৬মে’র গণহত্যা ও বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের ভবিষ্যৎ
লিখেছেন লিখেছেন শরষের মধ্যে ভূত ০৮ মে, ২০১৩, ০১:০৮:৫৩ রাত
৬ মে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়ের সূচনা করে গেলো। এতদিন যে বাঙ্গালী ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, মায়ানমার(রোহিঙ্গা), চীন(জিনজিয়াং), চেচনিয়া-বসনিয়া, গুজরাটের মুসলমানদের উপর দেশগুলোর সরকারের অত্যাচার আর নির্যাতনের কথা শুনে নিরবে চোখের পানি ফেলত আর হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করত, তারাই এদিন দেখলো গনহত্যা, নির্যাতন আর অস্ত্রের সামনে অস্ত্রহীন মানুষের অসহায়ত্ব কেমন হয়। কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে ক্ষমতার লোভে পাগল একটি সরকার। উপমহাদেশে ইসলামী আন্দোলন বা মুসলমানদের উত্থান যেদিন থেকে সেদিন থেকেই শুরু হয়েছে ক্ষমতাসীনদের নির্যাতন। যার সর্বশেষ সংযোজন শাপলা চত্বরের গণহত্যা। ৬ মে ছিলো ঐতিহাসিক বালাকোট দিবস। আর এদিনই মুসলমানদের স্বীকার হতে হলো এক আরেকটি জগন্যতম গণহত্যার। পার্থক্য এতটুকুই বালাকোটের ময়দানে গণহত্যা চালিয়েছিলো বিধর্মী ইংরেজ বেনিয়ারা। আর শাপলা চত্বরে গণহত্যা চালিয়েছে ইহুদী, খ্রীষ্টানদের(ধর্মনিরপেক্ষ) এদেশের এজেন্ট আওয়ামি সরকার।
তবে বালাকোট ময়দানে মুসলমানদের পরাজয় হলেও ভারতবর্ষে ইরজরা বেশীদিন টিকতে পারেনি। বালাকোটের ময়দানে মুসলমানদের পরাজয়ের যেসব কারন ছিলো তার মধ্যে অন্যতম হলো,
১। আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের অভাব। ব্রিটিশরা যেখানে গুলি,কামান নিয়ে এসেছিলো সেখানে মুসলমানরা ছিলো তলোয়ার আর ঢাল সড়কি নেয়। ফলে কামানের গোলায় টিকতে পারেনি তারা।
৬মে হেফাজতের কর্মীরাও শুধু তসবি আর জায়নামাজ নিয়ে সরকারের যৌথ বাহিনীর গুলি আর সাউন্ড গ্রেনেডের সামনে হাজির হয়েছে।
২।বালাকোটের ময়দানে পরাজয়ের আরেকটি কারন ছিলো মুসলমানরা ব্রিটিশদের শক্তি এবং কৌশল সম্পর্কে পূর্ব ধারনা করতে না পারা। এদিন হেফাজতের নেতাকর্মীরাও সরকারের আসল রুপ সম্পর্কে চিন্তা করতে পারেননি। গত একমাস ধরে চলা হেফাজতের বিভিন্ন সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনাকে ইসলামপ্রিয় বলেই তারা প্রচার করেছিলেন। সর্বশেষ মহাখালী মসজিদের জুমার খোৎবায় হেফাজত নেতারা “বঙ্গবন্ধুর বাঙ্গলায় নাস্তিকদের ঠাই নেই” বলে উল্লেখ করেছিলেন। ফলে তাদের কৌশল ছিলো নিতান্তই ঢিলেঢালা ও সমঝোতামূলক।
৩। বালাকোটে মুসলমানদের মাঝে নির্দেশ প্রদান এবং পালনের ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা ছিলো। হেফাজতের কর্মসূচীতেও তাই দেখা গেছে। ফলে পুলিশের অতর্কিত গুলির মুখে তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। অসহায়ের মতো জীবন দিতে হয়েছে হাজার হাজার মুসলমানকে।
বালাকোটের ময়দানে ব্রিটিশদের জয় হয়েছে ঠিকই কিন্তু তাদেরও একসময় জনরোষে পড়ে ছাড়তে হয়েছিলো ভারতবর্ষ। কিন্তু আজো প্রতিষ্ঠিত হয়নি সেই স্বপ্নের ইসলামী রাষ্ট্র, যার জন্য মুসলমানরা জীবন দিয়েছিলো।
আজ সরকার বাকশালী কায়দায় বাতি নিভিয়ে, মিডিয়া বন্ধ করে যে গণহত্যা চালিয়েছে, তাতে হয়ত আরো কয়েক বছর ক্ষমতায় থাকার বন্ধোবস্ত করে ফেলেছে তারা। তবে তাদেরও একদিন ক্ষমতা ছাড়তে হবে। সাদ্দাম, গাদ্দাফি, মোবারক আর বেন আলীর মতো একসময় পশ্চিমারাও ছুড়ে ফেলে দিতে বাধ্য হবে শেখ হাসিনাকে। কিন্তু প্রকৃত ইসলামী সমাজ গড়ে তোলার ব্যবস্থা মুসলমানদেরই করতে হবে। যুগ যুগ ধরে চলতে থাকা বাকশালী শাসনের বিরুদ্ধে হয়ত উঠে আসবে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহদের প্রেতাত্মারা। যারা ইসলামী রাষ্ট্রের কথা বলে জনগণের সমর্থন আদায় করবে আর কাজ করবে শয়তানের মতো। পাকিস্তানে যেমন ইসলামী রাষ্ট্রের নামে চলছে চরম নৈরাজ্য। সেখানে ইসলামের নামে অনৈসলামিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কথা বলার কারনে ফাসির কাষ্ঠ পর্যন্ত যেতে হয়েছিলো সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদুদীকে।
বাংলাদেশেও ইসলামী আন্দোলন বা ইসলামী সমাজব্যবস্থার দাবীদার দলগুলোকে একই প্ল্যাটফর্মে আসতে হবে। গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন। নিজেদের মাঝে বিরোধের বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে। নতুবা কোন ধর্মনিরপেক্ষ সরকার দ্বারা ১৩ দফা দাবী গৃহীত হলেও তার প্রকৃত বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করা অন্ধ লোকের হাতে মশাল দিয়ে পথচলার মতোই হবে। অন্ধ লোকের হাতে মশাল তুলে দিলে যেমনি আশেপাশের বাড়িঘরে আগুন লাগানোর পাশাপাশি যাদেরকে সে পথ দেখাবে তাদেরকেও পুড়ে মারার সম্ভাবনা থাকে তেমনি আওয়ামী লীগ কর্তৃক হেফাজতের ১৩ দফা বাস্তবায়িত হলে দেশে চরম নৈরাজ্য নেমে আসবে। যারা মাওলানা সাইদীকে ধর্ম অবমাননার দায়ে গ্রেফতার করে তাদের দ্বারা ইসলামী রাষ্ট্র হবে হিটলার কর্তৃক জার্মান জাতিয়তাবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মতো। এদেশে ১৯৮০এর দশক থেকে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানে ছিলো। তারপরও এদেশ থেকে শরিয়্যা আইন বাতিল হয়েছে। দেশের কোন আইনেই আজ ইসলামের ছোয়া নেই। বরং সরকারগুলো মুসলিম বিশ্বের সহায়তা আদায় করে আসছে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের দোহাই দিয়ে। আজ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রেখে বরং ইসলামকেই অপমান করা হচ্ছে। বিশ্ববাসী জানে বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ যেখানে মুসলমানরা অন্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে বেশী সুবিধা ভোগ করে থাকে। অথচ পরিস্থিতি তার সম্পূর্ণ উল্টো। এদেশে কোন হিন্দুর উপর বাতি বন্ধ করে গণহত্যা চালানো হয়নি। তাই আলেমদের এখন থেকে অনৈসলামিক সরকারগুলোর কাছে দাবী দাওয়া পেশ করা বন্ধ করতে হবে। মাদ্রাসাগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। কওমী মাদ্রাসা এবং আলিয়া মাদ্রাসাগুলো থেকেও বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার ব্যপারে ছাত্রদের বেশী বেশী উৎসাহিত করতে হবে। মাদ্রাসার দাখিল পর্যায়ের সিলেবাসে পর্দা, জিহাদ, দাওয়াত , সংগঠন এসকল বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। এখন এই পর্যায়ে হজ্জ, যাকাত, বালাগাত এসকল বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়। যা সব মুসলমানের জন্য সবসময় জন্য প্রয়োজন হয়না। যেমন যাকাত একটি নির্দিষ্ট পরিমান সম্পত্তি না থাকলে দেয়ার দরকার হয়না। হজ্জের ক্ষেত্রেও এই কথা প্রযোজ্য। অথচ পর্দা, জিহাদ, দাওয়াত, সংগঠন এগুলো প্রত্যেক মুসলমানের জন্য সবসময় জরুরী।
সুতরাং কোন নাস্তিক মুরতাদের কাছে আর ধরনা নয় ৬মে’র শহীদদের রক্তের বদলা নেয়ার জন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন ব্যপক সংস্কার এবং সার্বজনীন ঐক্য।
বিষয়: রাজনীতি
১৪৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন