"বিশ্ব ইসলামী জাগরণে" ইরানের ইসলামী বিপ্লবের প্রভাব

লিখেছেন লিখেছেন চক্রবাক ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১২:২৯:৫৮ দুপুর



আমার ইরানের প্রতি আগ্রহ বাড়ে ইরানি জাতি সত্ত্বার ইস্প্রিট দেখে। সাম্রাজ্যবাদীদের মোকাবেলায় ওরা সব সময়ই সোচ্চার। আর ওরাই মুসলিম বিশ্বের প্রধান শত্রু আমেরিকাকে চিনতে পেরেছে। যার ফলশ্রুতিতে মুসলিম বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলছে ইরানিরা। আমার মনে হয় বর্তমানে শয়তান চেনাটা খুবই সহজ, সূত্র একটাই আমেরিকা যার বন্ধু তাঁর আর শয়তানের প্রয়োজন হয় না। আমাদের (মুসলিম) কাছে ইউএস এর প্রধান পরিচয় হওয়া উচিত এ ভাবে, আমরা যেহেতু ইস্প্রিচুয়াল সেহেতু ওদের মত ম্যাটারিয়ালিস্টিকরা বস্তুগত ইন্টারেস্ট দিয়ে আমাদের দমাতে পারবে না, সেক্ষেত্রে ওদের কাইটেরইয়া হবে কার্লচারাল এগ্রেসন (তবে সমাজতান্ত্রিকরা বিষয়টিকে বস্তুগত ইন্টারেস্টই মনে করেন, কারণ তারাও কান্ট মতাদর্শে বস্তুকেই ভিত্তি করে চলে)এই এগ্রেসন দিয়েই আমাদের দমাতে চাইবে। তো আমেরিকা আমাদের কাছে ইপ্রিচুয়াল ইনেমি ছাড়া আর কিছুই না। আর এই শত্রুদের মোকাবেলায় আমাদের ইরানি বুদ্ধিজীবীদের দিকে তাকালে সত্যিই অবাক হই। তারা যেভাবে কান্ট,মার্কস,রাছেল,বেবারদের ক্রিটিক করেছে তা অবিশ্বাস্য। ইরানে ইসলামি বিপ্লবের মূল হোতা এই বুদ্ধিজীবীরাই যারা এক একজন ইসলামি বিপ্লবী নেতা, আর এই জন্যই এই জাতি আমাদের জন্য মডেল...

যুগে যুগে ভিবিন্ন দেশে বিপ্লবের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে ইরান,কথা না বাড়িয়ে মূল কথায় আসি।

বিশ্ব ইসলামি জাগরণে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের অবদান...

ইরানের ইসলামী বিপ্লব বিশ্বের বঞ্চিত ও নিপীড়িত মানুষের জন্য বয়ে এনেছে আশার এক অফুরন্ত বন্যা। এ যেন আর্ত মানবতার পক্ষে জেগে ওঠা এমন এক ধূমকেতু যা একে একে পুড়িয়ে দেয় ইবলিস বা শয়তানদের সব পাখা। এ বিপ্লবের বিজয় ঘটিয়েছে অন্যায় ও অবিচারের অমানিশা-বিদারী আলোর এক দীর্ঘস্থায়ী বিস্ফোরণ। তাই এ বিপ্লবের সুদূরপ্রসারী ও তাতক্ষণিক প্রভাবের কথা ভেবে পেন্টাগন আর ক্রেমলিনসহ তাগুতি আর সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর প্রাসাদগুলো প্রকম্পিত হয়েছে। মজলুম জাতিগুলোর ওপর এতদিনের প্রবল কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ও ইসলামী জাগরণের জোয়ারের অনিবার্যতার কথা ভেবে হারাম হয়ে গেছে তাদের ঘুম।

ইমাম খোমেনী (র.)’র নেতৃত্বে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের বিজয় ঘটায় টাইম ম্যাগাজিন এক নিবন্ধে মন্তব্য করে যে, গোটা মুসলিম উম্মাহ জেগে উঠছে। বিশেষ করে বিশ্বের উত্তপ্ত কড়াই হিসেবে বিবেচিত মধ্যপ্রাচ্যের জনগণ ইরানের ইসলামী বিপ্লবকে ব্যাপকভাবে স্বাগত জানায়।

মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং তা ধরে রাখা ছিল সব সময়ই উপনিবেশবাদী আর সাম্রাজ্যবাদীদের দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ। ১৮৩০ সালে তিউনিশিয়ায় ফ্রান্সের দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা, ১৮৮১ সালে মিশরে ব্রিটিশদের হামলা ও পরের বছর তা দখল করা, হানাদার ফরাসি সেনাদের হাতে মরোক্কোর পতন এবং ১৯১২ সালে লিবিয়ায় ইতালির দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠাই এর বড় প্রমাণ। এখনও পাশ্চাত্য ভূ-কৌশলগত গুরুত্বের কারণে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাকে তাদের উঠান হিসেবে ধরে রাখতে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ। দুঃখজনকভাবে বিশ্বের জ্বালানী শক্তির প্রধান উতস হিসেবে বিবেচিত মধ্যপ্রাচ্যের তেল-সমৃদ্ধ আরব দেশগুলোর ওপর এখনও অক্টোপাসের মত কর্তৃত্ব ধরে রেখেছে আমেরিকা ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা।

উপনিবেশবাদী শক্তিগুলো সব সময়ই মুসলিম বিশ্বকে ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত করে শাসন করতে চেয়েছে। ওয়াহাবি, কাদিয়ানি ও বাহাই মতবাদ সৃষ্টি ছিল তাদের এই ষড়যন্ত্রেরই অন্যতম অংশ। এইসব গ্রুপের সহায়তাসহ মগজ-ধোলাই করা জাতীয়তাবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী মুসলিম দালাল গোষ্ঠীর সহায়তায় ওসমানি খেলাফতভুক্ত সাম্রাজ্যকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করার মাধ্যমে তারা তাদের সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করে। আর এই সুযোগে ১৯৪৮ সালে তারা প্রতিষ্ঠা করে মধ্যপ্রাচ্যের বিষ-বৃক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা অবৈধ রাষ্ট্র ইহুদিবাদী ইসরাইল। একের পর এক এতসব বিপর্যয়ের শিকার মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানরা অপেক্ষার প্রহর গুনছিল যে কখন পরিস্থিতি আবারও তাদের অনুকূলে আসবে এবং হতাশার কালো মেঘ কেটে গিয়ে মুসলিম জাহানে আবার কখন জেগে উঠবে আশার প্রদীপ্ত সূর্য। ইরানে ইসলামী বিপ্লবের বিজয় তাদের মধ্যে ফিরিয়ে আনলো এই আত্মবিশ্বাস যে, প্রতিরোধ ও জাগরণের পথ ধরে তারাও হতে পারেন বিজয়ী। ফিলিস্তিনের ইন্তিফাদা জাগরণ এবং হিজবুল্লাহ, হামাস ও ইসলামী জিহাদের উত্থান এই বিশ্বাস আর প্রেরণারই সুফল।

সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে যুব প্রজন্মের ইসলামী জাগরণকেও ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সুদূরপ্রসারী প্রভাবের ফল হিসেবে দেখা যায়। বিশেষ করে মিশর ও তিউনিসিয়ার ইসলামী জাগরণের সঙ্গে ইরানের ইসলামী বিপ্লবী প্রবণতার কিছু মিল লক্ষণীয়। দৃষ্টান্ত হিসেবে এইসব আন্দোলনের গণমুখীতা ও তাতে যুব প্রজন্মের এবং এমনকি নারী সমাজের ব্যাপক অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করা যায়। ইরানের বিপ্লবী মুসলমানদের মত তারাও কঠোরভাবে মার্কিন ও ইহুদিবাদী আধিপত্যের বিরোধী।

আসলে বিপ্লব-পূর্ব ইরানের মত মধ্যপ্রাচ্যের এইসব দেশেও পশ্চিমাদের বেধে দেয়া শেকলগুলো ভাঙ্গার কাজ শুরু করেছে জনগণ। স্বৈরতান্ত্রিক, রাজতান্ত্রিক, পর-নির্ভর ও পশ্চিমাদের ক্রীড়নক বা সেবাদাস সরকার তারা আর চায় না। মিশর ও তিউনিশিয়ার বিপ্লবী মুসলিম জনগণ এক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করায় এ অঞ্চলে পশ্চিমাদের প্রভুত্ব মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তাই ইসলামী ইরানের বিরুদ্ধে তারা যে ধরনের অন্তহীন শত্রুতা শুরু করেছে ঠিক সেভাবেই তারা এইসব ইসলামী জাগরণের বিরুদ্ধেও অশেষ শত্রুতা করে যাচ্ছে।

তবে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান ইসলামী জাগরণের পার্থক্য হল এটা যে, মিশর ও তিউনিশিয়ার ইসলামী জাগরণ এখনও পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের পথে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ, শত্রুর পেতে রাখা ফাঁদ ও বিচ্যুতির জটিল বেড়াজাল। অন্যদিকে ইরানের ইসলামী বিপ্লব সবচেয়ে কঠিন বা বড় বিপদগুলো অতিক্রম করে এসেছে। এই বিপ্লবের সাম্রাজ্যবাদ আর ইহুদিবাদ বিরোধী চরিত্র ও ন্যায়কামীতা দেশে দেশে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলে সামাজিক পরিবর্তন বা বিপ্লবের স্ফুলিঙ্গ তৈরিতে সহায়তা করছে। ফলে এ অঞ্চলের জনগণও এখন মানুষের মর্যাদা, স্বাধীনতা ও ইসলামী আত্মপরিচিতি ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন করছেন। ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে মার্কিন ও ইহুদিবাদী সরকার। ইরানের ধর্মভিত্তিক গণতান্ত্রিক আদর্শ যাতে মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামী জাগরণের ওপর প্রভাব ফেলতে না পারে সে জন্য তারা চলমান এই জাগরণকে ইসলামী জাগরণ না বলে একে আরব বসন্ত বলে উল্লেখ করছে।

সভ্যতাগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব তত্ত্বের প্রণেতা মার্কিন তাত্ত্বিক হান্টিংটন ১৯৯৩ সালে বলেছিলেন, রাজনৈতিক ইসলাম অনুপ্রেরণা পেয়েছে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের কাছ থেকে। তিনি বলেছেন, যে ইসলাম নিজেকে পাশ্চাত্যের প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করে তা মার্কিন বিশ্ব-ব্যবস্থার জন্য প্রধান বিপদ। কারণ, মার্কিন বিশ্ব-ব্যবস্থা অনুযায়ী ধর্ম ও রাজনীতি পৃথক থাকতে হবে।

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারকামীতা প্রতিষ্ঠার সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। এ ছাড়াও এ বিপ্লব পশ্চিমা আদর্শ ও মন-মানসিকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়। এই বিপ্লব এই বাস্তবতাও তুলে ধরেছে যে, ইসলাম ও জিহাদ হল সমস্যাগুলো সমাধানের প্রধান পথ। এ বিপ্লব সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের চেতনা ছড়িয়ে দিয়েছে মুসলিম বিশ্বে।

বিষয়: বিবিধ

১৩২২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

173024
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:০৯
126997
চক্রবাক লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।Good Luck
173308
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:০৬
আলোর আভা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ ।
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:০৯
126998
চক্রবাক লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।Good Luck
174275
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪১
আবু আশফাক লিখেছেন : বরাবরের মতোই সুন্দর। অনেক ধন্যবাদ
বি.দ্র. বানানের ক্ষেত্রে আরো একটু সিরিয়াস হলে আরো শ্রুতিমধুর হতো বলেই আমার বিশ্বাস।
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:৩৪
127702
চক্রবাক লিখেছেন : ধন্যবাদ।। Happy আমি আমার যেকোনো পোস্ট থেকেই শুল্কঅশুল্ক বাঁধা তুলে নিয়েছি, সেক্ষেত্রে মতামত গ্রহণ বাঞ্ছনীয়। অব্র ইউজ করি তো তাই কিছু শব্দ লিখা আমার জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। বাঁকিটা গুরুচণ্ডালী দোষ। Praying Praying

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File