মুমিন জীবন ও ঈমানের পরীক্ষা
লিখেছেন লিখেছেন সাইদুল ইসলাম সাইদ ১০ মে, ২০১৩, ০৬:৩৮:২৪ সন্ধ্যা
.....হিজরতের পরে মদিনায় মুসলমান দের জীবনের প্রথমাবস্থায় যখন অর্থনৈতিক সংকট,বাইরের বিপদ এবং ইহুদী ও মুনাফিকদের ভিতরের দুষ্কৃতি মুমিনদের কে ভীষণভাবে পেরেশান করে রেখেছিল তখন আল্লাহ মুমিনদের কে সম্বোধন করে আয়াত নাযিল করলেন.....
''তোমরা কি মনে করে নিয়েছো তোমরা এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে, অথচ এখনো তোমরা সেই অবস্থার সম্মুখিন হওনি, যে অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী (ঈমানদারগন) গণ? তারা সম্মুখীন হয়েছিল নির্মমতা ও দুঃখ -ক্লেশের এবং তাদেরকে অস্থির করে তোলা হয়েছিল।এমনকি সমকালীন রাসুল ও তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছিল তারা চিৎকার করে বলে উঠেছিল, আল্লাহর সাহায্য কবে আসবে??? তখনই তাদেরকে সুখবর দেয়া হয়েছিল এই মর্মে যে, জেনে রাখো, আল্লাহর সাহায্য নিকটেই.......'' (সুরা আল বাকারাহ ২১৪)
প্রায় একই ধরনের পরীক্ষার ঘোষনা সম্বলিত আয়াত আল্লাহ বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করেছেন, যেমন উহুদ যুদ্ধের পর মুসলমান দের উপর যখন বিপদের পাহাড়,সেই দুর্যোগ পূর্ণ অবস্থায় আল্লাহ সুরা আল ইমরানের ১৪২ নং আয়াতে মুমিনদের কে এই পরীক্ষার কথা আবার স্মরণ করিয়ে দেন... ...মক্কী যুগেও ভীষণ নিরযাতনে অতিষ্ট হয়ে যখন সাহাবীরা রাসুল(সা) এর কাছে এসে অভিযোগ করতেন তখন আল্লাহ তাদের সুরা আনকাবুতের ১-৩ নং আয়াতে স্মরণ করিয়ে দেন যে এর চাইতে কঠিন পরীক্ষা তোমাদের পূর্ববর্তীদের করা হয়েছে... ...প্রায় একই বক্তব্য সুরা আল ইমরানের ১৭৯,সুরা তাওবার ১৬, এবং সুরা মুহাম্মদের ৩১ আয়াতে দেয়া হয়েছে...
মক্কা বিজয়ের পরে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিল,৯ম হিজরীতে তাবুক অভিযানের পূর্বে আল্লাহ তাদেরকে একই পরীক্ষার কথা পুনঃ স্মরণ করিয়ে দিলেন।
গ্রীষ্মের প্রচন্ড রোদ, ফসল কাটার মুওসম যখন সমাগত তখন শক্তিশালী রোম বাহিনীর বিরুদ্ধে তাবুক যুদ্ধের ডাক এলে দুর্বল ঈমানের কিছু লোক ঘড়িমসি শুরু করলো, আল্লাহ তখন তাদেরকে সম্বোধন করে বললেন ... "তোমরা কি একথা মনে করে নিয়েছো যে, তোমাদের এমনিই ছেড়ে দেয়া হবে? অথচ আল্লাহ এখনো দেখেননি তোমাদের মধ্যে কারা তার পথে সরবাত্নক প্রচেষ্টা চালালো এবং আল্লাহ , রসুল ও মুমিনদের কে ছাড়া কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু রুপে গ্রহণ করলো না? তোমরা যা কিছু করো, আল্লাহ তা জানেন।" (সুরা তাওবা ১৬)
সুতরাং মুমিন মাত্রই তাকে পরীক্ষার চুল্লীর মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে হবে, এই চুল্লিতে পুড়ে পুড়ে তাকে খাঁটি সোনায় পরিণত হতে হবে, তারপর আল্লাহ তাকে জান্নাত দিবেন।
এই পরীক্ষা থেকে মুক্তি পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীক্ষা করা হবে ভয়-ভীতি দিয়ে,ক্ষুদা দারিদ্র দিয়ে, লোভ লালসা দিয়ে। আল্লাহ সুরা বাকারায় ১৫৬ নং আয়াতে বলছেন, “আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার,প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো..”(২;১৫৬)
এই পরীক্ষা থেকে পলায়নের সুযোগ কোন মুমিনের নেই............
যারা ভাবছেন যে,
...দু চারটা প্রেম করবেন,বন্ধুদের সাথে জাহেলি আড্ডায় রসাত্নক আলোচনায় মেতে থাকবেন, গান বাজনা অশ্লীল মুভি ভিডিও দেখবেন,
জাফরিকবাল,আসিফ মহিউদ্দিন,অমি পিয়াল,আরিফ জেবতিক, থাবা বাবা আর তাদের নিয়ন্ত্রক ইসলামদ্রোহী গোষ্টির পক্ষ নিবেন... হুমায়ন আজাদ, তসলিমা নাসরিন,আহমদ শরীফ সহ প্রমুখ আল্লাহদ্রোহীদের সুড়সুড়ি উৎপাদন কারী কাব্যচর্চায় মেতে থাকবেন...
...গাড়ি বাড়ী সুন্দর নারী, সম্মান প্রতিপত্তি, সামাজিক স্ট্যাটাস পাওয়ার জন্য কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না, হালাল হারাম, জায়েয না জায়েয এর বাচ বিচার না করে যা ইচ্চা তা করে যাবেন...মাঝে মাঝে বিভিন্ন অকেশনে দু চার ওয়াক্ত নামায বা নিয়মিত তিন চার ওয়াক্ত পড়ে রেগুলার ফযর কাযা করবেন,মাসে দু একদিন কোনমতে না বুঝে কোরান হাদিস পড়বেন, মাঝে মাঝে মসজিদ মন্দিরে অনাথ মিসকিন দের কিছু দান সদকা করবেন... এভাবে নিজেকে মডারেট,আধুনিকতা বাদী,স্মার্ট, ডিজুস, ডিস্কো মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিয়ে জান্নাতে চলে যাবেন......
তাদেরকে বলছি,...
...কোরান হাদিস বুঝে পড়ুন......রাসুল(সা) এর ২৩ বছরের সংগ্রামী আন্দোলনের ইতিহাস পড়ুন... সাহাবী দের বিপ্লবী জীবন পড়ুন, যুগে যুগে ইসলামী পূনরজাগরনের অগ্রদুত দের জীবনী পড়ুন,...ইসলাম কে বুঝার চেষ্টা করুন, ইসলামের শত্রুদের চিনার চেষ্টা করুন...... দেখবেন আপনার দিবাস্বপ্ন কেটে যাবে...আপনি তখন বুঝতে পারবেন উপরের বৈশিষ্ট গুলো ধারণ করলে আপনার অবস্থান কোথায় হবে...আপনি তখন উপলব্ধি করতে পারবেন যে এত সহজে আল্লাহ তার নিয়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না...
এর জন্য...
...পরীক্ষার চুল্লীর ভিতর দিয়ে অতিক্রম করতে হবে, জীবনের সব লক্ষ উদ্দেশ্যকে আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করতে হবে(আনয়াম ১৬২, তাওবা ১১১),
... আল্লাহর হুকুমের সামনে , আল্লার দ্বীন কে প্রচার করার জন্য, তার পথে সংগ্রাম সাধনা করার জন্য নাফসের সব ধরণের কামনা বাসনা লোভ লালসা থেকে নিজেকে বিরত রাখার সরবাত্নক প্রচেষ্টা চালাতে হবে... আল্লাহর পথে জীবন দেওয়ার বাসনা কে মনে সর্বদা লালন করতে হব...আল্লার পথে যান মাল দিয়ে সংগ্রাম করতে হবে(সফ ১১,তওবা ৪১)......
তবেই আল্লাহ সেই জান্নাত দিবেন, যা এমন নিয়ামতে পরিপূর্ণ যে,যেটা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কোন কান কখনো শুনেনি, কোন অন্তর কখনো অনুভব করেনি...
...হে আল্লাহ, তুমি আমাদের কে নিয়ামতে পরিপূর্ণ এই জান্নাত থেকে বঞ্চিত করোনা,
ও রাহমান, তুমি আমাদের ভুল ভ্রান্তি ক্ষমা করে দাও, আমাদের কর্মপদ্ধতি সংশোধন করে দাও,
হে আরশের মালিক, জান মাল দিয়ে তোমার পথে সংগ্রাম করার যে আহবান তুমি আমাদের জানিয়েছো, তার হক পূরণ করে বাতিলের মোকাবেলায় সংগ্রাম করার তাওফিক তুমি আমাদের দাও...
হে আল্লাহ আমাকে সহ, সব পাঠক কে তুমি উপরের নসিহত গুলো মেনে চলার তাওফিক দাও......
বিষয়: বিবিধ
৩০৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন