দাজ্জালের মহা ফিতনা ও বর্তমান বিশ্বঃ পর্ব-১২ (Hyper Sexuality ও বর্তমান প্রজন্ম)
লিখেছেন লিখেছেন কায়সার আহমেদ (কায়েস) ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৯:০০:৪৯ রাত
নারী পুরুষের একে অপরের সহযোগী নয় প্রতিযোগী এই ধারনা দেয়া হয়েছে। নারী ও পুরুষের শারীরিক গঠন, মানসিক বিকাশ ও সর্বপরি তাদের কর্ম-কাজ বা Function সবই আলাদা। আল্লাহ্ নির্ধারণ করে দিয়েছেন পুরুষ ও নারী দের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট ও কাজের ধরন।
কিয়ামতের একটা অন্যতম নিদর্শন হল পুরুষরা নারীদের অনুকরণ (বেশ ধারন) করবে আর নারীরা পুরুষের অনুকরণ (বেশ ধারন) করবে।
পবিত্র কুরআনে সূরা লাইলে রাত ও দিন এবং নারী ও পুরুষের জন্মের কসম খাওয়া হয়েছে। সেখানে বুঝানো হয়েছে রাত ও দিন এবং পুরুষ ও নারী পরস্পর থেকে ভিন্ন এবং তাদের প্রত্যেক জোড়ার প্রভাব ও ফলাফল পরস্পর বিরোধী।
রাত ও দিন যেভাবে একসাথে মিলে একটা পরিপূর্ণ দিবস হয় ঠিক তেমনি নারী ও পুরুষ এক সাথে মিলে একটা সুন্দর যুগল হয়। দিনের সাথে পুরুষের বৈশিষ্ট ও রাতের সাথে নারীর বৈশিষ্টের মিল রয়েছে যেমন দিন হল রোদ্রজ্জোল কঠিন, মানুষকে ক্ল্যান্ত করে দেই ঘামিয়ে দেই, আর প্রক্ষান্তরে রাত হল সুন্দর, মনোরম, কমল, শিতল, শান্তি, দিনের কাঠিন্য কে নির্মল করে দেই এমন। দিনের শেষে সূর্য আস্তে আস্তে ডুবে যেমন সারাদিনের কঠোর পরিশ্রম শেষে পুরুষ নিস্তেজ হয়ে যায় নিজেকে সপে দেয় শান্তির রাতের (নারীর) পরিবেশে। আর যখন রাত শেষে সূর্য উদয় হয় তখন তা আর ধীরে ধীরে উঠে না, (যেন মনে হয় সে উঠতে চাচ্ছে না শান্তির নীড় থেকে) তাই একবারেই প্রকান্ড বিস্ফোরণে উঠে পুরো বিশ্ব কে আলোকময় করে দেই।
কিন্ত দাজ্জাল চাই না রাত রাত থাকুক সে চায় রাত কে দিন বানিয়ে দিতে, তাই নারীরা পুরুষে পরিনত হচ্ছে। যখন এক জন নারী পুরুষের কাজ করছে তখন সে আর নারী থাকে না, সে তার ব্যবহার, গলার কন্ঠ, কথার ভঙ্গী, তার কাপড় (শার্ট, প্যেন্ট, টাই, কোট) সব একজন পুরুষের মত করে নেই, কল্পনা করুন একজন ট্রাফিক নারী পুলিশ কে। এভাবেই নারীরা পুরুষের বেশ ধারন করছে।
একজন ছেলের দাঁড়ী সম্পূর্ণ মুন্ডিয়ে ফেলার মাধ্যমেই সে নারীর বেশ ধারন করে। অবাক হয়ে যাই যখন দেখি এই শেষ কয়েকশতাব্দি ছাড়া ইতিহাসে আর কোন এমন জাতি সভ্যতা পাওয়া যায় না যারা সম্পূর্ণ ভাবে ক্লিন সেভ করত।
যাইহোক, আজ যে শহর যত বেশি রাতকে দিনে পরিনত করেছে সে শহরে নারী তত বেশি পুরুষে পরিনত হয়েছে, লন্ডন, প্যারিস, নিওইয়র্ক, সিঙ্গাপুর, বা বাংলাদেশে উত্তরা-গুলশান দেখুন সেখানে নারীরা তাদের নারীত্ব বিসর্জন দিয়েছে। নারীবাদী আন্দোলনে সমর্থক কোন নারী কে সবচেয়ে আগে তার নারীত্ব বিসর্জন দিতে হয়। নারীর কোমল ও লাজুকতা কাঠিন্যে বদলে যায়। যখন নারী আর নারী থাকে না তখনই নারীর প্রতি পুরুষের আকর্ষণ কমতে থাকে। ফলে প্রকাশ পায় বিকৃত যৌনকাঙ্ক্ষা আর আকর্ষণ বাড়ে ক্লীন সেভ ছেলেদের প্রতি আর বৈধতা পায় সমকামিতা।
Hyper Sexuality ও বর্তমান প্রজন্ম
বর্তমান যুগ হল Hyper Sexuality‘র যুগ অর্থাৎ বিশ্ব কে অতি মাত্রায় যৌনতা ও নগ্নতা দিয়ে সাজিয়ে দেয়া হয়েছে তাই মানুষ খুব সহজে অতি মাত্রায় যৌনতার দিকে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে প্রণোদিত হচ্ছে। পিন থেকে প্লেন পর্যন্ত সকল কিছুতেই নারী কে ব্যবহার করা হচ্ছে। নারী পুরুষের একে উপরের টান স্বাভাবিক তবে সেই টান কে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে এই পশ্চিমা সভ্যতা। আজ রাস্তা-ঘাট, অফিস-আদালত, মার্কেট সকল জায়গায় এমন দুটো পরস্পর বিপরিত আকর্ষিত ব্যক্তি দের পাশাপাশি নিয়ে এসে মানুষের সংযমশীলতা কে শেষ করে দেয়া হয়েছে। টিভি, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, সাইন বোর্ড, পেপার, নাটক, মুভি, বই, উপন্যাস সহ সকল জায়াগায় যৌনতার সুড়সুড়ি ও ছড়াছড়ি ফলে ছেলেদের কামনা বাসনা কে আরো জাগিয়ে তাদেরকে পশু তে পরিনত করা হচ্ছে সর্ব শেষে বিয়ে কে সোনার হরিন বানিয়ে যৌনতা কে সহজ করে দেয়া হয়েছে, এতে আজ এক নির্লজ্জ পাশচিক সমাজ তৈরি হয়েছে, এমন যুবক ও তরুণ প্রজন্ম তৈরি হয়েছে যারা সারাদিন নেশা আর কামনা বাসনা নিয়ে চিন্তা করে তাদের কাছে ধর্ম একটি বিরক্তকর বিষয় তারা শুধু ভোগ করতে চাই।
এক নির্লজ্জ ও অভদ্র প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে যারা নাচ-গান, নর্তকীতে ডুবে রয়েছে [তাদের মাথার উপর গান-বাজনা এবং নর্তকীদের নৃত্যানুষ্ঠান শোভা পাবে। (ইবনে মাজা-৪০২০)], যারা বাবা-মায়ের সাথে এমন আচরন করছে যেন তারা দাস-দাসী আর সন্তানেরা মুনিব। [দাসীর গর্ভ থেকে মনিবের জন্ম হবে (মুসলিম-১০৬)] GF/BF ও বন্ধু বান্ধবের জন্য অঢেল সময় থাকলেও সেকেলে বাবার সাথে দুটা কথা বলার সময় নেই। এবং এরা মায়ের চেয়ে বেশি স্ত্রীর আনুগত্য করছে। [বন্ধুর প্রতি সদাচারী ও পিতার সাথে দুর্ব্যবহারকারী হবে, স্ত্রীর আনুগত্য করবে এবং মায়ের অবাধ্য হবে (সহীহ তিরমিযী-১৫৪১)] আর স্ত্রীরা আজ স্বামীদের ব্যবসায় সাহায্য করছে [ব্যবসা বানিজ্যে স্ত্রী, স্বামীকে সহযোগিতা করবে (মুসনানে আহমদ-৩৮৭০)]। ফলে মা এখন আর বাসায় থাকেনা ফেমিনিস্ট আন্দোলনের বলে যদিও কিছুটা মেটারনিটি লিভ, প্যারেন্টাল লিভ পেয়েছে তবুও সারাদিন তো আর বাচ্চার সাথে থাকতে পারে না তাই ডে কেয়ার সেন্টারে বাচ্চা লালন-পালন করতে হচ্ছে। আর বিপরিত দিকে খুলছে বৃদ্ধাশ্রম হয়তো পার্ট-টাইম মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত থাকতে পারে কিনা এই সন্দেহের কারনেই সন্তান বড় হয়ে মা-বাবা কে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাচ্ছে। আল্লাহু আলাম
নবী করীম (সাঃ) বলেছেন-"ঐ সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ নিহিত। কেয়ামত সংঘটিত হবে না,যতক্ষণ না অশ্লীলতা ও বেলেল্লাপনা বেড়ে যাবে"
সমাজে অশ্লীলতা বেড়ে গেছে আর এমন এক নারী সম্প্রদায় তৈরি হয়েছে যারা কাপড় পড়েও উলঙ্গ থাকে। তারা এমন কাপড় পড়ে যা তাদের নগ্নতাকে আরও বেশিকরে প্রকাশ করছে। বর্তমান সমাজে মেয়েরা যে সকল পোশাক পড়ে তার মধ্যে বেশির ভাগই হল এই নগ্নতা ফুটিয়ে তোলার পোশাক (এরা কখনো জান্নতে যাবে না)
আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত,নবী করীম সা. বলেছেন- “দুই প্রকার জাহান্নামী সম্প্রদায় এখনো আমি দেখিনিঃ
১) ষাঁঢ়ের লেজ সদৃশ চাবুক দিয়ে মানুষকে প্রহারকারী অত্যাচারী সম্প্রদায়।
২) কাপড় পড়বে কিন্তু তবুও নগ্ন থাকবে এমন নারী সম্প্রদায়। আবেদন সৃষ্টি করতে তাদের মাথাগুলো একপাশে ঝুকিয়ে দেবে। তাদের মাথাগুলো উটের কুঁজের মত উঁচু দেখাবে। এ দু’টি দলের কখনো জান্নাতে প্রবেশ তো দূরের কথা;জান্নাতের সুঘ্রাণও কপালে জুটবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ তো এত....এত.... দূর থেকেই অনুভব করা যায়। (মুসলিম-৭৩৭৩/৫৭০৪)
রাস্তা-ঘাটে খোলামেলা যৌনাচার চোখে পড়বে,বাঁধা দেয়ার কেউ থাকবে না। সে কালের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যক্তি সেই, যে সাহস করে বলবে- রাস্তা থেকে সরে গিয়ে একটু আড়ালে যদি এই কাজ করতে!! সে কালে সে-ই এ কালে তোমাদের আবু বকর-উমর সদৃশ।-” (মুস্তাদরাকে হাকিম-৮৫১৬)
এখানে নারী পুরুষ উভয়ের সম্মতিতে রাস্তা-ঘাটে খোলামেলা যৌনাচার হবে বুঝানো হয়েছে যা শুধু এই কালেই সম্ভব কারন পৃথিবীর ইতিহাসে নারী জাতি কখনো এতটা নির্লজ্জ ছিল না যে তারা রাস্তায় নেমে এমনটা করার চিন্তাও করবে। পুরুষের মধ্যে সর্ব কালেই এমন কিছু নির্লজ্জ লোক পাওয়া যেত তবে নারীদের মধ্যে নয়। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন পাবলিক প্লেইসে যেমন- স্পেনের ক্যানেরি আইল্যান্ড, ফ্রান্সের Cap D'Agde সৈকত, জাপানের কাবকিচ, থাইল্যান্ডের প্যাটপং ছাড়াও প্রভৃতি স্থানে এবং টিভি, ইন্টারনেট ইত্যাদিতে খোলামেলা ভাবে যৌনতা দেখা যায়। আমাদের দেশেও বিভিন্ন উৎসবে টিএসসি, রমনা সহ সকল পার্কে খোলা মেলা জায়গায় এটা হচ্ছে কেউ এদের কে একটু আড়ালে যাও বলার সাহসও করে না উপরুন্ত যারা তাদের দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে তাদের কে নির্লজ্জ মনে করা হয়।
[উল্লেখ্য যে ২৫ বছর আগে শহীদ ড. আব্দুল্লাহ আযযাম (রহ.) বলেছিলেন “স্ত্রী সাথে ছাড়া পাশ্চাত্যে থেকে লেখা-পড়া করা হারাম, আবার বলছি হারাম, হারাম, হারাম” (তাফসীরে সুরা তওবা)। আল্লাহ মালুম উনি যদি এখন থাকতেন তো কি বলতেন। সেই সময় তো মানুষের হাতে হাতে ফোন আর ঘরে ঘরে টিভি ইন্টারনেট ছিল না]
এভাবেই আজ পুরোসমাজ কে অশ্লীলতা বেহায়াপনায় ভরে দিয়েছে আর এটা এমন এক সমস্যা যে যারা ১০-১২ বছর আগে নিজেদের যৌবনকাল পার করেছে তারা আঁচও করতে পারেনা তারা মনে করে সব কিছু স্বাভাবিক রয়েছে অথচ একটুও খেয়াল করে না আজ এই সিস্টেমের ছোঁয়ায় তার সেই শিশু সুলভ বাচ্চা আর বাচ্চা নয় এখন সে যুবকের মত চিন্তা করে। সবশেষে এই সিস্টেম তাদের সোশ্যাল কাঠামো তৈরি করতে গিয়ে পারিবারিক কাঠামোকে পুরোপুরি ভেঙ্গে দিয়েছে। এই ভাবে বাড়ছে হতাশ হয়ে আত্মহত্যার সংখ্যা। তাই আজ অ্যামেরিকায় ৫০% অবৈধ সন্তান জন্ম হয় আর তাদের কেই আর্মি তে নিয়োগ দেয়া হয় দেশপ্রেম জাগানো তো খুব সহজ কারন তারা মনে করে পুরো আমেরিকার মানুষ তাদের পরিবার সকল পুরুষ তাদের বাবা। ২০০০ বছর আগে প্লেটো যেমন সমাজ বানাতে চেয়েছিল দাজ্জাল তেমনি সমাজ আজ বানিয়ে ফেলেছে।
চলবে........
------“আল্লাহুম্মা আরেনি আল আশ’ইয়া'আ কামা হিয়া” (হে আল্লাহ আমাদের প্রত্যেক জিনিসের আসল রূপ দেখাও যাতে বাহিরটা দেখে প্রতারিত না হই)
বিষয়: বিবিধ
২৯৪১ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আললাহ পাক ই ভালো জানেন , কি হচছে আর কি যে হবে
এইসব অনাচার রোধ করতে গেলে নিজেকেই হুমকির মুখে ঠেলে দিতে হয়।
তবে যখন এইসব দেখে বুকে যন্ত্রণা হয়, মনে হয় আমার মাঝে কিছুটা ইমান আছে।
বাকি পর্ব কই!
পড়লাম, দোয়া করি, জাযাকাল্লাহ..
ওয়া ইয়্যাক ইয়া আখি।
দুঃখিত ব্লগে তেমন আসতে পারি না। ইন সা আল্লাহ থাকার চেষ্টা করব। জাজাকাল্লাহ ভাই
জাজাকাল্লাহ
“আল্লাহুম্মা আরেনি আল আশ’ইয়া'আ কামা হিয়া” (হে আল্লাহ আমাদের প্রত্যেক জিনিসের আসল রূপ দেখাও যাতে বাহিরটা দেখে প্রতারিত না হই)
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
"রূম কে? অ্যামেরিকা না রাশিয়া? ঐতিহাসিক ও ধর্মতাত্ত্বিক পর্যালোচনা" শিরোনামে। জাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন