দাজ্জালের মহা ফিতনা ও বর্তমান বিশ্বঃ পর্ব-৮ (অর্থনীতি-২)

লিখেছেন লিখেছেন কায়সার আহমেদ (কায়েস) ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১১:৫০:০৩ রাত



দুনিয়ায় সকলে সমান সম্পদ হবে এমন আশা করা যায় না। তবে সবাই, যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী পরিশ্রম, সময়, ও মূলধন দিয়ে সম্পদ আয় করার সমান সুযোগ পাবে এটাই আল্লাহর বিধান। কিন্তু এই সমান সুযোগ (Equal Opportunity) এখন বাধাগ্রস্থ হয়েছে। কিছু মানুষের হাতে এখন রয়েছে এই সুযোগ, তাই এখন দেখা যাচ্ছে পাহাড় সমান বৈষম্য, ধনী ও গরীবের মধ্যে ব্যাপক অসমতা ফলে তৈরি হয়েছে ধনী দেশ ও গরীব দেশ। তাই আমরা দেখি যদি কেউ বাংলাদেশের মত দেশে জন্ম হলেই সে গরীব হয়ে যায় আর আমেরিকায় জন্ম নিলেই ধনী, একটু ঘুরিয়ে বললে মুনিব ও দাস। আমরা সুদী ব্যবস্থা কে হয়ত দায়ী করবো কিন্তু আমরা একটু চিন্তা করলেই দেখতে পাবো এটার জন্য প্রধান ভাবে দায়ী হলো আন্তর্জাতিক মুদ্রা ব্যবস্থা তথা কাগুজে মুদ্রা বা সুন্নাহ মুদ্রার অনুপস্থিতি।

ইসলামে অনুমোদিত বা সুন্নাহ মুদ্রা আমরা তাকেই বলতে পারি যার মূল্য মুদ্রার ভিতরেই থাকে এবং তা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থায়ী থাকে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সেই মুদ্রার যোগান ও চাহিদা মানুষের হাতে নয় আল্লাহর হাতে থাকবে মানে প্রকৃতি (Nature) বলে দিবে এখন কোনটার মুল্য মান কত হবে, অর্থাৎ কোন মানুষ মূল্যমান কে প্রভাবিত করতে পারবে না। মুল্যমান হল একটা নির্দিষ্ট মুল্যে কতটুকু পন্য কেনা যায়। যেমন আজকে থেকে ১০ বছর আগে ৫ টাকা দিয়ে যা কেনা যেত এখন ৫ টাকা দিয়ে তা কেনা যায় না কারন মুল্যের মান কমে গেছে।

উদাহরণঃ দিনার বা স্বর্ণ কে আমরা ইসলামিক মুদ্রা বা সুন্নাহ মুদ্রা/মানি বলতে পারি, কারন এটার মান কত হবে সেটা আল্লাহই নির্ধারণ করে দেন। যেমন কাগুজে মুদ্রার যত ইচ্ছা যোগান (supply) দেয়া যাবে,কিন্তু প্রকৃতি ঠিক করে দিবে স্বর্ণের উৎপাদন কত হবে। আর যেকোন জিনিসের যোগান ও চাহিদাই তার মান নির্ধারণ করে দেয়। আবার স্বর্ণ মুদ্রায়, মূল্য স্বর্ণের মধ্যেই থাকে এবং তার একটা স্থায়িত্বও আছে (Expected life) যা কাগুজে মুদ্রাই থাকেনা।

দাদা-নাতির উদাহরনে গোল্ড ও দিনারের সাথে বোগাস কাগুজে মুদ্রার পার্থক্য পরিষ্কার হবে—

একজন দাদা হজ্জ হতে আসার সময় ১০০ টি স্বর্ণ মুদ্রা (আউন্স) নিয়ে এসে ১৯৭১ সনে জন্ম হওয়া নাতিকে উপহার দেয় এই শর্তে যে নাতির বয়স ১৮ পূর্ণ হবার পর এই সম্পদ তাকে হস্তান্তর করতে হবে বলে সে তার ছেলের কাছে মুদ্রা গুলো দিয়ে দিলেন। কিন্তু ছেলে বুদ্ধিমান তাই সে ৫০ টি মুদ্রা US DOLAR দিয়ে এক্সচেঞ্জ করে নিলেন, পেলেন ৫০*৩৫=১৫০০ ডলার। নোট গুলো সহ স্বর্ণমুদ্রা গুলো সিন্দুকে জমা রাখলেন। ১৯৮৯ সনে ১৮ বছর পূর্তিতে নাতী তার সম্পদ হাতে তুলে নিয়ে বাজারে গেল, ১৫০০ ডলার বিক্রয় করে সে পেল ১৫০০*৩২=৪৮,০০০ টাকা আর অন্য দিকে ৫০টি দিনার বিক্রয় করে পেল ৫০*৬৫০০= ৩,২৫,০০০ টাকা অর্থাৎ ডলার তথা কাগুজে মুদ্রার কারনে ৫০ টি দিনার ডলারে পরিবর্তন করার জন্য ক্ষতি হলো (৩,২৫,০০০-৪৮,০০০)=২,৭৭,০০০ টাকা।

The supply of Gold is limited but supply of Paper is unlimited for money

মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রন করে সরকার। আর যখন সরকার বেশি পরিমাণে কাগুজে মুদ্রা বাজারে ছাড়ে তখন মুদ্রার মুল্যমান কমতে থাকে, কিন্ত দিনার বা দিরহাম সরকার চাইলেই সরবরাহ করতে পারেনা কারন এর উৎপাদন সীমিত। মুদ্রার সরবরাহ বেড়ে গেলে তাকে মুদ্রাস্ফীতি বা ইনফ্লেইশন বলে,আর এর ফলে মুদ্রার মুল্যমান কমে যায়।

উদাহরনঃ মানুষের হাতে খুব কম টাকা আছে এখন একজন জমি বিক্রেতা যদি তার জমি অধিক মুল্যে বিক্রি করতে চাই তবে মানুষ টাকার স্বল্পতার কারনে কিনবে না।

দাদা-নাতির উদাহরনে ডলারে মুল্যমান হ্রাস পাওয়ার কারনে ২,৭৭,০০০ টাকার ক্ষতি হল। আর ডলার যেহেতু একমাত্র মুদ্রা (পেট্র-ডলার) যার মাধ্যমে তেল কেনা যাবে, তাই ডলার সরবরাহর পরিবর্তন পুরো বিশ্বের সকল কারেন্সি কে প্রভাবিত করে। বছরের পর বছর ডলারের মুল্যমান কমেই যাচ্ছে- ১৯১৩ সালে ১ ডলার দিয়ে যা কেনা যেত এখন শতকরা ৯৫ ভাগেরও কম কেনা যায়।

.......চলবে

(পরের পর্বে- কাগুজে মুদ্রার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, ডলার, Britton wood agreement, কিভাবে স্টারলিং পাউন্ড কে রিপেলেসড করে ডলার এলো,গোল্ড রিসার্ভ সিস্টেম কিভাবে বদলে জিরো রিজার্ভ সিস্টেম হল ইত্যাদি তুলে ধরার চেস্টা করবো ইনশাআল্লাহ্

এই লেখাটা লেখার সময় ও অনেক মেটেরিয়াল থেকে সাহায্য নিয়েছি, সিরিজ শেষ সকল রেফারেন্স উল্লেখ করে দিব ইনশাআল্লাহ

বিষয়: বিবিধ

১২২৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

343249
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ১০:১১
মুহাম্মদ_২ লিখেছেন : ধন্যবাদ। চালিয়ে যান।
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:১৬
284533
কায়সার আহমেদ (কায়েস) লিখেছেন : জাযাকাল্লাহু খাইরা ভাই

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File