সময় জটিলতা ও বর্তমান যামানা
লিখেছেন লিখেছেন কায়সার আহমেদ (কায়েস) ১৬ জুন, ২০১৬, ০৭:২৩:১৪ সন্ধ্যা
সময় হল সবচেয়ে জটিল ও দুর্বোধ্য বিষয়। সময়কে বিশ্লেষণ করা খুব কঠিন। ধর্ম-দর্শন-বিজ্ঞান জ্ঞানের এই অন্যতম শাখা গুলোও সময় কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হিমশিম খায়। ঘড়ির কাটা একই রকম ভাবে ঘুরলেও বাস্তবতার জীবনে সময় বিভিন্ন ভাবে গড়াতে পারে। আল্লাহ্ তায়ালা কুরআনে বার বার বলেছেন সময়ের কথা। বিশেষ করে প্রতিশ্রুত সময়ের কথা। বর্তমান যামানায় আমরা খুব বেশি ফিতনা ফ্যাসাদ দেখছি। এমন এমন ফিতনা যা চিনতে পারা খুব কঠিন আর বর্তমানে চলা ফ্যাসাদের সামনে ফিরাউনের ফ্যাসাদও ছোট মনে হয়। তাই বর্তমান যুগের সময় কে বুঝা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
হযরত আবুযর গিফারী হতে বর্ণনা হয়েছে,রাসূল (সঃ) তার একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন,“বিশ্বের সর্বপ্রথম মসজিদ হলো মসজিদে হারাম। এরপরের মসজিদ হলো মসজিদে আকসা। মসজিদে হারাম নির্মাণের ৪০ বছর পর মসজিদে আকসা নির্মিত হয়। (সহিহ মুসলিম)
বায়তুল্লাহ ও আকসার নির্মাণের মধ্যে মাত্র ৪০ বছরের পার্থক্য রয়েছে অথচ এটা স্পস্ট এই দুটো পবিত্র মসজিদ নির্মাণে ব্যবধান প্রায় হাজার বছরের। অর্থাৎ বর্ণিত ৪০ বছর আমাদের সময়ের মত না। কুরআন ও হাদিসে বিভিন্ন জায়গায় সময়কে অস্বাভাবিকতায় বর্ণিত করা হয়েছে। যেমন- আসহাবে কাহাফের ৩০৯ বছর ঘুমানো, হযরত উযায়ের আঃ এর ১০০ বছর পর জীবিত হওয়া, দুনিয়ার সাথে পরকালের সময়ের ব্যবধান, ৬ দিনে দুনিয়া সৃষ্টি, ২ হাজার বছর পরে ইসা আ ফিরিয়ে আসলেও উনার বয়স আগের মতই থাকা, কবর জীবন, বা মুমিনের মেরাজ ইত্যাদি বিষয়ে সময়কে বাস্তবতার বাহিরে গিয়ে ব্যাখ্যা করতে হবে। হাদিসে এসেছে,
আবূ হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: মহান আল্লাহ্ বলেন,আদম সন্তান যুগ এবং সময়কে গালি দিয়ে আমাকে কষ্ট দেয়। সময় তো আমারই নিয়ন্ত্রণে। রাত-দিনের পরিবর্তন আমিই করে থাকি। (সহিহ মুসলিম, হাদীস নং- ৫৬৯৮)
আল্লাহ্ রাত দিনের পরিবর্তন করে থাকেন। আল্লাহ্ নিজ ইচ্ছায় সময়কে নিয়ন্ত্রণ করেন। কিয়ামতের একটা নিদর্শন হল সময় দ্রুত পার হবে। দ্রুত পার হবে মানে সময়ের বরকত কমে যাবে যেমন ইমাম গাজ্জালী রহ উনার ৫৫বছর জীবনে যত বই লিখেছেন আজ ৬০ বছরেরও কেউ উনার সকল বই পড়ে শেষ করতে পারবে না।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“সেই সময় পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না,যতক্ষণ না সময় পরস্পর খুব কাছাকাছি হয়ে যাবে। সে সময় বছর মাসের,মাস সপ্তাহের,সপ্তাহ দিনের,দিন ঘণ্টার আর ঘণ্টা খেজুরের পাতা বা ডালের প্রজ্বলন সময়ের সমান হয়ে যাবে”। (ইবনে হিব্বান খণ্ড ৫,পৃষ্ঠা ২৫৬)
বর্তমানে আমরা লক্ষ্য করলে দেখব কিভাবে সময় খুব দ্রুত পার হচ্ছে। আমাদের এখন প্রায় মনে হয় বা বলতে শুনি এই তো কয়েকদিন আগে বছর শুরু হল, এত দ্রুত মাস শেষ?, আজকে ১০ টা রোজা শেষ? আমরা দেখছি খুব দ্রুত সময় অতিবাহিত হচ্ছে। পূর্বেও এক দিনে ২৪ ঘন্টাই ছিল এখনো তাই তবে অবাক হয়ে যায় যখন দেখি কিভাবে আগে এই একই সময়ে যা হত এখন তা করা অসম্ভব। আগে কার যুগে সাহাবা রা ও তাবেঈনদের কিছু আমল শুনলে স্পস্ট হবে বিষয়টা-
➥ হযরত আলী বিন আবী তালিব রাঃ প্রতিদিন আট খতম কুরআন পড়তেন। [ইকামাতুল হুজ্জাহ লি আব্দুল হাই লৌক্ষ্ণভী-৬৪]
➥ মুহাম্মদ বিন সিরীন রহঃ থেকে বর্ণিত। উসমান রাঃ এর স্ত্রী বলেন,যখন লোকেরা হযরত উসমান রাঃ এর হত্যার জন্য ঘুরছিল। তখন তাকে হত্যা করুক বা ছেড়ে দিক,তিনি পুরো রাতই নামায পড়তেন,প্রতি রাকআতে এক খতম কুরআন পড়তেন। (হিলয়াতুল আওয়ালিয়া-১/৫৬]
➥ হযরত তামীম বিন আউস রাঃ প্রতি রাকআতে এক খতম কুরআন পড়তেন,কখনো কখনো এক আয়াত পড়তে পড়তেই রাত পাড় করে দিতেন। [ফাতহুল মুবীন বিশরহিল আরবাঈন লিইবনে হাজার আলমক্কী-১০৮]
➥ আমের বিন আব্দুল্লাহ রহঃ প্রতিদিন এক হাজার রাকাত নামায পড়তেন। [হিলয়াতুল আওলিয়া-২/৮৮]
বর্তমানের ১ দিনে ৮ খতম কুরআন পড়া অসম্ভব। এক পারা পড়তে ১০ মিনিট করে লাগলেও ৮ খতম দিতে ৪০ ঘন্টা প্রয়োজন। প্রত্যেক রাকাতে এক খতম কুরআন পড়লে দুই রাকাতের বেশি নামাজ বর্তমান সময়ে পড়া অসম্ভব। ২ রাকাত নামাজ পড়তে যদি ৫ মিনিট করেও ধরি তবুও ১ হাজার রাকাত নামাজ পড়তে একদিনে ৪১ ঘন্টার প্রয়োজন হবে । এটাই হল সময়ের বরকত যা আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। তাই এখন বছর মাসের মত মাস সপ্তাহের মত, সপ্তাহ দিনের মত আর দিন ঘন্টার মত মনে হচ্ছে। দাজ্জালের সাথেও সময়ের সম্পর্ক আছে, তার প্রথম দিন আমাদের কাছে বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন মাসের সমান, তৃতীয় দিন হল সপ্তাহের সমান বাকি দিন গুলো আমাদের দিনের মত। এখানে দু-রকম সময়ের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। প্রথমত হল মাত্রা (ডাইমেনসন), বিভিন্ন মাত্রায় আলাদা আলাদা সময় বিদ্যমান। তাই এক রাতেই (মিরাজে) হাজার হাজার বছরের দূরত্ব পার হওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, প্রথিবীর সৃষ্টি থেকে প্রতিশ্রুত সময় (কিয়ামত) পর্যন্ত সময়ের বরকত ও ব্যাপ্তির পরিবর্তন।
বিষয়: বিবিধ
১৭৬২ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সময় খুব তারাতারি গড়িয়ে যাচ্ছে মালহামা খুব কাছে এসে গেছে। হয়তো এই বছরের শেষ বা ২০১৭ তে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হবে। ইতিমধ্যে রাশিয়া-চীন জোট (রূম- মুসলিমদের এলায়েন্স, আমি এই নিয়ে অনেক বড় পোস্ট লিখেছি) কে পুরো ঘিরে ফেলেছে এংলো আমেরিকান জোট ন্যাটো। তাই মালহামা কে বেশি করে ফোকাস করা উচিত।
জাযাকাল্লাহ ভাই।
ব্লগে এমন লিখারই বেশি প্রয়োজন। অনেক অনেক ধন্যবাদ জাযাকাল্লাহ খাইর
এসব বর্ণনার সত্যতা বোধগম্য নয়!
আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন!
************
সময়ের হিসাব যেভাবে আমরা করে থাকি সেটা পৃথিবীর নিজ অক্ষের উপর একবার আবর্তনকে ২৪ঘণ্টা ধরে!
আবর্তনের এ গতির হ্রাস-বৃদ্ধি যদি ঘটে [ঘটতেই পারে] তবে ২৪ঘণ্টার হিসাবের কী হবে? এক আবর্তন সমান ২৪ঘণ্টাই থাকবে, নাকি ২৪+/-হবে?
সবকিছু সবার বোধগম্য হওয়া জরুরী নয়, সম্ভবও নয়!
জাযাকাল্লাহ
আবর্তনের এ গতির হ্রাস-বৃদ্ধি যদি ঘটে [ঘটতেই পারে] তবে ২৪ঘণ্টার হিসাবের কী হবে? এক আবর্তন সমান ২৪ঘণ্টাই থাকবে, নাকি ২৪+/-হবে?
>>>> সময়ের বিভিন্ন টাইপ কিংবা প্রকারভেদ আছে। যার বেশ কিছু উদাহরন এই লিখার লিখক ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছেন।
আপনি যে পয়েন্ট টি উপরে উল্লেখ করেছেন - তা হল এই ম্যাটেরিয়াল পৃথিবীর কনটেক্স এ সময় গননার একটা মাপকাঠি যা আল্লাহ সেট করেছেন। যতদিন আমাদের টাইপ মানুষ এই পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াবে - এর হ্রাস কিংবা বৃদ্ধি হবার নয় এবং কোরানে তার ইন্ডিকেশান আছে। এক কথায় আল্লাহ আমাদের ভাষায় যেটাকে আমরা ন্যাচারাল বলি - সে সব বিষয়াদিতে পরিবর্তন এনে এনে মানুষকে টেস্ট করবেন না। বরং তা কনস্টেন্ট থাকবে।
কিন্তু যারা সময়ের এই প্রকারভেদ সমূহকে নিয়ে ভাববে এবং সেন্স তৈরী করতে সচেষ্ট হবে - বিশেষ করে সূরা কাহাফের প্রথম দশ লাইনের মধ্যে নিমজ্জিত হবে এবং ঐ গল্পের পাঠোদ্ধারে লিপ্ত হবে তারা আজকের সময়ে দজ্জালের বিষয়াদি বুঝতে তুলনামূলক অগ্রগামী হবে বলে আমি মনে করি।
@সাদাচোখে: ইয়াজুজ-মা'জুজ-দাজ্জাল.. পোস্টে করা আপনার প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়েছি, দেখেছেন?
মন্তব্য করতে লগইন করুন