ওরা বিভিন্ন যানবাহনে হুজুর খুজতেছিল।
লিখেছেন লিখেছেন সেলিম শেখ ০৮ মে, ২০১৩, ০৪:২৪:২১ বিকাল
৫ই মে সকাল ৯:০ টায় তাতীবাজার মোড়, হাটা শুরু করলাম এবং মাওয়া বিশ্বরোড পর্যন্ত হেটে গেলাম সকাল ১১.৩০ টায়। যাওয়ার পথে পুরো রাস্তাটাই ছিল হেফাজত ইসলামের আন্দোলনকারী আলেম ওলামাদের দখলে। ব্রিজের দুই পাড়ে দুইটি এবং মধ্যখানে একটি অস্থায়ী মঞ্চ তৈরী করা হয়েছিল যেখান থেকে বিজ্ঞ আলেম গন নছিহত করতে ছিলেন এবং বিভিন্ন ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশিত হচ্ছিল। এছাড়াও থেকে থেকে ছোট ছোট মিছিল ও ছোট ছোট সমাবেশ দেখেছি। বেশিরভাগ লোকের মাথায় ও হাতে দেখেছি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এবং হেফাজত ইসলামের প্ল্যাকার্ড। মাওয়া বিশ্বরোড পর্যন্ত কোন যানবাহন একেবারেই ছিলনা।
আমার কাছে একটা নছিহত খুব ভালো লেগেছিল সেটি হলো একজন আলেম বলছিল সংগ্রামী ভাইয়েরা খেয়াল রাখবেন আমাদের যেন বদনাম না হয়। আমরা কোন বিশৃংখলা তৈরী করতে আসি নাই। যদি কেউ বিশৃংখলা করে তবে তাকে আমাদরে সেচ্ছাসেবক অথবা আইনশৃংখলা বাহিনীর নিকট সমর্পন করবেন।
বিশ্বরোড থেকে আমি সিএনজি নিয়ে আমার গ্রামের বাড়িতে যাই এবং রাতে আবার সিএজি করে বাবুবাজার ব্রিজ পর্যন্ত ফেরত আসি। সিএনজি থেকে নেমে আমার ভয় করছিল রীতিমত। ভয়ে আমি ব্রিজের উপর দিয়ে আসতে সাহস করছিলাম না। পরে ব্রিজের নিচ দিয়ে নৌকায় করে বুড়িগঙ্গা নদী পার হলাম। এপাড়ে এসে দেখি একই অবস্থা। পুরো বাবুবাজার ঘুটঘুটে অন্ধকার সমস্ত দোকানপাট বন্ধ। আমি খুব ভয়ে ভয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছিলাম। ঘরিতে সময় তখন সন্ধ্যে ৭:৩৫ টা দেখলাম এক ঠেলাওয়ালা বসে বিড়ি খাচ্ছে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম ভাই সামনে কি যাওয়া যাবে? সে আমাকে আস্বস্ত করল হ্যা যেতে পারবেন। রাস্তায় লোক ছিল খুবই কম যা ছিল ভয়ের অন্যতম কারন। হাটতে হাটতে তাতীবাজার মোড়ে আসি এবং পুরো রাস্তায় ইট, জুতা, পানির বোতল এবং কাচের গুরো দেখে আমার ভয় আরো বারতে থাকে। তাতীবাজার মোড়ে কয়েশ পুলিশ দেখতে পাই এবং এখানে কিছু রিকশা চলাচল করতে দেখি। বাড্ডার জন্য রিকশা খুজতে গেলে এক রিকশা মালিবাগ নুর মসজিদ পর্যন্ত আসতে রাজি হয়। রিকশা যখন গোলাপ শাহ মাজার পার হয়ে বঙ্গবন্ধু এভিন্যুতে আসল তখন পুলিশ আমার ঠেকিয়ে বলল এখান দিয়ে যাওয়া যাবে না। আমি রিকশাওয়ালাকে বললাম আপনি বঙ্গবাজার রোড দিয়ে কাকরাইল হয়ে যাও। যাওয়ার পথে যা দেখলাম সেটা ছিল আমার ৩০ বছরে দেখা ঢাকার সবচেয়ে বিভৎস রুপ। রাস্তায় কিছু রিকশা, মোড়ে মোড়ে পুলিশ ও বিজিবি ছিল বেশ লক্ষনীয়। পুরো ঢাকা ছিল অন্ধকারাচ্ছ এমনকি রিকশাওয়ালাদেরও কষ্ট চচ্ছিল রিকশা চালাতে। পোড়া গন্ধ নাকে আসছিল বেশ ঝাঝালো আকারে বিশেষ করে মালিবাগ রোডে। কিছু কিছু যায়গায় আমাকে নাকে হাত দিতেও হয়েছে। বুঝতেই পারছিলাম ঢাকায় একটা ধংসজঙ্গ হয়েছে। মালিবাগ রেলগেটে দেখলাম তিনটা বড় বাস পুরে ছাই হয়ে আছে। প্রাইভেট কারগুলো পুরো এমনভাবে পরেছিল মনে হচ্ছিল যেন যুদ্ধ পরবর্তী দেশ।
অবাক হলাম মালিবাগ চৌধুরী পাড়ায় জড়ো হয়েছে বেশ কিছু যুবক এবং মধ্য বয়সী যাদের হাতে ছিল বাঁশ, রড এবং মোটা লাঠি। তারা সিএনজি, রিকশা, হোন্ডা এবং বিভিন্ন যানবাহনে হুজুর খুজছে। গাড়িগুলো থামিয়ে বলছে হুজুর আছে হুজুর ? আমি সেখানে ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পারলাম না তবে ভয় লাগছিলো। রিকশাওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে আমি সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখি কয়েক জন লোক একটা রিকশা থামিয়ে রিকশার দুই যাত্রী (সুন্নত ওয়ালা) কে বলছেন আপনারা এইদিক দিয়ে যাইয়েন না কারন সামনে টুপি ও দাড়ি ওয়ালাদের পেলেই মারতেছে। যাত্রী দুজনই নেমে ভেতরের রাস্তা দিয়ে চলে যায়। আরেকটু সামনে এগিয়ে রামপুরা ওয়াপদা রোডে গিয়ে দেখি শ খানেক যুবক লাঠি ও রড হাতে হুজুরদের খুজতেছে বিভিন্ন যানবাহনে। আমি সেখানে কিছু সময় দাড়িয়ে যা দেখলাম তা এখানে লেখার ভাষা খুজে পাচ্ছি না। বৃদ্ধ থেকে যুবক বা কিশোর যাকেই পাচ্ছে তাকেই পেটাছে বিভিন্ন যানবাহন থেকে নামিয়ে। দৃশ্যগুলো দেখে চোখের পানি আর মনের ভেতরের ক্ষোভ ধরে রাখতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো। এটিএম বুথের সিকিওরিটিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এগুলো কি হচ্ছে এখানে। লোকটির কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল বা ভয়ে বলতে চাচ্ছিলো না। ছোট ছোট বাচ্চাদেরকেও ওরা মেরে রক্তাক্ত করেছে। রামপুরা টিভি ভবনের কিছু আগে দেখলাম একটি ৭০-৮০ জনের যুবক একটি দল দ্রুত বেগে হেটে আসছেন মালিবাগের দিকে যারা ছিলো বিভিন্ন রড ও মোটা লাঠি হাতে। মনে হচ্ছিলো তারা মারামারি করে আসলো অথবা করতে যাচ্ছে।
কিছু দুর আসতেই দেখি পোড়া গাড়িগুলো ক্রেন দিয়ে টেনে নেয়া হচ্ছে। পাশদিয়েই র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির একটি বিশাল গাড়ি বহর চলে গেল মালিবাগরে দিকে যেন তারা যুদ্ধে যাচ্ছে। আবারো একটা ভয় নাড়া দিয়ে গেলো আমাকে। আরেকটু এগিয়ে মধ্যবাড্ডা বাইতুন নুর মসজিদে দেখলাম কিছু লোক আশ্রয় নিয়েছে সরকারী দলের ভয়ে।
মধ্যবাড্ডা ব্রিজের নিচে এসে দেখি একই ঘটনা চলছে। বিভিন্ন যানবাহন থেকে নামিয়ে বেধরক পেটানো হচ্ছে দাড়ি ও টুপি ওয়ালাদের। পেছনেই নির্বিকার দাড়িয়ে ছিলো পুলিশের একটি ভ্যান।
আমি আস্তে করে ঢুকে গেলাম আমার বাসার গলিতে স্কুল রোডে। রাত তখন ১০:৩০। সারাদিন যা দেখলাম তা কখনো ভুলে যাবার নয়।
আল্লাহ্ ছাড়া কোন মাবুদ নাই। মোহাম্মদ (সা আল্লাহর রাসুল।
বিষয়: বিবিধ
১১৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন