মানুষ কাঁদে কেন

লিখেছেন লিখেছেন নিশান শাহীন ২৬ অক্টোবর, ২০১৩, ০৯:৪৭:২৬ রাত



আসলেই তো, মানুষ কাঁদে কেন? এ তো ভীষণ জটিল প্রশ্ন। তার আগে আমার একটা প্রশ্ন, শুধুই কি মানুষ কাঁদে? পশু-পাখিরা কি কাঁদে না? ওরাও কাঁদে। তবে হ্যাঁ, মানুষের কান্নার মাঝেও একটা শ্রেষ্ঠত্ব আছে! মানুষই কেবল দুঃখ পেলে কাঁদে। পশু-পাখিরা কিন্তু দুঃখ পেলে মোটেও কাঁদে না। তাহলে এখন থেকে তুমি যদি মন খারাপ করে কেঁদে ফেলো, আর পরে সেটা নিয়ে তোমার বন্ধুরা তোমাকে ক্ষ্যাপাতে শুরু করে, তাহলে মোটেও মন খারাপ করবে না। উল্টো বুক ফুলিয়ে বলবে, আমি মানুষ দেখেই না মন খারাপ করে কেঁদেছি!

আচ্ছা, আমাদের চোখ দিয়ে যখন নোনা পানি ঝরে, তাকেই তো আমরা কান্না বলি, তাই না? এই কান্না বা চোখের পানি কিন্তু ৩ রকম। একটাকে বলে ব্যাসাল টিয়ার্স (টিয়ার্স মানে যে চোখের পানি সে তো তোমরা নিশ্চয়ই জানো!)। এটা আমাদের চোখের একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রতিবার পলক ফেলার সময় চোখের পাতার পেছন থেকে আমাদের চোখের ওপর এই পানি ছিটিয়ে দেয়া হয়। এটা আমাদের চোখকে ধুলো-বালি থেকে রা করে। অনেকটা তেল বা লুব্রিকেন্টের মতো।

আরেক রকম পানির নাম দেয়া হয়েছে রিফেক্স টিয়ার্স। একটানা কোনো কিছুর দিকে, যেমন ধরো কাশে অনেকণ ধরে খুব মনোযোগ দিয়ে টিচারের দিকে তাকিয়ে আছো, তখন তোমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে না? ওটাকেই বলে রিফেক্স টিয়ার্স। আমাদের চোখ কোনো কিছু দেখতে দেখতে যখন খুব বিরক্ত বা একঘেঁয়ে হয়ে যায়, তখন এই পানি বের হয়ে চোখকে রিফ্রেশ করে দেয়। অনেকটা কম্পিউটার রিফ্রেশ করার মতো ব্যাপার আরকি!

আর শেষ রকম চোখের পানির নাম ইমোশনাল টিয়ার্স। যেই চোখের পানি নিয়ে আজকে আমাদের আলোচনা। আর এটা কিন্তু শুধুই মানুষের সম্পত্তি। পশু-পাখিরা এই কান্না একদমই কাঁদতে পারে না। তবে অনেক বিজ্ঞানী বলেন, কিছু কিছু প্রাণীও এই কান্না কাঁদে। চার্লস ডারউইন একটা বইয়ে লিখে গেছেন ভারতের হাতিরাও নাকি ওদের কেউ মারা গেলে কান্নাকাটি করে। দূর-দূরান্ত থেকে মরা হাতির মৃতদেহ দেখতে যায়। কিন্তু সব বিজ্ঞানীরা এখনো এ ব্যাপারে একমত হতে পারেন নি। অনেকেরই মত, ওসব মনের দুঃখে কান্না-ফান্না কিছু না, ওটা ওদের চোখ পরিস্কার করার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ব্যাসাল টিয়ার্স আরকি!

এখন কথা হলো, আমরা কেন কাঁদি? আসলে এই ইমোশনাল টিয়ার্সে কি কি থাকে জানো? খুব বেশি থাকে ম্যাঙ্গানিজ নামের এক ধরনের লবণ আর প্রোল্যাক্টিন নামের এক ধরনের প্রোটিন। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই দু’টো পদার্থ শরীর থেকে বের হয়ে গেলে মানুষ অনেকটা আরাম বোধ করে। ধরো তোমার খুব মন খারাপ, তুমি কাঁদলে, আর তার সঙ্গে এগুলো বের হয়ে তোমাকে অনেক হালকা করে দিলো। তোমার মন খারাপও কিছুটা কমে গেলো। ঐ যে কথায় বলে না, কাঁদলে মন হালকা হয়? এটাই নাকি তার কারণ।

তবে কাঁদলে মন হালকা হওয়ার এরচেয়েও বড়ো কারণটা মানসিক। তুমি যখন কাঁদবে, তখন তোমার আশেপাশে যারা থাকবে, তারা সবাই-ই বুঝবে কোনো কারণে তোমার মন ভালো নেই। হয় তোমার মন খারাপ, অথবা তুমি ভীষণ হতাশ, কিংবা তুমি চরম পরিমাণে দ্বিধান্বিত। আর এই যে তোমার আশেপাশের মানুষকে তুমি তোমার মনের ভাব প্রকাশ করতে পারলে, এটাও তোমার মনকে অনেকখানি হালকা করে দিবে। খেয়াল করো নি, তোমার মন খুব খারাপ হলে আর কোনো প্রিয় মানুষের কাছে কাঁদলে কেমন মনটা হালকা হয়ে যায়?

ও, আরেকটা কথা, এ তো গেলো শুধু মনের ব্যথার কথা, শারীরিক ব্যথার কথা তো বলাই হয়নি। খুব ব্যথা পেলেও তো তুমি কাঁদো। ঐ যে তুমি ব্যথা পেলে, সেটা তো প্রকাশ করতে হবে। তোমার আশেপাশের মানুষকে যখনই তুমি বোঝাতে পারবে, তুমি ব্যথা পেয়েছো, তারা সমবেদনা জানাবে, তোমার কষ্টটা কি একটু কমবে না?

তাহলে আজকে কিন্তু একটা জিনিস খুব জেনে নিলে। কান্না মোটেও অপরাধ না। এটা লজ্জার পাওয়ার কোনো বিষয়ও না। বরং এটা খুবই স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া। মানুষের মন খারাপ হলে বা ব্যথা পেলে কাঁদবে, এটাই স্বাভাবিক। আর এটা মনে আছে তো, মন খারাপ হলে বা ব্যথা পেলে কাঁদতে পারার গুণ কিন্তু একমাত্র মানুষের-ই আছে। প্রাণীরা কিন্তু মোটেও এই কান্না কাঁদতে পারে না!

বিষয়: বিবিধ

১৮৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File