এর চেয়ে পরম সুখ আর কি হতে পারে?

লিখেছেন লিখেছেন ঘোষণা কবি ১০ মে, ২০১৩, ১২:৫৯:৩৯ রাত



মানুষকে বরাবরই ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। দার্শনিক হবসের দর্শনে মানুষকে তিনি স্বতন্ত্র ব্যক্তির রূপ দিয়েছেন। যে মানুষটি অন্য দশজন থেকে আলাদা। জ্যামিতিকহারে সে কেবল তাকেই গুরুত্ব দিবে। অন্য দশজন মানুষের কথা সে কেবল শুনবে দায় সারানোর জন্য। তবে তার সর্বোপূরি বিবেচনা থাকবে কেবল তাকে নিয়ে। কানায় বাবু ডাকঢোল পিটাচ্ছে সে রহিত বাবুর কানে সেই ঢোলের আওয়াজ ভেসে আসছে এখন দেখার বিষয় রহিত বাবু ঢোলের তালে সায় দেয় নাকি তীব্র মনোবেদনার কষাঘাতে ঢোলকে ফাঁটিয়ে দেয় তা একান্তই তার নিজস্ব ব্যক্তিসত্ত্বা বলে দিবে। হবস’র ধারণা অনুসারে আমাদের দেহের ওপর বিভিন্নসময় জড়বস্তুর নানা চাপের কারণে সংবেদনের সৃষ্টি হয়, তাই বলে কি জীবনের রঙ, গন্ধ, স্বাদ, আনন্দ, উপভোগের মতো বস্তুগুলো হারিয়ে যাবে? জড়বস্তু কিংবা অন্যের চাপ সৃষ্টিতে যে পরিবর্তন আমাদের মাঝে সংবেদনের ধারা সৃষ্টি করে তা তেমন আহামরি কিছুই নয় বরং এটাই জীবনের গতি। গতির সূত্র আবিষ্কৃত হওয়ার পরপরই মনোবিজ্ঞানের মতে আমাদের জীবনকে আমরা নতুন করে সাজিয়ে নিতে শিখেছি। বিভিন্ন জনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরণের বিরূপ চাপ আমাদের জীবনের ওপর ন্যস্ত হতে পারে তবে এরূপ বিরূপ প্রভাবে নিজকে বিপদগ্রস্থ কিংবা নিজকে বিচলিত না করে বরং স্বতন্ত্ররূপে নিজকে আলাদা করে করে সেই চাপকে তীব্র গতিতে তরান্বিত করে নিজের অদম্য গতিকে মনের গভীর থেকে জাগিয়ে তুলে নব উদ্যমে নিজকে সাজিয়ে নেওয়ায় হলো চাপের ধারাপ্রবাহ। বিচলিত হওয়ার কারণ নেই এটা কেবল ক্ষীয়মাণ সংবেদন! নিজের ওপর নিজের বিশ্বাসটাই অক্ষেয়। আমরা যেমন নিদ্রায় স্বপ্ন দেখি তেমনি কল্পনাও হচ্ছে এক ধরণের নিদ্রাজনিত স্বপ্ন। কেউ আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখল আর আমি অন্যকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি তার মানে এই নয় কেউ বাস্তবতার স্বপ্ন দেখলে তার সে বাস্তবতাকে নিদ্রাজনিত স্বপ্ন বলে ধাবিয়ে দেওয়া ধারনা পোষণ করতে হবে। জ্যামিতিক হারে যোগ বিয়োগ ও বাস্তবতার সন্ধিক্ষণে অলীক বিশ্বাসে নিজকে সেই বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে নেওয়ায় হলো বাস্তব স্বপ্নের ভবিষ্যদ্বাণী। নানা চাপের মধ্যে নিজের প্রবল অনুরাগ নিয়ে চাপকে গতিতে পরিণত করে পাউরুটির মতো ফুলিয়ে প্যাকেজজাত করে নিজের ফর্মূলার তাপ বিকরণে নিজের ওপর গতির গুণ প্রয়োগ করাই হলো বাস্তবতার সন্ধিক্ষণ। হবস এই জন্যই অন্যের চাপকে গতিতে রূপ দিয়ে নিজের ওপর অলীক বিশ্বাসের বাস্তব রূপ ফুটিয়ে তুলতে গুরুত্ব দিয়েছেন। ঝেড়ে ফেল বিষন্নতা। ভূলে যাও কারো দেওয়া ক্ষণিক সুখের কল্পকাহিনী। কেউ বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গির বিকরণের মিথ্যা আলোতে আমাকে ভাসিয়ে দিতে ছেড়েছিল তার মানে কি তার সেই ক্ষণিক প্রেততা আমার জীবনকে রাহুগ্রাস করে ফেলছে? মোটেই না! ক্ষণিক পাওয়া যে সুখ আমাকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার প্রবণতা আমার মাঝে সৃষ্টি করেছিল কি প্রয়োজন পড়তে পারে সেই অলীক ক্ষনিস্থায়ী অলীক সুখের? তার সেই ক্ষণিকালের মিথ্যা আলোতে তো আমি আমার ভবিষ্যতকে মাটি চাপা দিতে পারি না। বরং ভূলে গিয়ে নতুন উদ্যমে জ্যামিতিক হারে আমার মতো সাজিয়ে নিব আমার বাস্তবতার সন্ধিক্ষণকে। দশের কথায় কি আসে যায়? বলতে থাকুক তারা শুনতে থাকি আমি! আমার জীবনের একান্ত বিষয়টি তাদের বিবেনায় রাখা উচিৎ নয় কি? কেবল স্বার্থপরের মতো নিজেদের সুখের কথা বিবেচনা করলেই কি হবে? নাকি আমার বিষয়টিও তাদের মাথায় রাখতে হবে? ও এবার বুঝেছি! আমার সুখের কথা আমাকেই ভাবতে হবে! আমি আমার স্বতন্ত্র অদম্যকে প্রাধান্য দিয়ে সবার চাপকে গতিতে রূপ দিয়ে নতুন করে হাঁটব স্বর্গপানে। এতে যেমন আমার জীবন রাঙিয়ে যাবে তেমনি সর্গীয় সূখ আমাকে হাত ছানি দিয়ে ডাকবে। এর চেয়ে পরম সুখ আর কি হতে পারে?

(দার্শনিক হবসের লেভিয়াথান দর্শন অনুসারে অনুদিত)

বিষয়: বিবিধ

১৩৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File