাতে খরবুজা নামক ফল দেখলেন তখন তিনি তিরষ্কার করে বললেন-“দূর্ভিক্ষে মানুষ মারা যাচ্ছে আর খলীফার পুত্র খরবুজা ফল খাচ্ছে,বাহ চমৎকার !” তার পুত্র কাদতে কাদতে তার মায়ের কাছে চলে গেল। হযরত ওমর(রাঃ) এই দৃশ্য অবলোকনে তার চোখ অশ্র“সজল হয়ে উঠল তিনি অস্থিরতায় ছটফট করতে লাগলেন। খলীফার স্ত্রী জানালেন, তাকে রাষ্ট্রীয় অর্থ থেকে নয় বরং বহু কষ্টে জমানো নিজের সামান্য অর্থ থেকে ফলটি কিনে দেওয়া হয়েছে।

ইরাকের গভর্ণর হযত আবু মূসা আশয়ারী(রাঃ) হযরত ওমরের(রাঃ)স্ত্রী আতিকা(রাঃ)এর জন্যে মূল্যবান পোষাক উপহার হিসেবে পাঠান। কিন্তু তিনি এই পোষাক ফেরৎ পাঠান এবং কড়া সমালোচনা করে চিঠি লিখেন। উপহার সামগ্রী নেওয়া দোষনীয় নয় বরং ইসলামিক সমাজ উপহার সামগ্রীর আদান প্রদানকে উৎসাহিত করে। কিন্তু শাসকের ক্ষেত্রে এর ভিন্ন অর্থ রয়েছে। শাসকরা যদি এই বিষয়টিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তাহলে সেটি ঘুষে রুপান্তরিত হয়ে যেতে পারে। তাই সতর্কতার জন্যে ওমর(রাঃ)অত্যন্ত কঠোর নিয়ম অনুসরণ করতেন। আর এর সুফল ভোগ করেছিল গোটা ইসলামিক রাষ্ট্র।

রসূল(সাঃ) ইবনে তাবিহ (রাঃ)কে জাকাত সংগ্রহের জন্যে এক এলাকায় পাঠিয়েছিলেন। সাহাবী জাকাতের বড় অংশটি রসূল(সাঃ) এর সামনে পেশ করলেন এবং একটি অংশ দেখিয়ে বললেন,এটি তারা আমাকে হাদীয়া হিসেবে দিয়েছে। রসূল(সাঃ) অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে বললেন-তোমাদের কেউ নিজেদের পিতা-মতার সাথে ঘরে বসে থাকুক,দেখুক কে তাদেরকে উপহার সামগ্রী দিয়ে যায়।

ওমর(রাঃ) জানতেন কোনো মানুষ বিশেষ দায়িত্বশীল পদে থাকার কারনে কেউ তাকে কোনোভাবে খুশী করার চেষ্টা করতে পারে যাতে কোনোভাবে সে কখনও এখান থেকে উপকৃত হতে পারে। প্রদত্ত সেই উপহারটি বেশীরভাগ সময়ে মূলত সেই ব্যক্তির কারনে নয় বরং তার পদবীর কারনে হয়ে থাকে। ফলে শাসকের অধিকাংশ উপহার সামগ্রী ঘুষ হয়ে যেতে পারে। শাসকের ক্ষেত্রে উপহার সামগ্রী আর সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে উপহার সামগ্রী এক ব্যাপার নয়।

হযরত ওমর (রাঃ)এর কঠোর আত্মসংযম এমন পর্যায়ে পৌছেছিল যে,তার কন্যা উম্মুল মোমেনিন হযরত হাফসা(রাঃ) তাকে নিজের প্রতি যতœবান হবার অনুরোধ জানালেন। জবাবে হযরত ওমর(রাঃ) তাকে রসূল(সাঃ)এর ছুর পর্বতের গুহার সাথী হযরত আবু বকরের(রাঃ)কঠোর সংযমী জীবনের কিছু উদাহরণ পেশ করলেন। তিনি বললেন যদি আমি রাষ্ট্রের কল্যানে কঠোর সংযমী জীবন পালন করি তাহলে আল্লাহ তায়ালা আমাকে তাদের সাথী হওয়ার সৌভাগ্য দান করবেন।

হজ্জের সময় তিনি তাবুতে আশ্রয় নিতেন না। প্রচন্ড গরমে একখন্ড শুকনো চামড়া মাথার ওপর দিয়ে সূর্যের উত্তাপ থেকে নি®কৃতির চেষ্টা করতেন। কখনও গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিতেন। তিনি ইচ্ছা করলে তাবুতে আশ্রয় নিতে পারতেন এবং তা জায়েজও ছিল। কিন্তু তাকে এটা জানালে তিনি বলতেন, সকল হাজিকে কি তাবুর বন্দোবস্ত করতে পেরেছি ? আর সূর্য্যরে উত্তাপের ভয় দেখাচ্ছ ? আখিরাতের সেই সঙ্কটময় মুহুর্তের কথা চিন্তা কর, নিশ্চয় জাহান্নামের আগুনের চাইতে এ সূর্র্য অধিক উত্তপ্ত নয়।

একটি সমাজ তাকওয়াপূর্ণ হবে কিনা তা নির্ভর করে ইসলামের তাকওয়াপূর্ণ বিধানের বাস্তবায়ন এবং মুত্তাকী শাসকের ওপর। মাথা ঠিক; তো দেহ ঠিক।

বিষয়: বিবিধ

১৬২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File