গুঁড়ো দুধের কথা

লিখেছেন লিখেছেন নিশান শাহীন ২৮ জানুয়ারি, ২০১৪, ০১:২৪:৩৬ দুপুর



মানুষের দেহ, মন ও মস্তিষ্কের উপযুক্ত বিকাশের জন্য সুষম খাদ্যগ্রহণ খুব জরুরি। দুধ একটি সুষম খাদ্য। কারণ দেহের প্রয়োজনীয় সব উপাদান এর মধ্যে আছে। এজন্য দুধকে বলা হয় আদর্শ খাবার। তবে তরল দুধের পাশাপাশি বাজারে গুঁড়ো দুধও পাওয়া যায়। গুঁড়ো দুধ তৈরি করা হয় তরল দুধ বাষ্পায়িতের মাধ্যমে শুষ্ক করে। এটির বিশেষ সুবিধা হলো, বিশেষ ধরনের প্যাকেটে আবদ্ধ করে সংরণ করা যায় সহজেই। নিম্ন আর্দ্রতাসম্পন্ন এ দুধ হিমাঙ্ক বা ফ্রিজিং ছাড়াই সাধারণ তাপমাত্রায় বহুদিন রাখা যায় এবং আয়তন কমে যায় বলে পরিবহনেও সুবিধা হয়। তবে গুঁড়ো দুধ উদ্ভাবনের আগে সাধারণ তরল দুধকে রোদে শুকিয়ে ঘন পেস্টের মতো করা হতো। এভাবে এটি কিছুদিন ভালো রাখা যেত। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ডেনমার্ক এবং সুইজারল্যান্ডে উৎপন্ন হতো প্রচুর পরিমাণে দুধ। তাদের চাহিদা পূরণের পর তা বিশেষ প্রক্রিয়ায় শুষ্ক আকারে গুঁড়ো দুধে রূপান্তর করত এবং অন্যান্য দেশে রফতানি করত। টিএস গ্রিমওয়েডই প্রথম উপযুক্ত বাণিজ্যিক প্রক্রিয়ায় শুষ্ক দুধ তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। ১৮৫৫ সালে তিনি এ কাজের স্বীকৃতিও পান। যদিও তার আগে ১৮৩৭ সালে উইলিয়াস নিউটন গুঁড়ো দুধ তৈরির ভ্যাকুয়াম ড্রাইং প্রসেস উদ্ভাবনের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছিলেন।

গুঁড়ো দুধ সাধারণত নন-ফ্যাট স্কিম মিল্ক অথবা পূর্ণ ননী যুক্ত দুধ হিসেবে স্প্রে ড্রাইং পদ্ধতিতে তৈরি হয়। ফরাসি রসায়নবিদ লুই পাস্তুরের পদ্ধতি অনুযায়ী তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করে দুধকে তরল অবস্থা থেকে ৫০ ভাগ ঘন অবস্থায় আনা হয়। এরপর একটি উত্তপ্ত চেম্বারের মধ্যে নিয়ে এই ঘন দুধের পানিকে বাষ্পায়িত করে পাউডারের মতো প্রায় শুষ্ক অবস্থায় আনা হয়।

গুঁড়ো দুধের সঙ্গে মিশ্রিত থাকে অ্যামাইনো এসিড, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। আদর্শ মাত্রা অনুসারে এ দুগ্ধজাত পণ্যের সঙ্গে শতকরা হিসাব অনুযায়ী ৩৬ ভাগ প্রোটিন, ৫২ ভাগ কার্বোহাইড্রেট, ১.৩ ভাগ ক্যালসিয়াম, ১.৮ ভাগ পটাশিয়াম এবং অন্যান্য উপাদান থাকে। বিশ্বের বেশকিছু প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে গুঁড়ো দুধ উৎপাদন করে। বিস্কুটের মতো শুকনো খাবার ছাড়াও কেক, পেস্ট্রি, চকোলেটসহ গোলাপ জাম, চমচম, রসগোল্ল, সন্দেশ প্রভৃতি মিষ্টিজাতীয় খাবার তৈরিতে গুঁড়ো দুধের ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। এছাড়া বাড়িতে চা, ক্ষীর, পায়েশ ইত্যাদি তৈরিতেও এ দুধ ব্যবহার হয়। এক কাপ গুঁড়ো দুধের সঙ্গে তিন কাপ পানি মিশিয়ে তরলে রূপান্তর করে সাধারণ দুধের মতোই পান করা যায়। আমরা বলে থাকি ‘মাছে-ভাতে বাঙালি'। প্রচলিত এ উক্তির সঙ্গে বলা যায় আমরা সবাই পরিচিত। অতীতেও আমাদের দেশে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারের ব্যাপক প্রচলন ছিল। কথিত আছে, বাংলাদেশের মানুষ দুধ দিয়ে ৬ হাজার ৬৩৬ প্রকারের খাবার তৈরি করতে জানত। এ থেকেই অতীতে আমাদের দেশে দুধের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

বিষয়: বিবিধ

১৫৩৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

168899
২৮ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০১:৩৩
প্রিন্সিপাল লিখেছেন : ভালো লাগলো
৩১ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১২
124766
নিশান শাহীন লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ।Winking

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File