পার্বত্য অঞ্চলের হায় হায় সরকারের হায় হায় আইন নিয়ে কঠোর সমালোচনা
লিখেছেন লিখেছেন বাংলার মানব ২৭ জুন, ২০১৩, ০২:২৯:১৩ দুপুর
যেভাবে সংশোধনী আনা হচ্ছে তাতে দায়রা আদালতের
কার্যপরিধি খর্ব হওয়ার আশংকা রয়েছে। এছাড়া কোন
বিষয়ে ভূমি কমিশন চেয়ারম্যান আপত্তি দিলেও কাজ
হবে না। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ৩ জন উপজাতীয় সদস্য
যে মত দেবেন তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে গৃহীত হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভায়
উপস্থাপনের জন্য এ সংক্রান্ত সংশোধন প্রস্তাবটি ১৯
মে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ
বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এর সারসংক্ষেপে বলা হয়, ১৯৯৭
সালে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়
থাকাকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক কমিটির
সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির
চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী এ অঞ্চলের
জমিজমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে ২০০১
সালে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন প্রণয়ন করা হয়।
এ আইন প্রণীত হওয়ার পর এ পর্যন্ত চারটি কমিশন কাজ
করেছে। কিন্তু সর্বশেষ কমিশন নিয়মিত বৈঠক আহ্বান
করলেও ৩ সদস্যের উপজাতীয় সদস্যরা আইন সংশোধনের
অজুহাত দেখিয়ে অব্যাহতভাবে বৈঠকে অংশ নেননি।
ভূমি কমিশন আইন সংশোধনে ২০০৯ সালের জুলাই
মাসে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়
থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। ওই
প্রস্তাবের ওপর গত সাড়ে ৪ বছরে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন
মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ একাধিক সভা হয়েছে। সর্বশেষ
২ এপ্রিল আইন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এ সংক্রান্ত
আইন সংশোধনের খসড়া বিল চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু
ভূমি মন্ত্রণালয় বেশ কিছু ধারার সংশোধন
প্রস্তাবে একমত হতে পারেনি।
সংশোধন প্রস্তাবসমূহ ও আপত্তিঃ ভূমি কমিশন আইনের
৬টি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব আনা হয়েছে। এগুলোর
মধ্যে ৭(৫) ধারায় বলা আছে, ‘চেয়ারম্যান উপস্থিত
অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ৬(১) ধারার
বিষয়সহ এর এখতিয়ারভুক্ত অন্যান্য বিষয়ে সর্বসম্মতির
ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, তবে সর্বসম্মত
সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব না হলে চেয়ারম্যানের
সিদ্ধান্তই কমিশনের সিদ্ধান্ত বলে গণ্য হবে।’ এখন
সংশোধন প্রস্তাবে "চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তই কমিশনের
সিদ্ধান্ত বলে গণ্য হবে" এর পরিবর্তে বলা হয়েছে,
‘উপস্থিত সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের গৃহীত সিদ্ধান্ত
কমিশনের সিদ্ধান্ত বলে গণ্য হবে।’ এ সংশোধন
প্রস্তাবের বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়
জোরালো আপত্তি জানিয়ে বলেছে, তিনটি পার্বত্য জেলার
প্রতিটি জেলায় ভূমি কমিশনের সভা অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ৫
জনের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির ৩ জনই উপজাতীয় সদস্য,
বাকি দু’জনের মধ্যে চেয়ারম্যান হলেন সুপ্রিমকোর্টের
সাবেক একজন বিচারপতি ও সরকারের
প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার
বা তার পাঠানো প্রতিনিধি।
ফলে যেভাবে সংশোধনী আনা হয়েছে তাতে করে কমিশনের
বৈঠকে উত্থাপিত কোন প্রস্তাবে চেয়ারম্যান ও সরকারের
প্রতিনিধি একযোগে ভেটো দিলেও কাজ হবে না।
সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে উপজাতীয়রা যা বলবেন তাই চূড়ান্ত
সিদ্ধান্ত বলে গণ্য হবে। ফলে কমিশন চেয়ারম্যান
বিব্রতবোধ করতে পারেন। এ প্রসঙ্গে নাম
প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক একজন ভূমি কমিশন চেয়ারম্যান
যুগান্তরকে বলেন, এভাবে আইন সংশোধন হলে বেশিরভাগ
ক্ষেত্রে সরকারের স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে এবং কমিশন
চেয়ারম্যান ও সরকারের প্রতিনিধি শুধু অলংকারে পরিগণিত
হবে। এতে করে অনেক ক্ষেত্রে সরকারের সাংবিধানিক
এখতিয়ারও ক্ষুন্ন হতে পারে।
ধারা ৬(ক)-তে বলা আছে, পুনবার্সিত শরণার্থীদের
ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন
ও রীতি অনুযায়ী নিষ্পত্তি হবে। সংশোধন
প্রস্তাবে পুনর্বাসিত শরণার্থীদের ভূমি সংক্রান্ত বিরোধের
পাশাপাশি ‘অবৈধ বন্দোবস্ত ও বেদখল হওয়া ভূমিও’ এ
ধারার অন্তর্ভুক্ত হবে বলে বলা হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়
এ সংশোধন প্রস্তাবে ঘোর আপত্তি জানিয়ে বলেছে, এই
সংশোধনী আনা হলে পুনর্বাসিত শরণার্থী ছাড়াও এ
অঞ্চলে বসবাসরত অন্যান্য জনসাধারণ এবং এ অঞ্চলের
সকল বন্দোবস্ত ও অন্যান্য ভূমি বিরোধের বিষয় এ
কমিশনের আওতায় চলে আসবে। এতে একদিকে চুক্তির
ধারাবাহিকতায় কমিশন গঠনের মূল স্পিরিট ব্যাহত
হবে এবং অপরদিকে পার্বত্য জেলাসমূহে স্থাপিত
দায়রা আদালতের কার্যপরিধি খর্ব হতে পারে।
ধারা ১৩(৩) নামে নতুন উপধারা সৃষ্টি করে সংশোধন
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘এই ধারার অধীন কমিশনের সচিব
এবং অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের
ক্ষেত্রে পার্বত্য জেলার উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার প্রদান
করা হবে।’ এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়
আপত্তি জানিয়ে বলেছে, এতে করে এডহক নিয়োগের
সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। এ কারণে অগ্রাধিকার প্রদানের
ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদানের পরিবর্তে ‘অগ্রাধিকার প্রদান
করা হবে’ বলা বাঞ্ছনীয়। ভূমি কমিশন আইন সংশোধনের
বিষয়ে গত বছর ২৯ নভেম্বর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ
একটি প্রতিষ্ঠান মতামত প্রদান করে। সেখানে নতুন এ
ধারার বিষয়ে বলা হয়েছে, এতে করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর
একচ্ছত্র প্রভাব পরিলক্ষিত হবে। কেননা এই ধারার
অধীনে কমিশনের সচিব এবং অন্যান্য কর্মকর্তা-
কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে পার্বত্য জেলার শুধুমাত্র
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
ফলে এ অঞ্চলের বাঙালিসহ সারাদেশের বাঙালিদের বঞ্চিত
হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৬(গ) ধারায় পার্বত্য চট্টগ্রামে আইনবহির্ভূতভাবে কোন
ভূমি বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়ে থাকলে তা বাতিল
করা এবং এই বন্দোবস্তের ফলে কোন বৈধ মালিক উচ্ছেদ
হয়ে থাকলে তার দখল পুনর্বহাল করা। এখানে শব্দগত
দুটি সংশোধনী আনা হয়েছে। আইনবহির্ভূতভাবে শব্দটির
পরিবর্তে ‘আইন ও রীতিবহির্ভূত’ এবং ‘কোন ভূমি’র
পরিবর্তে ‘জলেভাসা জমি’ প্রতিস্থাপিত হবে। এ
সংশোধনীতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আপত্তি দেয়ার যথেষ্ট
যুক্তি থাকলেও শান্তি চুক্তিতে এ
বিষয়ে জলেভাসা জমি বা ফ্রিজল্যান্ডের কথা উল্লেখ
থাকায় কোন মন্তব্য করা হয়নি। ধারা ৭(৪) এ বলা হয়েছে,
কোন বৈঠকে বিবেচিত বিষয় অনিষ্পন্ন
থাকলে তা পরবর্তী যে কোন বৈঠকে বিবেচনা ও
নিষ্পত্তি করা যাবে এবং সংশ্লিষ্ট
পূর্ববর্তী বৈঠকে উপস্থিত সদস্যগণের কারও অনুপস্থিতির
কারণে বিষয়টির নিষ্পত্তি বন্ধ
থাকবে না বা নিষ্পত্তি সংক্রান্ত কার্যক্রম অবৈধ
হবে না। এ উপধারার সংশোধনীতে এর সঙ্গে যুক্ত
করে বলা হয়েছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে, এইরূপ বিবেচনা ও
নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কমিশনের সকল সদস্যকে বৈঠকের
পূর্বে নোটিশ করতে হবে।’
ধারা ১৮-তে বলা আছে, এই আইনের উদ্দেশ্য
পূরণকল্পে সরকার এই আইন বলবৎ হওয়ার ৬ মাসের
মধ্যে সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা বিধি প্রণয়ন
করবে। সংশোধন প্রস্তাবে ‘এই আইন বলবৎ হওয়ার ৬
মাসের মধ্যে’ শব্দগুলো বিলুপ্ত করা হয়েছে। এ
বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় আপত্তি দিয়ে বলেছে,
এতে করে বিধি প্রণয়ন না হওয়ার অজুহাতে কমিশনের
সদস্যরা সভায় উপস্থিত নাও থাকতে পারেন। তাই
‘বিধি প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত কমিশনের কোন বৈঠক ও
কার্যক্রম বন্ধ থাকবে না’ শব্দগুলো যুক্ত করা প্রয়োজন।
কমিশনের গঠন সংক্রান্ত ৩(২)(ঘ) ধারায় বলা আছে,
সংশ্লিষ্ট সার্কেল চীফ, পদাধিকার বলে। সংশোধন
প্রস্তাবে মাঝখানের ‘কমা’ উঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
এছাড়া সংশোধন প্রস্তাবে ৭(৫) ও ৯ ধারায়
সংশোধনী আনা হয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
১০০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন