জম্বীদের কবলে সমাজ
লিখেছেন লিখেছেন কায়সার আহমেদ (কায়েস) ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:৫১:০৬ রাত
হলিউডের মুভি গুলোতে প্রায় একধরণের চরিত্র উঠে আসে, চরম আহত মানুষ রক্তাক্ত অবস্থায় ধীরে-পদে চলতে চলতে, কোন সুস্থ মানুষকে ধরে তার ঘাড়ে কামড় কেটে রক্ত পান করে, এই ধরনের চরিত্রকে বলা হয় 'জম্বী' (zombie). তাদেরকে দেখতে মনে হয় শয়তানের আছর হওয়া বা কল্প কাহিনীর পিশাচ জাতীয় কিছু।
আস্তে আস্তে সমাজ একদম অপরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে, সমাজ থেকে মূল্যবোধ নৈতিকতা, পারস্পরিক ভালোবাসা, সহানুভূতি, শ্রদ্ধা, লজ্জাশীলতা, নম্রতা, সব কিছু এক এক করে উঠে যাচ্ছে। প্রতিদিন অবাক করা খবর আসে আমাদের মাঝে, আমরা শুনতে পাই; মোটর সাইকেল কিনে না দেওয়ায় কলেজের এক ছাত্র তার বাবা মা কে জ্বালিয়ে দেই, আমরা শুনি চট্টগ্রামে এক কিশোর তার মাকে হত্যা করে তারপর নিজেও আত্নহত্যার চেষ্টা করে, আমরা শুনি এক মা তার সন্তানকে হত্যা করে নিজেও আত্নহত্যার চেষ্টা করেছিল, আমরা দেখছি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ যুবক নেশায় জড়িত, আমরা দেখছি মাদকের ব্যবসা দিয়ে কিভাবে বেকারত্ব মিটছে, আমরা দেখছি প্রথম পজিশনের প্রাইভেট ভার্সিটির আশে-পাশের গলিতে ধুমসে গাজা ও ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে, দেখছি ১৪/১৬ বছরের কিশোর-কিশোরীরা প্রেম জনিত কারণে ঘর থেকে পালিয়ে যাচ্ছে আবার অনেকে আত্নহত্যাও করছে, স্কুলের ছোট ছোট মেয়েরা রাস্তা ঘাটে নিজেদের দেহকে তার প্রেমিকের হাতে সপে দিচ্ছে, আমরা দেখছি ব্যাচেলররা স্বামী-স্ত্রী সেজে রুম ভাড়া নিচ্ছে, এই ধরনের নিত্যদিনের খবর আমাদেরকে চিন্তিত করেনা। আমরা মনে করি সমাজ ঠিক রয়েছে দুনিয়া সুন্দর করেই আপন গতিতে চলছে। সব কিছু স্বাভাবিক।
আমি প্রায় অনুভব করি যে আমার চার পাশে অনেক গুলো জম্বী দিয়ে ভরা। এদের মধ্যে খুব অল্পই সাধারণ সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ। প্রায় সব জায়গায়, রাস্তায়, বাসে, অফিসে মার্কেটে, কোন কলেজ বা ভার্সিটির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এমন কি ক্ল্যাস রুমেও আমি প্রায় অনুভব করি চতুর্দিকে আমার পাশে জম্বীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। এদের আচরণ মুভিতে দেখানো জম্বীর মত না হলে মানষিক ভাবে এরা তাদের মতই। এরা নিজের প্রাচুর্যের লালসায় এতটা গাফেল হয়েছে যে তারা বাবা-মা কেও ছাড়েনা। কোন বাঁধাকেই টিকতে দেই না। এরা জম্বীর মত মানুষের রক্ত বা মাংস ভক্ষণ করে না তবে তাদের মত করেই তাদের লালসাকে মিটায় যত পাও তত নাও যেভাবে পাও সেভাবে নাও, সামনের মানুষের কোন পরোয়া নেই। মানষিক ভাবে এরা বিকার গ্রস্থ হয়ে পড়েছে, নিজেদের উপর এদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। মনে হবে যেন শয়তানের আছর পরা কোন লোক। এদের অধিকাংশের ব্রেইন সম্পূর্ণ ওয়াস। এদের মস্তিষ্কে সব সেট করে দেয়া হয়েছে, মিডিয়া নির্ধারণ করে দেয় এদের সবকিছু, এরা ছেড়া পেন্ট পড়বে কিন্তু কোন চিন্তা করবে না, এরা ভাববেই না কেন আধুনিকতা ছেলেদের কে পা থেকে গলা পর্যন্ত ঢেকে রাখার কাপড় পরিয়েছে অন্যদিকে মেয়েদের কাপড় ছোট করাকেই স্বাধীনতা বলে প্রচার করছে।
একটা সমাজ কতদিন এভাবে চলবে, সমাজের কাঠামো ধ্বংসের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। একে পুরোপুরি ভেঙ্গে দিতে হবে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। চিন্তা করা যায় কি, ১০ বছর পর এই সমাজের অবস্থা কি হবে? এই সমাজে বড় হওয়া আপনার সন্তানের কি হবে? তারা কি আপনাকে বাবা-মা বলে মনে করবে? বর্তমান যে প্রজন্ম স্কুল কলেজে পড়ছে এরা যখন আমাদের স্থান দখল করবে তখন কি ভয়াবহ অবস্থা হবে। সমাজ স্বাভাবিক নয়, সুস্থ মস্তিষ্ক দিয়ে চিন্তা করুন লোভ লালসা সব কিছুতে মানুষ কে গাফেল করে দিয়েছে। যুবক সমাজ মাদক ও নারীর নেশায় ডুবে গেছে, পূর্ণ বয়স্করা ছোট ছোট বিষয়ে ঝগড়া করছে। যারা সব কিছু স্বাভাবিক মনে করে আরামে খাচ্ছে, ঘুমাচ্ছে এবং সুন্দর ভাবে নিজের সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে তারাও ওই জম্বীদের অন্তর্ভুক্ত।
أَلۡهَٮٰكُمُ ٱلتَّكَاثُرُ (١) حَتَّىٰ زُرۡتُمُ ٱلۡمَقَابِرَ (٢) كَلَّا سَوۡفَ تَعۡلَمُونَ (٣
প্রাচুর্যের লালসা তোমাদেরকে গাফেল রাখে। এমনকি, তোমরা কবরস্থানে পৌছে যাও। এটা কখনও উচিত নয়। তোমরা সত্ত্বরই জেনে নেবে।
একটা মুসলিম দেশ বাংলাদেশের অবস্থা এখন এমন, তাহলে পুরো বিশ্ব সমাজের কি অবস্থা হতে পারে। কত দিন পুরো এই সভ্যতা টিকে থাকবে? মালহামা আগত, পুরো বিশ্ব সভ্যতা পরিবর্তন হতে বাধ্য।
বিষয়: বিবিধ
১৩১৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যথার্থ বলেছেন, সহমত
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন