দাজ্জালের মহা ফিতনা ও বর্তমান বিশ্বঃ পর্ব-১০ (দাজ্জাল ও সুদের ছিটা, বীমা, হাদিস কি বলছে এই যুগের সম্পর্কে)
লিখেছেন লিখেছেন কায়সার আহমেদ (কায়েস) ০২ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:২৭:৫২ রাত
দাজ্জাল ও সুদের ছিটাঃ
------------------------
হযরত আবু হুরায়রা (রাযি) থেকে বর্ণিত, আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘মানুষের জীবনে এমন একটি যুগ আসবে, যখন তারা সুদ খাবে’। বর্ণনাকারী বলেন, একথা শুনে নবীজি (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হলো, সমস্ত মানুষ (সুদ খাবে)? উত্তরে তিনি বললেন, “তাদের যে লোক সুদ খাবে না, সুদের ধূলা তাকেও গ্রাস করবে।” [সুনানে আবু দাউদ, খণ্ডঃ ৩, পৃষ্টাঃ ২৪৩]
অর্থাৎ মানুষের উপর এমন যুগ আসবে যখন একটি মানুষও রিবা (সুদ) হতে অব্যাহতি পাবে না সে সরাসরি রিবা না খেলেও রিবার ধোঁয়া বা ধূলিকণা অবশ্যই তাকে স্পর্শ করবে। এটা কি এই যুগ নয়?
আমরা দেখিয়েছি, এই কাগুজে মুদ্রার সময়ানুপাতিক হারে মুদ্রাস্ফীতি (মূল্যহ্রাস) আমাদের থেকে কিভাবে আমাদের সম্পদ গ্রাস করে নিয়ে যাচ্ছে। তবে এই সুদি সিস্টেম কি, রাসূল (সাঃ) ভবিষ্যৎবানী করা সেই সুদের ধুলা নয় যা আমাদের সকলের গায়ে লাগছে?
ম্যাক্রো লেভেলে মুদ্রাস্ফীতি তথা সুদ দেখার পর এখন মাইক্রো লেভেলে সুদ কে লক্ষ্য করলে বিষয়টা আরও পরিষ্কার হবে। আল্লাহ্ সুবাহানা ওয়া তাআলা রিযিকের মালিক উনি ঠিক করবেন কে ধনী থাকবে, না কি গরীব কিন্তু এই দাজ্জালি সিস্টেম নিজেই আগে বেড়ে আল্লাহ্র নিয়মের তোয়াক্কা করে এমন ভাবে সিস্টেম সাজিয়েছে যাতে নিশ্চিত করা হয়েছে, যে ধনীরা স্থায়ীভাবে ধনী ও গরীবরা স্থায়ী ভাবে গরীব থাকে। আর এটাই হল সুদের নেতিবাচক দিক যার কারনে একে হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে।
বীমা (জুয়ার আর এক নাম) বা ইনস্যুরেন্স হল একটি সাধারণ উদাহরণ-- এক (ধনী) ব্যক্তি জাহাজ ভর্তি পন্য আমদানী করে নিয়ে আসছে, কিন্ত সমুদ্রে জাহাজ ও পন্যের ক্ষতি হতে পারে, তাই সে ক্ষতি এড়ানোর জন্য বীমা করিয়েছে, এখন যদি ক্ষতি হয় তবে বীমা কোম্পানি সেই ক্ষতিপূরণ দিবে। (বীমা কোম্পানি অনেক গুলো এমন বীমা করায় আর বিনিময়ে চার্জ গ্রহণ করে, ফলে যদি একটি জাহাজের কোন ক্ষতি হয়ে যায়, তবে সে সহজেই অনেক গুলো জাহাজের চার্জ থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে ক্ষতি পূরণ দিতে পারবে। কারন সব গুলো জাহাজ এক সাথে ক্ষতির সম্মুখীন হবে না। সুতারাং আমরা দেখতে পাচ্ছি এখন সেই (ধনী) ব্যক্তি কিছু চার্জ প্রদান করার ফলে নিশ্চিত হয়েছে তার কোন লোকসান হবে না। সর্বশেষ পন্য বাজারে উঠানো হলে তখন তার মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে পন্যের দাম+পরিবহণ খরচ এর সাথে ইনস্যুরেন্স চার্জ ও যোগ করা হলো, এতে পন্যের দামও বেড়ে গেল।
আশ্চর্যের বিষয় হল, সেই ধনী ব্যক্তির আল্লাহকে রিযিক দাতা মনে করে পণ্য নিয়ে আসার কথা ছিল, এতে যদি তার ক্ষতি হত তবে সেটা আল্লাহ্র ইচ্ছায়। কিন্ত সে যাতে লোকসানের শিকার নাহয় তাই বর্তমান সিস্টেম ইনস্যুরেন্সের সুবিধা আনলো যাতে নিশ্চিত করা হয় যে, সে ধনী ব্যক্তি স্তায়ী ভাবে ধনীই থাকবে, আর উপর দিকে পন্যের যে অতিরিক্ত খরচ (চার্জ) তা সকল (গরীব) ক্রেতাদের ঘাড়ে চাপানো হল, অর্থাৎ গরীব স্থায়ী ভাবে গরীব থাকবে।
সুদ তো আরও ভয়ঙ্কর এখন যদি আমরা সুদের দিকে তাকায়- ধরি সেই (ধনী) ব্যক্তির নিজস্ব মূলধন নেই তাই সে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে পন্য আমদানী করেছে ফলে তার ব্যবসায় তো ভালোই, কিন্তু তার সেই লোনের টাকার উপর যে সুদ আসলো সেই অতিরিক্ত খরচও পন্যের মধ্যে যোগ করা হলো এতে পন্যের দাম আরো বেড়ে গেল, আর গরীব ক্রেতাদের উপর আরও বড় আকারে বোঝা চাপানো হলো।
ফলে ব্যাংকে ডিপসিট কারী, ব্যাংক (ধনী) রা নিশ্চিত হয়েছে তাদের কোন প্রকার লোকসান হবে না অন্যদিকে বেচারা গরীব ক্রেতারা সকল সুদ ও চার্জ এর বোঝা বহন করে আরো গরীব হচ্ছে।
বেশির ভাগ লোকের কাছে মূলধন কম থাকায় তারা ব্যাংক লোন নিতে বাধ্যে হচ্ছে আর এতে বিভিন্ন পন্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, এভাবেই আমরা সেই পন্য বেশি দামে কিনছি আর তা ব্যবহার করে সুদের ধুলাও লাগাচ্ছি। সুদ আজ এত রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গিয়েছে যা কল্পনাও করা যায় না। যেমন--এখন আপনার গায়ে যে পোশাক তা তৈরিতে নিশ্চয় ব্যাংকের লোন (সুদ) ব্যবহৃত হয়েছে, যে চেয়ারে আপনি বসে আছেন তাও সেই সুদ হতে পবিত্র নয়, এমনকি মসজিদ/মদ্রাসার/বাসা/অফিসে বিদ্যুৎ বিল যদি দেরি করে দেয়া হয় সেটাতেও চক্রবৃদ্ধি আকারে সুদ যোগ হয়ে যায় তখন আমাদের কে সরাসরি সুদ দিতে হয় যা আমাদের বিলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে।
একটা কথা আছে যে টাকা গাছে ধরে না, আসলে বাস্তবতা হল বর্তমান অর্থনীতি সিস্টেম গাছের চেয়েও অনেক গতিতে টাকা তৈরি করে। আর স্বর্ণ হলো একটা পণ্য যার ৬০% ব্যবহার করা হয় এখন শুধু জুয়েলারি হিসেবে, তাই স্বর্ণের পাহাড় বের হলেও সেটায় তেমন কিছু যাই আসেনা। আমরা শুধু আমেরিকার সম্পদের সুসম বন্টন দেখলেই পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পারব। আমারিকার মোট সম্পদ হলো ৫৪ ট্রিলিয়ন যার শতকরা ৪০ ভাগ সম্পদই আছে ১% লোকের কাছে আর মাত্র ৭% সম্পদের মালিকানা হলো আমেরিকার ৮০% লোকের আর বাকি ১৯% লোক ৫৩% সম্পদের মালিক।
এই রিবা (মুদ্রাস্ফিতি/সুদ/ইউজারি/কুপন রেট) নিশ্চিত করেছে ধনী দের জন্য ঝুকিহীন বিনিয়োগ (Risk free investment)আর এর ছোবলে অপ্রতিরোধ্য গতিতে ধনীরা আরো ধনী ও দরিদ্ররা আরো দরিদ্র হচ্ছে।
আল্লামা ইকবাল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছিলেন--
“ইন বুনুক ইন ফিকরে চালাকে ইয়াহুদ
নুরে হাক আজ সিনানে-আদাম রাবুব”
এই ব্যাংক হল ইয়াহুদীদের চালাকী যা মানুষের মন থেকে আল্লাহর প্রদত্ত নূর ও আধ্যাত্মিক ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে (মনের চোখ অন্ধ হয়ে গেছে তাই এখন শুধু বাহিরের এক চোখে দিয়েই দেখছি) । আর তাই আমাদের দিনের পরদিন ঈমান দুর্বল হয়ে যাচ্ছে ফলে হালাল হারাম কোন পরোয়া করছি না।
মানুষের উপর এমন যুগ অবশ্যই আসবে যখন মানুষ পরোয়া করবে না যে কিভাবে সে মাল-সম্পদ অর্জন করছে হালাল নাকি হারাম উৎস থেকে। (সহীহ বুখারী ৪:১৯৪৮) এটা কি সেই যুগ নয়?
দাজ্জালের দুই পাশে কৃত্তিম জান্নাত ও জাহান্নাম থাকবে, যে মুমিন তাকে জাহান্নামে ও ইমানহারাদের কে জান্নাতে নিক্ষেপ করবে। দাজ্জাল যাকে খুশী সম্পদশালী করবে আর যাকে খুশী দরিদ্র বানাবে, এখন তার অনুসারীরা এমন ভাবে দাজ্জালি সিস্টেম বানানোর ফলে যে ইমানদার তার সম্পদ কেড়ে নিচ্ছে আর যে ইমানহারা হয়ে আল্লাহ্র বিধানের দিকে না তাকিয়ে শুধু বাতিলের অনুসরণ করবে তাদের কে সম্পদশালী করছে।
আল্লাহ, আল্লাহ্র রাসূলের ও মুমিনদের বিরুদ্ধে দাজ্জাল নিজে যুদ্ধ ঘোষণা করবে, দাজ্জালের আসার আগেই তার অনুসারীরা তার জন্য এমন সিস্টেম তৈরি করেছে যা তে সম্পৃক্ত হয়ে আদম সন্তানেরা অজান্তেই আল্লাহ ও তার রসূলের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে গেছে-
অতঃপর যদি তোমরা (সুদ) পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না। (সূরা বাকারা- ২:২৭৯)
সর্বশেষ শাইখ ইমরান সাহেবে আহবান দিয়ে শেষ করছি- বস্তুত রিবার (কাগুজে মুদ্রার ও সুদী কর্মকাণ্ডের) ফাঁদে আবদ্ধ হয়ে বিশ্ব মানবতা আজ ধ্বংসের দোরগোরায় পৌঁছে গিয়েছে। ঘুমিয়ে থাকার মোটেও সময় নেই। গা ঝাড়া দিয়ে জেগে উঠতে হবে মুসলিম উম্মাহকে। প্রতিটি মুসলিমকে রুখে দাঁড়াতে হবে রিবাসহ অন্যান্য গোমরাহি ও আল্লাহ্ বিরোধী প্রতিটি বিধি-বিধান ও কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রিবা (সুদ) বর্জন করে প্রতারণা ও উন্নয়নের ভুয়া শ্লোগানের মাধ্যমে মুসলিমের সম্পদ লুটতরাজ কে প্রতিহত করতে হবে।
চলবে.......
------“আল্লাহুম্মা আরেনি আল আশ’ইয়া'আ কামা হিয়া” (হে আল্লাহ আমাদের প্রত্যেক জিনিসের আসল রূপ দেখাও যাতে বাহিরটা দেখে প্রতারিত না হই
বিষয়: বিবিধ
২০৪০ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সমাধানের (অর্থাত ব্যক্তিপর্যায়ে আত্মরক্ষার) জন্য বাস্তবসম্মত কোন প্রস্তাবনা থাকলে পেশ করুন, আমরা সূদের ধূলি থেকেও বাঁচতে চাই!!
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
সম্পূর্ণ ভাবে এর থেকে বের হওয়া যাবে না, আর ছিটা থেকে বাঁচতে হলে একটাই উপায় আছে সেটা হল মুসলিম ভিলেজ প্রতিষ্ঠা। সুরাহ কাহফ ও ফিতনার সময় করনীয় হাদিস গুলোর উপর বাস্তবায়ন করলে অনেকটা বাঁচা যাবে। এটা ব্যাপক আলোচনার বিষয়, ইনশাআল্লাহ্ এই নিয়ে একটা আলাদা পোস্ট লিখব।
ওয়া আলাইকা ইয়া আখি
সরকার এটাকে "রাষ্ট্রদ্রোহিতা" বিবেচনা করবে নিশ্চিত!
এ বিষয়ে একমত হয়ে সে ধারণা স্থগিত রাখতে হয়!!
আপনার পোস্টের অপেক্ষায় রইলাম!!
জাযাকাল্লাহ..
ঢাকঢোল না পিটিয়ে সমমনা ভাইবোনরা গ্রাজুয়েলী মুসলিম ভিলেজ করতেই পারে। তাতে কোন স্টাবলিশ আইনের সাথে বিরোধ হবেনা। অনেকটা প্রাইভেট হাউজিং এর মত।
সবচেয়ে বড় কথা কিছু করলাম না, করতে চাইলাম না - এটা কোন এক্সকিউজ হবে না আল্লাহর কাছে।
সবচেয়ে বড় কথা কিছু করলাম না, করতে চাইলাম না - এটা কোন এক্সকিউজ হবে না আল্লাহর কাছে।
এতে কোন দ্বিমত নেই!!
মাশাআল্লাহ এটাও ভাল লিখা হয়েছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন