....পৃথিবীতে কে কাহার?
লিখেছেন লিখেছেন ঘোষণা কবি ২৭ মে, ২০১৩, ০৫:৫৩:০৬ বিকাল
অনুলিখক: কবি হুসাইন আজাদ
এই মনস্তাত্ত্বিক ভাবনার শেষটা কোথা?
কেন আমাকে এই ভাবনাগুলো দিনরাত যন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে?
দ্বিকবিদ্বিক কেবই ছুটছি তবু কিছুতেই মেন্টালি প্রেসারটা কমাতে পারছিনা! অসহ্য যন্ত্রণা উফ আর পারছিনা! ইশ্বর তুমি আমাকে একফোটা প্রশান্তির বৃষ্টি দাও! প্লিজ ইশ্বর! প্লিজ!
তুমি সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেছো! তোমার পুরো জগতটাকে তুমি এক প্ল্যাটফর্মে কুক্ষিগত নিয়ে এসেছো! সত্যিই তুমি পাগল হয়ে গেছো! কথাগুলো যদিও আমাকে উদ্দেশ্য করে একজন প্রায় বলতেন। আজ সে না বললেও আমি পুরোপুরি নিশ্চিত আমি সাময়িক মেন্টালি ডিজর্ডার!
এপ্রিল মাসের ত্রিশ তারিখ দিবাগত রাত অত:পর পহেলা মে মাসরে শুরু থেকে আজ এই মুহুর্ত পর্যন্ত আমি কি করছি আর কি করছি না কোথায় যাচ্ছি কোথায় হাঁটছি কোথায় খাচ্ছি কিংবা এখন কোথায় আছি তা কিছুতেই অনুমান করতে পারছিনা! এই চলমান ২৭ টি দিনে এমন কোনো ভূল নাই যা আমার দ্বারা সংঘটিত হয় নাই! সব সময় রুমের দরজা জানালা সব বন্ধ করে রাখি, কখনো নিজকে রক্তাক্ত আবার কখনো নিজের ওপর প্রচন্ড আঘাত! হয় এটা না হয় ওটা! কন্টিনিউ ঔষধ সেবন করে যাচ্ছি! তবু কিছুতেই নিজকে স্বাভাবিক করে তুলতে পারছিনা! চোখের আলো ক্ষীণ হয়ে কেমন জানি সব কিছু কুয়াশা কুয়াশা দেখছি! ঠান্ডা পানির ফিল্টারে ডিম সিদ্ধ দিয়ে কিছেন রুমে গিয়ে ডিমের সন্ধান করছি! পিচঢালা রাস্তা চলতে অহরহ হোঁছট খাচ্ছি। গত পরশু রাতে বাসায় এসে দেখি পায়ের একটা নখ উল্টে গিয়ে পুরো পা রক্তাক্ত! ডাক্তারের কাছ থেকে ২১৫ টাকার ঔষধ কিনে তাকে ৫০০টাকার একটা নোট দিয়ে বাকি টাকা ফেরত পাব কিনা তারও খবর নেই! যদিও একদিন পর ডাক্তার নিজ দায়িত্বেই বাকি টাকা ফেরত দিয়েছেন! গতরাতে বাসায় আসার সময় সিএনজি ড্রাইভারকে ১২০ টাকার ভাড়ার স্থলে ২০০ টাকা দিয়ে বিদায় দিলাম! সিএনজি চালক কিছুক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে থাকল! পরে চলে যেতে বললাম তাকে! জানি না লোকটি যেতে যেতে কি ভেবেছে! মজার বিষয় হলো ৫০ টাকার ফ্লেক্সিলোড করতে গিয়ে আমি নাকি দোকানিকে ৫ টাকা দিয়ে চলে এসেছি! বাহ যখন দোকানি আমাকে বলছিল শুনতে ভালেই লাগছিল! তার কথা অবিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই পরে পুরো টাকাটাই তাকে ফেরত দিলাম! গত ৩ দিন আগে আমার এক কাছের বসকে কথা দিয়েছিলাম একটা অনুষ্ঠানে অ্যাটেন্ড করব! বেমালুম ভূলে গিয়েছিলাম! সকাল বেলা ১১ বার ফোন দেওয়ার পর আমার ঘুম ভাঙল! তিনি জানতে চাইলেন তুমি কই আসতে কতক্ষণ লাগবে? আমি তার কথা শুনে তো পুরো ব্যাবাছ্যাকায় পড়ে গেলাম। অথচ সে নাকি গত রাতেও আমাকে ফোন দিয়ে কনফার্ম বোধটা এতটাই নির্বোধ হয়ে গিয়েছে যে শরীরের অভ্যান্তরে কি ঘটছে তার খবর রাখাটা তার জন্য দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে! পুরোটাই আত্মভোলা! অনেকটা সহে নিয়েছে মনে হয়। তবু কেন এতটাই বেসামাল!
সর্বশেষ আজ গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজে বসের সাথে অফিসে দেখা করতে গেলাম! কয়েকজন বিজ্ঞাপন ক্লাইন্ডদের সাথে কয়েকটা চুক্তি সাক্ষরিত হলো! আমি নির্বোধ মনে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলাম! কিছুই বললাম না! কেউ একজন জানতে চাইল কি ভাই এবার খুশি তো? মাথা নাড়ালাম! চুক্তিপত্রে সাইন করতে কাজগপত্র এগিয়ে দিল! নিজ নামের সাক্ষরিত স্থলে অন্যজনের নাম অ্যাটেস্ট করে দিলাম! ক্লাইন্ডম্যানরা বিষয়টি ধরতে না পারলেও বস কিন্তু ঠিকই ধরে ফেলেছে! ক্লাইন্ডম্যানরা চলে যাওয়ার পর রাগের মাথায় তীর নিক্ষেপ করে বসল আমার দিকে! কি হচ্ছে এসব? মস্তিস্ক ঠিক আছে তো? আমি বললাম না! মস্তিস্কবিকৃত হয়ে গেছে! আসলে ওনি জ্ঞানী মানুষ তাই বুঝতে ওনার বিন্দুমাত্র কষ্ট হয়নি। বরং সাথে নিয়ে গেলেন হোটেলে নাস্তা করতে! সবশেষে বাসায় ফিরে আসলাম! পকেটে মানি ব্যাগ নেই! ভাবলাম হ্যাইজাক হয়েছে! কিন্তু কিভাবে আসলাম তো অফিসের গাড়িতে! বসকে একটা ফোন দিব মোবাইল খুঁজছি! ও মাই গড! মোবাইল কি করলাম? পুরো রুম তল্লাশি দিয়ে দেখলাম কোথাও সাড়া শব্দ নেই! তাহলে কোথায় গেল? দোকানে চা খেলাম সেখানে নাকি অন্য কোথাও? খাটের সাথে হেলান দিয়ে দু’চোখ বন্ধ করে আত্মমগ্ন হলাম! এর মাঝে ঘুম চলে এল! ঘন্টা খানেক পর কে যেন দরজায় কলিং বেল বেজে ওঠল! ঘুম ঘুম চোখে দরজা খূললাম! কে দাঁড়িয়ে আমার দরজায়? আমার বস নাকি স্বপ্ন দেখছি? আওয়াজ আসল এই ব্যাটা কি হয়েছে তোর? দুনিয়ার কোনো খোঁজ খবর আছে? আমতো আমতো করে চোখ মুচছি! হ্যাঁ ঠিকই তো আমার প্রিয় মানুষটি! যাকে আমি বস মানি! কিছুক্ষণ পর হাত বাড়ালেন আমার দিকে! মানি ব্যাগ, মোবাইল দু’টা, চশমা, ক্লাইন্ডের সাক্ষরিত অফিসিয়াল গুরুত্বপূর্ণ ফাইলটি আমার দিকে এগিয়ে দিলেন! এই প্রথম তিনি আমার বাসার দরজায় ধুলো দিলেন! বসকে ভিতরে আসতে বললাম আসেননি! একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে মোহাম্মদপুর যাওয়ার পথে তিনি আমার বাসায় ধুলো দিয়ে গেলেন! শুধু যাওয়ার সময় বলে গেলেন ‘তৃষ্ণায় কাতর মন-পৃথিবীতে কে কাহার-কে জানে জন্মান্ধই কীনা! নিজেকে সামলাও! (Safety first)
আমি জানি না আমার সম্পর্কে বসের মনে কি ধারণা জন্মালো আর কিসের ই বা ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছিলেন! যাক সে দিকে না যাই! আজকের সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বস আমাকে ঋণী করে গেলেন!
...তাই বসের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা!
বিষয়: বিবিধ
২০৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন