পৃথিবীর দিনগুলো: আমার কি অপরাধ?
লিখেছেন লিখেছেন চিরন্তনের পথে ১৯ মে, ২০১৩, ০২:২৯:৫১ রাত
চাকরীর সকালের পর্ব শেষ হতে হতে যোহরের আযান হয়ে যায়। প্রায়শই প্রিয় মসজিদে চলে যাই। আজো গেলাম। কত ভাষার মানুষ, কত চেহারা, কত বর্ণ, কত আকার; সব যেন একাকার এখানে। শুধুমাত্র এক সে মহানের সান্নিধ্যে নিজেদের সত্তাকে বিলীন করে দেয়ায় একাকার। তারপর যে যার মতই থেকে যায় এ যুগে। নির্বিশেষে সবাইকে ভালবাসতে চাই, বাসিও। তবে চিত্তের দুর্বলতার কারণে হোক কিংবা সত্তাগত কোন ব্যাপার; যাইহোক না কেন কিছু বিষয় মোটেও মানতে পারি না। আবার উটপাখি তো নই-ই, বকের মত লম্বা গলাও নেই যে, বলে বসবো যাচ্ছেতাই। বাধা পাই, খুব বাধা বিবেক থেকে। বলা হয়ে উঠে না।
আল্লাহ্ সকলকে সব ধরনের সুবিধা সবসময় দিয়ে রাখেন না এই পৃথিবীতে। কেননা, পৃথিবীটা তাঁর নিকট একটি খেলার বস্তু মাত্র। আর তাঁর ওয়াদা অনন্ত আখেরাতের ব্যাপারে। তাই মানুষসহ সকল প্রাণীর মধ্যেই আমরা অনেক ব্যতিক্রম, অনক কম-বেশী, অনেক আঘাত-পক্ষাঘাতের ব্যাপার দেখে থাকি। মসজিদে নামাযের কাতারে তেমন কিছু মানুষ প্রায়শঃই আমাদের নযর কাড়েন যারা হুইল চেয়ার কিংবা ছোট আকারে শুধুমাত্র বসার জন্য ব্যবহৃত চেয়ারে বসে নামায আদায় করেন। আগে অনেক কষ্ট করে হলেও নানাভাবে বসে কিংবা নিজের সবটুকু সাধ্য খাটিয়ে নামায আদায় করতেন। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি হাতে পেয়ে অনেককেই দেখা যায় সামান্যতেই চেয়ার টেনে বসে পড়েন। অবশ্য আমার কাছে সামান্য মনে হচ্ছে হয়ত, কারণ আমি তো আর ভুক্তভোগী নই।
যা বলছিলাম, এ পর্যায়ের মুসলিম ভাইদেরকে বিবেচনা বোধ দেখে প্রায় নিরান্নব্বই ভাগের ক্ষেত্রেই আশ্চর্য হই। দু'টি কাতারের মধ্যে তিনি যদি সামনের কাতারে থাকেন তো তিনি চান তিনি কাতারের সাথে নিজের পা মিলিয়ে দাঁড়াবেন। এদিকে ওনাকে চেয়ারে বসে রুকূ, সিজদা ও বৈঠকের পর্বগুলো সারতে হবে। তাই কাতার সোজা রাখার জন্য তিনি সবার সমান্তরালেই পা রাখেন এবং চেয়ারটা রাখেন দ্বিতীয় কাতারের প্রায় মাঝামাঝি জায়গা দখল করে। এবং বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, ব্যাপারটা দেখেও না দেখার ভান করেন এবং তিনি মনে করেন এটা তার অধিকার। একবারো ভাবেন না যে, তার পেছনের মুসাল্লীর সিজদাকালীন অবস্থাটা কেমন হবে? নিজেকে কতটা গুটিয়ে নিয়ে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গার আধেক সীমানায় কিভাবে সিজদা দিয়ে থাকেন তা এমন পরিস্থিতিতে পড়া ব্যক্তিই বুঝবেন। আমার নামায শেষে কেবলি সামনের চেয়ারে বসে নামায আদায় করা পক্ষাঘাতগ্রস্ত ভাইকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে যে, "আমার কি অপরাধ?" কিন্তু পারি না, আজ অনেক শক্ত হয়েও চেষ্টা করলাম, নাহ্, বলতে পারলাম না কথাটি।
ইসলাম আমাদেরকে শেখায় অন্যকে অগ্রাধিকার দিতে। জিহাদের ময়দানে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও ইসলামের সৈনিকরা শেষ পানিটুকু অন্যকে অফার করে এ শিক্ষার বহু দৃষ্টান্ত পেশ করে গেছেন অতীতে। তাই হয়ত আমার মত আরো বহু ভুক্তভোগী আমাদের পক্ষাঘাতগ্রস্ত ভাইদের এহেন অবিবেচক আচরণকে "অন্যকে অগ্রাধিকার দিন" নীতির কারণেই এটুকুও জিজ্ঞেস করতে ইতস্তত বোধ করেন যে, "আমার কি অপরাধ?" অবশ্য আমাদের উল্লেখিত ভাইগণ যদি একটু বিবেচনা করেন যে, সমস্যাটা আমার আর আমি স্বাভাবিকভাবে নামায আদায় করছি না, তাই আমার জন্য কাতারের যতটুকু জায়গা বরাদ্দ রয়েছে ঠিক ততটুকুতেই যদি আমি আমার চেয়ার নিয়ে সীমাবদ্ধ থাকি, তাহলে আমার সমস্যার জন্য অন্য কাউকে কষ্ট দেয়া থেকে আমি বেঁচে থাকতে পারছি। আমার সমস্যার জন্য আমিই ভুক্তভোগী হই, আমিই ওযর উপস্থাপন করি দয়াময়ের দরবারে; চাই তাতে কাতারে ব্যতিক্রম হোক কিংবা রুকূ-সিজদা-বৈঠকে ইশারা-ইঙ্গিত হোক, আমি তো আল্লাহর পক্ষ হতেই ওযর ধারণ করি। আমি আমার সেসব ভাইবোনদের প্রতি অনুরোধ রাখছি, আসুন এ চিন্তার মাধ্যমে অন্য ভাইদের কষ্ট দেয়া থেকে কিংবা তাদের নিরব বিরক্তির অব্যক্ত বোধ হতে নিজেকে হেফাযত করি।
বিষয়: বিবিধ
১৫১০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন