জিএসপি স্থগিতঃ ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতির সর্বশেষ নজির।
লিখেছেন লিখেছেন মেফতাউল ইসলাম ০২ জুলাই, ২০১৩, ০৮:৫৪:৪১ সকাল
বেশ কিছুদিন যাবত বাংলার আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছিল, যে কোন মুহুর্তে যুক্তরাষ্ট্র স্থগিত করতে পারে জিএসপি সুবিধা। এমন আভাসে সরকারও নড়েচড়ে বসেছিল। যুক্তরাষ্ট্র যাতে কোনক্রমেই নাখোশ হয়ে জিএসপি স্থগিত না করে, সেজন্য সরকার তাড়াহুড়া করেই দেশের স্বার্থবিরোধী টিকফা চুক্তি পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেল, শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র স্থগিত করলো জিএসপি সুবিধা। সরকার এখন এর জন্য দোষারোপ করছেন বিরোধী দলকে। অর্থাৎ খালেদা জিয়া একটি বিদেশী পত্রিকায় নিবন্ধ লিখে বাণিজ্য অবরোধের বিষয়টি তুলেছিলো বলেই জিএসপি স্থগিত করা হয়েছে বলে সরকার প্রচারণা চালাচ্ছেন। আবার ড. ইউনুস ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করতে না পারাই জিএসপি স্থগিতের মূখ্য কারণ বলে সরকার ঘরানার বুদ্ধিজীবিরা দাবি করছেন। তাই সরকারের নিকট প্রশ্ন, আপনাদের কূটনীতি বা পররাষ্ট্রনীতি কি বিরোধী দলের বা ড. ইউনুসের কূটনীতি থেকে দুর্বল? বিরোধী দল যদি একটি নিবন্ধ লিখে জিএসপি স্থগিতে ভূমিকা রাখে, তাহলে সরকারি দল কেন আরেকটি নিবন্ধ লিখে জিএসপি টিকিয়ে রাখতে পদক্ষেপ নিল না? তাহলে বর্তমান সরকারের কূটনীতি কি নিতান্তই দুর্বল? অথবা এটা সরকারের অকর্মণ্যতা নয় কি?
শুধু জিএসপি স্থগিতের ক্ষেত্রে নয়, অনেক ক্ষেত্রেই সরকার যৌক্তিক পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বহিঃবিশ্বে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ সরকারের আমলে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতিতে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। শুধুমাত্র একজন মন্ত্রীকে বাঁচাতে গিয়ে পুরো জাতিকে বিপদে পড়তে হয়েছে। বাংলাদেশ বহিঃবিশ্বে দুর্নীতির প্রশ্রয়দাতা বলে পরিচিতি পেয়েছে।
গত জোট সরকারের আমলে এ দেশ বারবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো। ফলে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে আওয়ামী সরকারকে বিপুল ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো। কিন্তু এ সরকারও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে, এমনকি কোন কোন সেক্টরে পূর্বাপেক্ষা বেশি দুর্নীতি হয়েছে। এটি আমাদের ভাবমূর্তিকে বিশ্বের নিকট ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
সরকারের ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতির কারণে মধ্যপ্রাচ্যের সাথে আমরা ভালো সম্পর্ক ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছি। অথচ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো আমাদের দেশের শ্রমিকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিলো, যা বাংলাদেশ আজ হারাতে বসেছে। মুসলিম দেশ হওয়া সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্যের এসব দেশের সুসম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে না পারা পররাষ্ট্রনীতির দুর্বলতার কথাই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়।
বলা হচ্ছে, ভারতের সাথে আমাদের বর্তমান সম্পর্ক ভালো। কিন্তু তারপরও কেন তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হচ্ছে না? সীমান্ত হত্যা কেনই বা কমছেনা, অথবা বাণিজ্য ঘাটতি আজো এত বেশি কেন? সুতরাং ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো রয়েছে শুধু মুখেই, কাগজে-কলমে এর কোন সত্যতা নেই।
সবশেষে, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক জিএসপি স্থগিত আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। এটি আমাদের গার্মেন্টস শিল্পে তেমন নেতিবাচক প্রভাব না ফেললেও, দেশকে ইমেজ সংকটে ফেলবে, এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। আবার যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে ইউরোপ যদি জিএসপি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে বাংলাদেশকে চরম সংকটে পড়তে হবে। উদীয়মান পোশাক শিল্প এতে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রণীত শর্তগুলো আমাদের পূরণে সচেষ্ট হতে হবে, সাথে সাথে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে পেতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও অব্যাহত রাখতে হবে।
বিষয়: রাজনীতি
১০৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন