এরপরও কি বোধদয় হবে ? (পর্ব -২)
লিখেছেন লিখেছেন শারমিন ০৮ মে, ২০১৩, ০৬:৩২:৩৩ সন্ধ্যা
আমাদের দেশের গার্মেন্ট মালিক কর্তৃপক্ষ এটাই ভেবে থাকেন যে সেফটি কোড মেনে ফ্যাক্টরি চালু রাখতে গেলে অনেক খরচ পড়বে, তাতে লাভের অঙ্ক কমে যাবে । অথচ সামান্য ভুলের কারণে তাদের কত বড় মাশুল দিতে হতে পারে সে ব্যাপারে তারা অবগত নন। যেমন: শ্রমিকদের প্রাণহানি, স্বাস্থ্যগত সমস্যা, উত্পাদন কমে যাওয়া , প্রোডাক্ট নষ্ট হওয়া, মেশিনারী ও অন্যান্য মালামাল নষ্ট হওয়া, কেস চালানোর খরচ, ইমার্জেন্সিতে শ্রমিক ও মালামাল উদ্ধারের অতিরিক্ত খরচ, দুর্ঘটনা কবলিত জায়গা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার খরচ, উত্পাদন ব্যাহত/বিলম্ব হওয়া, ব্যবসা পুনঃ প্রতিষ্ঠায় বিলম্ব, অর্ডার হারানো, জরিমানা, দক্ষ শ্রমিক হারানো । এসব সরাসরি ক্ষতি ছাড়াও আরো কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হয় যার মূল্যমান বের করা যায় না । যেমন ব্যবসায়িক সুনাম ক্ষুন্ন হওয়া , উত্পাদন শুরুর পূর্বে সময়ের অপচয়, পুনরায় দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরিতে সময় ও টাকার অপচয় ইত্যাদি । তাই কোম্পানি মালিকদের উদ্দেশে বলব সামান্য খরচ করে হলেও সেফটি বিষয়গুলোর দিকে নজর দিন. নয়তো সাভার বা তাজরিনের মত ঘটনা যেকোনো দিন আপনার ফ্যাক্টরিতেও হতে পারে ।
মূলত কোনো দুর্ঘটনায় রাষ্ট্র যে ক্ষতির সম্মুখীন হয় তার তুলনায় মালিক কর্তৃপক্ষের এসব ক্ষতি খুবই নগন্য । দক্ষ জনবল হারানো ও আহত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ছাড়াও নিহত শ্রমিকের পরিবার এক অনিশ্চয়তায় পড়ে । ফলে তারা সরকারের উপর বোঝাসরুপ হতে পারে । এছাড়াও দেশের সুনাম ক্ষুন্ন হওয়া সহ অন্যান্য ব্যবসাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে । সাভার ট্রাজেডির পর বিশ্বখ্যাত পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ডিজনী কর্তৃক বাংলাদেশে আর অর্ডার না দেয়ার ঘোষণা এবং হাজার পরিবারের অনিশ্চিত ভবিষ্যত এসবের জলন্ত প্রমান ।
তাই বলব আমাদের নিজেদের স্বার্থেই উচিত ইন্ডাস্ট্রির নিরাপত্তার বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে একটি সংগঠিত বোর্ড গঠন এবং বোর্ড কর্তৃক সেফটি আইন প্রনয়ন । বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশে শ্রমিক অধিকার আইন ILO স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী তৈরী করা । ILO স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী কর্মীদের নিরাপদ কর্মস্থল, মেশিনারী ও অন্যান্য টুলস প্রদান করা মালিকের দায়িত্ব যাতে শ্রমিক কোনো প্রকার স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির সম্মুখীন না হয় । শ্রমিকদের মেশিন ও অন্যান্য টুলস এর সঠিক ব্যবহার বিষয়ে যথাযথ ট্রেনিং দেয়াও মালিক কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব । সেইসাথে কাজ অনুযায়ী যথাযথ জুতা ও পোশাক প্রদান করতে হবে । আমাদের দেশের খুব কম কারখানাতেই যথাযথ পোশাক ও জুতার ব্যবহার দেখা যায় । গার্মেন্ট গুলোতে মেয়েদের ওড়না মেশিন এ পেচিয়ে দুর্ঘটনার কথা জানা যায় । আবার ইলেকট্রিক তারে বিদ্যুত পৃষ্ঠের ঘটনা ঘটে সঠিক জুতার অভাবে । এসব ছোটখাটো দুর্ঘটনা পত্রিকায় না আসলেও এসব দ্বারা ক্ষতির পরিমান নেহায়েতই কম নয় । আশার কথা এই যে বাংলাদেশে বর্তমানে কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা এসব সেফটি বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে এবং বিভিন্ন কোম্পানিতে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে । কোম্পানিগুলো নিজেদের স্বার্থেই সেফটি বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিবে সেই প্রত্যাশাই করছি ।
বিষয়: বিবিধ
১০৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন