রাজনীতির উল্টো যাত্রা

লিখেছেন লিখেছেন নিশান শাহীন ২০ জুন, ২০১৩, ১২:০৩:১২ রাত

এক শ্বাসরুদ্ধকর ও চরম অস্থিতিশীল অবস্থার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে দেশের চলমান রাজনীতি। অপরিপক্বতা, অসহিষ্ণুতা ও অনৈক্য এবং বিভাজন চরম সীমায় এসে উপনীত হয়েছে। দেশে তো বটেই, বাংলাদেশের অবনতিশীল রাজনৈতিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বে সমালোচনার ঝড় বইছে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির গভীর সমালোচনা করেছে। অতিসম্প্রতি জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এসে বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও বর্তমান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা চলছে। তাতে একটি রফতানিমুখী দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশ মারাত্মক ইমেজ সঙ্কটে পড়ছে; বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের মানুষকে অনেক অলীক স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে। বাংলাদেশ ডিজিটাল হবে, বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে ইত্যাদি। তবে কথা হলো, মানুষকে যে স্বপ্নই দেখনো হোক না কেন, স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এটি না থাকলে বাংলাদেশকে কোনো মানেই উন্নীত করা সম্ভব হবে না, উল্টো যেটুকু উন্নতি গত ৪২ বছরে বাংলাদেশের হয়েছে; তা ধরে রাখাই কঠিন হবে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে গভীর দৃষ্টিপাত করলে ঘোর অন্ধকার ছাড়া কোনো স্বপ্ন চোখের সামনে দৃশ্যমান হয় না। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দিন দিন দূরত্ব বাড়ছে; শুধু দূরত্ব বাড়ছে এটি বললে বোধ হয় কম বলা হবে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলকে নেতৃত্বশূন্য করারও চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। আর হামলা-মামলা-গুম-গ্রেফতার ও জেল-জুলুমের শিকার হচ্ছেন শীর্ষ রাজনীতিবিদেরা। আশ্চযের্র ব্যাপার হলো, যারা নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেবেন, সেই মানের রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে দেয়া হচ্ছে জামিন অযোগ্য মামলা! দেশকে এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা তৈরির পরিবর্তে তাদের ঘুরতে হচ্ছে আদালতের দ্বারে দ্বারে! কোনো কোনো দলের শীর্ষ রাজনীতিবিদ দীর্ঘ দিন ধরে রয়েছেন জেলে! তারা জামিন পাচ্ছেন না! এই হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতির বাস্তব চিত্র। এখন প্রশ্ন হলো, এই টালমাটাল ও অপরিপক্ব রাজনীতি নিয়ে একটি দেশ কিভাবে সামনে অগ্রসর হবে? কিভাবে মধ্যম আয় বা ডিজিটাল দেশের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পাবে?

অপরিপক্ব, অনৈক্য, অসহিষ্ণু ও বিভাজনের রাজনীতি চূড়ান্তভাবে দেশকে নিয়ে দাঁড় করাবে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি। এটি রাষ্ট্রকে সামনে এগিয়ে নেয়ার পরিবতে অবধারিত পেছনের দিকে নিয়ে যাবে আর বাস্তবে হচ্ছেও ঠিক তাই। যে কোনো সময় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অজানা গন্তব্য ও মারাত্মক পরিণতির দিকে মোড় নিতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। কাজেই সময় থাকতে পরস্পরে ভেদাভেদ ভুলে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্র তৈরি করার দিকে সবাইকে মনোনিবেশ করতে হবে, যাতে সঙ্ঘাত-সংঘর্ষের পথ এড়ানো সম্ভব হয়- যাতে সুস্থ রাজনীতির ধারা দেশে ফিরে আসে।

রাজনীতিবিদেরা গুম ও নিখোঁজ হবেন এবং অন্যায়ভাবে জেলে যাবেন এটিও মেনে নেয়া যায় না। বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য এসব নিঃসন্দেহে অশনিসঙ্কেত। রাজনীতিতে যদি পরমতসহিষ্ণুতা ও গণতান্ত্রিক মনোভাব প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে কোনোভাবেই দেশে শান্তি বিরাজ করবে না। আর শান্তি বিরাজ না করলে একটি দেশ তার নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে সামনে অগ্রসর হতে পারবে না। দেশটি আলোর মুখ দেখার পরিবর্তে ঘোর অন্ধকারের দিকে ধাবিত হতে থাকবে। বাস্তবেও বাংলাদেশে আমরা তা-ই দেখছি! অনৈক্য ও বিভাজনের রাজনীতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ছে, ব্যবসায়-বাণিজ্যে চরম মন্দা ভাব বিরাজ করছে, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ প্রায় বন্ধ, নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে না, দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের পথ দিন দিন সঙ্কুচিত হচ্ছে। সর্বোপরি জিডিপির সূচকও নিচের দিকে নামছে।

বাংলাদেশ ছোট কোনো জনপদ নয়। জনসংখ্যার নিরিখে বিশ্বের অষ্টম রাষ্ট্র। বাংলাদেশের ব্যবসায়িক প্রপ্রিন্দ্বী এখন বিশ্বের শক্তিধর দেশ। চীন, ভারত ও পাকিস্তানসহ আরো বড় বড় দেশ বাংলাদেশের ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ। তৈরি পোশাক শিল্পে বিশ্বে চীনের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। জনশক্তি রফতানি ও ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশ ভারত-পাকিস্তানের সাথে প্রতিযোগিতা করছে। কাজেই বাংলাদেশের শত্রু এখন চর্তুমুখী। এ কারণে বিশ্বে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমর্যাদা থাকা অপরিহার্য। সঙ্ঘাতপূর্ণ ও অশান্ত রাজনীতি নিঃসন্দেহে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা নষ্ট করছে। এটি এ দেশের সরকারকে বুঝতে হবে। তাদের মন বড় করতে হবে এবং দৃষ্টি প্রসারিত করতে হবে। নয়তো অজানা গন্তব্যের দিকেই বাংলাদেশ ধাবিত হবে। তাতে দায়ী থাকবেন ক্ষমতাসীনেরাই।

বিষয়: বিবিধ

১২৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File