দাজ্জালী দুনিয়ায় দৈনন্দিন জীবন- ক্ষুধার্ত যুবক ও বেপর্দা নারী
লিখেছেন লিখেছেন কায়সার আহমেদ (কায়েস) ২২ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৫:১৯:২৫ বিকাল
প্রচণ্ড ক্ষুধা নিয়ে জীর্ণ শীর্ণ মানুষ হাটছে, সে কয়েকদিন থেকে ক্ষুধার্ত। অনেক মানুষের কাছে হাত পেতেছে কিন্তু ভাগ্যে খাবার জুটেনি। সে যে কোন পরিশ্রম করে উপার্জন করে খাবে সেই দ্বার অনেক আগেই সমাজ বন্ধ করে দিয়েছে। সে চলতে চলতে থামলো এক সুন্দর পরিপাটি রেস্তোরার সামনে হরেকরকমের খাবার সাজানো আছে টেবিলে, কাঁচের ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখল পুঁজিবাদী সমাজের কিছু উশৃঙ্খল তরুন-তরুনীরা খেতে মশগুল আর মাঝে মাঝে সেলফি নিচ্ছে খাওয়া শেষ ওয়েটার কে ১০০ টাকা টীপ দিয়ে ক্ষুধার্ত লোকের দিকে এক ঘৃণ দৃষ্টি ফেলে বেরিয়ে গেল।
বেচারা হাঁটছে বিভিন্ন রাস্তার ফুটপাত ধরে আর চোখে পরছে শুধু সাজানো খাবার কিন্তু সে কি করবে? খাবার চুরি করবে? একটু চিন্তা করার জন্য থামলো কিন্তু পেটের ক্ষুধা তার সাধারন চিন্তা শক্তিও কেড়ে নিল....
এক ভদ্র লোক তার অবস্থা দেখে তাকে সাহায্য করলো, আর আল্লাহর কাছে অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো সমাজে কত এমন লোক আছে যারা খাবার পায় না। বিশ্বে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ আছে যারা রাতে খেতে পারবে নাকি না খেয়েই ঘুমাতে হবে তাও জানে না। আল্লাহ বলেছেন মানুষের মধ্যে অনেকেই এমন যারা অকৃতজ্ঞ, এরা ক্ল্যাস শেষে BMW কার থেকে বাসাই এসে নিজের ল্যাপটপ টা খাটে ছুড়ে ফেলে আম্মুর সাথে রাফ ব্যবহার করা শুরু করে, পড়াই মন বসাতে পারে না তার মাথায় চিন্তা থাকে আমার বন্ধু কাছে iphone 5 থাকলে আমার কাছে থাকবে না কেন। ভদ্র লোক আবার ও চিন্তাই উঁকি মারলেন রমযানের দিন গুলোর একদিনে, যে দিন তার প্রচণ্ড ক্ষুধা লেগেছিল পিপাসাও তবুও সে কোন মত সহ্য করলো কিন্তু যখন তার বাস এক হোটেলের পাস দিয়ে যাচ্ছিল তার চোখে পরছিল সাজানো অনেক পদের খাবার আর কিছু লোক সে গুলো খাচ্ছে অপেনলি আর খাবারের ঘ্রাণে পরিবেশ আরো বেশি অসহ্যকর হয়ে গিয়েছিল । বাসের একজন যাত্রি বলল কি যে সমাজ রমযানেও রেস্তোরা ঢেকে রাখে না সব খুলে রোযাদার কে কষ্ট দিচ্ছে। সেই দিনগুলো সে ভদ্র লোকের জন্য কতটা অসহ্যকরছিল তা চিন্তা করে আল্লাহর নিকট আরো বেশি করে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে লাগলেন।
ভদ্র লোকটি সামনে হাঁটা শুরু করলেন এক মার্কেটের সামনে প্রয়োজনে দাঁড়ালেন তার চোখে পড়ল এক মেয়ে খুব স্বল্প আঁটসাঁট কাপড়ে পরিপাটি ভাবে সেজে গুজে সেই মার্কেটে ঢুকছে লোকটি আল্লাহর ভয়ে চোখ সরিয়ে নিলো, কিন্তু আসে পাশে দেখলো যে শত শত ছেলেরা সেই মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে খুব কু-দৃষ্টিতে, ছাত্র, সেলসমেন শ্রমিক রিকশা ওয়ালা হকার সকলে তাকিয়ে আছে কিন্তু মেয়েটা ধোরাই পারোয়া করছে, সে মনে হয় নিজের রূপের জন্য আরও গর্বিত হচ্ছে।
ভদ্র লোকটি সবার প্রতি একটু নাখোশ হল অবাক হয়ে গেল এত লোলুপ দৃষ্টি তো সে ক্ষুধার্ত ব্যক্তিও সামনের পরিবেশিত খাদ্যে দেয়নি, তারপর আবারো চিন্তাই ডুব দিলো যে কেন এমন অভদ্র ও বেহায়া হয়ে গেলো পুরো সমাজ মেয়েটা নাহয় একজন অবুঝ কিন্তু এত ছেলেরা কেন।
তখন তার মনে হল সমাজ টাই এমন যে ছেলেরা এখন আর স্বাভাবিক মানুষ নয় এরা এক ক্ষুধার্ত পশু হয়ে যাচ্ছে কিশোরকাল থেকে এরা বই পুস্তক,ফ্লিম মুভি নাটক বিজ্ঞাপন,বিলবোর্ড পেপার সব যায়গায় যৌনতার সুরসুরি পেয়ে বড় হচ্ছে ইন্টারনেট মোবাইল ফোন আর নানান গেজেট এদের স্বাভাবিক চাহিদা কে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে ফেইসবুক ইমো আপ সব কিছু ছেলে-মেয়ের কম্বাইন এডুকেশন - কর্মস্থল এতে আরো ঘি ঢালছে আস্তে আস্তে তারা স্বাভাবিক বুদ্ধি বিবেক কে পিছনে ফেলে কামন বাসনার ক্ষুধা কেই প্রাধান্য দেয়া শিখছে। যেখানেই যাক তরুন ও যুব সমাজের কাছে বিএফ জিএফ ইত্যাদি বিষয় ছাড়া যেন আলোচনার আর কোন টপিক নেই। আর সর্বশেষ এই সবের মাঝে যে ক্ষুধার্ত সে নিজের ক্ষুধা মেটানোর স্বাভাবিক সুযোগ পাচ্ছে না কারন সেই সমাজ সেই সিস্টেম তার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আর অন্যদিকে তাদের ক্ষুধা কে আরো আর অসহ্য করার জন্য রাস্তা ঘাট স্কুল কলেজ সব জায়গায় নারী স্বাধীনতার নামে বেপর্দা কাপরের মেয়ে তে সয়লাব হয়ে গেছে। আর এভাবেই ছেলে আর ছেলে নই নিজের সংযমী শক্তির ফাইনাল লেভেল অবস্থান করছে এর মাঝে যখন কোন মেয়ে কে দেখে সে তখন আর সমাজের পরোয়া করে না সে কু দৃষ্টির মাধ্যমেই নিজেকে কিছুটা অবকাশ দিচ্ছে আর যারা তাও পারে না তখন উন্মাদনার সর্ব শেষ পর্যায়ে গিয়ে নববর্ষের মত ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। আর বিবাহিত যুবকরাও অন্য মেয়েদের দেখে তার বিবাহিত জীবনে নিয়ে আসছে আঁধার। এমন কি স্ত্রীরা নিজেই নাটক, ফ্লিম, দেখতে বসে যায় নিজ স্বামী কে নিয়ে কিন্তু বেচারী স্ত্রী আঁচও করতে পারে না সে নিজেই তার স্বামীর কল্পনায় অন্য মেয়েকে ঢুকিয়ে দিচ্ছে।
সেই অবুঝ মেয়েরা বুঝেই না তারা কেন এত স্থানে স্থানে অপদস্থ হচ্ছে তবু এই সব ছোট ড্রেস পরা কে সে স্বাভাবিক মনে করছে কারন এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তাদের মগজে ঢুকিয়ে দিয়েছে এটাই মেয়েদের জন্য সভ্য ড্রেস এটাই আধুনিকতা।
এগুলো কি হচ্ছে আজ থেকে তো মাত্র ১৫ বছর আগেও সমাজ এমন ছিল না। সে জবাব খুঁজতেছে মনে মনে হটাত তার একটা হাদিস মনে পড়ল প্রিয় নবী (সা) বলেছিলেন কিয়ামতের পূর্বের কিছু নারী দের কে নিয়ে বলেছেন—
“এসব নারীরা চলবে মনোলোভা ভঙ্গিতে, আঁটসাঁট ও সংক্ষিপ্ত পোশাকের মাধ্যমে পরপুরুষের লোলুপ দৃষ্টি তাদের প্রতি আকর্ষণ করবে” (সহীহ মুসলিম-৩৯৭১, মুসনানে আহমাদ-৮৩১১)
আরও আছে যে “সাজসজ্জা ও উন্নত পারফিউমের সুগন্ধি দ্বারা পর পুরুষের চরিত্র কে উষ্ণময় করে তুলবে। তখতের উপর চড়বে এবং মসজিদের ফটক দিয়ে ঘুরে বেড়াবে।“
তার চিন্তা আরো একটা হাদিস ভেসে উঠলো আর আফসুস করছে আয় হায় এই অবুঝ মেয়েরা জানেও না যে তাদের ভাগ্যে জাহান্নাম লিখে দেয়া হয়েছে ১৪০০ বছর আগেই নির্ধারণ হয়ে গেছে তারা জান্নাত তো দূরের কথা এর ঘ্রাণ ও পাবে না। আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত,নবী করীম সা. বলেছিলেন দুই প্রকার জাহান্নামী সম্প্রদায় এখনো তিনি দেখেননি তার মধ্যে এক সম্প্রদায় হল যারা-
কাপড় পড়বে কিন্তু তবুও নগ্ন থাকবে এমন নারী সম্প্রদায়। আবেদন সৃষ্টি করতে তাদের মাথাগুলো একপাশে ঝুকিয়ে দেবে। তাদের মাথাগুলো উটের কুঁজের মত উঁচু দেখাবে। এ দু’টি দলের কখনো জান্নাতে প্রবেশ তো দূরের কথা;জান্নাতের সুঘ্রাণও কপালে জুটবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ তো এত....এত.... দূর থেকেই অনুভব করা যায়। (মুসলিম-৭৩৭৩/৫৭০৪)
“আমার উম্মতের সব গোনাহগার তাওবার মাধ্যমে অথবা আল্লাহর বিশেষ করুণায় মাফ পেয়ে যাবে। কিন্তু যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে গোনাহ করছে এবং গোনাহের উপর লজ্জিত হওয়ার পরিবর্তে বড়াই করে বেড়িয়েছে সে মাফ পাবে না” (সহীহ বুখারী-৫৬০৮)
ভদ্র লোক চিন্তা করতে লাগলেন সব কারসাজী হল এই ওয়েস্টার্ন মডার্ন সিভিলাইজেশনের যার মাস্টার প্লানার হল দাজ্জাল। সর্বকালের সবচেয়ে বড় ফিতনা দাজ্জাল তার আত্নপ্রকাশের আগে আর এক বড় নারীজনিত ফিতনা ব্যবহার করছে পুরোদমে।
“আমার পর আমি পুরুষের জন্য নারীর ফেতনার চেয়ে অধিক ক্ষতিকারক কোনো ফিতনা রেখে যাইনি” (বুখারী-৫০৯৬)
এই সব ভাবতে ভাবতে ভদ্র লোকটি তার গন্তব্যে পৌঁছে গেলেন। আর হাত তুলে এক দুয়া করলেন-
হে আল্লাহ! সমাজের মেয়েদের কে বুঝার তাওফিক দান করুন আর ছেলেদের কে আর সংযমশীলতা ও ধৈর্যশীলতা দান করুন। আমিন ইয়া রাব্বাল আলামিন।
বিষয়: বিবিধ
১৬১৪ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অসম্ভব ভাল হয়েছে লিখাটি। সহজ, সরল, স্মুথ ও বোধগম্য। মাশাআল্লাহ্।
প্লিজ কিপ রাইটিং। এই লিখার স্টাইলটি বেশ ভাল এবং এ্যাপিলিং বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।
সুরা নাস এ, আল্লাহ আমাদের মত বাংলাদেশী মানুষ (জিন নয়) 'শয়তান' হতে ও পানাহ্ পাওয়ার কথা বলেছেন তার মানে আমরা মানুষ শয়তানের কারেক্টার ধারন করলে শয়তান হতে পারি। অনুরূপভাবে আমরা মানুষরা যদি - আদম আঃ এর বংশধর ইয়াজুজ ও মাজুজ এর কারেক্টার তথা ফ্যাসাদ এ জড়াই (সুরা কাহাফ অনুযায়ী) এবং তাদের গুনাগুন ধারন করি তথা করাপশানে ডুবে থাকি - তবে অনুরূপভাবে আমরা ও আজ এক একজন ইয়াজুজ ও মাজুজ এ পরিনত হয়েছি।
চারপাশে তাকিয়ে একটু ভাবলে দেখবেন - আমাদের মধ্যস্থিত মানুষজনের প্রতি ১০০০ জনে ৯৯৯ জন ই দোযখে যাবার জন্য কম্পিট করছি।
আল্লাহ দয়া না করলে এ ট্রেন্ড হতে ফিরে আসার কোন সুযোগ আমি দেখছি না।
ধন্যবাদ।
আল্লাহুম্মা আরিনাল আশইয়া আ কামাহিয়া। জাজাকাল্লাহ
ধন্যবাদ৷
আমন্ত্রনটা যখন দেখলাম, তখন নেট স্লো ছিল, পড়তে পারিনি,
একটু অবাক লাগলো এত আগের লিখা আর আজ.......?
আপনার লিখায়, দুইটা বিষয়ের মধ্যে যে তুলনা তুলে ধরেছেন, তা এক কথায় অসাধারন।
আমারা তাকিয়ে থাকি ঠিক ই কিন্তু চলি অন্ধের মত।
আমাদের কাছে এখন সমাজ, সামাজিকতা, আধুনিকতা ই মুখ্য, ধর্মের চেয়ে।
আমরা ভুলে ই গেছি যে, আমাদের কবরে শুধু আমাদের দ্বীনি আমাল ই যাবে,
সামাজিকতার নামে বেহায়াপনা নয়
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে দ্বীনি আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন
হে আল্লাহ! সমাজের মেয়েদের কে বুঝার তাওফিক দান করুন আর ছেলেদের কে আর সংযমশীলতা ও ধৈর্যশীলতা দান করুন। আমিন ইয়া রাব্বাল আলামিন
আমার মতে ছেলেদেরই আগে সংযত হওয়া উচিত , তাহলে মেয়েরা সিটিয়ে যাবে ।
গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানোতে মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা বেশী কন্ট্রোল করতে পারে।
(পিচ্চি পোলাপান , তোমার এখনও ফিডার খাবার বয়স । এত পাকনা হয়ে যেও না । নচেৎ অকালে ধপাস করে ঝরে পড়বে)
---------------------------
এক হাতে (ছেলেদের) তালি বাজানোর প্রচেষ্টার পার্ট হিসাবে - এই লেসনটা অক্সফোর্ড ক্যামব্রিজ গত অর্ধ শতাব্দির খানিকটা বেশী সময় ধরে বিলিয়ে আসছিল - ফলাফল দাড়িয়েছে বিশ্বে 'সমকামিতা'র প্রতিষ্ঠা।
কোরান বরং ১৪০০ বছর আগে উভয় হাতে (পুরুষের ও মেয়েদের করনীয়) তালি বাজাতে বলেছে - আর তার সাকসেসফুল ডেমন্সট্রেশান এর নজির সমাজব্যবস্থায় ১৩০০ বছর নূন্যতম বজায় ছিল।
সুতরাং পরামর্শ হিসাবে এই উভয় হাতের তালি বাজানোর চেয়ে অধিক উপযুক্ত আর কি ই বা হতে পারে?
http://www.bdnow.net/blog/blogdetail/detail/5972/alihusainkaisar/74441
হে আল্লাহ! সমাজের মেয়েদের কে বুঝার তাওফিক দান করুন আর ছেলেদের কে আর সংযমশীলতা ও ধৈর্যশীলতা দান করুন। আমিন ইয়া রাব্বাল আলামিন। ছুম্মা আমিন
জাজাকাল্লাহ ইয়া আখি।
জাজাকাল্লাহ ভাই। ইন সা আল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন