মেঘকণ্যা অহনার নীল আকাশ!
লিখেছেন লিখেছেন ঘোষণা কবি ১৯ মে, ২০১৩, ০২:৪৬:০২ দুপুর
লিখক: অহনা
শিল্পি ফাহমিদা নবীর গানের এই অন্তরাটি যখন সুরে সুরে রিদমের তাল তুলে তখন অবেচেতন মনে কেবল সুর আনন্দে শুনে যাই। গানের কথাগুলোর মর্মার্থ পুরোপুরি ভেবে দেখেনি কভূ। কিন্তু আজ কেন জানি এই গানটির প্রতিটি অন্তরা আমাকে বেশ ভাবিয়েছে। ধন্যবাদ ফাহমিদা আপুকে!
‘একটু যদি তাকাও তুমি মেঘ গুলো হয় সোনা-
আকাশ খুলে বসে আছি তা কেনো দেখছোনা?
একই আকাশ মাথার ওপর এক কেনো ভাবছোনা?
আকাশ খুলে বসে আছি তা কেনো দেখছোনা?
আমি তোমাকে বেশ চিনে ফেলছি এতদিনে। এখন থেকে তুমি আর শুধু বৃষ্টি নয় আকাশের মেঘবতী মেঘকণ্যাও বটে। আমি জেনে গেছি তুমি বড্ডো অভিমানী! আমাকে কুয়াশার ছায়ায় ঘিরে রাখতে বেশি ভালবাস! সারাক্ষণ অধ্যায়ন ছাড়া তুমি কিছুই বুঝ না। এমনকি আমাকেও তুমি ভুলে যাও যখন তুমি তোমার পড়ায় মনোনিবেশ কর। আসলে এটা তোমার দোষ না বরং গুণ। তোমার পরীক্ষার আকাশে কতটা মেঘ জমিয়ে ফেলছো গত কয়দিনে তা তুমি অনুমান না করতে পারলেও আমার বুঝতে কষ্ট হয়নি বিন্দুমাত্র। আদর-ভালবাসা দিয়ে সেই পরীক্ষার আকাশে জমানো মেঘ সরিয়ে দিব তো দূরের কথা। উল্টো তোমার আকাশের সেই জমানো মেঘ আমাকে আচ্ছাদিত করে ফেলছে। তাই নিজকে না গুটিয়ে এখন তোমার মেঘের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতে গিয়ে আজ আমি ছিটকে পড়েছি তোমার আকাশ থেকে কিছুটা দূরে। এখন মেঘে মেঘে হয়ে যাচ্ছে মেঘকণ্যার মৃদু-সংঘর্ষ। তোমার সকল ভাবনার গভীরতায় নিজকে বিমোহিত করে আজ তোমার আকাশ আমাকে ঢেকে ফেলছে। আকাশের ওপর ঠিক বাড়ি বেধে ফেলছি নাকি মেঘের ওপর বাস করতে শুরু করেছি সেটা কেবল তুমি ই ভাল জানো। আমি ভূলে যাই নি সে কথা যে, মেঘকণ্যার সাথে এক আকাশে উড়তে গেলে ক্ষণে ক্ষণে বজ্রপাত তো হবেই! ছিটকে আমি পড়েনি তবে হাল ধরে রেখেছি খুব শক্ত করে! যখন তুমি তোমার পরশমাখা হাতে আদরে আমায় কাছে টানো তখন ঠিক মনে হয় তোমার মন আকাশের সকল মেঘ কেটে গেছে। আচ্ছা, সত্যিই কী কেটে গেছে? যখন দূরে সরিয়ে দাও তখন মনে হয় না এখনো মেঘ কাটেনি। পরীক্ষাটা কাটবে কখন সেটা তুমি জানো কিন্তু আমি জানি না। কারণ তুমি বলেছিলে তোমার পরীক্ষার পর আমাকে বিস্তর সময় দিবে! ভেবেছিলাম ডেটটা আরো পিছিয়ে দিব? কিন্তু না পিছাতে হয়নি তুমি নিজকে নিজেই যখন পিছিয়ে নিয়েছ! সেখানে পরীক্ষাটা পিছিয়ে তাকে কষ্ট দিব! কথা ছিল তোমার প্রতিটি পরীক্ষার দিন অন্তত আমি একবার তোমাকে দেখতে যাব, ঠিক তাও না তোমাকে নিয়ে আসতে যাব! আজ তোমাকে নিয়ে আসতে হয়নি। অনেক অসুস্থ ছিলে বুঝি! দেখা হয়নি নাকি দেখা দাও নি। আমার কি দেখতে ইচ্ছে করেনি একটুও? শুধু একমিনিট কিংবা ক্ষণিক অথবা এক সেকেন্ড! তবু দু’জনে অসস্তির মাঝেও একটু সান্তনা পেতাম! নাহ আজ আর তা হয়নি। তোমার পুরো আকাশ আজ মেঘে ঢাকা! আমার মনের ক্যানভাসটা খুব ফাঁকাই ছিল! সারাদিন ভারাক্রান্ত মনে বাসায় বসে অপেক্ষা করছিলাম তুমি বলবে কিংবা একটা ফোন দিয়ে জানাবে ‘এই শুনছো’ কোথায় তুমি? আসবেনা? একটু আসনা প্লিজ! অপেক্ষার প্রহর শেষে আমি তোমাকে ফোন দিলাম! কিন্তু কিছু বলবে তো জানাবে তো দূরের কথা একটি বার ফোনটাও রিসিভ করো নি! নিজের মনকে কিছুতেই বুঝাতে পারছিনা। তবু নিজকে সান্তনা দিলাম এই বলে হয়তো বেশ অস্বস্তি অনভূব করছো তাই বাসায় ফিরে ফোন দিবে! কিছু একটা তো বলবে! কিন্তু রাতে যখন ফোন দিয়ে আমাকে আবারো শুনতে হয়েছে তুমি খুব অসুস্থ সত্যি সৃষ্টিকর্তার ওপর প্রচন্ড রাগ উঠেছিল! গুরুত্বপূর্ণ সময়টা যে তিনি কেন বুঝতে পারেন না তাও বুঝতে ছিনা! যাক অশান্তমনে নিদারুণভাবে নিজকে সান্তনা দিয়ে আবার ফিরে আসছি সেই নীল আকাশে! কি হবে পুরো আকাশটাই এখন অজোরে কেঁদে দিবে। এরচেয়ে মেঘযুক্ত আকাশটাই ভাল, অন্ধকারে ঢেকে থাক পুরো ক্যানভাস। পরে না হয় আকাশ বিদ্যুতের আলোয় মুখরিত করে চমকে দিও, কিংবা শীতালক্ষ্যা নদীর পাড়ে, অথবা তাজমহলের পাদে বসে জোৎস্নার মোমোহিত সংস্পর্শে জানিয়ে দিও ‘আমি তো তোমারই ছিলাম’ ক্ষণিক ডুব দিয়েছে বলে কি দোষ দিবে আমায়?! না দোষ দিব কেন! তোমার মাঝেও যে আমি ডুব দিয়েছি! তোমার পরীক্ষা প্রহর কেটে নীল আকাশে রক্তিম জবা ফুঁটে ওঠুক। আবার তুমি সুস্থ হয়ে আমার আকাশে ফিরে এসো এই কামনায় আমাকে ভাবায় প্রতিটি সেকেন্ড!
অহনা নামটি আমি তোমাকে কেন দিয়েছি জানো? ঊষায়ে আঘাত হানতে পার বলে। দিনের প্রারম্ভে উজ্জ্বল নক্ষত্রকে ম্লান করে তোমার ঊষাতে বৃষ্টিতে ভেজাতে পারবে বলে। আমার খুব পছন্দের নাম ছিল এটা। তোমার আরো দুটো কি জানি নাম ছিল, অন্যেরা তোমাকে সেই নামেই চেনে। আমি কিন্তু কখনোই তোমাকে সেই নামে ডাকিনি। বৃষ্টি স্রোতে ভেসে যাওয়ার কার বা ইচ্ছে আছে বল? আমিও তেমনি হারিয়ে যেতে চাইনা। আজো চাই না তবে তুমি কেন হারাতে চাচ্ছ? আজ তোমাকে কেন মেঘবতী না ডেকে মেঘকণ্যা ডেকেছি জানো? মেঘকণ্যা হয়ে মেঘবতীর কান্না যখই তুমি শুনতে পাবে, তখনি তুমি আবেগআপ্লুতমনে জড়িয়ে ধরো! তোমার যখনই ইচ্ছে হবে মেঘের ওপর থেকে পিসপিস শব্দ করে একটা ডাক দিও আর আমি বজ্রবেগে তোমার পানে ছুটে যাব। আর তখনই তোমাকে মেঘবতী বলে ডাক দিব। কারণ আমার জানা আছে মেঘকণ্যা যেমন পুরো আকাশকে ঢেকে দিতে পারে তেমনি আবার লাভাকাটিয়ে নতুন আলোর সঞ্চালন করারও ক্ষমতা রাখে। আমি এখনো ভাবি নিজের মনের অজান্তে এতটা চাপ সামলিয়ে নানা বিভোরতার মাঝেও তুমি আমাকে খুঁজে বেড়াবে সেই তোমার নীল আকাশে। উষ্ম আবেগে তুমি চুপি চুপি আমন্ত্রণ করবে তোমার মেঘের উপর খেলতে। সত্যিই তুমি মেঘকণ্যা। ভাববার আকাশ তোমার বিশাল। তবে ছোট কেন করে ফেলছো আজ? জানো তো ছোট আকাশ না আমার ভাল লাগেনা। আমার সুবিশাল আকাশে উড়ে বেড়াতে ভাল লাগে। তুমি হয়তো এখনো তোমার নীল আকাশে আমাকে নিয়ে উড়ে বেড়ানোর স্বপ্নে বিভোর। আমার ভাবতেই ভাল লাগে তুমি সত্যিই মেঘকণ্যা ও তবে কেন শুনছ না মেঘের কান্না! আমাকে ভাসাও যেমন আবার ঢেকে দাও তোমার মনের মত করে।
মেঘের যে অনেক রঙ সেটা তুমি বেশ করেই জানো। অবাক হলে বুঝি! শরতের আকাশে মেঘগুলো থাকে সাদা, শুভ্র- ঠিক তূলোর মত, আষাঢ় ও শ্রাবণে সেই মেঘই আবার কখনো ধূসর, কখনো বা কালো, আবার গোধূলি বেলায় সেই মেঘই রূপছে লাল ধারণ করে, কমলা, হলুদ, সোনালী আর নীলাভ বর্ণের অপরূপ মিশ্রণ। তুমি নিশ্চয়ই আকাশে এমন সব মেঘের রঙ মেঘের ভেলায় ভাসতে দেখছ। জানো আমি আজো দেখেনি মেঘের এত রঙ তবে তোমাকে দেখেছি সত্য আকাশের ওই নীল মেঘমালায় মেঘকণ্যা হয়ে ঘুরে বেড়াতে। আর মনে মনে ভাবছি তোমার আকাশে না উড়লে, মেঘকণ্যার নীল আকাশে ঘুরে না বেড়ালে হয়তো এই জগতটাই আমাকে ধিক্কার দিবে। কত সুন্দর তুমি, কত বর্ণিল সাজে সেজেছো আজ তুমি! কত মায়াবিনী তুমি, সৃষ্টির অপূর্ব সৃষ্টি তুমি! তবু ভাল লাগে তোমার সাথে চলতে, মিশতে কিংবা উড়তে, তোমার আকাশে ঘুরতে! হোক না তুমি কিছুটা সময় বিরহে রেখেছো! তোমার বিরহবিমূখতা আমাকে উদাস করে তুলে ক্ষণে ক্ষণে। আমি নিজকে ধাবিয়ে রাখতে পারি না কেবল ছুটে যাই তোমার দুয়ারে। মাঝে মাঝে প্রচন্ড রাগের মাথায় তুমি বলে দাও তোমাকে ভূলে যেতে কিংবা প্রচন্ড ঘৃণা করতে! কিন্তু কি করে ভূলে যাব বলো? ঘৃণা আমি কাকে করব? তোমাকে না আমাকে? কারণ তোমাকে ঘৃণা করলে যে সেই ঘৃণা আমাকেই কুরে কুরে খাবে। কারণ আমি তোমাকে আর আমাকে একই রক্ত মাংশে গড়া দুটি মানবাত্মার একই কেন্দ্রবিন্দুর একই আত্মাস্থল বলে যে মানি। তুমি তো সবই জানো যার সাথে কারো দেহ আত্মার কোনো সম্পর্ক নাই হয়তো সে ভূলে যেতে পারে কিন্তু তোমার আর আমার মাঝে তো চুল পরিমান পার্থক্যটাও আমি খুঁজে পাই না। তাহলে কেন তুমি আমার নিসঙ্গতাটাকে আজো বুঝতে পার না। আমি তো তোমার বিরহবিমূখতা খুব ভাল করেই বুঝি। সকাল দুপুর কিংবা সন্ধ্যা আকাশের নীলে ভর করে মুক্ত বিহঙ্গের মতো আমায় ডাকো তোমার তোমার নীল আকাশের রঙিন ভূবনে। তোমার মনের আকাশে এক টুকরো মেঘ হয়ে তোমার নীল মেঘের ছবিই তোমারই তুলতুলে ঠোঁটে এঁকে দিয়েছি। বার বার প্রতিবার, চোখে নয়- তোমার অন্তরের দৃষ্টিতেই আমি তোমার নীল আকাশের অন্তরস্থলে পদ্ম হয়ে ভাসি। তাই তো আজ দু’জন ঘর বেঁধেছি নীল আকাশের নীড়ে। ক্ষণিক পরপর তুমি সুখ-বিরহ মিলিয়ে আমাকে জড়িয়ে রেখো তোমার বুকের নীল চাদরে! যেন এক চাঁদে হয় হাজার জোৎস্নার মিলন! না! হাত ছেড়ে দিওনা কভূ বরং শক্ত করে ধরে রেখ! কারণ তোমার হাতটিই যে আমার আত্মার হাত!
বিষয়: বিবিধ
৪১০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন