জনরায় যে ইঙ্গিত দেয়।
লিখেছেন লিখেছেন মেফতাউল ইসলাম ২১ জুন, ২০১৩, ১০:৩০:৪৮ সকাল
১৫ জুন অনুষ্ঠিত চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হওয়ায় রাজনীতির ময়দানে নতুন করে হিসাব কষতে হচ্ছে। এই নির্বাচনী ফলাফল আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি উভয়ের জন্যই কিছু ইতিবাচক ফলাফল নিয়ে এসেছে। বিএনপি বলছে জনগণ বিরোধীদলের তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুর সাথে তাল মিলিয়ে সরকারী দলকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। আবার আওয়ামীলীগ বলছে এ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ হল দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। সুতরাং দল দু’টির বিপরীতমূখী অবস্থানের জন্য আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
যদিও সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বলা হয়ে থাকে, আদতে তা নয়। এবারের নির্বাচনকে স্থানীয় নির্বাচন বলার তেমন সুযোগ নেই। এ নির্বাচন স্থানীয় মোড়কে হলেও বাস্তবে দেখা গেছে জাতীয় ইস্যুই জনগণকে প্রভাবিত করেছে বেশি। স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থীর ব্যক্তিগত প্রভাব ,ভাবমূর্তি, পরিচয় ইত্যাদিকে মূখ্য হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু এবারের নির্বাচনে এসব বিষয় গৌণ বলে বিবেচিত হয়েছে। বরং দলীয় পরিচয়ই পালন করেছে মূখ্য ভূমিকা। যে কারণে কেউ কেউ ব্যক্তিগত ইমেজ, কাজ, উন্নয়নের দ্বারা নন্দিত, সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও হয়েছেন পরাজিত।
এ নির্বাচন আগামী জাতীয় নির্বাচনকেও প্রভাবিত করবে কিনা তা নিয়ে অনেকেই চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। আমার মনে হয় এই নির্বাচন অবশ্যই আগামী জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। এজন্য আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের অনেকে সরকারকে আগামীতে আর কোন নির্বাচন না দিতে পরামর্শ দিচ্ছেন। ফলে ঈদের পর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হল। বিশেষত, ঢাকা সিটি নির্বাচনে পরাজিত হলে তা নেতাকর্মীদের চরমভাবে হতাশ করে তুলতে পারে। তাই জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামীলীগ এ ধরনের রিস্ক নেবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এসব প্রার্থীরাই জনগণের ব্যাপক ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। তাই প্রশ্ন, মাত্র সাড়ে চার বছরের ব্যবধানে তাদের এ ভরাডুবি কেন? তারা কি জনগণ হতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিলেন? নাকি আওয়ামীলীগের জাতীয় পর্যায়ে ব্যর্থতা তাদের পরাজয়ে নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছে? আমার মনে হয় আওয়ামীলীগের সার্বিক কর্মকান্ডের নিকটই পরাজিত হয়েছে তাদের সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ, শেয়ারবাজারে মহাকেলেঙ্কারি, হলমার্ক ও ডেসটিনি গ্রুপের অর্থ লুটপাট, ছাত্রলীগের বাড়াবাড়ি, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গুম, নির্যাতন, গণগ্রেপ্তার, তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে স্বেচ্ছাচারিতা, সাংবাদিক নির্যাতন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে তাল-বাহানা ইত্যাদি জনগণ ভালোভাবে নেয়নি। যার ফলে ব্যালট বাক্সে তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। এই নির্বাচনে বিএনপির নিরঙ্কুশ বিজয়ের ফলে তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীর বিষয়টি আরো জোড়ালো হয়েছে। কেননা জনগণ যেহেতু বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের নতুনভাবে নির্বাচিত করেছে সুতরাং জনগণ বিএনপির দাবিগুলোকে যৌক্তিক হিসেবেই ধরে নিয়েছে।
তাই এ নির্বাচনের ফলাফল থেকে সরকার শিক্ষা না নিলে তা ভবিষ্যতে তাদের জন্য মহাবিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সরকারের উচিৎ তাদের মেয়াদের বাকী সময়টায় হৃত জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা। আর সেজন্য প্রয়োজন হবে দেশকে সুশাসন উপহার দেয়া। অন্যদিকে বিএনপিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আরো ভালো করতে হলে তাদের উচিৎ হবে বাকি সময়ে একটি যথার্থ দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের পরিচয় দেয়া। অযৌক্তিক হরতাল ও সহিংসতার রাজনীতি থেকে অবশ্যই তাদের বেড়িয়ে আসতে হবে। জনগণ বিএনপির প্রতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে আস্থা স্থাপন করেছে তাদের উচিৎ হবে তার যথাযথ মূল্যায়ন করা।
সবশেষে, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্রিক চর্চার যে ধারা সৃষ্টি হয়েছে তা অব্যাহত থাকুক। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ পৃথিবীতে প্রথম শ্রেণীর একটি গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত হবে এই প্রত্যাশাই ব্যক্ত করছি।
বিষয়: বিবিধ
১১৫৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন