অসাংবিধানিক আইন

লিখেছেন লিখেছেন বাংলার মানব ২৩ জুন, ২০১৩, ০৮:১৮:৪১ রাত

মাঝে মাঝে পার্বত্য এলাকায় অসাংবিধানিক চুক্তিগুলোর কথা ভাবলে যেন মাথায় প্রচন্ড রক্ত উঠে যায়, এত আন্দোলন এত লেখা এত দাবি এত স্বারক লিপি , এগুলোর কি কোনই মর্যাদা পায়না আমরা, আমার গুরু মেজর ফারুখ এর কথায় কিছু উল্লেখিত অসাংবিধানিক কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা কি বর্তমান সরকার একটুও চিন্তা করে না, সরকার কি চায়,

অন্যথায় চ্যালেঞ্জ করবো সরকারের সাথে যদি সরকার একান্তভাবে নিরপেক্ষ হয়ে আলোচনায় বসে,,,,

(১) ১৬ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত ক্ষুদ্রায়তনের

বাংলাদেশের এক-দশমাংশ এলাকা পার্বত্য

চট্রগ্রাম উপজাতীয় এলাকা (উপজাতিদের ভাষায়

জুম্মল্যান্ড) হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।

(২) পার্বত্য চট্রগ্রামে বসতি স্থাপন, ভুমিক্রয়

বা বন্দোবস্তি নেয়ার সংবিধান স্বীকৃত নাগরিক

অধিকার অস্বীকৃত হয়েছে। এর ফলে দেশের ১৬

কোটি নাগরিক

পার্বত্যাঞ্চলে বিদেশীরুপে পরিগণিত হয়েছে।

(৩) পার্বত্য চট্রগ্রামে বসবাসরত ৭ লক্ষাধিক

বাংগালী নাগরিককে পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসের

জন্য উপজাতীয় হেডম্যান/চেয়ারম্যান

এবং সার্কেল চীফের সনদ প্রাপ্তির উপর

নির্ভরশীল করা হয়েছে। উক্ত সনদ

প্রাপ্তিতে ব্যর্থ

হলে পার্বত্যাঞ্চলে তারা ভীনদেশী হিসেবে পরিগণিত

হবে । আর সেখানে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে সনদ

না পেলে কেউ ভোটার তালিকাতেও অন্তর্ভূক্ত

হতে পারবেনা এবং উচ্ছেদ হতে বাধ্য হবে।

(৪) পার্বত্য ৩ জেলায় প্রতিষ্ঠিত

৩টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদসমূহের

নির্বাচনে বাংগালীরা ভোট দিবে তবে উক্ত

পদসমূহে প্রতিদ্বন্দিতা করার গণতান্ত্রিক

অধিকার থেকে বঞ্চিত।

(৫) পার্বত্যাঞ্চলে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক

ক্ষমতার শীর্ষ প্রতিষ্ঠান আঞ্চলিক পরিষদের

চেয়ারম্যানের পদটিও শুধুমাত্র উপজাতিদের জন্য

নির্ধারিত করে দিয়ে দেশের এক-

দশমাংশে উপজাতীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম

করা হয়েছে। এর ফলে ভুমিপুত্র

বাংগালীদেরকে পার্বত্যাঞ্চলে উপজাতিদের

প্রজায় পরিণত করা হয়েছে। এ

দেশবাসি পরাধীনতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ

করে স্বাধীনতা লাভ করলেও বর্তমানে পার্বত্য

বাংগালীরা আবার ভিনদেশী চাকমা উপজাতির

শাসনাধীনে পতিত হয়েছে।

(৬) পার্বত্য মন্ত্রনালয় এবং উন্নয়ন বোর্ড গঠন

করে মন্ত্রিত্ব এবং চেয়ারম্যান পদ দুটিতেও

উপজাতীয় উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

সন্ত্রাসী শান্তিবাহিনী দু’যুগ ধরে সশস্ত্র

সংগ্রাম করে পার্বত্যাঞ্চলের এক ইঞ্চি ভুমি দখল

করতে না পারলেও কেন জেএসএস এর

কাছে আওয়ামী সরকারের এ আত্মসমর্পন ?

(৭) দেশের এক-দশমাংশ এলাকার বিস্তীর্ন ভুমির

উপর শুধুমাত্র ৬ লক্ষ উপজাতির একক অধিকার

নিশ্চিত করা হয়েছে। লক্ষ্যনীয় যে,

পার্বত্যাঞ্চলে গড়ে দেশের ১৬ কোটি নাগরিকের

আবাস হওয়ার কথা। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের

জনসংখ্যা ৫০ কোটি অতিক্রম করলেও

চুক্তি অনুযায়ী মাত্র ৬/৭ লক্ষ উপজাতির বসবাসের

জন্য দেশের এক-দশমাংশ পার্বত্য এলাকা নির্দিষ্ট

করে দেয়া হলো। অথচ দেশের ৭ কোটিরও

বেশি মানুষ ভুমিহীন।

(৮) চুক্তি অনুযায়ী একটি ভূমি কমিশন গঠন

করা হয়েছে যারা জেএসএস এর দাবী মোতাবেক

পার্বত্যবাসী ৭ লক্ষ

বাংগালীকে ভুমি থেকে উৎখাত করলেও দেশের

সুপ্রিম কোর্টও বাংগালীদের আপীল শোনার

ক্ষমতা রাখবেনা।

(৯) পার্বত্যাঞ্চলের ৬টি ক্যাম্প ব্যতীত সকল

নিরাপত্তা ক্যাম্প তুলে নেয়ার জন্য

আওয়ামী সরকার জেএসএস এর সাথে চুক্তিবদ্ধ

হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার

প্রয়োজনে যে কোন জায়গায়

নিরাপত্তা স্থাপনা ষ্ট্যাবলিশ করার

ক্ষেত্রে সরকারের স্বার্বভৈাম অধিকার

(sovereign right) এর সাথে জেএসএস-কে অংশিদার

করা হয়েছে। তিনদিক থেকে ভারত-বেষ্টিত হওয়ায়

দেশের কৌশলগত নিরাপত্তার দিক থেকে পার্বত্য-

চট্রগ্রামের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সবচেয়ে নাজুক।

তার উপর পার্বত্য চট্রগ্রামের

প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পরিকল্পনায় ভারতপোষ্য

জেএসএস এর অংশিদারিত্বের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত

হওয়ার ফলে সরকার আপতকালীন মূহুর্তেও পার্বত্য

চট্রগ্রামে সেনা মোতায়েন করার

ক্ষমতা রাখবেনা। অন্যদিকে চুক্তি অনুযায়ী সকল

নিরাপত্তা ক্যাম্প উঠিয়ে নিলে পার্বত্য

চট্রগ্রামের ভুমি ও মানুষের উপর জেএসএস এর

পূর্ণাংগ কর্তৃত্ব্ব ও নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠিত হবে আর

সরকারের কর্তৃত্ব বিলুপ্ত হবে।

(১০) পার্বত্য চট্রগ্রামের সকল অফিস-আদালত

এবং শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর জন্য

উপজাতিদের অগ্রাধিকার মেনে নেয়া হয়েছে। এর

ফলে বাংগালিদেরকে শোষনের পথ উম্মুক্ত

করা হলো। চাকুরীর ক্ষেত্রে পার্বত্য

বাংগালিরা বর্তমানে চরম বৈষম্যের শিকার

হচ্ছে।

(১১) প্রায় ৩৫ হাজার পার্বত্য মানুষের

গণহত্যাকারী দেশোদ্রোহী শান্তিবাহিনীকে নগণ্য

সংখ্যক অকেজো অস্ত্র জমাদানের

বিনিময়ে সাধারন ক্ষমা প্রদর্শন করা হয়েছে।

হত্যা, অপহরন, ধর্ষন, চাঁদাবাজি, অগ্নিসংযোগ,

সশস্ত্র বিদ্রোহ ইত্যাদি জঘন্য অপরাধের

কারনে শুধুমাত্র বেকসুর দায়মুক্তিই মেলেনি,

জেএসএস পেয়েছে পুরো পার্বত্য চট্রগ্রামের

একচ্ছত্র কর্তৃত্ব আর জেএসএস এর প্রত্যেক সদস্য

লাভ করেছে নগদ ৫০ হাজার টাকা। দেশ

স্বাধীনকারী জাতির শ্রেষ্ট সন্তান বলে কথিত

মুক্তিযোদ্বারা অনাহারে ধুকে ধুকে মরলেও

তথাকথিত শান্তিবাহিনীর

সদস্যরা দেশোদ্রোহিতা এবং গণহত্যার

পুরুষ্কারস্বরুপ লাভ করেছে উপরোক্ত ৫০ হাজার

টাকা এবং সরকারী পুলিশ বাহিনীতে চাকুরী। এর

ফলে আমাদের ভবিষ্যত

প্রজন্মরা হয়তবা দেশরক্ষার্থে মুক্তিযোদ্বা হবার

পরিবর্তে শান্তিবাহিনীর মত

দেশোদ্রোহী হওয়াকে বেশি লাভজনক মনে করবে।

(১২) চুক্তির ফলে পার্বত্য চট্রগ্রামে সকল প্রকার

খাজনা আদায়ের মালিক আঞ্চলিক পরিষদ। আঞ্চলিক

পরিষদের হাতে পার্বত্য চট্রগ্রামের বাজেট

প্রণয়নের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। পার্বত্য

চট্রগ্রামে জাতীয় খনিজ সম্পদ উত্তোলনের জন্যও

আঞ্চলিক পরিষদকে খাজনা দিতে হবে। শুধু তা-ই

নয়, দেশী-বিদেশী যে কোন কোম্পানি কর্তৃক

পার্বত্য চট্রগ্রামে শিল্প-কারখানা স্থাপনের

জন্য অনুমোদন দেবার মালিক

বানানো হয়েছে আঞ্চলিক পরিষদকে।

এমনকি আঞ্চলিক পরিষদ বিদেশী যে-কোন উৎস্যের

কাছ থেকে অনুদান গ্রহন করতে পারবে বলেও

চুক্তিতে উলেখ।

(১৩) এভাবে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, আর্থিক,

সামাজিক প্রতিটি ক্ষেত্রেই উপজাতীয় শাসন

প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পার্বত্য চট্রগ্রাম নামক

দেশের এক-দশমাংশ এলাকায়। চুক্তির

ফলে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষেরই কোন

নাগরিকাধিকার পার্বত্য চট্রগ্রামে নেই।

চুক্তি করে দেশের মধ্যে দেশ (State within a

state) তৈরী করা হয়েছে। পার্বত্য চট্রগ্রামের

জনপ্রতিনিধি না হয়েও সন্তু লারমা জেএসএস

প্রধান হিসেবে আঞ্চলিক পরিষদের সর্বময়

ক্ষমতা অগণতান্ত্রিকাবে লাভ করে পার্বত্য

চট্রগ্রামে চাকমা শাসন জারী করেছে।

পার্বত্য চট্রগ্রামে সেনাবাহিনী কর্তৃক

বাস্তবায়িত উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রায় ৯৫%-ই

উপজাতিদের উন্নয়নের জন্য পরিচালিত। সন্ত্রাস

দমনের চেয়ে সেনাবাহিনী উপজাতিদের উন্নয়নেই

বেশী নিয়োযিত বলে ধারনা করা যেতে পারে।

সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে প্রতিটি উপজাতীয়

এলাকায় নির্মিত হয়েছে স্কুল-কলেজ, কিয়াংঘর,

উপজাতীয় ছাত্রাবাস, উপজেলা ও

জেলা পর্যায়ে উপজাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র

ইত্যাদি।

৫০% পার্বত্যবাসী বাংগালির জন্য কোন

সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং ছাত্রাবাস নির্মানের

প্রয়োজনীয়তা এযাবত কেউ অনুধাবন করেননি।

ফলে চরম বৈমাত্রেয় আচরনের শিকার পার্বত্য

বাংগালিদের অস্তিত্ব আজ বিপন্নের পর্যায়ে।

প্রতিবছর উপজাতীয় শিক্ষাকোটায় দ্বিতীয়

বিভাগধারীসহ ৩২৫ জন উপজাতি ছাত্র-

ছাত্রী ক্যাডেট কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়,

পলিটেকনিক্যাল কলেজ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়,

মেডিকেল কলেজ

ইত্যাদি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়, অথচ

পার্বত্যবাসী বাংগালি ছাত্র-

ছাত্রীদেরকে উচ্চশিখ্যার জন্য অনুরুপ সকল

সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ

সরকারী বৈষম্য নীতি দ্বারা পার্বত্য

বাংগালিদেরকে উপজাতিদের তুলনায় একটি নিকৃষ্ট

জাতি হিসেবে পরিগণিত

করা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে।

প্রাক্তন আওয়ামী সরকার কর্তৃক পার্বত্য

চুক্তি করে উপরোক্ত সকল একপক্ষীয় সুযোগ-

সুবিধা দেয়া হলেও জেএসএস নেতা সন্তু

লারমা এখনো দাবী তুলছে :

ক। সাড়ে তিন লক্ষ বাংগালি অধিবাসিকে পার্বত্য

চট্রগ্রাম থেকে সরিয়ে নেয়ার।

খ। পার্বত্য বাংগালিদেরকে ভোটার

তালিকা থেকে বাদ দেয়ার।

গ। সমস্ত নিরাপত্তা ক্যাম্প তুলে নেয়ার ।

ঘ। সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সেনা-অভিযান

পরিচালনা না করা ইত্যাদি।

উলেখ্য যে, চুক্তির পরও এযাবত প্রায় ৭০০ মানুষ

সন্তু লারমার সশস্র গ্রুপ ও প্রসিত-সঞ্চয়ের

সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়েছে। উপজাতীয়

সন্ত্রাসীরা অপহরন করেছে বিদেশীসহ প্রায়

১৩০০ জনকে। অপহরন করে মুক্তিপণ আদায়

এবং অস্ত্র দেখিয়ে চাঁদা আদায় এখন পার্বত্য

চট্রগ্রামের প্রাত্যহিক ঘটনা। অর্থাৎ, উপরোক্ত

দাবী এবং সশস্ত্র সন্ত্রাসের মাধ্যমে সন্তু

লারমা চুক্তিতে উলেখিত উপজাতীয়

এলাকা বা জুম্মল্যান্ড বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু আশ্চর্যের হলেও সত্য যে,

বিএনপি নির্বাচনী ম্যান্ডেটে চুক্তির

অসাংবিধানিক ধারাগুলো বাতিলের

প্রতিশ্রুতি দিলেও কোন আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়নি,

অন্যদিকে সরকারেরই নিয়ন্ত্রনাধীন

সেনাবাহিনী পরিচালিত অপারেশন উত্তরনের

মিশন- এ চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য অনুকুল পরিবেশ

সৃষ্টি করা - যা সত্যিই সেলুকাস।

পরিশেষে বলতে চাই,

ভারতবেষ্টিত পার্বত্য চট্রগ্রামের

নিরাপত্তা সংরক্ষনের জন্য সেখানে দেশের সকল

নাগরিকের পূর্ণ নাগরিকাধিকার

প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

পার্বত্য চট্রগ্রামে বসতি স্থাপন ও ভূমি ক্রয়-

বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সকল কালাকানুন বাতিল

করতে হবে।

ব্রিটিশ আমলের হিলট্র্যাক্টস ম্যানয়েল-১৯০০

বাতিল করতে হবে কেননা সেটি স্বাধীন

বাংলাদেশে প্রযোজ্য হতে পারেনা।

বিদেশী এজেন্ট সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন

চাকমা শাসনের অবসান করে গণতান্ত্রিক

প্রজাতন্ত্রের শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে।

আমাদের মনে রাখতে হবে যে, দ্রুতবর্ধমান ১৬

কোটি জনসংখ্যার ক্ষুদ্রায়তনের এ দেশের এক-

দশমাংশ এলাকা মাত্র ৬ লক্ষ উপজাতির জন্য

নির্দিষ্ট করে ছেড়ে দেয়া কোন বিচারেই

যুক্তিযুক্ত হতে পারেনা। তাই পার্বত্য

চট্রগ্রামে উপজাতি-বাংগালি ভেদাভেদ দূর

করে সকলের সম-অধিকার-ভিত্তিক শান্তিপূর্ন ও

সৌহার্দময় সহাবস্থান নিশ্চিত করা জাতীয়

স্বার্থের জন্য অত্যন্ত জরুরী।

বিষয়: বিবিধ

১১২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File