মানষ ২
লিখেছেন লিখেছেন আবদুল হাদি ২৬ জুলাই, ২০১৩, ০৭:১৭:৫৪ সকাল
মানুষ!যাকে সৃষ্টির সেরার মর্যাদা দিয়েছেন।এই সেরার মর্যাদা কি শুধু মানুষ হিসেবে জন্ম নেয়ার জন্যই?
এই মানুষ,অমানুষের মত কাজ করলে নামে নিচুদের থেকেও নিচেঃ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আলকোরানে(সুরা তীন-৩) বলেন,لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ অর্থাৎ আমি মানুষকে পয়দা করেছি সর্বোত্তম কাঠামোয় ৷মানুষকে সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করা হয়েছে , একথার মানে হচ্ছে এই যে তাকে , এমন উন্নত পর্যায়ের দৈহিক সৌষ্ঠব দান করা হয়েছে যা অন্য কোন প্রাণীকে দেয়া হয়নি। তাকে এমন উন্নত পর্যায়ের চিন্তা ,উপলব্দি জ্ঞান ও বুদ্ধি দান করা হয়েছে ,যা অন্য কোন সৃষ্টিকে দেয়া হয়নি।
ثُمَّ رَدَدْنَاهُ أَسْفَلَ سَافِلِين অর্থাৎ"তারপর তাকে উল্টো ফিরিয়ে নীচতমদেরও নীচে পৌঁছিয়ে দিয়েছি" সুরা তিন-৪ সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করার পর যখন মানুষ নিজের দৈহিক ও মানসিক শক্তিগুলোকে দুষ্কৃতির পথে ব্যবহার করে তখন আল্লাহ তাকে দুষ্কৃতিরই সুযোগ দান করেন এবং নিচের দিকে গড়িয়ে দিতে দিতে তাকে এমন নিম্নতম পর্যায়ে পৌঁছিয়ে দেন যে , অন্য কোন সৃষ্টি সেই পর্যায়ে নেমে যেতে পারে না। এটি একটি বাস্তব সত্য। মানুষের সমাজে সচরাচর এমনটি দেখা যায় । লোভ , লালসা , স্বার্থবাদিতা , কামান্ধতা , নেশাখোরী , নীচতা , ক্রোধ এবং এই ধরনের অন্যান্য বদ স্বভাব যেসব লোককে পেয়ে বসে তারা সত্যিই নৈতিক দিক দিয়ে নীচতমদেরও নীচে পৌঁছে যায়। দৃষ্টান্ত স্বরূপ শুধু মাত্র একটি কথাই ধরা যাক। একটি জাতি যখন অন্য জাতির প্রতি শত্রুতা পোষণ করার ব্যাপারে অন্ধ হয়ে যায় তখন সে হিংস্রতার দুনিয়ায় হিংস্র পশুদেরকে ও হার মানায়। একটি হিংস্র পশু কেবলমাত্র নিজের ক্ষুধার খাদ্য যোগাড় করার জন্য অন্য পশু শিকার করে। যে ব্যাপকভাবে পশুদের হত্যা করে চলে না। কিন্তু মানুষ নিজেই নিজের সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদেরকে ব্যাপকভাবে হত্যা করে চলছে। পশুরা কেবলমাত্র নিজেদের নখর ও দাঁত ব্যবহার করে শিকার করে। কিন্তু এই সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্ট মানুষ নিজের বুদ্ধির সাহায্যে বন্দুক , কামান , ট্যাংক , বিমান , আণবিক বোমা , উদজান বোমা এবং অন্যান্য অসংখ্য মারণান্ত্র তৈরী করেছে এবং সেগুলোর সাহায্যে মুহূর্তের মধ্যে সুবিশাল জনপদগুলো ধবংস করে দিচ্ছে। পশুরা কেবল আহত বা হত্যা করে । কিন্তু মানুষ নিজেদেরই মতো মানুষকে নির্যাতন করার জন্য এমন সব ভয়াবহ পদ্ধতি আবিস্কার করেছে যেগুলোর কথা পশুরা কোন দিন কল্পনাও করতে পারে না। তারপর নিজেদের শত্রুতা ও প্রতিশোধ স্পৃহা চরিতার্থ করার জন্য তারা নীচতার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যায় । দুনিয়ায় পশুদের মধ্যেও এমন কোন হিংস্রতম গোষ্ঠী নেই যাদের বর্বরতাকে কোন পর্যায়ে মানুষদের এই বর্বরতার সাথে তুলনা করা যেতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থা চিন্তা করুন,যারা শাষন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত তারা ৪২ বছরের পুরোনো একটি নন ইস্যুকে ইস্যু বানিয়ে আলেম ওলামাদের হেনস্থা করছে।প্রতিবাদী জনতার উপর গনহত্যা চালাচ্ছে এমনকি জুডিশিয়াল কিলিং এর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে,যা অত্যান্ত নেক্কারজনক জুলুম ও অন্যায়।
মানুষর কাজ কি এট ছিলো?????????
মানুষ যেন সুপথে থাকে তাই আল্লাহ রাব্বুল সুরা ইনফিতরে বলেন....
يَا أَيُّهَا الْإِنسَانُ مَا غَرَّكَ بِرَبِّكَ الْكَرِيمِ(ইনফিতর-৬) হে মানুষ ! কোন জিনিষ তোমাকে তোমার মহান রবের ব্যাপারে ধোঁকায় ফেলে রেখেছে ,
الَّذِي خَلَقَكَ فَسَوَّاكَ فَعَدَلَكَ(ইনফিতর-৭) যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন , তোমাকে সুঠাম ও সুসামঞ্জস্য করে গড়েছেন
.
মানুষকে কেন সৃষ্টি কবেছেন???
মানুষ সৃষ্টির প্রাক্কালে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ফেরেস্তাদের বলেন,إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً “আমি পৃথিবীতে একজন খলীফা- প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে চাই ৷”আর প্রতিনিধির কাজ কি হবে তাও পবিত্র কোরআনে বলে দিয়েছেন,
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ﴾আয যারিয়াত-৫৬) "জিন ও মানুষকে আমি শুধু এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার দাসত্ব করবে"৷
অর্থাৎ আমি তাদেরকে অন্য কারো দাসত্বের জন্য নয় আমার নিজের দাসত্বের জন্য সৃষ্টি করেছি । তারা আমার দাসত্ব করবে এ জন্য যে, আমি তাদের স্রষ্টা । যখন অন্য কেউ তাদের সৃষ্টি করেনি তখন তার দাসত্ব করার কি অধিকার এদের আছে৷ তাছাড়া তাদের জন্য এটা কি করে বৈধ হতে পারে যে, এদের স্রষ্টা আমি অথচ এরা দাসত্ব করবে অন্যদের! (আল্লাহর দাসত্ব মানে ইসলামের মধ্যে অনুগত থাকাas a complete code of life)
এখানে প্রশ্ন দেখা দেয় যে, আল্লাহ তা'আলা শুধু জিন ও মানুষের স্রষ্টা নন । তিনি সমগ্র বিশ্ব-জাহান ও তাঁর প্রতিটি জিনিসের স্রষ্টা । কিন্তু এখানে কেবল জিন ও মানুষ সম্পর্কে কেন বলা হয়েছে যে, আমি তাদেকে আমার ছাড়া আর কারো দাসত্বের জন্য সৃষ্টি করিনি৷ অথচ গোটা সৃষ্টির প্রতিটি অণু-পরমাণু শুধু আল্লাহর দাসত্বের জন্য । এর জবাব হচ্ছে পৃথিবীতে জিন ও মানুষই শুধু সৃস্টি যাদের স্বাধীনতা আছে । তারা তাদের ক্ষমতা ও ইখতিয়ারের গন্ডির মধ্যে আল্লাহ তা'আলার দাসত্ব করতে চাইলে কিংবা তাঁর দাসত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে চাইলে নেবে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যদের দাসত্ব করতে চাইলেও করতে পারে । জিন ও মানুষ ছাড়া এ পৃথিবীতে আর যত সৃষ্টি আছে তাদের এ ধরনের কোন স্বাধীনতা নেই । তাদের আদৌ কোন ক্ষমতা ও ইখতিয়ার নেই যে, তারা আল্লাহর দাসত্ব করবে না অন্য কারো দাসত্ব করতে পারবে । তাই এখানে শুধু জিন ও মানুষ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা তাদের ক্ষমতা ও ইখতিয়ারের গণ্ডির মধ্যে তাদের নিজ স্রষ্টার আনুগত্য ও দাসত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে এবং স্রষ্টা ছাড়া অন্যদের দাসত্ব করে নিজেরা নিজেদের স্বভাব প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে । তাদের জানা উচিত যে, তাদেরকে একমাত্র স্রষ্টা ছাড়া আর কারো দাসত্বের জন্য সৃষ্টি করা হয়নি । তাদের সোজা পথ হচ্ছে যে স্বাধীনতা তাদেরকে দেয়া হয়েছে তার অন্যায় ব্যবহার যেন না করে ।
এ আয়াতে 'ইবাদত' শব্দটিকে শুধু নামায রোযা এবং এ ধরনের অন্যান্য ইবাদত অর্থে ব্যবহার করা হয়নি । তাই কেউ এর এ অর্থ গ্রহণ করতে পারে না যে জিন ও মানুষকে শুধু নামায পড়া রোযা রাখা এবং তাসবীহ তাহলীল করার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে । এ অর্থটিও এর মধ্যে শামিল আছে বটে, তবে এটা তার পূর্ণাংগ অর্থ নয় । এর পূর্ণাংগ অর্থ হচ্ছে, জিন ও মানুষকে আল্লাহ ছাড়া অন্যের পূজা আনুগত্য আদেশ পালন ও বিনীত প্রার্থনার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি । অন্য কারো সামনে নত হওয়া, অন্য কারো নির্দেশ পালন করা , অন্য কাউকে ভয় করা, অন্য কারো রচিত দীন বা আদর্শের অনুসরণ করা অন্য কাউকে নিজের ভাগ্যের নিয়ন্তা মনে করা এবং অন্য কোন সত্তার কাছে প্রার্থনার জন্য হাত বাড়ানোর তাদের কাজ নয় ।
কোরআনে আরো বলা হয়েছে... كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ "তোমরা সেই সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি,যাদেরকে সমগ্র মানুষের কল্যানের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে।তোমাদের কাজ এই যে,তোমরা সকল মানুষকে ন্যায় কাজের আদেশ করবে, সকল অন্যায় কাজ থেকে মানুষকে
ফিরাবে এবং আল্লাহর প্রতি মজবুতভাবে ঈমান রাখবে।" সুরা আলে ইমরান-১১০
তাহলে আমরা জানতে পারলাম মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহর ইবাদতের জন্য তথা খেলাফতের দায়ীত্ব পালনের জন্য।প্রত্যেকের উচিৎ এ দায়ীত্ব আন্জামের মাধ্যমে জীবন অতিবাহিত করা।এ দায়ীত্ব পালনই মানুষকে সৃষ্টির সেরায় স্থান দেবে আর এ ক্ষেত্রে যারা যতো বেশি অবহেলা
করবে বা বাধা দিবে তার অবস্থান তত নিচ থেকে নিচে যাবে।
আসুন আমরা সবাই সৃষ্টির সেরা হিসেবে নিজেদের দায়ীত্ব পালন করি।
বিষয়: বিবিধ
১১৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন