জয়বাংলা কোন দেশ?
লিখেছেন লিখেছেন আবদুল হাদি ০২ জানুয়ারি, ২০১৪, ০২:১১:৩৬ রাত
স্টাফ রিপোর্টার : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেছেন, জয়বাংলা শ্লোগানটা আমি বুঝি না। জয়বাংলা কোন দেশ? আমার দেশ হলো বাংলাদেশ; আপনি ‘জয় বাংলাদেশ বলেন’। ৭১ সালে আমরা পাকিস্তানের বিরোধী অবস্থানে থেকে ‘জয়বাংলা’ বলেছি। এখন তো বাংলাদেশ হয়ে গেছে। এগুলো চালাকি করা হচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ যখন মার্কিন কূটনৈতিককে বলে, ‘এটা আমাদের অঞ্চল এলাকার ভালোমন্দ আমরাই বুঝি।’ তখন কোথায় থাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? আজকে জামায়াতে ইসলামের ভয় দেখায়, পাকিস্তানের ভয় দেখায়।এগুলো বলে দেশকে একটি সিভিল ওয়ারের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। দেশে এখনো শান্তি আনা যায়। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে। গত বুধবার চ্যানেল আই এ টকশো তৃতীয় মাত্রায় তিনি এসব কথা বলেন। জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় এ টকশোতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মাহবুবুল আলমও আলোচনায় অংশ নেন।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, নির্বাচন কোনো সমঝোতার বিষয় নয়। এটি জনগণের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। ভোটের ব্যাপার। কিন্তু এটাকে মনে হচ্ছে দুই নেত্রীর মধ্যে সমঝোতা এবং আপোসের ব্যাপার, এটা হতে পারে না। আমার ভোট, আপনার ভোট এবং নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী কিভাবে একটি নির্বাচিত সরকার পাওয়া যায় সেজন্যই কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংগ্রাম চলে আসছে। এই সংগ্রামটি কাম্য নয়, হওয়ারও দরকার ছিল না। এখানে সরকারের নিজেরই চিন্তা করা উচিৎ ছিল, কারণ সরকারও নির্বাচিত সরকার। তিনি বলেন, বিগত বছরে সমগ্র জাতিকে অনেক দুঃশ্চিন্তার মধ্যে কাটাতে হয়েছে। অবরোধ, হরতাল আমাদের জীবনকে দুর্বিসহ করেছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৩ বছর। এতদিন পরে নির্বাচন নিয়ে সংকট হওয়া উচিৎ ছিল না। এমন একটা বিষয় নিয়ে এই সংঘাত সংঘর্ষ চলছে যেটি কোন দলীয় বিষয় নয়। বিরোধী দল যেমন নির্বাচিত, সরকারও তেমন নির্বাচিত। সেই হিসেবে সরকারেরও দায়িত্ব জনগণ যাতে সঠিকভাবে, স্বাধীনভাবে, ভয়ভীতি মুক্তভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। আমি খুবই হতাশাগ্রস্ত, এটা নিয়ে কেন সরকারের সাথে বিরোধী দলের যুদ্ধ, সংঘাত হতে হবে। এটা তো জনগণের ভোটের অধিকার। সকলের কাছে গ্রহণীয় নির্বাচনকালীন সরকারের নাম কি হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাকি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেটা নিয়ে তো যুদ্ধ করার কিছু নেই। এই হিংসাবিদ্বেষের কারণে কতগুলো মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। এটা আমাদের দেশের ভাবমর্যাদা মারাত্মকভাবে নষ্ট করেছে। ভোটাভুটির প্রশ্নে এত লোকের মৃত্যু হবে, এটা হতে পারে না। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। যারা বড় বড় শিল্পের মালিক তারা হাহাকার করছেন। গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা অনেকে বলেছেন, তাদের নিজেদেরকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। একটা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটা জাতি এতটা অসহায় হবে কেন? সংঘাত, রক্তপাত খুবই দুঃখজনক। কিন্তু আমি মনে করি সামনের বছরটি ভালো যাবে, এটি আমি আশা করছি। অনুষ্ঠানে মাহবুবুল আলম একই প্রসঙ্গে বলেন, বছরের শুরুটা একটা শঙ্কার মধ্য দিয়েই শুরু হচ্ছে। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি যদিও এই শুভেচ্ছাটি সাধারণ শুভেচ্ছার মধ্যে পড়ছে না। ২০১৩ সালটি আমরা সংঘাত বিদ্বেষের মধ্য দিয়ে পার করছি। দুঃখজনক হলেও সত্যি ২০১৪ সালের শুরুর দিনটিও একটি অবরোধের মধ্যে শুরু করছি। এটা জাতির জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক এবং সাধারণ মানুষের জন্য তো বটেই। আমাদের দেশে আইন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিন্তু দক্ষ লোকের অভাব নেই। সবাই মিলেমিশে একটা সমাধান খুঁজে বের তো করতেই হবে, এভাবে তো চলতে পারে না। একটা দেশ এভাবে নিচের দিকে যাবে এবং যেতেই থাকবে এটা কোনো দেশেও হয় না। সেটা ভেবেও ২০১৪ সালের অবস্থা দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে ভালো হতে হবে। রাষ্ট্রদূতরা যে কথাবার্তা বলছেন সেটি থেকে একটা ব্যাপার বের হয়ে আসছে, কথা বলার অধিকার গণতান্ত্রিক অধিকার এগুলোকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ইংল্যান্ডের কথা আমরা বলতে পারি, সেখানে বিরোধী দলও সরকারের একটি ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশে আমরা যদি সেটা ভেবে দেখি তাহলে বিরোধী দলের একটি বিশাল দায়িত্ব রয়ে গিয়েছে। দায়িত্ব যাতে পালন করতে পারে এবং তারাও যাতে পালন করে সেই ব্যবস্থাও করতে হবে। কয়েকদিন আগে নেলসন ম্যান্ডেলা মারা যাওয়ার পর আমরা শোকসভা এবং অনেক কিছু করেছি সেখানেও একটা কথা উঠে এসেছে, জনগণের নিজেকে তুলে ধরার অধিকার। ম্যান্ডেলা ২৭ বছর জেলে ছিলেন। কিন্তু ২৭ বছর পরে ক্লার্কের সাথে কথা বলেই কিন্তু স্বাধীনতার ছকটি তৈরি করেন। একটি আপসের ব্যাপার ছিল সেখানে। একটা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে এটা করতে হবে। ম্যান্ডেলাও জনগণের কথা বলার অধিকারের কথা বলেছেন। এটা গণতন্ত্রের একটা অংশ। বিরোধী দলের নেত্রী যদি অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকে, তাহলে একরকম হবে বাইরে আসলে আরেক রকম হওয়ার কথা। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, প্রত্যেকে যেন প্রত্যেকের ভূমিকা সঠিকভাবে পালন করতে পারে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের একটি বিরাট ভূমিকা রয়েছে এখানে, কারণ তারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত। মন্ত্রীরা বলেছেন নির্বাচনের পরে আরো কঠোর আচরণ করা হবে। এ প্রেক্ষিতে প্রবীণ সাংবাদিক মাহবুবুল আলম বলেন, কোনও কোনও মন্ত্রী বলেছেন নির্বাচন হয়ে যাক তারপর আরেকটা নির্বাচন আমরা দেব, যদি বিরোধী দল খুশি হয়। রাজনীতিবিদদের ট্রেনিং এর প্রয়োজন আছে। আয়ুব খান যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করে তখন পাকিস্তানের একজন সিনিয়র বিচারক বলেছিলেন রাজনীতি কোন বিমান নয় যে এয়ারপোর্টে গিয়ে বিমানে উঠলেই কেউ রাজনীতিবিদ হয়ে যাবে। তবে অন্যান্য পেশা থেকে এসেও অনেকে ভালো রাজনীতিবিদ হয়েছেন। রাজনীতিবিদদের মধ্যে টলারেন্স যদি না থাকে তাহলে তাহলে গণতন্ত্রকে আত্মস্থ করতে পারে না। একজন নেতার এই গুণ থাকা অবশ্যম্ভাবী। আজকে বাংলাদেশের প্রধান দুইটি জোট যদি টলারেন্স দেখায় একে অপরকে সম্মান করে তাহলে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলোকে অনুসরণ করে তাহলে আমাদের আর পিছিয়ে পড়তে হবে না। আমরা কিন্তু শেষ একটা পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছি। আমাদের মারামারি হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে। আমাদের আর কোন উপায় নেই এখন, এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে এবং এর জন্য গণতান্ত্রিক চর্চার বিকল্প নেই। সুপ্রিম কোর্ট, প্রেসক্লাব, নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, দুদক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গুলো রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত হয়ে গেছে। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা যাবে কিনা। সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, ঐতিহাসিক দুর্ঘটনার ফলে আমরা যে নেতৃত্ব পেয়েছি। দুর্ভাগ্য যে আমরা যারা শিক্ষিত সচেতন লোক তাদের সাহায্য করতে পারিনি এবং তারাও আমাদের সাহায্য নেয়নি। দুই নেত্রী আলোচনায় বসলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। দুই নেত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমি বলব, এ সমস্যার সমাধান দেয়ার মতো অভিজ্ঞতা, শিক্ষা, ট্রেনিং কিছুই তাদের নেই। আমাদের সাহায্য তাদের দরকার কিন্তু এখানে চাটুকার, দুর্নীতিবাজরা যে ভাষায় কথা বলে সেটা ভাবতে খুব খারাপ লাগে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা যার একটি রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড আছে, তিনি বলতে পারেন না যে আমি এক ইঞ্চি এখান থেকে নড়বো না। কারণ দেশ কারো সম্পত্তি নয়। দেশের স্বার্থে এক ইঞ্চি কেন, আরো বেশি নড়তে হতে পারে। দুর্ভাগ্যজনক হলো এই দুই নেত্রীর আশপাশে যে সমস্ত লোক আছে তারাই এর জন্য দায়ী। তারাই সরকার চালাচ্ছে, কমিশন ভাগাভাগি করছে। কারো কারো কথা শুনলে মনে হয় প্রধানমন্ত্রী কে, তিনি নাকি শেখ হাসিনা? তারা বলছে, ‘সব ঠিক আছে, কঠোর আবস্থান নেয়া হবে’। কার বিরুদ্ধে কঠোর হবেন, এদেশের মানুষের বিরুদ্ধে কঠোর হবেন, এটা কি পাকিস্তান? ওনারা বলেন এটা পাকিস্তান হয়ে যাচ্ছে এবং লড়াইটা সেখানেই। সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে মইনুল বলেন, বাংলাদেশ কখনো ভারতের কোন রাজ্য হবে না। বাংলাদেশ কখনো পাকিস্তানও হবে না। একটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধ তো সবাই মিলে করেছি। এখন এর মধ্যে নিয়ে আসছে নিয়ে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আর বিপক্ষের শক্তি। সিভিল ওয়ার সৃষ্টি করার একটা বুদ্ধি। যারা শুধু ভারত চলে গেছে তারাই শুধু মুক্তিযুদ্ধ করেছিলো? মারা গেলাম আমরা এখন তারা হয়ে গেল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা! তারা বাংলাদেশ রক্ষা করতে পারবে নাকি, দেশরক্ষা করবে দেশের জনগণ। এটা মুসলিম কান্ট্রি, মুসলিম হিসেবেই টিকে থাকবে। যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের বিচার ভিন্ন জিনিস। এটা আমাদের সবার ব্যাপার, হাসিনা বা খালেদার কোন ব্যাপার নয়। তারপরও এটা দলীয়ভাবে যদি কেউ স্বার্থসিদ্ধি করে তাহলে জনগণ সেটায় বাধা দিবে। এই মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে আপনি জামায়াতকে আনছেন। ৪২ বছর ধরে যারা এদেশে রাজনীতি করে আসছে, তাদের টেনে আনছেন। এ সমস্ত ইস্যু তো নির্বাচনের ইস্যু নয়। এভাবে বোঝানো হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যদি সৃষ্টি করা যায় তাহলে সবাই আওয়ামী লীগের পিছনে জড়ো হয়ে যায়।
সূত্রৎইনকিলাব
বিষয়: বিবিধ
১৯১৯ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন