স্বার্থের প্ররোচনায় হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবন ও সংস্কৃতি

লিখেছেন লিখেছেন বাংলার মানব ২৪ মে, ২০১৩, ১১:৪৬:৩৮ সকাল

খাগড়াছড়ির

পার্বত্য

জেলা সদরের অদূরেই জাদুরামপাড়া গ্রাম । এ

গ্রামে মারিয়া হ্নদয়নামে একটি গির্জা রয়েছে যেটি ইন্দু

মোহন ত্রিপুরা পরিচালনা করে । ২০০৮ সালের ৩ জুলাই এ

এলাকায় ১৫০ পরিবারের মধ্যে ২৩ পরিবারই তাদের সনাতন

ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিষ্টান ধর্মগ্রহণ করার মধ্য

দিয়ে বাড়তে থাকে খ্রিস্ট্রান ধর্মের অনুসারী। দরিদ্রতা আর

অসচেতনতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাহাড়ে অতীতের

চেয়ে দ্বিগুণ হারে বেড়েছে খ্রিষ্টান সম্প্রসারণবাদের এই

নীরব কার্যক্রম। বিভিন্ন পরিসংখ্যান সুত্রে জানা গেছে, তিন

পার্বত্য জেলায় খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা এখন প্রায়

দেড় লাখ। রয়েছে তাদের ১২৪৮টি গির্জা বা উপাসনালয়।

এবং মুসলমানদের তিন জেলা মিলে মসজিদের সংখ্যা প্রায়

সাড়ে ষোলশত। গীর্জা আর মসজিদের এই পরিসংখ্যানই

প্রমাণ করে কত দ্রুত বেড়ে চলেছে খ্রিষ্টান

সম্প্রসারণবাদের কার্যক্রম।

পাহাড়ের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্টিদের

মাঝে প্রায়ই পারস্পারিক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা লক্ষ্য

করা গেলেও খ্রিষ্টান সম্প্রসারণের ফলে তাদের মূল ধর্মীয়

জনগোষ্ঠী যে হারিয়ে যাচ্ছে এটাতে তাদের কারো কোন

চিন্তা করতে দেখা যায় নি। খ্রিষ্টান ধর্মগ্রহণ

করলে সামাজিক নিরাপত্তার অভাব হবেনা এমন বিশ্বাস আর

স্বাবলম্বীতার লোভে পাল্টে যাচ্ছে পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-

গোষ্ঠীর বর্ণিল সংস্কৃতি। আর্থিক স্বচ্ছলতার

লোভে স্বকীয় সংস্কৃতি বর্জন করে খ্রিষ্টান ধর্মে দীক্ষিত

হচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ।

এতে করে পাহাড়ে তৈরী হতে পারে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ

ও অস্থিরতা। সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বার্থের প্ররোচনায়

বিলুপ্তির পথে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী।

প্রাথমিকদিকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ধর্মান্তরকরণের কাজ

চললেও শান্তিচুক্তি পরবর্তী সময়ে সংঘাত হ্রাসের পর

ব্যাপক সাহায্য সহযোগিতা পেয়ে উদ্বুদ্ধ হয় স্থানীয়

উপজাতীয়রা। এরসাথে যোগ হয় তাদের নেতৃস্থানীয়দের

প্ররোচণা। ভুমি ও সামাজিক নিরাপত্তার অজুহাতে পার্বত্য

চট্টগ্রামে পরিবর্তনের এই প্রক্রিয়ায়

রয়েছে সুদুরপ্রসারী রাজনৈতিক পরিকল্পনা। এমন বক্তব্য

পাওয়া গেছে তাদেরই নেতৃস্থানীয় কয়েকজন ব্যাক্তির মুখে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, পাহাড়ের বর্তমান

প্রেক্ষাপট অনুযায়ী উপজাতীয়দের খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ

করাই উচিৎ। কারণ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী হলে তাদের উপর

হামলা হয়না এবং তারা বেশী বেশী সাহায্য

সহযোগিতা পেয়ে থাকে। দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা গেছে এই

তথ্য।

খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিতদের মধ্যে ত্রিপুরার সংখ্যা কম

থাকলেও অধিকাংশই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছোট সম্প্রদায়ের

মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাদের নেতৃবৃন্দরা সামাজিক

নিরাপত্তা আর পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের

কথা বলে খ্রিষ্টান

সম্প্রসারণবাদকে কখনো প্রকাশ্যে আবার

কখনো গোপনে উদ্বুদ্ধ করে চলেছে। ফলে বিলুপ্তির

পথে চলেছে ছোট ছোট ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অনেক সম্প্রদায়।

পাহাড়ে পরিবর্তনের এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে এক সময়

বিলুপ্ত হয়ে যাবে বাংলাদেশের জাতিসত্ত্বার বৈচিত্র ও

বর্ণিল সংস্কৃতি আর ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার অস্তিত্ব।

পাশাপাশি পাহাড়ে তৈরী হতে পারে নতুন ধরনের রাজনৈতিক

অস্থিরতা।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন জনগোষ্ঠির মধ্যে কার্যক্রম

চালাছে ব্যাপ্টিস্ট, ইভানজেলিক, আমেরিকান ক্যাথলিক,

অষ্ট্রেলিয়ান ক্যাথলিক, রোমান ক্যাথলিক ও ক্যাথলিকদের

নানা সংগঠন। খ্রিষ্ট ধর্মীয় ভিন্ন ভিন্ন মতবাদের

মিশনারী থাকলেও তাদের সকলের কাজ ও উদ্দেশ্য একই

রকম। খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণকারীদের মিশনারীগুলোর

মাধ্যমে প্রথমে দুই বছর মেয়াদী ধর্মপ্রচার

বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় মিশনারীগুলোতে, এরপর মাসিক

বেতন ধার্য করে নিজ নিজ এলাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয় ধর্ম

প্রচারের জন্য। পাশাপাশি পরিবারের জন্য বিভিন্ন সুযোগ

সুবিধা দিয়ে স্বাবলম্বী করে দেয়া হয় ।

খাগড়াছড়িতে বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের

কার্যালয়ে গসপেল ফর এশিয়া’র অর্থায়নে চলছে এই

কার্যক্রম। এছাড়াও তিন পার্বত্য জেলার পাড়া ও

গায়ে রয়েছে তাদের নানাবিধ কার্যক্রম।

সঠিক নেতৃত্বের সংকট, রাজনৈতিক বিভ্রান্তি,

দরিদ্রতা আর স্বাবলম্বীতার লোভে নিজেদের ঐতিহ্য,

বর্ণিল সংস্কৃতি আর ধর্মকে বর্জন করছে এসব মানুষেরা।

রাজনৈতিক শক্তির মদদে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর

সংস্কৃতি বিনাশী এই নিরব কার্যক্রম চলছে পার্বত্য

চট্টগ্রামে গড়ে ওঠা খ্রিষ্টান মিশনারীগুলোর মাধ্যমে।

সহজশর্তে ঋণ, ছাত্র ও যুবকদের বিনা খরচে আবাসিক

সুযোগ সুবিধায় বিভিন্ন ট্রেডে কারিগরি প্রশিক্ষণ, বৃত্তি,

চাকুরী আর স্বাবলম্বী হওয়ার নিশ্চয়তার কারণেই খ্রিষ্ট

ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন শ্রেণীর

মানুষ। পাশাপাশি এই ধর্মের অনুসারীদের সানুগ্রহে প্রতিদিন

ধাবিত হচ্ছে তাদের নিকট প্রতিবেশীরাও। জীবন জীবিকায়

সাবলম্বী হলেও স্বকীয় সংস্কৃতি যে বিলুপ্তির পথে,

তা অনুধাবন করার সক্ষমতা নেই এদের অনেকেরই। তিন

পার্বত্য জেলার জেলা শহরসহ বিভিন্ন

অজপাড়া গায়ে দীর্ঘদিন ধরে নীরবে চলছে খ্রিষ্টান

সম্প্রসারণবাদের এই কার্যক্রম।

বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ খাগড়াছড়ি সদর শাখার

সাবেক সভাপতি সুখেন্দু বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, ধর্মীয় আচার

আচরণে ব্যাপক বৈপরিত্বের কারণে খুব সহজেই হারিয়ে যায়

খ্রীষ্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষ্টি ও

বর্ণিল সংস্কৃতি। তিনি বলেন যারা খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ

করেছে তারা এখন সনাতন ধর্ম অনুসারী ত্রিপুরাদের কাছ

থেকে অনেক দুরে। খ্রিষ্টীয় মতানুসারেই চলছে তাদের জীবন

জীবিকা।

পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর স্বকীয় পরিচয়,

ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষার নামে একশ্রেণীর সংঘবদ্ধ

নেতৃবৃন্দ আন্দোলন সংগ্রাম করলেও নিজ ঘরে অপসংস্কৃতির

মরণঘাতি খ্রিষ্টান সম্প্রসারণবাদের আগ্রাসন

প্রতিরোধে কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না।

বিষয়: বিবিধ

১৩৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File