রত্নকাহন

লিখেছেন লিখেছেন নিশান শাহীন ০৯ জুন, ২০১৩, ১০:৪৬:৪৪ রাত



পৃথিবীতে এ পর্যন্ত ২ হাজার ভিন্ন ধরনের খনিজ আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে খুব অল্পসংখ্যক খনিজ কঠিন, চকচকে এবং দেখতে সুন্দর। এই বিশেষ গুণবিশিষ্ট খনিজগুলোকেই বলা হয় রত্ন। হাজার হাজার বছর আগে প্রাচীন সভ্যতায় জেড এবং নীলকান্তমণি প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল অলঙ্কারের কারুকাজে। শুধু খনিজ উপাদানই রত্ন নয়। কিছু রত্ন আছে যেগুলো উদ্ভিজ এবং প্রাণীজ উৎস থেকে আহরণ করা হয়। যেমন মুক্তা, প্রবাল, অম্বর ইত্যাদি।

৫ হাজার বছর আগে থেকে মেসোপটেমিয়ার লোকরা রত্ন বা পাথর কাটতে শিখেছিল। প্রাচীনকালে মানুষ মনে করত বরফ এবং অন্যান্য স্টম্ফটিক জমে রত্ন তৈরি হয়। প্রায় সব রত্নের বৈশিষ্ট্যই এক। তবে কোনো কোনোটা এত ছোট, রঙহীন আর অনুজ্জ্বল যে, সেগুলোকে মূল্যহীন বলে গণ্য করা হয়। রত্নের ওজন পরিমাপক এককের নাম হলো ক্যারেট। প্রাচীন সভ্যতায় রত্ন মাপার কাজে ব্যবহৃত হতো ক্যারোর গাছের বীজ। আমাদের দেশে ব্যবহৃত হতো 'কুচ' গাছের বীজ। রত্ন তখনই মাপা সম্ভব হয়, যখন এর সমান বা বেশি কাঠিন্যের উপাদান দিয়ে একে কাটা হয়। রত্ন কাটার জন্য আছে দুটো পদ্ধতি। 'ক্যাবোকন' পদ্ধতিতে রত্নগুলোকে শুধু পলিশ এবং গোলাকার করা হয়। 'ফ্যাসেট-কাট' পদ্ধতিতে সমান অংশকে বিভিন্ন কোণে কাটা হয়।

হীরাকে বলা হয় সবচেয়ে মূল্যবান রত্ন। এটাই হলো কঠিনতম খনিজ পদার্থ। বৃহত্তম হীরাটির নাম 'কালিনান'। এর ওজন ৩ হাজার ১০০ ক্যারেটের বেশি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় হীরার খনিটি রাশিয়ার পূর্ব সাইবেরিয়ায় অবস্থিত। খনিটি আবিষ্কৃত হয় ১৯৫৫ সালে। ১৯৬০ সালে এখান থেকে প্রায় ২ হাজার কেজি হীরা উত্তোলন করা হয়েছিল। মীর মাইনার নামে এই খনিটি ২০০১ সালে পরিত্যক্ত হয়ে গেছে।

পৃথিবীর বাইরেও হীরার মতো রত্নের উপস্থিতি আছে বলে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন। পৃথিবী থেকে ৪ হাজার আলোকবর্ষ দূরে সম্প্রতি একটি গ্রহ আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। এটির আকার বৃহস্পতি গ্রহের চেয়ে খানিকটা বড়। একটি ঘূর্ণায়মান নত্রকে কেন্দ্র করে এটি পরিভ্রমণ করছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই গ্রহের বিশেষত্ব হলো এর ঘনত্ব অন্যান্য গ্রহের চেয়ে অনেক বেশি। বেশি ঘনত্বের কারণে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এখানকার কার্বনগুলো ক্রিস্টালাইজড আকারে রয়েছে। এখানে বড় অংশজুড়ে হীরা থাকার সম্ভাবনা আছে।

দুর্লভতম একটি রত্নের নাম জাডেইট। এর খোঁজ প্রথম পাওয়া যায় ক্যালিফোর্নিয়ার গুয়ানতামালা এলাকায়। ১৯৯৭ সালের নভেম্বরে হংকংয়ে ক্রিস্টি জুয়েলারি কোম্পানি মোট ২৭ টুকরো জাডেইট বসানো একটি গলার হার বিক্রি করেছিল। এদেশি মুদ্রায় যার দাম দাঁড়ায় ৬০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা! গ্রেনডিডেরিট নামে আরেক ধরনের রত্ন প্রথম পাওয়া যায় মাদাগাস্কার অঞ্চলে। ছোট আকারের নীলচে সবুজ রঙের গ্রেনডিডেরিট বেশ দুর্লভ আর মূল্যবান। ১৯৪৫ সালে শ্রীলংকায় প্রথম পাওয়া যায় টাফেইট নামে একটি রত্ন। এটি বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। তার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরগুলোর রঙ উজ্জ্বল বেগুনি আর টকটকে লাল। আরেক ধরনের টাফেইট পাওয়া যায় যেগুলো স্বচ্ছ। এগুলো সামনে আর পেছনের দিকে দ্বি-প্রতিবিম্ব ফেলতে পারে।

১৯৫০ সালে অর্থার সিডি পেইন খুঁজে পান 'পেইন্ট' নামে এক অতি দুর্লভ রত্ন। বিশ্বজুড়ে এ ধরনের রত্ন আছে মাত্র তিনটি। জারমজেভিট নামে রত্নটি প্রথমবারের মতো পাওয়া গিয়েছিল নামিবিয়ার সমুদ্রতীরে। সেটা ১৯৭৩ সালের ঘটনা। দেখতে স্বচ্ছ এই জারমজেভিট সাধারণ আলোতেই অসম্ভব রকম উজ্জ্বল আলো বিকিরণ করতে পারে!

বিষয়: বিবিধ

১৯৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File