বন্ধ্যা বঙ্গমাতা ও সীমান্ত হত্যা
লিখেছেন লিখেছেন চক্রবাক ০৬ জুন, ২০১৪, ০৭:২৬:৩৩ সকাল
দু’তিন ধরে সীমন্ত হত্যা নিয়ে তোড়জোড় দেখে আমিও না লিখে থাকতে পারলাম না। জাতীয়তা বোধ বলতে একটা কথা আছে না ? এত কাল ধরে হাতির লাত্থি খাইয়া বাঙ্গালীর চেতনা জাগে নাই তো, তাই তেলাপোকা আসছিল চেতনা জাগাইতে। কিন্তু পারল আর কই ? এই বারও চেতনায় আগুন জ্বলতে না দেইখা আমার মনে হচ্ছে, তেলে নিশ্চয়ই ভেজাল আছে, যেভাবে পেট্রল বোমা তৈরি হচ্ছিল তা অবদমনে তেলে ভেজাল মেশানোর অভিপ্রায় আর দমাইয়া রাখতে পারে নাই কিনা ? অবশেষে তাই বুমেরাং হয়ে উঠল। সীমান্ত নিয়ে কি আর কমু, আমরা যাই বলি না কেন তাই কেউ না কেউ আগে বলে গিয়েছে ! তাই পুরনো শকুনদের উক্তিগুলোকে মোডিফাই করতে হবে আরকি ! মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আমাদের এই নতঝানু (আসলে ঝানু আছে কিনা তা নিয়ে ব্যাপক শঙ্কা কাজ করছে) পররাষ্ট্রনীতি আমাকে খুব ব্যথিত করেছে। এই ব্যাপারে শুয়োরের খোয়ারের কোন শুয়োরকে গলাবাজি করতে না দেখে আমি সত্যিই বিস্মিত। জর্জ আরওয়েল বোধয় এখন বেঁচে থাকলে চরিত্রগুলোকে একটু ভিন্ন সত্তায় পরিবর্তিত করতেন। বন্ধ্যা মাতার কথা শুনে অনেকে হয়ত আতকে উঠতে পারেন, কিন্তু কি আর করা বলুন অক্ষমসন্তানের মাতা আমার কাছে বন্ধ্যা ছাড়া আর কিছুই না। যে সন্তানকে তার মাতা রক্ষা করতে পারে না সে মা হওয়ার অধিকার হারায়। বর্তমানে যেগুলো জন্ম দিচ্ছে সেগুলো পুঁজিবাদের রমরমা প্রোডাক্টের ধারক বাহক হিসেবেই গড়ে উঠছে।
সাম্প্রতিক মিয়ানমার ইস্যুঃ
ছবি ১
ছবি ২
ছবি ৩
বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে বিজিবি সদস্য নিহতের ঘটনায় আমরা কার্যত কোন প্রদক্ষেপই দেখি নাই। বরং বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের মুখপাত্রের দ্বায়সারা বক্তব্যে মিয়ানমারের বক্তব্য দেখে মুখ লুকানোর যায়গা খুঁজে পাচ্ছি না। মিয়ানমার টাইমস প্রকাশিত একটি খবর দেইখা আমি কি কমু বুঝতে পারছি না। খবরে বলা হয়েছে...
“ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা অনেকটাই দেশের ভিতরে গুম হয়ে যাওয়ার বা ক্রসফায়ারে মারার থেকেও নিম্নমানের সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। কিন্তু বিজিবির মিজানের হত্যার প্রতিক্রিয়ায় মায়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদুতের মুখপাত্রের বক্তব্য সত্যিই অপমান কর”
সেখানে আরও উল্লেখ করা হয়।
“There is no damage. This is a porous border. Sometimes these things can happen … We have regular meetings on [border security].”
অর্থাৎ এতে কোন ক্ষতি হয়নি, এটি একটি অরক্ষিত সীমান্ত। কখনও কখনও এমন হতে পারে। আমাদের নিয়মিত বৈঠক হয় (সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে)"
উপরের রিপোর্টটি দেখে আপনি হয়ত বুঝে গেছেন তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে কেমন ধারণা পোষণ করেন। তারপর দেশের এই নতঝানু অবস্থা ধারনাটিকে আরও বেশি পোক্ত করেছে। মিয়ানমার যখন বাংলাদেশ এবং ভারতের সীমান্ত নীতির দিকে ইঙ্গিত দিয়ে তাদের হত্যাকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করে, তখন আমাদের দেশের ভাবমূর্তিকে আমি একটি ভেজা বিড়াল হিসেবে কল্পনা করি।আমার মনে হয় কোন সরকার যখন জনগণের ম্যানডেট ছাড়া ক্ষমতায় বসে তখন তাদের পররাষ্ট্রনীতি এমনই হয়।
সীমান্ত ইস্যু এবং ভারতঃ
৬ মে, ১৯৭৪ সালে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত চুক্তি সাক্ষরিত হলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। বাংলাদেশের মোট সীমান্ত দৈর্ঘ্য ৫,১৩৮ কি.মি. এর মধ্যে ভারতের সাথে ৪,১৪৪ কি.মি এর মধ্যে অমীমাংসিত সীমান্ত হল ৬.৫ কি.মি. এই সীমান্ত এলাকায় ভারতের বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম আমাদের বিস্মিত করেছে, তার মধ্যে বিএসএফ এর হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, লুণ্ঠন প্রতিনিয়তই ঘটে থাকে কিন্তু সরকারের কার্যত কোন ভূমিকা দেখতে পাইনা। যার ফলে মিয়ানমারের মত দেশ বিজিবিকে হত্যা করতেও কুণ্ঠাবোধ করে না।
**গত ১২ বছরের সীমান্ত ক্রাইমের একটি চিত্র দেখুনঃ
২০০০- হত্যা ৩১ জন, গুলিতে আহত ১৭, অপহৃত ১০৬।
২০০১- হত্যা ৮৪ জন, আহত ২৪৪, অপহৃত ৫৫।
২০০২- হত্যা ৯৪ জন, আহত ৫৪, অপহৃত ১১৮।
২০০৩- হত্যা ২৭ জন, আহত ৮২, অপহৃত ১২০
২০০৪- হত্যা ৭২ জন , আহত ৩৫, অপহৃত ১৭।
২০০৫- হত্যা ৮৮ জন, আহত ৬৬, অপহৃত ৭৮।
২০০৬- হত্যা ১৫৫ জন, আহত ১৩৩, অপহৃত১৬০।
২০০৭- হত্যা ১১৮ জন, আহত ৮২, অপহৃত ৯২।
২০০৮- হত্যা ৬১ জন, আহত ৪৭, অপহৃত ৮১।
২০০৯- হত্যা ৯৮ জন, আহত ৭৭, অপহৃত ২৫।
২০১০- হত্যা ৭৪ জন, আহত ৮৩, অপহৃত ৪৩।
২০১১ হত্যা ৩১ জন, আহত ৫৫, অপহৃত ৬ ।
২০১২-হত্যা ৩৮ জন, আহত ১০০, অপহৃত ৭২।
২০১৩(আগস্ট-সেপ্টেম্বর)- হত্যা ২৫ জন, আহত ৫৭, অপহৃত ৬৮।
মোটঃ প্রায় তের বছরে মোট নিহতের সংখ্যা ১০৬৫ জন, আহতের সংখ্যা ১১৫৩ জন, অপহৃত ১১৭৭ জন।
(সূত্রঃ অধিকার)
সীমন্তে হত্যার তথাকথিত কারনঃ
*গরু চোরাচালানকারীদের অবৈধ অনুপ্রবেশ ।
*বাঙালীদের ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশ ।
*অস্ত্র/মাদকদ্রব্য চোরাচালান।
*বাণিজ্যিক পণ্য পাচার।
উপরের চারটি কারন যদি আমরা লক্ষ্য করি তাহলে দেখব, কাজ গুলোতে উভয়দেশের নাগরীকদের এতে সামঞ্জস্যতা আছে। আর এর জন্য পৃথিবীর কোন আইনে গুলি করে হত্যার নিয়ম নেই। যেখনে কাজগুলোর সাথে ভারতের নাগরিকরাও জড়িত আমরা সেখানে তাদের মৃত্যুর খবর সোনার কথা কিন্তু তা আধোও পাই না, তাই বলতে পারি বিষয়গুলো পরিকল্পনা মাফিক ঘটা।
সীমান্তে নিঃসংশ হত্যার কিছু চিত্রঃ
ছবি ১
ছবি ২
ছবি ৩
ছবি ৪
ছবি ৫
ছবি ৬
ছবি ৭
প্রতিবাদঃ
ছবি ১
ছবি ২
ছবি ৩
ছবি ৪
ছবি ৫
*** সীমান্ত হত্যা নিয়ে এত লেখা লেখির পর ক্রাইম কিছুতেই কমছে না, এগুলো আমাদের বিবেককে ধ্বংস করলেও ক্ষমতাসীনরা কর্ণপাত করছে না। ঘাতকরা দিন দিন আরও হিংস্র হয়ে উঠছে, আর তার ফলাফল ভোগ করছে কৃষক শ্রেণী, সীমান্তে গৃহহীন পরিবার গুলি, যাদেরকে বলির পাঁঠা হিসেবে ব্যবহার করছে ক্ষমতাসীনরা। না পারতে বাংলাদেশের চরম ব্যার্থ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বছরে একবার ভারতের সাথে চা খাওয়ার সৌজন্য সাক্ষাত করেন । ‘’ ভালো আছি , ভালো থাকবেন , আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখবেন ‘’ – এই জাতীয় কথাবার্তার মাধ্যমে তাদের সফল (?) সাক্ষাৎ সম্পন্ন হয় ।
আমাদের আকাঙ্ক্ষাঃ
যদিও আমাদের আশা আকাঙ্ক্ষাতে সরকারের কিছু আসে যায় না তবুও বলছি “আশা ছিল মনে মনে প্রেম করিব তোমার সনে, তোমায় নিয়ে ঘর বাঁধিব গহীন বালুর চরে ... গহীন বালুর চরে”
বিষয়: বিবিধ
১৮৭৮ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কতটা নির্লজ্জ,বেহায়া,অক্ষম সরকারের হাতে আমরা ক্ষমতা দিয়েছি সেটা আম জনতা মাথার চুল ছিড়ে ভেবে দেখুক...
পোষ্ট করার পর পরই।
তবে তখন কমেন্টস করা হয়নি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন