২০০ বছরের বিবর্তনে ক্যামেরা
লিখেছেন লিখেছেন নিশান শাহীন ২৩ মে, ২০১৩, ১১:০০:০৯ সকাল
এখন যা বর্তমান পরক্ষণেই তা অতীত। আর অতীতের স্থান হয় স্মৃতিতে, যা অনেক সময় হয় সুখময়। যার কারণে মানুষ বারবার ফিরে যেতে চায় তার ফেলে আসা সুখময় স্মৃতিচারণে। কারণ এসব স্মৃতি জীবনের কাছে অনেক মূল্যবান।স্মৃতি কষ্টের হলে মানুষ ভুলে যেতে চায় সহজেই। কিন্ত– সুখময় স্মৃতিগুলো মানুষ রাখতে চায় ফ্রেমবন্দী করে, যার অন্যতম মাধ্যম ক্যামেরা।
ক্যামেরার ইতিহাসঃ আমরা স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য চোখ বন্ধ করে ক্যামেরা ব্যতীত অন্য কিছু ভাবার কথা না ভাবলেও এক হাজার বছর আগে এ রকম কিছু ভাবাও ছিল কল্পনাতীত। যদিও নিশ্চিত করে বলা যাবে না কে কবে ক্যামেরা আবিষ্কার করেছিলেন। তবে এটা বলা যায়, ক্যামেরা আবিষ্কারের কৃতিত্ব নির্দিষ্ট কাউকে না দেয়া গেলেও বহুজনের পর্যায়ক্রমে শ্রম ও উন্নতির ফসল আজকের ক্যামেরা।
আবিষ্কারের নেপথ্যে যারাঃ ক্যামেরার আজকের অবস্থানের পর্যায়ক্রমের উন্নতির পেছনের গল্প খুব বেশি দিনের নয়। মাত্র ২০০ বছরের। কিন্তু ক্যামেরার ইতিহাস ঘাঁটতে চাইলে আমাদের ফিরে যেতে হবে এক হাজার বছর পেছনে। যত দূর জানা যায়, ১০২১ সালে ইরাকের বিজ্ঞানী ইবন-আল-হাইতাম আলোকবিজ্ঞানের ওপর সাত খণ্ডের একটি বই লিখেছিলেন আরবি ভাষায়, এর নাম ছিল কিতাব আল মানাজির। সেখান থেকে ক্যামেরার উদ্ভাবনের প্রথম সূত্রপাত। দৃশ্য ধারণের জন্য লেন্সের প্রয়োজনীয়তা এখানে পুনরোত্তিপ্ত হয়েছিল। এরপর হাতে বহনযোগ্য ক্যামেরার নকশা প্রণয়ন করেন জোহান জন ১৬৮৫ সালে। পরে এই নকশার সফলতা প্রমাণ করতেও লেগে গিয়েছিল অনেক বছর। ১৮১৪ সাল ছিল ক্যামেরার ইতিহাসে একটি মাইলফলক। প্রথমবারের মতো আলোকচিত্র ধারণের কাজটি করেন জোসেপ নাইসপোর নিপস। তিনি পাতলা কাঠের বাক্সের মধ্যে বিটুমিন পেটে আলোর ব্যবহার করে ক্যামেরার কাজটি করেন। সে হিসেবে জোসেপ নাইসপোর নিপসকে প্রথম ক্যামেরা আবিষ্কারক ধরা যায়। তার ক্যামেরাসংক্রান্ত ধারণার ওপর নির্ভর করে ফ্রাঞ্চমেন চার্লেস এবং ভিনসেন্ট ক্যাভেলিয়ার প্রথম উৎপন্ন ক্যামেরা আবিষ্কার করতে সক্ষম হন। ১৮৩৬ সালে অলোকচিত্র সম্বন্ধীয় ব্যবহারিক তত্ত্ব আবিষ্কারে নিপসের সহযোগী হন লুইস জ্যাকাস ডাগুরি। নিপসের মৃত্যুর পর লুইস ডাগুরি একটি তত্ত্ব প্রকাশ করেন, সেখানে ডাগুরি সিলভার সংবলিত কপার প্লেটে স্পর্শকাতর আলোর ব্যবহার দেখান। ১৮৪০ সালে উইলিয়াম টালবোট স্থায়ী চিত্র ধারণের জন্য তিনি নেগেটিভ ইমেজ থেকে চিত্র পজিটিভ ইমেজে পরিবর্তন করেন। এরপরই বিশ্বব্যাপী ক্যামেরার প্রযুক্তিগত উন্নয়ন দ্রুতবেগে সম্প্রসারিত হতে থাকে। ১৮৮৮ সালটি ছিল ক্যামেরার প্রযুক্তিগত উন্নয়নের আরেকটি টার্নিং পয়েন্ট। ১৮৮৫ সালে জর্জ ইস্টম্যান তার প্রথম ক্যামেরা ‘কোডাক’-এর জন্য প্রথম পেপার ফিল্ম উৎপাদন করেন। বাণিজ্যিকভাবে এটাই ছিল বিক্রির জন্য প্রথম উৎপাদিত ক্যামেরা। এর ঠিক এক বছর পরে পেপার ফিল্মের পরিবর্তে সেলুলয়েড ফিল্মের ব্যবহার চালু হয়। ১৯৪৮ সালে বের হয় পোলারয়েড ক্যামেরা, যা এক মিনিটের মধ্যে চিত্র নেগেটিভ ইমেজ থেকে পজিটিভ ইমেজে প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব হয়। দীর্ঘ ৭৫ বছর এনালগ ক্যামেরা রাজত্ব করলেও ১৯৭৫ সালে কোডাকের স্টিভেন স্যাসোন ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়ে আসেন।
আধুনিক ডিজিটাল ক্যামেরাঃ ইস্টম্যানের কোডাক কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার স্টিভেন জে স্যাসন সর্বপ্রথম ১৯৭৫ সালে ডিজিটাল ক্যামেরা আবিষ্কার করেন। স্যাসনের আবিষ্কৃত ডিজিটাল ক্যামেরার ওজন ছিল ৪ পাউন্ড (৩.৬ কিলোগ্রাম), এর রেজুলেশন ছিল .০১ মেগাপিক্সেল। সাদা-কালো ইমেজ-নির্ভর এই ক্যামেরার সাহায্যে একটি ক্যাসেটে প্রায় ২৩ সেকেন্ড রেকর্ড করে রাখার যেত। এবং পরে ২৩ সেকেন্ড তা টেলিভিশনের মাধ্যমে প্লেব্যাক করার সুযোগ ছিল। ১৯৭৮ সালে স্যাসন ও লয়েড যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৪১৩১৯১৯টি ডিজিটাল ক্যামেরা তৈরি করেন। ডিজিটাল ক্যামেরার আজকের বর্তমান যে প্রেক্ষাপট, তার শুরু হয়েছিল ইস্টম্যানের কোডাক কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার স্টিভেন জে স্যাসনের হাত ধরেই।
বিষয়: বিবিধ
১১৭৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন