জয় বাংলা, জয় ছাত্রলীগ, জয় বাবা ভোলানাথ

লিখেছেন লিখেছেন শিমুল হাসান ৩১ মে, ২০১৩, ০৯:১০:৫৫ রাত

গত চারবছরে সারাবাংলাদেশে একটি আতংকিত নাম ছাত্রলীগ । যারা ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থেকে একের পর এক অপকর্ম করেই যাচ্ছে । এদের অপকর্মের মাত্রা এতো বেপরোয়াভাবে চলছে যে ক্ষমতাসীন দলের অনেকেই বিব্রত । যাদেরকে বাংলাদেশের মানুষ নাম দিয়েছে 'কুত্তালীগ' । বিগত চারবছরে ছাত্রলীগ নামধারী 'কুত্তালীগের সাফল্য গাঁথা আপনাদের সামনে সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম ।

প্রথমে আসুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের অর্জনগুলো আজ জেনে নিই ।

প্রথমে আসুন সংক্ষিপ্তকারে ছাত্রলীগের প্রথম ১ বছরে তাদের হাতে আহত ও নিহত ছাত্র ও কর্মীদের তালিকাটা একটু জেনে নিই ঃ-

► ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রলীগ সেক্রেটারি আবুল কালাম রাজিব

► ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র আবুবকর ছিদ্দিক

► চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগনেতা মু. আসাদুজ্জামান

► ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ফারুক

► যশোর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রিপন হোসেন ওরফে দাদা রিপন

► রাজধানীর আদাবরের ৪৩ নং ওয়ার্ড সভাপতি সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান রমিজ

► পঞ্চগড় ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক

যেখানে তারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করে নিজেদেরই মতাবলম্বী একই দলের নেতা কর্মী হত্যা করতে পারে সেখানে ভিন্ন মতাবলম্বী সংগঠনের সাথে যখন বিনা কারণে সংঘর্ষ বাধায় তখন অপর সংগঠনের নেতা-কর্মী হত্যা করা তাদের জন্য সহজ ও সাধারণ ঘটনা ছাড়া কিছুই নয়।

► ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের ছাত্রলীগের সভাপতি সৈকত এর হাত পায়ের রগ কেটে দেয় সেক্রেটারী আনুর গ্র“পের কর্মীরা।

► জিয়াহলের ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম সোহাগের রগ কেটে দেয় নিজগ্র“পেরই কর্মীরা। যার সুবাদে সে কুমিল্লা জেলা উত্তরের বর্তমান সভাপতি।

► জহরুল হক হলের সেক্রেটারী রাহাত এর হাতের রগ কেটে নেয় সভাপতি সুমন গ্র“পের কর্মীরা।

► সিলেট সরকারী কলেজের ছাত্রশিবিরের কয়েদ নামে এক কর্মীর হাতের রগ কেটে নেয় ছাত্রলীগ।

► জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর সেখানকার ছাত্রলীগের কার্যক্রম লোক দেখানোর জন্য কিছুদিন স্থগিত রাখা হয়। অন্যদিকে সারাদেশে বিভিন্ন শিাপ্রতিষ্ঠানে তারা একের পর এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। এসব সংঘর্ষের অধিকাংশই অভ্যন্তরীণ কোন্দল।

► রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান হলে বোমা বানাতে গিয়ে আহত হয় ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আউয়াল কবির জয়। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রী লাঞ্ছনাসহ অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে প্রশাসন কাউসার নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে।

► ঢাকা কলেজে ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের পর অস্ত্র ও অর্থসহ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে পুলিশ।

আন্দোলনে কোন ভূমিকা না থাকলেও সরকার দলের সুবিধা নিয়ে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করে যাচ্ছে ছাত্রলীগের নেতারা। ঢাবি শিক্ষকদের ব্যাচেলর কোয়ার্টার নির্মাণের টেন্ডার নিয়ে ছাত্রলীগের কয়েকজন সহ-সভাপতি মিলে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে। এর আগে মূলত টেন্ডার নিয়েই বড় ধরনের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। ঢাবি ক্যাম্পাস জুড়ে চলছে নীরব চাঁদাবাজি। পলাশীতে জহুরুল হক হল এলাকায় জাদুঘর নির্মাণ নিয়ে ঘটেছে চাঁদাবাজির ঘটনা।

ভর্তি বাণিজ্য

টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির সঙ্গে যোগ হয়েছে ছাত্রলীগ নেতাদের ভর্তি-বাণিজ্য। রাজধানীর নামিদামি কলেজগুলোতে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি নিয়ে ছাত্রলীগের অবৈধ বাণিজ্যে বিব্রত প্রশাসন। ছাত্রলীগের চাপে টিকতে না পেরে ঢাকা ও বাঙলা কলেজের ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। সূত্র জানায়, সরকারি কলেজগুলোতে ১০০ থেকে ৫০০টি আসনে অবৈধভাবে ভর্তির আবদার করছেন ছাত্রলীগের নেতারা। এর মাধ্যমে এরই মধ্যে কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হয়েছে বলে সংশি−ষ্টদের অভিযোগ। ভর্তি-বাণিজ্যের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজ।

পিরোজপুরে ছাত্রলীগের নেতা টাইগার মামুন ১০ম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে জিম্মী করে যে ভিডিওচিত্র বাজারে ছেড়েছে তা ছাত্রলীগের পর্ণগ্রাফি ব্যবসার সামান্য একটি চিত্র মাত্র

দেহব্যবসা ও ধর্ষণের জয় জয়কার ঃ

আপনাদের সবার নিশ্চয়ই মনে আছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জসীমুদ্দিন মানিক ওরফে রেপিস্ট মানিককে সেঞ্চুরিয়ান জসিমুদ্দিন মানিক বা সেঞ্চুরিয়ান মানিক বলা হতো । কারণ সে ১০০ টা ধষর্ণ কর্ম করে বন্ধুদের নিয়ে ককটেল পার্টি দেয় । ৯৬-২০০১ এ মানিক ছিল একজন , একা আর এবার মানিক অসংখ্য যার চিত্র চরম ভয়াবহ । ছাত্রলীগে মানিকের সংখ্যা এতো বেশি যে যাদের প্রয়োজন মেটাতে ইডেন কলেজের ছাত্রীদের দেহব্যবসায় বাধ্য করা হয়েছিল এবং যে ব্যবসার টাকা ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে দুগ্রুপে দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষে লিপ্ত হয় । ইডেন কলেজের সেই আলোচিত ঘটনা ও কাহিনী আপনাদের সামনে সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করছি ।

গত ১৩ ই মার্চ ২০১০ ছাত্রলীগের দুইগ্রুপে দেহব্যবসা নিয়ে সংঘর্ষ হয় ... খবরে প্রকাশ....ভর্তির পর ছাত্র-ছাত্রীদের হলে তুলতে ‘সিট বাণিজ্য’ করে ছাত্রলীগ। প্রতিটি সিটে একজন তোলার বিনিময়ে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। এবার ইডেন ও বদরুননেসা কলেজে অর্থের বিনিময়ে প্রায় ৫০০ ছাত্রীকে সিটে তোলা হয়েছে। আর এই ঘটনার আড়ালেই জঘন্যতম সত্য জাতির সামনে উন্মোচিত হয়েছে।

ইডেন কলেজে গত ১২ মার্চ ছাত্রলীগের দু’গ্র“প ভর্তিবাণিজ্যের টাকার ভাগ নিয়ে হকিস্টিক, রড, ক্রিকেট স্ট্যাম্প নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। ক্ষোভ জমেছিল ঐ কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সভানেত্রীসহ অন্যদের বিরুদ্ধে। এখানে ভর্তিবাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। শুধু এখানেই বা কেন, এই ভর্তিবাণিজ্য পরিব্যাপ্ত হয়েছে প্রায় সকল কলেজে। ছাত্রলীগ নেতাদের পয়সা না দিয়ে কারো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আর ভর্তি হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের বিক্ষোভে দ্বিতীয় কারণটি বড় কুৎসিত, বড় বেদনাদায়ক, বড় বিভীষিকাময়। এবার ছাত্রলীগেরই এক পক্ষ আর এক পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে যে, ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ সভানেত্রী প্রধানত প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীদের দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জোরপূবর্ক দেহব্যবসা করিয়ে আসছে। ঐ নেত্রীরা ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের বাসায় এবং রাজধানীর কাকরাইল, গুলিস্তান, এলিফ্যান্ট রোড, মালিবাগ, মতিঝিল, মোহাম্মদপুর ও মিরপুরের আবাসিক হোটেলগুলোতে তাদের যেতে বাধ্য করে। অভিযোগ আরো অনেক। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও মন্ত্রীদের চরিত্রেরও একটা বহিঃপ্রকাশ এর মধ্যদিয়ে ঘটে গেল। তারা ছাত্রলীগের মহিলা নেত্রীদের দ্বারা তরুণী ছাত্রী সংগ্রহ করে যে ভোগ বিলাসে মেতে উঠেছেন তারও প্রমাণ পাওয়া গেল ইডেন ছাত্রীদের অভিযোগ থেকে।

দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রীদের জোরপূর্বক ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাদের বাসায় নেয়া ছাড়াও রাজধানীর কাকরাইল, গুলিস্তান, এলিফেন্ট রোড, মালিবাগ, মতিঝিল, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, মীরপুরের আবাসিক হোটেলগুলোতে সংগঠনের জুনিয়র কর্মী ছাড়াও প্রথম বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীদের বাধ্য করে নিয়ে যাওয়া হতো।

একটি পক্ষ বলছে, কলেজের সভাপতি জেসমিন শামীমা নিঝুম ও সাধারণ সম্পাদক ফারজানা ইয়াসমিন তানিয়াসহ কয়েকজন প্রথম সারির নেত্রী ছাত্রীদের দিয়ে দেহব্যবসা ও ভর্তি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। আবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পক্ষ বলছে, যারা ছাত্রীদের দিয়ে দেহব্যবসা করায় তার প্রতিবাদ করায়ই আমাদের ওপর হামলা হয়েছে।

নিঝুম-তানিয়া গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা কলেজে ভর্তি বাণিজ্য করে। টাকা নেয়, টেন্ডারবাজি করে। নানা ধরনের কাজ বাগিয়ে আনে। বিটিভির স্লট কিনে আয় করছে লাখ লাখ টাকা। এছাড়া বিভিন্ন তদবির বাণিজ্য করে এ গ্রুপ।

এজন্য তারা ব্যবহার করে নতুন ছাত্রীদের। তাদের দেখানো হয় আগামী দিনের নেতা হওয়ার স্বপ্ন। সচ্ছল হওয়ার স্বপ্ন। এসব স্বপ্ন পূরণের জন্য তাদের নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন নেতার বাসায়। বাসাবাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন হোটেলে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের বাধ্য করা হয় বিভিন্ন নেতার মনোরঞ্জন করতে। অবশ্য তানিয়া তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, এসব করি না। এগুলো ঠিক নয়। উল্টো তিনি অভিযোগ তুলেছেন হ্যাপী-শর্মী গ্রুপের বিরুদ্ধে। তানিয়া বলেছেন, ওরা বহিষ্কৃৃত।

ওরাই এসব করে। ওদের একজনের দু’টি অ্যাপার্টমেন্ট আছে। একাধিক মহিলা হোস্টেল চালায়। সেখানেও বিভিন্ন ছাত্রীদের ব্যবহার করে। নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে কাজ বাগিয়ে নেয় তারা। ভর্তি বাণিজ্য আমরা করি না, ওরাই করে। ওদের একজন এমন কোন কাজ নেই যা করে না। আর হ্যাপী মেয়েদের দিয়ে হোস্টেল চালানোর নামে ব্যবসা করে। ওদিকে হ্যাপী বলেছেন, নিঝুম-তানিয়া গ্রম্নপের কর্মকাণ্ডের কারণে আমরা অতিষ্ঠ। তারা প্রিন্সিপালের সঙ্গে মিলেই সব অন্যায় করে। অন্যায় সহ্য করে প্রিন্সিপাল। তারা যা আয় করে সব ভাগ-বাটোয়ারা করে। তারা আমাদের বহিষ্কার করার দাবি করে। তারা তো আমাদের বহিষ্কার করতে পারে না। ওই এখতিয়ার নেই। ওরা এমন কোন কাজ নেই করতে পারে না। শুক্রবার রেশমি ও শ্রাবণী নামে যে দুই ছাত্রীকে নিঝুম ও তানিয়া গ্রুপ মারধর করেছে তাদের দু’জনকে হলে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ। তারা নিখোঁজ থাকার ঘটনায় লালবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ইডেন কলেজে এখনও দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। সেখানে পুলিশ প্রহরা রয়েছে। এছাড়াও সাদা পোশাকে রয়েছেন গোয়েন্দারা। কলেজের প্রিন্সিপাল মাহফুজা চৌধুরী ছুটিতে আছেন। ১৫ই মার্চের পর কলেজে যোগ দেবেন। তার অবর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন ভাইস প্রিন্সিপাল আয়েশা সিদ্দিকা। তিনি বলেছেন, আমি এসবের কিছুই বুঝতে পারছি না। ঘটনা যা ঘটেছে তাতে বোঝা যাচ্ছে দুই গ্রুপের আধিপত্যের লড়াই। তারা আমাকে তাদের দাবি-দাওয়া কিছু জানায়নি। এর আগেই তারা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন, নিঝুম ও তানিয়ার অ্যান্টি গ্রুপের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি করতে হবে। এটা এখন চাইলেই করতে পারব না। এটা তাদের পলিটিক্যাল ব্যাপার। আমরা কি করতে পারি? তিনি বলেন, তাদের আধিপত্যের লড়াইয়ের কারণে কলেজের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে।

হ্যাপী বলেন, মিশু নামের এক ছাত্রীকে নিঝুম অফার করেছিল এক নেতার বাসায় নিয়ে যাওয়ার। তাকে দেখানো হয়েছে নানা রকমের লোভ। না যাওয়াতে নির্যাতন করা হচ্ছে। মিশু বলেন, আমি দারুণ হতাশা ও টেনশনের মধ্য আছি। ওরা আমাকে এমন এক নেতার বাসায় নিতে চেয়েছিল যে নেতা খুবই ক্ষমতাশালী। ওই নেতা অনেক কারণেই বিতর্কিত। তার বাসায় যাইনি বলে আমাকে নানাভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমার মতো আরও অনেক মেয়েকেই এ ধরনের অফার দেয়া হয়। আমি যাইনি। সবাই তো এক রকম না। আমাকে নানা রকমের লোভ দেখানো হয়। তিনি বলেন, কলেজে অনেক মেয়েই তাদের কারণে নির্যাতিত।

সাংগঠনিক সম্পাদক আফরোজা সুলতানা হ্যাপী বলেন, নিঝুম ও তানিয়ার দাবি, তারা আমাকে ও শর্মীকে বহিষ্কার করেছে। তারা আমাদের বহিষ্কার করতে পারে না। কারণ আমাদের কোন অন্যায় থাকলে বহিষ্কার করবে কেন্দ্রীয় কমিটি। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তারা ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ করে পাঠাবে। নগর কমিটি অনুমোদন দিলে এরপর কেন্দ্রীয় কমিটি আমাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু তারা তা করেনি। তারাই আমাদের বহিষ্কার করেছে। তিনি বলেন, আমরা অন্যায় করলে তারা আমাদের শোকজ দিতে পারে। তা দেয়নি। হ্যাপী বলেন, আমরা শহীদ মিনারে ছাত্রলীগের ব্যানারে ফুল দিতে গিয়েছিলাম- এতে নাকি আমাদের অন্যায় হয়েছে। আমরা ছাত্রলীগ করি, আমরা সেখানে গেছি। কোন অন্যায় করিনি। তিনি বলেন, এটা একটা অজুহাত। প্রধান সমস্যা হচ্ছে নিঝুম-তানিয়া ও কলেজের প্রিন্সিপাল ম্যাডাম এরা তিনজন মিলে ভর্তি বাণিজ্য করে। গত বছর ৭০০, এবার ৯০০ ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। চলতি বছরের ৯০০’র মধ্যে আমাদের কমিটির ১৬ জনকে ৪০টা সিট দেয়া হয়েছে। ওই সিট দেয়ার কারণে আমরা বেশির ভাগই নিজেদের আত্মীয় স্বজন ও পরিচিত জনদের ভর্তি করেছি। সেখানে ভর্তি নিয়ে বাণিজ্য করার সুযোগ নেই। অন্যদিকে তারা তিনজনে মিলে ৮৬০ জন ছাত্রী ভর্তি করেছে। কিছু ফেয়ার ছাড়া সবাই তদবিরে হয়েছে। এক একজন ছাত্রীর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। এতে তারা কোটি কোটি টাকা আয় করেছে। ওই টাকার ভাগ বিভিন্ন জায়গায় দিয়েছে। আমরা এই বাণিজ্য বন্ধ করতে চাই। কলেজ তাদের হাতে জিম্মি হয়ে গেছে। তাদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। নিঝুম-এর ছাত্রীত্ব নেই কলেজে। তারপর সে কলেজে থাকছে এবং কলেজের ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি। প্রকৃতপক্ষে তার স্টুডেন্টশিপ এখন নেই। বিভিন্ন জনের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই তিনি কলেজে আছেন। হ্যাপী বলেন, যে সব মেয়ে সুন্দরী, ফিগার আকর্ষণীয়, একটু অভাবী, ঢাকায় থাকার জায়গা নেই ও উচ্চাভিলাষী- ওসব মেয়েকে ওরা টার্গেট করে। এরপর তাদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে তাদের বলে নেয়া হয় তারা নেতার কাছে যাচ্ছেন কাজের জন্য। চল তোমাকে নিয়ে যাই। পরিচয় করিয়ে দেবো, নেতা চিনলে লাভ হবে। নেত্রী হতে পারবে। সেখানে গেলে অনেককেই মাশুল দিয়ে আসতে হয়। তিনি বলেন, অনেক দিন ধরেই কলেজে এসব হচ্ছে।

এদিকে হ্যাপী-শর্মী গ্রুপের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রলীগের বর্তমান সেক্রেটারি তানিয়া। তিনি বলেন, ওরা কলেজ ছাত্রলীগের কেউ নয়। ওরা আমাদের দলের ছিল। এরপরও ওরা শহিদ মিনারে ফুল দিতে গেছে ছাত্রলীগের পাল্টা ব্যানারে। পাল্টা গ্রুপে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাওয়ার কারণেই তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্যায় করলে আমাদেরকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। তাই আমরা নিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা কোন মেয়েকে জোর করে নেতার বাড়িতে নিয়ে যাই না। আমাদের ছাত্রীরা নেতা মানে। তাদের সুবিধা-অসুবিধা আমাদের দেখতে হয়। আমাদের কর্মী রয়েছে, তাদের আমাদের সঙ্গে নিয়ে যেতেই পারি, নিয়ে যাওয়া মানে এই নয় কিছু হয়। এদিকে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি চম্পা বলেন, হ্যাপী-শর্মী আমরা একসঙ্গে আছি। সকাল থেকে আমরা বাইরে আছি। কলেজের অবস্থা ভাল নয়। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। কলেজে দুর্নীতিমূলক কাজ বন্ধ করতে হবে। টেন্ডারবাজি, ভর্তি বাণিজ্যসহ সব অন্যায় কাজ বন্ধ করতে হবে। আমরা আমাদের কথাগুলো কলেজের প্রিন্সিপালকে বলতে পারি না। তিনি আমাদের কোন কথাই শুনতে চান না। তারা নিঝুম ও তানিয়ার কথা শোনেন। তারা যেহেতু সভাপতি-সেক্রেটারি তাই তাদের মন যুগিয়ে প্রিন্সিপালকে চলতে হয়। তিনি ওদের অন্যায় কাজের সহায়তা করছেন বলে আমরা অসহায়।

৪ নেত্রী বহিষ্কার

রাজধানীর সরকারি ইডেন কলেজে সংগঠনের জুনিয়র কর্মীদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বাসায় পাঠানো, ভর্তি বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মের সূত্রে সৃষ্ট সংঘর্ষের ঘটনায় ইডেনের চার নেত্রীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছেন কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন। একাধিক ছাত্রী ও ছাত্রলীগের জুনিয়র কর্মী অভিযোগ করেছেন, শুধু নেতাদের বাসায় নয়, বিভিন্ন শিল্পপতি এবং আজিমপুর, হাজারীবাগ, নিউ মার্কেট ও ধানমন্ডি এলাকার ব্যবসায়ীদের বাসায়ও পাঠানো হয় ছাত্রীদের। এতে রাজি না হলে তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন। এড়্গেত্রে বেছে নেয়া হয় ছাত্রলীগের জুনিয়র কর্মী, প্রথম বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীদের। কেউ রাজি না হলে তাদের বিভিন্ন অভিযোগ দিয়ে হল থেকে বের করা দেয়া হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রী বলেন, তাকে এক নেতার বাসায় যেতে বলা হয় গত সপ্তাহে। প্রসত্মাবে রাজি না হওয়ায় মধ্যরাতে তাকে রড দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে হল থেকে সকালে বের করে দেয় সভাপতি নিঝুম। একটি পক্ষ বলছে, কলেজের সভাপতি জেসমিন শামীমা নিঝুম ও সাধারণ সম্পাদক ফারজানা ইয়াসমিন তানিয়া ভর্তি বাণিজ্য ছাড়াও ছাত্রীদের দিয়ে নানা অপকর্ম করাচ্ছেন। আবার সভাপতি গ্রম্নপ বলছে, তাকে সরাতে কয়েকজন নেত্রী তার বিরম্নদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নানা তদবির করতেই ছাত্রীদের বিভিন্ন নেতার বাসায় পাঠানো হয়।

নারী কেলেঙ্কারি, অভিযোগের পাহাড়: কেন্দ্রীয় পাঁচ নেতা ও নেত্রীর বিরুদ্ধে ইডেন ও বদরুন্নেসা কলেজের নবাগত নেত্রীদের বিভিন্ন ভাবে ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব লুটে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তারা বিভিন্ন তদবিরের জন্য নেতাদের বাসায় নিয়ে যায় ছাত্রীদের। যেসব নেতার নিজস্ব বাসা নেই তাদের নিয়ে যাওয়া হয় পরিচিত কয়েকটি আবাসিক হোটেলে। মিছিলে নিয়ে আসা নিত্যনতুন ছাত্রীদের টার্গেট করে বিভিন্ন নেতার বাসায় পাঠানোর পাশাপাশি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে আসীন ব্যক্তিদের বাসায়ও পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবসা করে থাকেন কয়েকজন নেত্রী। এছাড়া কেন্দ্রীয় এক শীর্ষ নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নেতার বিরম্নদ্ধে রয়েছে একই ধরনের অভিযোগ।

আতঙ্কের রাত বৃহস্পতিবার: ইডেনের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষ এবং জুনিয়র কর্মীদের কাছে বৃহস্পতিবার রাতটি আতঙ্কের। নেতাদের বাসায় যাওয়ার ভয়ে অনেক ছাত্রী ক্লাস থেকে আর হলে ফেরে না। আত্মীয়স্বজনের বাসায় চলে যায় নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে। ওইদিন বিকাল হলেই তাদের কদর আর চাহিদা বৃদ্ধি পায়। নেত্রীরা খোঁজাখুঁজি করে তাদের আদর-যত্ন করে ঠিকানা ধরিয়ে দেন। অনেক ক্ষেত্রে কলেজের সামনে আবার পলাশী, নিউ মার্কেট ও নীলক্ষেত মোড়ে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার অপেক্ষা করে। ইডেন কলেজের ছাত্রীদের বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা ছাত্রী এবং সংগঠনের জুনিয়র কর্মীদের নেতাদের বাসায় পাঠানোর অভিযোগের ব্যাপারে জানা যায়, মূলত বিভিন্ন নেতার বাসায় পাঠানো হয় তদবির সফল হওয়ার জন্য। এসব নেত্রী দীর্ঘদিন ধরে নেতাদের বাসায় নিজেরা যাতায়াতের পর এখন অন্যদের পাঠান। বিনিময়ে বিভিন্ন ধরনের তদবির বাগিয়ে নেন। এই একই অভিযোগ বদরুন্নেসা কলেজের নেত্রীদের ব্যাপারেও। এ ব্যাপারে ইডেনের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এক ছাত্রী অভিযোগ করেন, সভাপতি নিঝুম কয়েকদিন আগে তাকে এক নেতার বাসায় যেতে বলেন। তার আহ্বানে সাড়া না দেয়ায় মধ্যরাতে তিনি নিঝুমের নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। ওই ছাত্রী আরও জানান, এক্ষেত্রে চাহিদা বেশি প্রথম বর্ষের ছাত্রীদের। সুন্দরী ছাত্রীদের বলপ্রয়োগ করে বিভিন্ন নেতা ও ব্যবসায়ীর বাসায় পাঠানো হয়। অনেকে আবার লংড্রাইভ এবং বিভিন্ন পর্যটনস্থলে অবসর যাপনে নিয়ে যান। বৃহস্পতিবার এলে এই অত্যাচার বেশি বাড়ে। অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী লাবণী আক্তার বলেন, আমি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কথামতো না চলায় আমাকে শিবির বানিয়ে হল থেকে বের করে দিয়েছে। আমাকে সব ধরনের অফার করা হয়েছিল। তিনি বলেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক টাকার বিনিময়ে নবম শ্রেণীর মেয়েদেরও হলে রেখে তাদের দিয়ে দেহ ব্যবসা করাচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে শিবির বলে হল থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রী চম্পা খাতুন বলেন, বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে দুই বছর আগে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে থাকতে সমপ্রতি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন তারা। এছাড়া তারা ছাত্রীদের দিয়ে সব ধরনের অপকর্ম করছে। প্রতিটি ছাত্রীকে জিম্মি করে রেখেছে। তাদের কবল থেকে বের হয়ে ছাত্রীরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। এছাড়া এই চক্রটি ভর্তি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্রী কানিজ ফাতেমা বলেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হাত থেকে বাঁচতে আমরা নানা পথ খুঁজেছি। আমরা তাদেরই গ্রম্নপ করতাম। তাদের নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে আমরা প্রতিবাদ করেছি।

বহিষ্কারের কারণ: এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ইডেনের সহসভাপতি চম্পা খাতুন, সাংগঠনিক সম্পাদক তানিয়া সুলতানা হ্যাপি, শারমিন সুলতানা শর্মী ও সহসম্পাদক কানিজ ফাতেমাকে সংগঠন বহির্ভূত কাজ করার দায়ে বহিষ্কার করা হয়। এই চারজন নির্যাতিত ছাত্রীদের পড়্গে সভাপতি জেসমিন শামীমা নিঝুম ও সাধারণ সম্পাদক ফারজানা ইয়াসমিন তানিয়ার বিরম্নদ্ধে আন্দোলন করেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরম্নদ্ধে অভিযোগের পাহাড় থাকলেও বহিষ্কার করা হলো নির্যাতিত ছাত্রীদের পড়্গে অবস্থান নেয়া চার নেত্রীকে। বহিষ্কৃত চার নেত্রী জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন। সভাপতি একা এ ধরনের সিদ্ধানত্ম নিতে পারেন না। তারা বলেন, এটি গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ। আমরা নির্যাতিত ছাত্রীদের পড়্গে অবস্থান নিয়েছি। যারা ছাত্রীদের দিয়ে ব্যবসা করাচ্ছে তাদের বিরম্নদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে আমাদের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া নিয়মবহির্ভূত কাজ।

বদরুন্নেসারও একই চিত্র: কয়েকদিন আগে একই ভাবে ইডেনের মতো বদরুন্নেসা কলেজেও দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ এবং আহত হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ওই কলেজের নেত্রীদের ব্যাপারে অভিযোগ, তারা ছাত্রীদের ধরে ধরে হোটেলে বা বাসায় পাঠিয়ে থাকেন। এতে কেউ রাজি না হলে তাকে হল থেকে বের করে দেয়াসহ মারপিট পর্যনত্ম করা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে অনৈতিক কাজে রাজি না হওয়া ছাত্রীদের ‘শিবির’ সমর্থক বলে পিটিয়ে হল থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা পর্যনত্ম ঘটছে।

নানা বাণিজ্য: ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে সভাপতি নিঝুম ও তানিয়া ইডেনে ৯০০ ছাত্রীকে অবৈধভাবে ভর্তি করায়। প্রত্যেকের কাছ থেকে সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা নেয়া হয়। এ বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়ম কড়াকড়ি করায় সরাসরি ভর্তি না করতে পেরে কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা করে ৭০০ ছাত্রীর সাবজেক্ট পরিবর্তনের মাধ্যমে তারা ব্যবসা করে। ছাত্রলীগের দেয়া তালিকা অনুযায়ীই সাবজেক্ট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয় কলেজ প্রশাসন। এক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার থেকে শুরম্ন করে সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা নেয়া হয় প্রত্যেকের কাছ থেকে। এছাড়া নতুন করে কোন ছাত্রী হলে ওঠানোর জন্য কমপড়্গে ১০ হাজার টাকা নেয়া হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী মিশু বলেন, কয়েকদিন আগে হলে ওঠানোর জন্য প্রথম বর্ষের একজন ছাত্রীর কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করে সভাপতি নিঝুম। ওই ছাত্রী একেবারে গরিব। বিষয়টি নিঝুমকে বললেও তাকে হলে ওঠানো হয়নি। এছাড়া দেহ ব্যবসার সাথে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনও জড়িত আছেন । সাহারা খাতুনের মালিকানাধীন ফার্মগেটের ‘ইম্পেরিয়াল গেস্ট হাউস’ থেকে র্যাখব ১৯ জন পতিতা সহ ২০ জন খদ্দর আটক করে যার শিরোনাম ছিল - ‘সাহারা খাতুনের আবাসিক হোটেল থেকে ৩৯ জন পতিতা-খদ্দর আটক!

এতো গেলো ছাত্রলীগের দেহব্যবসার কথা এবার সংক্ষেপে একটু জেনে নিবো ধর্ষণে ছাত্রলীগের সাফল্যর খণ্ডচিত্র ।

বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতরের অপরাধ পরিসংখ্যান অনুযায়ী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের ৪ বছরে সারাদেশে ধর্ষণের শিকার হয় মোট ১২৯৭১ জন।

পুলিশ সদর দফতরের অপরাধ পরিসংখ্যানে দেখা যায় ধর্ষণ ১২৯৭১ জন

২০০৯ সালে ২ হাজার ৯৭৭ জন

২০১১ সালে ৩ হাজার ২৪৩ জন ২০১১ সালে ৩ হাজার ৩৪৪ জন

২০১২ সালে ৩ হাজার ৪০৭ জন (১১ মাসে) ।

সর্বমোট ধর্ষণ- ১২৯৭১ জন (৩ বছর ১১ মাসে) ।

৩৫৬৩ ধর্ষণের ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ধর্ষণ ৩৫৬৩ (পত্রিকায় প্রকাশিত) । ২০০৯ সালে ৪৫৬ জন। ২০০৯ সালে ৫৫৯ জন ২০১১ সালে ৭১১ জন ২০১২ সালে ১৮৩৭ জন। সর্বমোট- ৩৫৬৩ জন এসিড সহিংসতা ৪৪২ ২০০৯ সালে ১০১ জন, ২০১০ সালে ১৩৭ জন, ২০১১ সালে ১০১ জন, ২০১২ সালে ১০৩ জন। ৪ বছরে সর্বমোট ৪৪২ জন এসিড সহিংসতার শিকার হয়েছে। যৌতুক সহিংসতা ২০০৫ ২০০৯ সালে ৩১৯ জন, ২০১০ সালে ৩৭৮ জন, ২০১১ সালে ৫১৬ জন, ২০১২ সালে ৭৯২ জন।

এবার সেইসব প্রকাশিত সংবাদগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু সংবাদ শিরোনাম নিম্নে তুলে ধরলাম।

● ৫ জুলাই ২০১০ টাঙ্গাইলের সখীপুরে এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে তার ভিডিও চিত্র ধারণ করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। ধর্ষিতা কিশোরী উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। ৫ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সখীপুর বাজারে আসে খাতা কিনে বাড়ি ফেরার সময় হাবিবুল্লাহ ওরফে হাবিব, ছাত্রলীগ নেতা আরিফ, সখীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত সিকদারের ভাগ্নে বাবুল, নাতি আকাশ মেয়েটিকে মোটরসাইকেলে করে হাজিপাড়ায় ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি ছাত্রাবাসে নিয়ে যায়। সেখানে হাবিব মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। এ সময় তার সহযোগীরা ধর্ষণের চিত্র ভিডিও করে। পরে আরেকজন ধর্ষণ করতে গেলে মেয়েটি সযোগ বুঝে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। মেয়েটিকে ধাওয়া করে ছাত্রলীগ নেতারা। এ সময় মেয়েটির চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। পরিস্থিতি টের পেয়ে ধর্ষণকারী ও তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়। ফিল্মি স্টাইলে এ ধরনের ধর্ষণের ঘটনা সামাজিক অবয়ের চিত্র প্রকাশ করে।

● ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল কাওসারের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ কর্মীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, ৬ এপ্রিল ছাত্রলীগ নেতা বাবু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ১৪ এপ্রিল টিএসসির বৈশাখী কনসার্টে ছাত্রলীগের মধ্যম সারির নেতাদের হাতে তরুণীদের শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা দেশবাসীকে হতবাক করে। এছাড়া ১৯ এপ্রিল বগুড়ায় ছাত্রলীগ নেতা ডিউ কর্তৃক এক তরুণী এবং ২৮ এপ্রিল পটুয়াখালীতে আওয়ামী লীগ নেতা বরকত খান কর্তৃক স্থানীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শারিরীকভাবে নাজেহাল হন।

● ‘মোরেলগঞ্জে তরুণীকে গণধর্ষণের পর বিষ খাইয়ে হত্যা’ (নভেম্বর ২০১০)

● ২১ এপ্রিল ২০১০ পটুয়াখালীতে বাহাদুর নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীর নেতৃতে ৬/৭ জন যুবক এক গৃহবধুকে ধর্ষণ করে।

● ২২ এপ্রিল ২০১০ ভোলার লালমোহনের কচুয়াখালী গ্রামে বিএনপি কর্মী শফি মাঝির স্ত্রী ও মেয়েকে আওয়ামী লীগ কর্মীরা পালাক্রমে ধর্ষণ করে । এছাড়া ভোলায় উপনির্বাচনের পরদিন যুবলীগ নেতা সিরাজ মিয়া বিএনপি সমর্থিত নান্নু মেম্বারের ভাতিঝা রুবেলের স্ত্রীকে ধর্ষণ করে।

● ১৩ মে ২০১০ সিলেট পলিটেকনিকে ছাত্রলীগ নেতা সৈকত শ্রেণীকে এক ছাত্রীকে জোড়পূর্বক ধর্ষণ করে।

● এছাড়া কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের সোনাইকান্দি গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা শাহিন রেজার পুত্র পান্না (২২) তার একজন সহযোগীকে নিয়ে স্বামী পরিত্যক্তা এক মহিলাকে (৪০) ধর্ষণ করে।

● ৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ বগুড়ার শাজাহানপুরে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী প্রকৃতির ডাকে বাইরে গেলে বখাটে আলামিন তাকে ধর্ষণ করে। পরে মামলা করতে গেলে যুবলীগ নেতা আবু সাঈদ বাধা দেয়।

● ‘গার্মেন্ট কর্মীকে ধর্ষণের পর জিহবা কেটে দিয়েছে যুবলীগ কর্মী’ (ডিসেম্বর ২০১১)।

● ‘মুসলিম কিশোরীকে পাশবিক নির্যাতন : হিন্দু যুবক গ্রেফতার’ (সেপ্টেম্বর ২০১১)। ‘

● ভিকারুননিসার ছাত্রী ধর্ষণ : আসামি শুধুই পরিমল’ (আগস্ট ২০১১)।

● ‘ধর্ষণের জ্বালায় আগুনে জ্বলল মেয়েটি’ (ফেব্র“য়ারি ২০১১)।

● ‘নারায়নগঞ্জে দু ভাইকে বেঁধে রেখে বোনকে ধর্ষণ’ (ফেব্র“য়ারি ২০১১)।

● ‘ধর্ষণের পর আবার অপমান : সইতে না পেরে আত্মহত্যা’ (ফেব্র“য়ারি ২০১১)।

● ‘টঙ্গিতে তিন তরুণীকে ধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যা’ (জানুয়ারি ২০১১)।

● ৪ জানুয়ারি ২০১২ সাতীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে জুয়েল ও পলাশ স্বামীকে মারধর করে আটকে রেখে এক নৃত্যশিল্পকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়।

● ১৯ জানুয়ারি ২০১২ সিলেটের জকিগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা মিছরা জামান কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হন এক মহিলা।

● ২৪ জানুয়ারি ২০১২ সরাইলে যুবলীগ ক্যাডার জাকির কর্তৃক যৌন হয়রানির শিকার হন এক তরুণী।

● ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে গণধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর বাবা মামলা করতে গেলে সন্ত্রাসীরা তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে।

● ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২ পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সমুদয়কাটি ইউনিয়নের সুন্দর গ্রামে মা (৩০) ও মেয়েকে (১১) ধর্ষণের পর হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

● ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ চট্টগ্রামে র্যাব পরিচয়ে এক তরুণীকে ধর্ষণ করে ৩ বখাটে।

● ১২ মার্চ ২০১২ নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ বাজার এলাকায় স্বামীর অনুপুস্থিতিতে ঘরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করে যুবলীগ কর্মী সুমন।

● ‘পিরোজপুরে ছাত্রলীগ নেতার কাণ্ড : প্রেমিকার নগ্ন ছবি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে শহর থেকে গ্রামে’ (জানুয়ারি ২০১২)।

● খুলনা বিএল কলেজে ছাত্রলীগের দখলে থাকা হল গুলোতে বিপুল পরিমান রামদা ও কনডম উদ্ধার করেছেন। অর্ধেক ছাত্রের বিছানার নীচে কনডম পাওয়া গেছে সাথে মধুও!

● যুবলীগ অফিসে গনধর্ষণ যুবতীর আত্ত হত্যা!

● ছাত্রলগ নেত্রীর দেহ ব্যবসা নিয়ে ইডেনে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ!

● ঢাকা পলিটেকনিক্যাল ক্যোম্পাসে ছাত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষন দুই ছাত্রলীগ!

● ঢাকা পলিটেকনিক্যাল ক্যোম্পাসে ছাত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষন দুই ছাত্রলীগ!

● বর্ষবরণ অনুষ্ঠনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টি.এস.সিতে ২০-৩০ বা তার চেয়ে আরো বেশী বোন বিবস্ত্র ও লাঞ্চিত হয়েছে।

● দেশের আলোচিত টাঙ্গাইলের মধুপুরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বাধা।

● স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করে পরিবার বাড়িছাড়া: নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়নের পাগলার নন্দলালপুরের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস

● বাগেরহাটের কচুয়া এলাকায় গডফাদার হিসেবে খ্যাত উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শেখ মাহফুজুর রহমানের ধর্ষণের শিকার হয়ে অবশেষে প্রাণ বাঁচাতে স্বামী সন্তানসহ এক সংখ্যালঘু পরিবারকে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যেতে হয়েছে।

● রংপর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মহিলা হোস্টেলে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের নেতারা জোরপূর্বক ঢুকে ছাত্রীদের গালিগালাজ ও শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে!

● ধর্ষণ ও নির্যাতনের সংবাদ প্রকাশের পর এক কিশোরীকে স্থানীয় ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা তুলে নিয়ে গেছে।

● বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হোস্টেলে গভীর রাতে কলেজের ভিপি ও ছাত্রলীগ নেতাদের মাতাল অবস্থায় অনুপ্রবেশ।

● সুধুমাত্র ২০১২ সালেই ধর্ষণের পর হত্যা হয়েছে ১৭২ জন নারী।

তথ্যসূত্র- – (বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতরের অপরাধ পরিসংখ্যান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এমআরটি, মানবাধিকার সংগঠনসমূহ, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক আমার দেশ , দৈনিক মানবজমিন ও দৈনিক কালের কণ্ঠ )

শুধু টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি আর তদবির নয় ছাত্রলীগ নেতারা জড়িয়ে পড়েছেন নানাবিধ আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেকশনে। হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতারা। নিজেদের স্বার্থে, কখনো বা ভাড়ায় অংশ নিচ্ছে নানা কিলিং মিশনে। এদের অনেকেই শীর্ষ সন্ত্রাসী। সূত্র জানায়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর গিয়ে সে দেশে পালিয়ে থাকা বাংলাদেশের ২০ জন সন্ত্রাসীর তালিকা ভারত সরকারকে দিয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম মিরপুর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদত। সরকার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীরের সেকেন্ড ইন কমান্ডখ্যাত এই সন্ত্রাসী জীবিতদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্ধর্ষ। গার্মেন্টসের ঝুট থেকে তার দৈনিক চাঁদা আদায় হয় ৪ লাখ টাকা। শাহাদতের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে কাজ করছে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী খোরশেদ। খোরশেদ ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক। ছাত্রলীগ মহানগর উত্তরের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক সরকার ঘোষিত শীর্ষসন্ত্রাসী কিলার আব্বাস। সাইদুর রহমান নিউটন হত্যা মামলাসহ ২ ডজন হত্যা মামলার আসামী সে।

মীরপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি বশির আহমেদ। এক সময় টাক বাহিনীর প্রধান এই ৪০ বছর বয়স্ক ছাত্রলীগ নেতা বর্তমানে তার সেকেন্ড ইন কমান্ড সোহেলকে দিয়ে আন্ডার ওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করছে।

ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি হারুনুর রশীদ লিটন। লেদার লিটন নামেই সে সমধিক পরিচিত। সেভেন স্টার গ্র“পের সদস্য এই ছাত্রলীগ নেতা শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাভূক্ত। এ ছাড়াও মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সভাপতি তৌফিক আলম খান পিয়াল ও মোহাম্মদপুর থানার সাধারণ সম্পাদক তুহিনের বিরুদ্ধে রয়েছে সন্ত্রাস ও হত্যার একাধিক অভিযোগ। মার্চ মাসের ১২ তারিখে পিয়াল ভারতে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগে ভারতীয় পুলিশের কাছে আটক হয়।

তেজগাঁও কলেজের নিয়ন্ত্রক ফরিদুর রহমান খান ইরান পুলিশের তালিকাভূক্ত আসামী। দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলামের ঘনিষ্টজন হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। সুইডেন আসলামের সাথে সে কয়েকবার গ্রেফতারও হয়েছে। তেজগাঁও থানার আহ্বায়ক সায়েম কিলার আশিকের ঘনিষ্ঠজন। কাওরান বাজারের থ্রি-মার্ডারের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার সূত্র পাওয়া যায়।এই আন্ডারওয়ার্ল্ডের মাধ্যমেই প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০-১৫ টি গ্রুপ সক্রিয় আছে যা নিম্নে সংক্ষেপে তুলে ধরলাম ।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : সম্প্রতি বিরোধী দলের হরতালের সময় পুরান ঢাকার নিরীহ ব্যবসায়ী বিশ্বজিত্ দাসকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যাকাণ্ডের অপারেশনে অংশ নেয়াদের অধিকাংশই এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। ঘটনার পর যাদের ছবি ও ভিডিওচিত্র প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে প্রকাশিত হয় তাদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের পেশাদার সন্ত্রাসী হিসেবেই পরিচিতি। গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকেও তৈরি করা হয়েছে এদের আমলনামা। পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এরাই মূলত পুরান ঢাকার অপরাধের মূল হোতা। তাদের সঙ্গে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কানেকশনও রয়েছে। চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে তারা। তাদের মধ্যে একাধিক নেতার বিরুদ্ধে রয়েছে থানায় মামলা। তারা নিয়মিত ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিত। এরকম প্রায় অর্ধশতাধিক পেশাদার সন্ত্রাসী রয়েছে এখানে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রফিকুল ইসলাম শাকিল (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ষষ্ঠ সেমিস্টার)। সেই মূলত বিশ্বজিেক চাপাতি দিয়ে কোপায়। সে জবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান রিপনের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা রয়েছে। আরেকজন নূরে আলম লিমন (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) বিশ্বজিত্ হত্যাসহ ক্যাম্পাসের আশপাশে চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। মাহফুজুর রহমান নাহিদ (বাংলা) বিশ্বজিত্ হত্যা ও হত্যাচেষ্টা, মারামারিসহ একাধিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এয়াড়া ইমদাদুল হক (দর্শন), ওবায়দুল কাদের তাহসিন (মনোবিজ্ঞান), রাশেদুল হাসান শাওন ওরফে কিলার (ইতিহাস), কক্স মামুন (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), মামুন (মনোবিজ্ঞান), চাপাতি শাকিল, নাহিদ (বাংলা), এইচএম কিবরিয়া (মনোবিজ্ঞান), কাইয়ুম মিয়া টিপু (মনোবিজ্ঞান), ওবায়দুল (মনোবিজ্ঞান), ইউনুছ (সমাজবিজ্ঞান), কাইলা এমদাদ (দর্শন), রাজন তালুকদার (রসায়ন), আল-আমিন, উজ্জ্বল অন্যতম। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে গত চার বছরে ছাত্রলীগের ৭১ জনকে সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ২০ থেকে ২৫ জনের একটি পেশাদার টিম রয়েছে। চরমপন্থী হিসেবেও এলাকায় রয়েছে এদের পরিচিতি। এর মধ্যে শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান তুহিন, আশিকুর রহমান জাপান, মাহমুদ হাসান লেনিন (ব্যবস্থাপনার প্রাক্তন ছাত্র) ও তৌফিকুর রহমান হিটলার, মোস্তাফিজুর রহমান জুয়েল (অর্থনীতির প্রাক্তন ছাত্র), মিজানুর রহমান টিটু (ইংরেজি), আরিফুল ইসলাম আরিফ (বাংলা), আশরাফুল ইসলাম (ইসলামের ইতিহাস), জনি আবদুর রহমান (বাংলা), শফিক আহম্মেদ (আইন), রাসেল জোয়ার্দার (আরবি ভাষা ও সাহিত্য), সজীব আহম্মেদ (আইন), সঞ্জয় বিশ্বাস (আইন), সাজন মৃধা (আইসিই), জেএম ইলিয়াছ (রাষ্ট্রনীতি ও লোকপ্রশাসন), বহিরাগত পিকুল ওরফে বোমা পিকুল, তারেক, হায়দার, রেন্টু ও সনাতন উল্লেখযোগ্য। এসব পেশাদার সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, অস্ত্র, বিস্ফোরক, হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলা রয়েছে। তাছাড়া গত ১৯ নভেম্বর ও ১২ জানুয়ারি শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনার সময় এসব ক্যাডার প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে এবং ছাত্রদলের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর গুলি চালায়। এদের প্রত্যেকের কাছেই রয়েছে দেশি-বিদেশি অস্ত্র।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ থেকে ১৫ জনের একটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে পেশাদার হিসেবে। ক্যাম্পাসে ভয়ঙ্কর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড তেমন পরিচালিত না হলেও ক্যাম্পাসের বাইরে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কাজে এরা জড়িত। এদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু হলে আনোয়ার, রব্বানী, লেনিন, মুরাদ; মুহসীন হলে বিপ্লব, মেহেদী, তুষার, বাপ্পী; একুশে হলে রাকিব, মিরাজ, শরিফ, রাশেদ; জগন্নাথ হলে কাঞ্চন বিশ্বাস, শিশির, উত্পল, সঞ্জয় বাড়ৈ; জিয়া হলে প্রিন্স, মঞ্জু; জসীমউদ্দীন হলে মেহেদী, আল আমিন; সূর্যসেন হলে আরিফ, শিমুল; এফ রহমান হলে সায়েম, রনি; জহুরুল হক হলে রিফাত এবং এসএম হলের আনোয়ার হোসেন আনু, সুজন উল্লেখযোগ্য।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ গ্রুপে অন্তত ১৫ থেকে ২০ জনের একটি সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী রয়েছে। এর বাইরেও ক’জন রয়েছে—যারা পেশাদার সন্ত্রাসী হিসেবেই বেশি পরিচিত। এদের মধ্যে ক’জনের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে হত্যা, ডাকাতি, থানার অস্ত্র লুট, অস্ত্র ব্যবসা, একাধিক হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামিও রয়েছে। এর মধ্যে সভাপতি গ্রুপের এস এম তৌহিদ আল হোসেন ওরফে তুহিন (সাংগঠনিক সম্পাদক), যুবায়ের ইবনে তানিম (মাদার বক্স হল সভাপতি), নাসিম আহম্মেদ সেতু (উপ-পাঠাগার সম্পাদক), খালিদ হাসান নয়ন, সাধারণ সম্পাদক সমর্থক সহ-সভাপতি আখেরুজ্জামান তাকিম (বর্তমানে অসুস্থ), সুদীপ্ত সালাম ওরফে বাইট্টা সালাম (যুগ্ম সম্পাদক), সৌরভ (নৃ-বিজ্ঞান চতুর্থ বর্ষ), আতিকুর রহমান (উপ-দফতর সম্পাদক), মামুন, কৌশিক ও রুবেল উল্লেখযোগ্য।

এদের মধ্যে তুহিন ছাত্রলীগ নেতা সোহেল হত্যা মামলার প্রধান আসামি। সে গত বছর রাজশাহীর ভদ্রা এলাকায় সংঘটিত একটি বাড়িতে ডাকাতি মামলারও আসামি। ২ অক্টোবর শিবিরের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় তুহিনই কখনও পিস্তল, কখনও রামদা হাতে ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়িয়েছে। তবে বর্তমানে সে নতুন কমিটির দাবিতে সভাপতি-সম্পাদকের বিরোধিতা করছে। এছাড়া সাধারণ সম্পাদকের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে পরিচিত তাকিম। রাজনীতি করতে গিয়ে ক্লাসে ন্যূনতম দিন উপস্থিত না থাকার কারণে দর্শন বিভাগ থেকে ছাত্রত্ব হারিয়েছে। এরপরও বিপুর ছত্রছায়ায় ক্যাম্পাসে অবাধে টেন্ডারবাজি, ছিনতাই, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি ও যৌন হয়রানির মতো অপকর্ম চালিয়েছে তাকিম। এর বাইরে ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ জামান রকি, রকিবুল হাসান রকি, আরিফুর রহমান ২০১১ সালে টাকা ও স্বর্ণমূর্তির লোভে রাবি শিক্ষকের ভাইকে হোটেল থেকে অপহরণ করে পদ্মা পাড়ে কুপিয়ে হত্যা করে পদ্মায় লাশ ভাসিয়ে দেয়। ছাত্রলীগের এসব ক্যাডারা বর্তমানে ছোট-বড় প্রায় ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আবাসিক হলে অবস্থান করছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় : বাকৃবি ক্যাম্পাসের ত্রাস হিসেবে পরিচিত কয়েকজনের মধ্যে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি সমর্থিত কেদ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি পারভেজ আনোয়ার, প্রভাবশালী ক্যাডার ও সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার পারভেজ রিপন, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক এসএম রায়হান, সাধারণ সম্পাদক সমর্থিত ক্যাডার মানিকজোড় শাহীন মাহমুদ ও আসাদুজ্জামান খোকন ওরফে খোকা, বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি তপু, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক আল আমীন, সহ-সভাপতি নুর আলম সরকার, মো. আবু রায়হান, মঞ্জুরুল ইসলাম, শাহজাদা কায়সার ও রাশেদুল ইসলাম খোকন উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি গুলি করে শিশু রাব্বি হত্যাসহ ক্যাম্পাস ও এর আশপাশের এলাকার সব অপকর্মের হোতা এরাই।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ক্যাডার রাকিব হোসেন, শিহাবুল হাসান ভূঁইয়া সাকিব, মাহমুদুল হাসান তুষার, পীযুষ কান্তি বর্মণ, মনসুর আলী, আবু তৈয়ব ও রবিনের বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যাসহ বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় : এখানকার ১০-১২ জনের মধ্যে রয়েছে আসাদুজ্জামান আসাদ সাইদ, টোকাই হাফিজ (যুগ্ম আহ্বায়ক), নাইমুল হাসান, (যুগ্ম আহ্বায়ক), চয়ন বড়ুয়া, অঞ্জন, তারেক, সোহরাব, শিমুল, উত্তম দাস, পার্থ, রাজিব ও আকবর।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : এখানে অস্ত্রবাজ হিসেবে পরিচিত ১০-১৫ জনের মধ্যে সুমন, রেজা, (সাবেক সাধারণ সম্পাদক), আজগর আলী, নিয়ামুল পারভেজ, তিলন এন্ড্রোর, মহিবউল্লাহ, রাজীব আহমেদ, রাসেল, সাব্বির আলম (বর্তমানে শিক্ষক), আকরাম, অরূপ, জাহিদ, অভি, তপু, আরিফ, সম্রাট শাকিল ও মিথুন কুণ্ড উল্লেখযোগ্য। এরা সবাই পেশাদার সন্ত্রাসী হেসেবে পরিচিত।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় : এই ক্যাম্পাসে ৭ থেকে ৮ জনের মধ্যে ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল, মুন্না, শামীম, রোজ, পলাশ, জামিলের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ কর্মী আবদুল আজিক খান সজিব হত্যাসহ রয়েছে একাধিক গুরুতর অভিযোগ।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় : জাবেদ আজাদ নিশাদ, হিমাংশু মণ্ডল, রবিউল আলম মিলন, নাজমুল হক, দেবাশীষ দাস, মারজানা ইসলাম স্বপ্না, আবদুল কাইয়ুম, জান্নাতুল হাসান নিপুন, মির্জা মোবাশ্বের হক, গোলাম সরওয়ার, হুমায়ুন কবির ও অরুন চন্দ্র রায়।

ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় : খন্দকার এনামুল হক শুভ, রবিউল ইসলাম, প্রীতম মজুমদার, ছোট আরিফ, বড় আরিফ, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, সুকান্ত, হাসিব, রূপম, মিজান, শাকিব, শিহাব ও শামসু নুর।

কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় : জয় চক্রবর্তী, সজীব খান, নজরুল ইসলাম বাবু, ফাহাদুজ্জামান শিবলী, নূরে রাকিব, সাব্বি আহমেদ, অপু খন্দকার, আবু নাসের নইমকে দেখে ভয় পায় ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বাদে দেশে আরও ৩২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ২৬৯টি সরকারি কলেজে বর্তমানে অনার্স-মাস্টার্স কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তবে এগুলোর মধ্যে পুরনো ১৯টি জেলায় অবস্থিত প্রায় ৩০টি কলেজে কমবেশি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলে। এরমধ্যে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক জেলা রয়েছে ৮৯টিতে। প্রত্যেক সাংগঠনিক জেলা ও ৬০টির মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ এ দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠানেই কমবেশি পেশাদার সন্ত্রাসী রয়েছে ছাত্রলীগের। যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক গুরুতর অভিযোগ।

শাহবাগ পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জুন মাসের মাঝামাঝি বনানী চেয়ারম্যান বাড়ির এক ব্যবসায়ীর গাড়ি মধ্যরাতে ছিনতাই করে নিয়ে যায় ছাত্রলীগ কর্মীরা। পুলিশ ছিনতাইয়ের অভিযোগে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য নজরুল ইসলাম খান জেরীকে গ্রেফতার করে। জেরী গাড়ি ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।

গত চার বছরে বিভিন্ন শিা প্রতিষ্ঠানে ১৮৭টি সংঘর্ষ করেছে ছাত্রলীগ। তার মধ্যে বিভিন্ন থানা ও জেলা শাখায় হয় ৪৮টি। এতে প্রতিপক্ষের ছাত্র আহত হয়েছেন ৩ হাজার ১৪৫ জন। পুলিশ, সাংবাদিক, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপ, ছাত্রীর অভিভাবক বাদী হয়ে ও নিজেদের এক গ্রুপ অপর গ্রুপের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের করেছে ৫৪২ জনের বিরুদ্ধে, যার মধ্যে ৪৯৫ জনকে বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া অন্য সংগঠনের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন এলাকাবাসীর ওপর হামলা করে ৫৬টি।

২০০৯ সালের ১৩ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান নোমানীকে হত্যার মধ্যে দিয়ে ছাত্রলীগ খুনের কার্যক্রম শুরু করে। এই ধারাবাহিকতা এতটাই লম্বা হয়েছে যে, তারা চার বছরে ২৩ জন ছাত্রকে হত্যা করেছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখে তেজগাঁও পলিটেকনিক্যালে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আহত হয় ২০ জন। ১১ তারিখে রাবিতে ছাত্রদলের উপর হামলায় আহত হয় ৩০ জন। আগস্ট মাসে ইবিতে চাকরি বাণিজ্য নিয়ে ছাত্রলীগ তাণ্ডব চালায়। এতে আাহত হয় ৪০ জন। ৬ তারিখে জমি দখলকে কেন্দ্র করে ৬ জনকে আহত করে। জুলাই মাসে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে ২৭ জনকে আহত করে। ২৪ তারিখে খুলনায় ৮ কোটি টাকায় টেন্ডার জমাকে কেন্দ্র করে পুলিশ সাংবাদিকসহ ৫ জনকে আহত করে। ২৫ তারিখে কুড়িগ্রামে ফুলবাড়ীতে পুলিশের ২ এসআইকে আহত করে। ২৪ তারিখে যশোরের আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এড.আব্দুল গফুরকে কুপিয়ে আহত করে। ১৬ তারিখে রাবিতে দু’গ্রুপের সংঘর্ষে নিজ দলের কর্মী সোহেলকে হত্যা করে। ৮ তারিখে সিলেটের ঐতিহাসিক এমসি কলেজে আগুন লাগিয়ে ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দেয়। ২ তারিখে বরিশাল মেডিক্যালে ছাত্রদলের উপর হামলা চালিয়ে ১০ জনকে আহত করে। ১ তারিখে সিলেটের দক্ষিণ ডিগ্রি কলেজে ৫ জন শিবির কর্মীসহ ৩৫ জনকে আহত করে। জুন মাসের ২৮ তারিখে নেত্রকোনায় রামদা মিছিল বের করে। ২২ তারিখে ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কাছ থেকে ৩ হাজার অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। একই দিন মাদারীপুরে পুলিশের উপর হামলা করে ৬ পুলিশকে আহত করে। ৯ তারিখে শাবিপ্রবিতে ফাহিম মাহফুজ নামের কর্মীকে হত্যা করে। ৪ তারিখে যশোরের এমএম কলেজে মোশাররফ নামের ছাত্রকে আহত করে। মে মাসের ২২ তারিখে ঢাবিতে মারপিট করে টাকা ও ল্যাপটপ লুট করে নিয়ে যায়। ১৬ তারিখে রাজশাহীতে সানি হত্যা মামলায় ছাত্রলীগের ২ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। ১৪ তারিখে সিলেটের সালিয়াগ্রামের জমি দখল করতে গিয়ে ৫০ জন গ্রামবাসীকে আহত করে। পুলিশ ২০ জন নেতাকর্মীকে আটক করে। এপ্রিল মাসের ১৩ তারিখে জবিতে দু’গ্রুপের সংঘর্ষে ৭ জনকে আহত করে ও ১৭ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়। ২৮ তারিখে জাবিতে সাংস্কৃতিক কর্মীদের উপর হামলা করে ৭ জনকে গুরুতর আহত করে। ২৯ তারিখে ঢাকা কলেজে দু’গ্রুপের সংঘর্ষে ২৫ জনকে আহত করে। ২৫ তারিখে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ডাক্তারদের উপর হামলা করে। ১১ তারিখে চাঁদপুরের বিল্লাল নামের নিজ দলীয় কর্মীকে হত্যা করে। ৮ তারিখে বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশনে হামলা চালায়। ২৯ মার্চ ঝালকাঠিতে ২০ লাখ টাকার টেন্ডার নিয়ে দু’গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়। ২১ তারিখে ছাত্রলীগ পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের সাথে সংঘর্ষ করে ১ জন নিহত হয়। ২৮ তারিখে ফাও মদ খাওয়াকে কেন্দ্র করে তিতুমীর কলেজে হামলা চালায়। ১৩ তারিখে বিএনপির মহাসমাবেশে আগত লোকদের উপর জায়গায় জায়গায় হামলা চালায়। ফেব্রুয়ারি মাসের ২৭ তারিখে রাজশাহীর পটিয়ায় ছাত্রী অপহরণ করে। এতে গ্রামবাসী ৩ জনকে ধরে পুলিশে দেয়। ১৪ তারিখে পিস্তলসহ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় উপ-বিজ্ঞান সম্পাদক মোস্তাকিম মোরশেদ গ্রেফতার হন। ১১ তারিখে সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজে হামলা চালিয়ে ৩৩টি রুম ভাঙচুর করে ৭ জনকে আহত করে। ১৩ তারিখে দিনাজপুরের টেক্সটাইল কলেজ বন্ধ করে দেয়া হয়। ১৪ তারিখে পটুয়াখালী জেলা পরিষদের ২৫০ কোটি টাকার টেন্ডার ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পহেলা জানুয়ারিতে রাবিতে পুলিশ ও শিবির কর্মীকে কুপিয়ে যখম করে। ৪ তারিখে খুলনার আজম খান কলেজে ছাত্রদলের সাথে সংঘর্ষ বাঁধিয়ে ১১০ জনকে আহত করে। ২৪ তারিখে জাবিতে ছাত্রকল্যাণ সমিতির চাঁদাবাজিতে দু’গ্রুপের সংঘর্ষে ১৫ জনকে আহত করে। ২৫ তারিখে বরিশালে বিএনপির অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ১০ জনকে আহত করে। ১৭ তারিখে মৌলভীবাজারে ওরসের চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ৩০ জনকে আহত করে। ৯ তারিখে জাবিতে ৪ জন ছাত্রকে ৩ ও ৪ তলা থেকে নিচে ফেলে দিয়ে আহত করে। শাবিপ্রবিতে ৯ তারিখে জুবায়েরকে হত্যা ১২ তারিখে হামলা চালিয়ে ২০ জনকে আহত করে। ৪ তারিখে সাংবাদিক ও পুলিশসহ ২৫ জনকে আহত করে। ৭ তারিখে নাটোরে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে জেলা সাধারণ সম্পাদক আতিকুজ্জামান ও সরোয়ার জামান প্রিন্স গ্রেফতার হয়। ৫ তারিখে রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের উপর হামলা চালিয়ে ২৫ জনকে আহত করে। ৩ তারিখে শাবিপ্রবি, কুয়েট, ঢাবি ও বুয়েটে হামলা চালিয়ে ৭০ জনকে আহত করে। ২৮ তারিখে ঢাকা পলিটেকনিক্যালে দু’গ্রুপের সংঘর্ষে ১০জন আহত হয়। ২৫ তারিখে মাগুরায় খাবার বিতরণকে কেন্দ্র করে নিজ দলীয় কর্মী আল আমীনকে হত্যা করে। ৩ তারিখে জবিতে ছাত্রজোটের ১৫ কর্মীকে আহত করে। ২ তারিখে কুয়েটে ৬ শিক্ষকসহ ২০জনকে আহত করে। ২ তারিখে রাবি, কুয়েট, ঢাবিতে হামলা চালিয়ে ৬০ জনকে আহত করে। ১ তারিখে রাবিতে পুলিশ ও শিবির কর্মীকে কুপিয়ে যখম করে। ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর ইবিতে শিবিরের উপর হামলা চালিয়ে ২০ জন নেতাকর্মীকে আহত করে। ২৬ ডিসেম্বরে ছিনতাইয়ের অভিযোগে ৬ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। ২৪ তারিখে খুলনার আজম খান কলেজে হামলা চালিয়ে ১৫ জনকে আহত করে। ১৯ তারিখে সুনামগঞ্জে জেলা প্রশাসক নিয়োগকে কেন্দ্র করে ১০ জনকে আহত করে। ২৫ তারিখে চট্টগ্রামে আদালত চত্বরে কর্নেল অলির উপর হামলা চালিয়ে ৩০ জনকে আহত করে। ১২ তারিখে ছাত্রদল ও পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে ১২ জনকে আহত করে। নভেম্বরের ১৫ তারিখে বি-বাড়িয়ায় হামলা চালিয়ে ৮ পুলিশকে আহত করে। ১৪ তারিখে সিলেটের মদনমোহন কলেজে অবৈধভাবে পরীক্ষা দিতে গিয়ে ভাঙচুর চালায়। একই দিন বরিশালের কেশবপুরে ব্যবসায়ীদের উপর হামলা চালিয়ে ১৫ জনকে আহত করে। ১০ তারিখে নাজিরপুর থানায় হামলা চালায়। ২৩ অক্টোবর ছাত্রদল কর্মী আবিদকে হত্যা করে। ১১ তারিখে ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১২ গ্রুপের ২২ কোটি টাকার টেন্ডার ছিনিয়ে নেয়। ৫ তারিখে শীতলক্ষ্যায় হামলা চালিয়ে ৬ জনকে আহত করে। ২ তারিখে এমবিবিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রতারণায় জড়িত থাকার অভিযোগ ৫২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাস্তা মেরামতের ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকার টেন্ডার ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে যায়। ২২ তারিখে ঢাবিতে দু’গ্রুপের সংঘর্ষে ৯ জন আহত হয়। ২১ তারিখে তেজগাঁও পলিটেকনিক্যালে ফাও খেতে গিয়ে সংঘর্ষ বাধিয়ে রাইসুল নামের কর্মীকে নিজেরাই হত্যা করে। ১২ তারিখে বগুড়ায় ছাত্রদলের উপর হামলা চালায়। আগস্ট মাসের ২৯ তারিখে গাজিপুর পৌরসভার ৪৩টি প্রকল্পের ১৮ কোটি টাকার টেন্ডার ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ২৫ তারিখে বরিশাল জেলার সেতু বিক্রি করে দেয়। ১৮ তারিখে কিশোরগঞ্জ জেলার টেন্ডার ছিনতাই করে। ১৬ তারিখে ময়মনসিংহের ত্রিশালে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’গ্রুপের সংঘর্ষে ১১ জন আহত হয়। ১৫ তারিখে সিলেটের মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে হামলা ও ভাঙচুর করে ৬ জনকে আহত করে। ৯ তারিখে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ শিক্ষককে আহত করে।

ছাত্রলীগের হাতে ২৩ খুন : বর্তমান সরকারের প্রায় চার বছরে দেশের বিভিন্ন শিাপ্রতিষ্ঠানের ২৩ জন মেধাবী ছাত্রকে খুন করেছে ছাত্রলীগ, তার মধ্যে ৯ জনই ছাত্রশিবির নেতা-কর্মী। ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান নোমানীকে হত্যার মধ্যে দিয়ে ছাত্রলীগ খুনের কার্যক্রম শুরু করে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খুনের ঘটেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ৮ ফেব্র“য়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও শিবিরের মধ্যে রক্তয়ী সংঘর্ষে দুই শিবিরকর্মী প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মুজাহিদ এবং ইংরেজি শেষ বর্ষের ছাত্র মাসুদকে খুন করে ছাত্রলীগ। এছাড়া ২০১০ সালের ১১ ফেব্র“য়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের মহিউদ্দিন, ২০১০ সালের ২৮ মার্চ মার্কেটিং বিভাগের হারুন অর রশিদ কায়সার, ১৫ এপ্রিল হিসাববিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের আসাদুজ্জামানকে খুন করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পর সবচেয়ে বেশি ছাত্রকে খুন করা হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্রশিবিরের ওপর ছাত্রলীগের হামলা এবং ছাত্রলীগের দু’গ্র“পের সংঘর্ষে বর্তমান সরকারের মেয়াদে নিহত হয়েছেন ৩ জন ছাত্র। ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ ছাত্রলীগের পৈশাচিকতায় নিহত হন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান নোমানী। ২০১০ সালের ৮ ফেব্র“য়ারি নিহত হন ছাত্রলীগ কর্মী (ছাত্রলীগের দাবি) ফারুক হোসেন। ১৫ আগস্ট নাসিম এবং ১৬ জুলাই অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী সোহেল। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সালের ২ ফেব্র“য়ারি ছাত্রলীগ-পুলিশের সংঘর্ষে নির্মমভাবে খুন হন নিরীহ ও মেধাবী ছাত্র আবুবকর। ৮ জানুয়ারি নিহত হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মী ও ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ। ২০০৯ সালের ৩১ মার্চ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ওরফে রাজীব, ২০১০ সালের ১২ জুলাই সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রলীগ কর্মী পলাশ, ২০১১ সালের ২০ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রদল নেতা চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আবিদুর রহমান। ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রমৈত্রীর সহ-সভাপতি রেজানুল ইসলাম চৌধুরী, ২১ জানুয়ারি পাবনা টেক্সটাইল কলেজের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী মোস্তফা কামাল শান্ত, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১১ নিহত হন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাইসুল ইসলাম রাহিদ। সর্বশেষ ২০১২ সালের ১২ মার্চে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আবদুল আজিজ খান সজীবকে খুন করে ছাত্রলীগ।

৬৮ শিা প্রতিষ্ঠান বন্ধ : ছাত্রলীগ-ছাত্রলীগ এবং ছাত্রলীগ-প্রতিপরে মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৬৮টি উচ্চশিা প্রতিষ্ঠান অনির্ধারিতভাবে বন্ধ হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন শিা প্রতিষ্ঠানে সংগঠিত হয় ১৮৭টি সংঘর্ষ। তার মধ্যে বিভিন্ন থানা-জেলা শাখায় হয় ৪৮টি। আহত হয়েছে ৩ হাজার ১৪৫ জন। পুলিশ, সাংবাদিক, কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপ, ছাত্রীর অভিভাবক বাদি হয়ে ও নিজেরা এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের নামে পাল্টা মামলা দায়ের করেছে ৫৪২ জনের বিরুদ্ধে, যার মধ্যে ৪৯৫ জনকে বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া অন্য সংগঠনের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন এলাকাবাসীর ওপর হামলা হয় ৫৬টি। বড় আকারের সংঘর্ষ হয়েছে এমন শিা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ,জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা প্রকৌশল, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল (বুয়েট), শেরে-ই-বাংলা কৃষি, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি,রাজশাহী প্রকৌশল এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। কলেজের মধ্যে রক্তয়ী সংঘর্ষ হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ,ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ, তিতুমীর কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি কলেজ, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক কলেজ, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ, খুলনা বিএল কলেজ, মেহেরপুর কলেজ, সিলেট এমএম কলেজ, সিলেট এমসি কলেজ, বরিশাল বিএম কলেজ, শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ, বরিশাল পলিটেকনিক কলেজ, সিলেট মেডিক্যাল কলেজ, সিলেট সরকারি কলেজ ও সিলেট পলিটেকনিক কলেজ।

শিক লাঞ্চিত ও নির্যাতিত: আওয়ামী সরকারের পৌনে চার বছরে বিভিন্ন শিা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের হাতে অন্তত ৮০ জন শিক লাঞ্ছিত ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ছাত্রলীগের হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও আবাসিক হলে অন্তত ২০ শিক লাঞ্ছিত ও হামলার শিকার হয়েছে। লাঞ্ছনার শিকার হয়ে বেশ কয়েকটি হলের প্রভোস্ট পদত্যাগ করতে পর্যন্ত বাধ্য হন। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিকদেরও লাঞ্ছিত করে চলেছে। ২০১১ সালের ২০ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ শিককে পিটিয়ে আহত করে। ২৩ নভেম্বর ইউনিফর্ম ছাড়া এক শিার্থীকে পরীার হলে প্রবেশ করতে না দেয়ায় নোয়াখালী সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক জুলফিকার হায়দারকে ছাত্রলীগ নেতা সোহরাব ইকবাল লাঞ্ছিত করে। গত বছরের ২২ জানুয়ারি মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এফ রহমান হলের ছাত্রলীগ নেতাদের আবাসিক মেয়াদ শেষ হওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের হাতে তিন শিক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। শিকরা হলেন প্রাধ্য আজিজুর রহমান, হলের আবাসিক শিক মাহবুব কায়সার ও অধ্যাপক আশফাক হোসেন। ২২ মার্চ রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার মাছপাড়া ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যসহ তিনজন শিককে লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। এর আগে ২০১০ সালের ২৫ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ক্যাডাররা লাঞ্ছিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিককে। একই বছরের ১০ মে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কাসে হামলা চালিয়ে এক শিকিাকে লাঞ্ছিত ও ১০ ছাত্রীকে আহত করে। ১১ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের দুই শিককে লাঞ্ছিত করে।

শতাধিক সাংবাদিক লাঞ্ছিত : গত ৪ বছরে ঢাবি, জবি, জাবি, চবি, রাবি, কুবি, ইডেন কলেজ, ঢাকা কলেজসহ বিভিন্ন জেলা ও শহরে ছাত্রলীগের হাতে দেড় শতাধিকের বেশি সাংবাদিক লাঞ্ছিত হয়েছেন। নির্যাতিত হয়েছেন প্রায় আরো শতাধিক।

সুত্রঃ দৈনিক আমার দেশ, নয়াদিগন্ত , সাপ্তাহিক সোনার বাংলা , বিডিনিউস২৪

(সংকলিত )

বিষয়: বিবিধ

৪১৪৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File