সংবাদপত্রের ইতিকথা
লিখেছেন লিখেছেন নিশান শাহীন ১৮ জুন, ২০১৩, ১০:২৪:৩২ রাত
একটি দেশ যথোগুলো স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে, সংবাদপত্র তার মধ্যে অন্যতম। সংবাদপত্রের মাধ্যমে আমরা দেশ-বিদেশের খবরাখবর জানতে পারি। একটি দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশের উন্নতি কীভাবে করা যায়, কীভাবে বেকার সমস্যার সমাধান, শিল্প-কলকারখানার উন্নতি করা যায়, সন্ত্রাস দমন করা যায় তার পরামর্শ আমরা সংবাপত্রের মাধ্যমে পেয়ে থাকি। মোটকথা একটি দেশকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার দিক-নির্দেশনা দিয়ে থাকে সংবাদপত্র। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খবর পাওয়া ছিল খুবই কঠিন। প্রাচীনকালে মানুষ বিভিন্ন বাহনের মাধ্যমে সংবাদ আদান-প্রদান করতো। তখনকার দিনে রাজা-বাদশারা পাখি কিংবা পায়রার পায়ে চিঠি পাঠিয়েও তাদের হুকুম জারি করতো। হাতি, ঘোড়াও ব্যবহার করা হতো সংবাদ সংগ্রহের জন্য। কিন্তু সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে মানুষ কাগজ, কালি ও মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার করে ফেলে এবং তার যথাযথ ব্যবহারে প্রকাশিত হয় সংবাদপত্র। তবে কোনো কোনো দেশের মানুষের কাছে ১৯৬৯ সালের আগে মুদ্রণযন্ত্রে প্রকাশিত খবর ছিল হাস্যকর ব্যাপার মাত্র, ১৯৬৯ সালে মানুষের চাঁদে পৌঁছানোর ঘটনা মরক্কোর ৫৬ ভাগ মানুষই বিশ্বাস করতে চাননি।
মূলত বিংশ শতাব্দীতে এসে সংবাদপত্র বিস্তার লাভ করলেও খবরের কাগজ প্রথম প্রকাশিত হয় পঞ্চম শতাব্দীতে। ইতালিয়ান পেনিনসুলা থেকে রোমানরা খবর বহন করে আনত। সম্রাট জুলিয়াস সিজারের আমলেও একটি বুলেটিন প্রতিদিন প্রকাশিত হতো। চীনারাই সপ্তদশ শতাব্দীতে প্রথম গেজেট বের করে। থমাস রোনাল্ডো নামে এক ইংরেজ ১৫৪৯ সালে প্রথম ছাপাইকৃত কাগজ প্রকাশ করে। ১৬৯০ সালে বেঞ্জামিন হ্যারিসের হাত ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। সে সময় এই সংবাদপত্র যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। মূলত সপ্তদশ শতাব্দীর দিকে ইংল্যান্ডে সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। তখনকার দিনে বেশিরভাগ খবরই ছিল কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর বা গোত্রের। ১৭০২ সালের আগে সাপ্তাহিক বা মাসিক হিসেবেই সংবাদপত্র প্রকাশিত হতো, প্রতিদিন সংবাদপত্র প্রকাশ করা হতো না। সব ধরনের খবরে ভরপুর ছিল সংবাদপত্রগুলো। ১৭৭৬ সালের দককে লন্ডনে মোট সংবাদপত্রের সংখ্যা ছিল ৫৩টি, জন ওয়াল্টার ১৭৮৫ সালে ‘দ্য লন্ডন টাইমস’ প্রকাশ করলে বিশ্বব্যাপী হৈচৈ পড়ে যায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এ পত্রিকাটির সার্কুলেশন দাঁড়ায় ৫০ হাজার। ১৭২৫ সালে উইলিয়াম ব্রাডফোর্ড নিউইয়র্ক গেজেট নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন, এ পত্রিকা যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। পেনি প্রেস বাজারে আসার পর সংবাদপত্র জনগণের কাছে আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ১৮৩৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে ডেইলি নিউইয়র্ক সান প্রকাশিত হয়। ১৮৪১ সালে হরেস গ্রিলে দ্য নিউইয়র্ক ট্রাইবুন নামে এটি পত্রিকা বের করেন। বর্তমানে নিউইয়র্ক শহরে তিনটি পত্রিকা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়, দ্য টাইমস, দ্য পোস্ট এবং দ্য ডেইলি নিউজ। ১৯১৯ সালে দ্য লেটার পত্রিকাটি শিকাগোর তিনটি প্রকাশনা থেকে প্রকাশ করা হয়। দ্য ডেইলি নিউজ যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোতে খুবই জনপ্রিয় একটি পত্রিকা। ৬টি নিউইয়র্ক পেপার নিয়ে ১৮৪৮ সালের দিকে গড়ে ওঠে দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস। ১৯০৭ সালে ইউনাইটেড নিউজ এজেন্সি নামে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি বিখ্যাত সংবাদ সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে আমেরিকায় প্রতিদিন সংবাদপত্রের সার্কুলেশন প্রায় ৬২ মিলিয়ন। প্রাভদা ও ইজভেসটিয়া রাশিয়ার বিখ্যাত পত্রিকা।
ডেইলি আসাহি শিমবুন জাপানের বিখ্যাত পত্রিকা। প্রতিদিন এ পত্রিকাটির সার্কুলেশন প্রায় ৭ মিলিয়ন কপি। দ্য লন্ডন ডেইলি মিরর ব্রিটেনের সর্ববৃহৎ পত্রিকা। এ পত্রিকাটির প্রতিদিন সার্কুলেশন প্রায় চার মিলিয়ন কপি। এ ছাড়া দ্য ডেইলি সান ও ডেইলি এক্সপ্রেস ছাপা হয় প্রায় ৩ মিলিয়ন কপি। ইভিনিং নিউজও ছাপা হয় প্রতিদিন পাঁচ লাখ কপি, নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজের পর ‘দ্য লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত পত্রিকা। দ্য লেমন ফ্রান্সের বিখ্যাত পত্রিকা। বর্তমানে সুইডেনের জনগণ সবচেয়ে বেশি পত্রিকা পড়ে থাকে। জেমস অগাস্টাস হিকির সম্পাদনায় ১৭৮০ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে সর্বপ্রথম সংবাদপত্র বেঙ্গল গেজেট (ইংরেজি সাপ্তাহিক) প্রকাশিত হয। জন কার্ক ম্যাশম্যানের সম্পাদনায় সর্বপ্রথম দিকদর্শন নামে বাংলা পত্রিকা ১৮১৮ সালে প্রকাশিত হয়। উপমহাদেশে মুসলিম সম্পাদিত প্রথম পত্রিকা সমাচার সভারাজেন্দ্র, ১৮৩১ সালে শেখ আলীমুল্লাহর সম্পাদনায় এটি প্রকাশিত হয়। কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার ১৮৬১ সালে ঢাকার প্রথম বাংলা সংবাদপত্র ‘ঢাকা প্রকাশ’ বের করেন। ১৯৩৫ সালে মওলানা আকরাম খাঁর সম্পাদনায় ‘দৈনিক আজাদ’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এটিই বাংলায় মুসলমানদের প্রথম দৈনিক পত্রিকা। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রকাশিত হয় অসংখ্য সংবাদপত্র, দৈনিক সংগ্রাম, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ বাংলাদেশের বিখ্যাত দৈনিক পত্রিকা, দৈনিক পত্রিকার পাশাপাশি, সাপ্তাহিক, মাসিক কাগজও প্রকাশিত হয়। এসব পত্রিকার মাধ্যমে আমরা দেশ-বিদেশের খবরাখবর সহজেই জানতে পারি।
বিষয়: বিবিধ
১৬৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন