ফিলিস্তিন থেকে কাশ্মীর, ইয়াহুদী থেকে মুশরিক- এক অভিন্ন যোগসূত্র

লিখেছেন লিখেছেন কায়সার আহমেদ (কায়েস) ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৫:২৬:০৫ বিকাল

ফিলিস্তিন ও কাশ্মীর উভয় ভুমির ইতিহাস ও বর্তমানে মিল আছে। যেন দুটা অভিন্ন ভাবে একই মঞ্জিলের দিকে যাচ্ছে। ১৯৪৮ সালে ইংল্যান্ড ব্যালফর চুক্তির সমাপ্তি ঘটিয়ে ইসরাইলের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দেই। ফিলিস্তিন পরাধীন ভুমিতে পরিনত হয়। ১৯৪৭ সালে ইংল্যান্ড ভারত-পাকিস্তানকে স্বাধীনতা দিয়ে যাওয়ার সময় কাশ্মীর কে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করে, এর মধ্যে কাশ্মীর কে নিয়ে পাকিস্তান-ভারত লড়াই হয় পরিশেষে একই ১৯৪৮ সালেই কাশ্মীর পরাধীন হয়ে যায়।

উভয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগন মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও বিধর্মীর দ্বারা শাষিত হচ্ছে। ১৯৪৮ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত উভয় ভুমির মুসলিমরা অত্যাচারিত, নিপীড়িত, নির্মম ভাবে জুলুমের স্বীকার হচ্ছে। যুগ যুগ ধরে প্রায় লক্ষাধিক মুসলিমের শাহদাত, হাজারো মা-বোনের সভ্রম লুণ্ঠিত হয়েছে।

ফিলিস্তিন ইয়াহুদীদের কবলে আর কাশ্মীর মুশরিকদের কবলে। আমরা ইয়াহুদী আর মুশরিকদেরকেই মুসলিমদের জন্য সবচেয়ে বেশি কঠোর ও শত্রুভাবাপন্ন পেয়েছি। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ভবিষ্যৎ এমন সময় আসবে যখন-

لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةً لِّلَّذِينَ آمَنُوا الْيَهُودَ وَالَّذِينَ أَشْرَكُوا

"আপনি সব মানুষের চাইতে মুসলমানদের অধিক শত্রু ইহুদী ও মুশরেকদেরকে পাবেন"

ইয়াহুদী ও মুশরিকদের মধ্যেও অনেক মিল রয়েছে। উভয় জাতি মনে করে তারাই শ্রেষ্ঠ জাতি বাকিরা তাদের গোলাম। উভয়ে শেষ জামানাই এক নেতা আসবে, তার মাধ্যমে তারা পুরো বিশ্ব শাসন করবে বলে বিশ্বাস করে। ইয়াহুদিরা দাজ্জালের অপেক্ষায় এবং হিন্দুরা কালকি আবতারের। উভয়ে নিজের সীমানা বাড়াতে চায়। গ্রেটার ইসরাইল অর্থাৎ নীল নদ থেকে ফুরাত নদী, মদিনার খাইবার থেকে উত্তর সিরিয়া পর্যন্ত হবে তাদের রাজ্য, ইয়াহুদিরা এই পরিকল্পনায় অগ্রসর হচ্ছে অন্যদিকে মহাভারত অর্থাৎ আফগানিস্তানের কান্দাহার থেকে বার্মা পর্যন্ত হতে হবে ভারতের সীমানা। মোদি হিন্দুত্ববাদী সরকার সেই উদ্দেশ্যই বাস্তবায়ন করছে।

এদের মধ্যে আরেকটা মিল হল এরা যখন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন তারা একদম চুপসে যায় অবাধ্য দাসের মত হয়ে গিয়ে সুযোগের উপেক্ষা করে। যতদিন সুযোগ পাবে না ততদিন তারা এইভাবে গোলামের জীবন যাপন করবে ও তলে তলে পরিকল্পনা আটবে। হতে পারে হাজার বছরও এমন করে গোলামি করে যাবে। ইয়াহুদিরা প্রায় ২ হাজার বছর এবং মুশরিকরা ৮০০ বছর এভাবেই ছিল। এরা নিজেরা আবার ক্ষমতা নিতে পারে না অন্যকোন ভাবে ক্ষমতা নেই অন্য জাতিই এদের কে ক্ষমতাই বসিয়ে দিয়ে যায় যেমন ইয়াহুদি ও মুশরিক উভয়কেই ইংল্যান্ড এসে ক্ষমতায় বসিয়েছে। এরা উভয়ে মুখের ভাষা বুঝেনা যতনা বুঝে তালোয়ারে গর্জন।

ফিলিস্তিন হল শামের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল, কাশ্মীর হল খোরাসানের অঞ্চল। উভয় ভুমি থেকেই ইমাম মাহদির বাহিনী বের হবে। একটা হল গাযওয়ায়ে হিন্দের ভুমি অন্যটা হল মালহামা ও দাজ্জাল বধের ভুমি। বর্তমান উভয় ভুমিতেই আযাদী আন্দোলন চলছে। উভয় ভূমিতেই প্রায় জাতীয়তাবাদের পতাকার তলে আন্দোলন হচ্ছে। ফিলিস্তিন ও পাকিস্তানের পতাকা। যতদিন না এরা ইসলামের পতাকার তলে সহিহ ভাবে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়বে ততদিন মুক্তি আসবে না। ইমাম মাহদির প্রকাশ না হলে এরা মুক্ত হবে না। তবে কুরবানি জারী থাকবে একটা জাতি যত বেশি কুরবানি দেয় তারা তত বেশি শক্তিশালী হয় ততবেশি গুনাহ থেকে পবিত্র হয়ে যায়। উম্মাহর এই দুই অঙ্গ যুগ যুগ ধরে পুরো মুসলিম জাতির জন্য কুরবানি দিয়ে যাচ্ছে। এদের পরে অনেক জায়গায় উম্মাহ জেগে উঠেছিল ও উঠছে কিন্তু এরা আগের মতই রয়ে গেছে। এই দুই ভূমির সাফল্য একই সাথে আসবে যখন ইতিহাসের পরিসমাপ্তি ঘটবে ইন শা আল্লাহ।

ইয়া রাব, হে ক্ষমতার মালিক, হে শাসকের শাসক, যালিম দের বিরুদ্ধে মুসলিমের হিফাজত করুন। ফিলিস্তিন, কাশ্মিরের মুসলিমদের সাহায্য করুন, তাদের কে ধৈর্যতা দিন ও ইমানের উপর অবিচল রাখুন। আমিন।

বিষয়: বিবিধ

১৪৭০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

377818
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ রাত ১১:৪২
তট রেখা লিখেছেন : কাশ্মিরী এবং ফিলিস্তিনীদের মধ্যে আরো একটি মিল আছে। এরা নৃতাত্ত্বিক ভাবে একই জাতি গোষ্ঠির অন্তর্ভুক্ত।
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ০৯:৩০
313160
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : এতদিন জানতাম তারা ইন্দো আরিয়ান গ্রুপের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, তাদের ভাষা ও শারিরিক বৈশিষ্ট্য সেদিকে ইঙ্গিত দেয়, তাদের সাথে আরবদের সম্পর্ক ব্যাপারটা কেমন জানি গোলমেলে লাগছে আপনি একটু ব্যাখ্যা দিতে পারবেন?
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ০৩:০৪
313167
তট রেখা লিখেছেন : এরা আরবদের বংশধর কোনো অবস্থাতেই নয়। তবে এরা বিনি ইসরাইলের যে অংশ পরবর্তীতে মুসলমান হয়ে গেছে, তাদের বংশধর বলে দাবী করা হয়। এরিক ফন দানিকেন তার বইএ এই ব্যাপারটি ব্যখ্যা করেছেন। তাছাড়া অন্যান্য সূত্রে খোরাসান অঞ্চলে ঈসহাক (আঃ) এর বংশধরদের উপস্থিতির কথা বলা আছে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর হাদীস অনুযায়ী বনু ঈসহাক এর একদল লোক ঈমাম মাহদীর সাহায্যকারী হবে ( হাদীসটির তাহক্বীক আমি নিশ্চিত নই)।
অপর পক্ষে ফিলিস্তিনী জনগোষ্ঠী মূলত নৃতাত্ত্বিক ভাবে যাদের আরব বলা হয়, তা নয়। তা মূলত আরবায়িত আরব। এদের অনেকেই বনি ইসরাইলের বংশধর। চেহারা এবং গঠনে এদের সাথে কাশ্মিরী জনগোষ্ঠির সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
377836
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ০৯:২৬
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : একই ধরণের সাদৃশ্য আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলিম ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আরাকান ছিল মুসলিম শাসিত। রোহিঙ্গারাও নিজেদের আরাকানি বলে, বার্মিজদের দখলকার হিসেবে চিহ্নিত করে তবে তাদের লড়াইটাও জাতীয়তা কেন্দ্রীক।
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৪:১৮
313197
সাদাচোখে লিখেছেন : আস্‌সালামুআলাইকুম।
না, আরাকানি মুসলিমদের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না। কারন এদের ক্ষেত্রে এই সাপোর্ট সমূহ আছে - আরাকানীদের ক্ষেত্রে অমনটা নেই।

কাশ্মীর, পাকিস্থান, আফগানিস্থান ও ইরানের যে অঞ্চলটি খোরাসান হিসাবে স্বীকৃত সে অঞ্চলের একটা পার্টিকুলার সেমেটিক চেহারা সম্পন্ন মানুষ, যাদের ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া হয়েছে যে তারা বনী ইসরাইল তথা ১২ ভাইয়ের - এক কিংবা দুইভাইয়ের বংশধর।

যারা মুসলিম হওয়া স্বত্তেও এখনো প্রার্থনা, ঘর পবিত্র করন সহ বিভিন্ন দৈনন্দীনকাজে আগুন প্রজ্জলন সহ এমন কিছু রিচ্যুয়াল এখনো প্রাকটিস্‌ করে - যা শুধু মাত্র অন্যান্য বনী ইসরাইলীদের মধ্যেই বর্তমান ছিল এবং এখনো আছে।

এই মুসলিমদের কে ইসরাইলে ফেরত নিতে যুদ্ধ ও নিরাপত্তার অজুহাত তুলে জায়োনিস্ট রা এনজিও ও আমেরিকান সরকার সহ অনেক মাধ্যমে চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা অস্ত্র হাতে কিংবা অস্ত্র ছাড়া রেসিস্ট করাকে প্রাধান্য দিয়ে আসছে। এরাই মূলতঃ মেইন লাইফ লাইন কিংবা ইন্সপাইরেশান হিসাবে কাজ করেছে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রেসিস্ট করার জন্য, সোভেয়েত এর বিরুদ্ধে এবং আজকের ন্যাটোর বিরুদ্ধে কনটিনিউ যুদ্ধ করে যাবার ক্ষেত্রে।

ইন্টারেস্টিং হলঃ এরা রাসুলের হাদীস অনুযায়ী কালো পতাকা / ব্যানার বেয়ারার হয়ে জেরুজালেম যাবে - মক্কা কিংবা মদীনা নয়।

আবার দেখুন আল্লাহ ও প্রমিজ করেছেন - এদেরকে তিনি ফিরিয়ে নিবেন জেরুজালেম এ।

এদের এখানে আসার জন্য পেছনে আছে সূরা বনী ইসরাইলের ৭ নং আয়াত আর এদের ফিরে আসার ব্যাপারে আয়াত আছে ১০৪ নং এ।

ইন্টারেস্টিং হল - ব্যাপারটা বোঝার জন্য আমার মত আরবী না জানা মানুষের জন্য প্রয়োজন বেশ কয়েকটি অনুবাদকে এক জায়গায় এনে পড়া কিংবা ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড ট্রান্সলেশান পড়া এবং সম্ভবতঃ সাথে ডায়াসপোরা নিয়ে বেসিক জানাশোনা।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File