দাজ্জালী দুনিয়ায় দৈনন্দিন জীবন- ২ঃ মানুষের সীমাবদ্ধতা ও নারী স্বাধীনতা (এ জার্নি বাই বাস)
লিখেছেন লিখেছেন কায়সার আহমেদ (কায়েস) ০১ অক্টোবর, ২০১৬, ০৭:৫৮:৫৩ সন্ধ্যা
ফুটপাথের উপর দিয়ে এক ব্যক্তি হাঁটছে। টি.এস.সি থেকে সাহাবাগের রাস্তা ধরে। আবহাওয়া আজ দারুণ, ঠাণ্ডা বাতাস বইছে একটু পর পর, মেঘলা আকাশ, বসন্তের মৌসুম বলে গাছের পাতা ঝড়ছে, সব মিলিয়ে প্রকৃতি এক দারুণ মহনীয় পরিবেশ উপস্থাপন করেছে। চলতে চলতে সে বাস স্ট্যান্ডের সামনে এসে দাঁড়ালো। বাসে প্রচণ্ড ভিড়, খুব কষ্টে বাসে উঠল সে, নারী পুরুষে বাস পুরো গিজ গিজ করছে কেউ কেউ ধাক্কা দিয়ে ভিতরের সিট আগে গিয়ে দখল করছে। পিছন থেকেও অনেক ধাক্কা পাচ্ছে ব্যক্তিটি সে বুঝতে পারছে না কি করবে এমন করে মানুষকে কষ্ট দিয়ে কি ভিতরে যাবে, এক বড় ধাক্কায় তার চিন্তায় ছেদ পড়ল পরক্ষনে নিজেকে পিছনের সিটে বসে থাকতে আবিষ্কার করল। আজ পরিবেশের মোহনীয়তাও তাকে আনন্দ দিতে পারছে না। সে মনে মনে কিছু একটা ভাবছে, পেরেশান হচ্ছে। হয়তো অনাকাঙ্ক্ষিত দায়িত্বের বোঝা তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে তাই চিন্তিত। ব্যক্তিটি আর কেউ নয় আমাদের সেই পুরাতন ভদ্রলোক, যে নানান প্রসঙ্গে হাজারো ভাবনায় ডুবে থাকে। ক্ষুধার্ত নারী ও বেপর্দা যুবকের মত ফিকশান টাইপ ভাবনায় যে ভেসে বেড়ায়। এত সময় হল কিন্তু বাস চলার নামিই নিচ্ছে না। পিছন থেকে যাত্রীরা ড্রাইভারকে চিৎকার করে তাড়া দিচ্ছে, কেউ গালিও বকছে, একজন বলল- কিরে বাবা খায়া ঘুমায়া গেছোস, কেউ ধমকি দিচ্ছে। বাস চলা শুরু হল আবারো থেমে গেল ভদ্রলোক দেখতে পেল কনডাক্টর এক মহিলার কাঁধে হাত দিয়ে টেনে তুলছে। বয়স্ক কিন্তু পরিপাটি বেপর্দা মহিলা উঠেই সামনের এক ছেলেকে বলছে, এই তুমি মহিলাদের সিটে বসলে কেন? ছেলেটা হতবত হয়ে খেয়াল করল সে তিন নাম্বার রো’তে বসে আছে সে উঠে মহিলাকে বসতে দিল।
উদাস মনে জানালার বাহিরে ভদ্রলোক তাকিয়ে আছে, হালকা হালকা বৃষ্টি হচ্ছে এর মাঝে এক মেয়ে প্রায় ভিজে ভিজেই বাসকে থামাতে ইঙ্গিত দিল, বাস থামলো না।
ভাবনার লোক ভাবনায় ডুব দিল, প্রায় ১০ বছর আগের এক ঘটনা তার মনের ক্যানভাসে ভেসে উঠলো, তখন সে ছিল এক কিশোর রাস্তার ওপার থেকে কোন নারী বাস থামাতে ইঙ্গিত করতেই বাস থেমে গিয়ে তাকে উঠতে দিল এবং এক যুবক উঠে নিজের সিট তার জন্য ছেড়ে দিয়েছিল। সে চিন্তা করল নারী স্বাধীনতার নামক ঢেউ কত কিছুই না পরিবর্তন করে দিয়েছে। যে নারী সমানাধিকার চাই তারাই আবার কি করে বাসে আলাদা ৯ টা সিটের দাবী তুলে। বাসে লেখা থাকে; ‘প্রথম ৬ সিট নারী, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য’ সমান অধিকারের সাথে সাথে আজ তারা নিজেদেরকে প্রতিবন্ধীদের সাথে মিলিয়ে সিটও দাবী করে, কি সেকুলার। মা শিশুর মুখে খাবার তুলে দিলে সেটা ভালোবাসা না ভেবে শিশু যদি তার প্রতি করুণা মনে করে তবে কি আর করার। এতে শিশু নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার দাবী করতেই পারে। তাই বলে নারী তো আর শিশু নয় তবে সে তো অর্ধাঙ্গি, ছেলের সাফল্য তার একার কেন হবে তাতো অবশ্যই নারীরও সাফল্য কিন্তু না তারা এখন আলাদা ভাবে অধিকার চায়। তারা প্রাকৃতিক ভাবে তাদের কিছু সীমাবদ্ধতাকে ভুলে যায়।
সাইন্স ল্যাবের দিকে ট্রাফিক জ্যামে বাস থামলো। ঢাকা শহর যেমন জ্যামের শহর, ঠিক তেমনি একে বিলবোর্ডের শহরও বলা যায়। প্রায় প্রতিটা তিন-চার রাস্তার মোড়ে অসংখ্য বিলবোর্ড। ভদ্র লোকের চোখে এমনি এক বিলবোর্ড পড়ল। সেখানে বিশাল পোস্টারে এক মেয়ের খোলা মেলা ছবি, ছবির নিচে লেখা ‘আর নয় পিছিয়ে থাকা, এখন পুরো দমে এগিয়ে যাওয়ার সময়।’ সে মনে মনে হাসলো এটাও মেয়েদের এক সীমাবদ্ধতা। প্রতিটা মেয়ের জীবনে প্রায় এমন সময় আসে যখন সে, শারারিক পেরেশানিতে ভুগে, ভুগে কিছুটা মানসিক বিষণ্ণতায়, স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বসা-হাটার মধ্যেও তাকে সাবধানী থাকতে হয়, এমনকি তখন তার জন্য নামাজ রোজাকেও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা কি তাদের আল্লাহর কর্তৃক নির্ধারিত সীমাবদ্ধতা নয়? যদি সত্যি সমানাধিকার দিতেই হয় তবে মেয়েদের জন্যে আলাদা করে মেটারনিটি/এডপশান/পেরেন্টারল ইত্যাদি লিভ নেওয়ার কি প্রয়োজন? এই সভ্য সমাজ সমান অধিকারের নামে অলিম্পিকে নারী-পুরুষের একত্রে দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পারবে কি? নিজ নিজ ক্ষেত্রের বাহিরে আল্লাহ নারী-পুরুষ উভয়কেই কিছু সীমাবদ্ধতা দিয়েছেন। পুরুষ চাইলেই কি একজন শিশু কে লালন পালন করতে পারবে? পারবে কি শিশুর মাতৃ-মমতার ও মাতৃ-দুগ্ধের চাহিদা পূরণ করতে? ক্রিকেট টিমের সাথে ক্রিকেট খেলায় যদি ফুটবল টিমের প্রতিযোগিতা হয় তবে তো হাস্যকর। সীমাবদ্ধতাই স্বাভাবিক যদি আল্লাহ উভয়কেই পূর্ণতা দিতেন তবে কেন অর্ধাঙ্গি বলা হত। কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে তাই তো নারী-পুরুষ মিলে পূর্ণতা পায়, তাই তো একে উপরের প্রতি নির্ভরশীল।
ভাবনার গতির সাথে সাথে বাসের গতি বাড়ছিল, অনেক ক্ষণ চলে থামলো এক স্টপেজে, কনডাক্টার ভাড়া চেয়ে ফিরছে, কেউ হাফ কেউ ফুল, ভদ্রলোক দেখলেন তার সামনের সিটে বসা এক লোক ভাড়ার জন্য রীতিমত ঝগড়া বাধিয়ে দিল। পাশের আরেকজন হাফ ভাড়া দিল, কন্ডাক্টার বলল চাচা, এই বয়সে আপনিও যদি স্টুডেন্ট বলেন তবে কেমনে হয়।’ ভদ্রলোকের পাশের জন নেমে গেল, সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক মেয়ে সেখানে বসতে যাচ্ছে, ভদ্রলোক দুশ্চিন্তায় পরে গেল একজন মেয়ের সাথে পাশাপাশি বসাটা তার কাছে খারাপ ঠেকল, বাস চলার সময় প্রায় উভয়ের শরীরে স্পর্শ লাগবেই, সে ভাবল এটা কিভাবে জায়েজ হতে পারে। সাথে সাথে সে দাঁড়িয়ে গেল মেয়েটি বসল, সে সেখানেই দাড়িয়ে আছে, মেয়েটাও অবাক ভাবে দেখছে ভদ্রলোকের অদ্ভুত আচরণ। বাস থামছে কিছু লোক নামছে সামনে অনেক মানুষে প্রায় জটলা হয়ে আছে। দরজার কাছে দুই লাইনের মাঝে কয়েকজন মেয়েও দাঁড়িয়ে আছে সব মানুষরা যুদ্ধের মত করে নামছে কোণ ভাবে, এতে সবার শরীর দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েদের শরীরের সাথে ছোঁয়া পাচ্ছে। ভদ্রলোক এই দৃশ্য অনেক বারই দেখেছে কিন্তু বার বার সে ভাবে এটা কিভাবে সঠিক হতে পারে। সাধারণত এক স্বামী-স্ত্রীও খোলাখুলি ভাবে এত কাছে আসে না, কিন্তু এখন এভাবেই স্পর্শ পাওয়াটা কতই না সাংঘাতিক। তার ভাবনায় একটা হাদিস ভেসে উঠল-
রাসুল সা বলেছেন -“যে মহিলা (স্পর্শ করা) হালাল নয়,তাকে স্পর্শ করার চেয়ে তোমাদের কারো মাথায় লোহার সুচ গেঁথে যাওয়া অনেক ভাল।” (ত্বাবারানী,শাহীহুল জামে ৫০৪৫ নং হাদিস)
.
সে যখনই এই দৃশ্য দেখে হাদিসটা তার ভাবনায় আসে, দুশ্চিন্তায় পরে যায় নিজেকে বলে এখন আমি কি করে নামব এবং এটা জায়েজ হতে পারে কি? একজন মুসলিম নারীর জন্য এমন লোকাল বাসে সফর করা কতটুকু জায়েজ হতে পারে। জায়েজ নাজায়েজ বলা মুফতিদের কাজ, মুফতিরা এই নিয়ে বলেছেন কি কিছু? না তারা চিন্তাই করেননি কখনো? নাকি বিকল্প নেই তাই জানা জানানোর প্রয়োজন কখন হয়নি আমাদের। যাইহোক তার গন্তব্য এসে গেল, কিন্তু সে এ হালতে নামবে কিভাবে।
আল্লাহ অনেক কিছু অনেকের জন্য সহজ করে দেন সে দেখতে পেল যে, এই স্টপেজেই সামনের দাঁড়ানো অনেকেই নামতেছে। সে আরামেই নেমে গেল তার চিন্তা মুক্তির সাথে সাথে আলহামদুলিল্লাহ্ বলে আল্লাহর প্রশংসা করলো।
এটা ছিল দাজ্জালী দুনিয়ায় ভদ্রলোকের দৈনন্দিন জীবনের একটা মাত্র সফর, আমরা দেখেছি পুরো সফরে সে না চাইতেও হাজারো গুনাহ ও ফিতনার সম্মুখীন হচ্ছিল। আমরা দেখেও দেখি না জেনেও মানতে চাইনা, জগত আর আগের মত নেই, নেই জগতের মানুষও। এখানে কোন এমন স্থান নেই যেখানে গুনাহ নেই। গুনাহ আজ আম হয়ে গেছে, নেকি আজ হয়ে গেছে মূল্যবান।
This is the age of Dajjal
দাজ্জালী দুনিয়ায় দৈনন্দিন জীবন- ১ঃ ক্ষুধার্ত যুবক ও বেপর্দা নারী-
এখানে
বিষয়: বিবিধ
১৫৪৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
গত ২ যুগ ধরে মহিলারাই এদেশ শাসন করছে , তারপরেও কেন মহিলারা এই গাদাগাদিতেই আসে সেটাও মাথায় ঢোকে না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন