হতভাগা
লিখেছেন লিখেছেন মেফতাউল ইসলাম ২৮ মে, ২০১৩, ০৮:০১:০০ রাত
বেশ কিছুদিন পূর্বে
এসেছিল সে ঢাকায়,
প্রতিবেশী বাবুলের সহায়তায়
একটি চাকুরীও হয়েছিলো তার।
মাকে চিঠি লিখেছিল সে,
“হবে না আর কষ্ট দু’মুঠো ভাতের,
ঘরের ছনের চালাটি বদলে দেবে টিনের চালা,
বৃষ্টিতে আর ভিজতে হবে না মা তোমাকে।”
অফিসে প্রতিদিন মনোযোগের সাথে কাজ করে
বসের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল সে।
বস বলেছিলো প্রমোশন হবে তোমার মাস খানেক পরে,
খুশিতে নেচে উঠেছিল মন তার,
আবার মাকে লিখেছিল চিঠি,
“মা প্রমোশন হবে আমার মাস খানেক পরে,
তোমার আর দুঃখ থাকবেনা বুড়ি।”
মাও ভেবেছিলো যাক ছেলেটার অন্তত গতি হল
এবার মরণেও শান্তি তার।
শুধু দোয়া একটাই, ছেলে শান্তিতে থাক।
২৯টি দিন কেটে গেছে,
আর মাত্র অপেক্ষা দু’দিনের
বেতন পাবে, মাকে শাড়ি কিনে পাঠাবে,
সঙ্গে টাকা আর চিঠি।
৩০তম দিনে অফিসে গিয়েছিল সে
মনোযোগ দিয়ে করছিলো কাজ
আর ভাবছিলো কেমন শাড়ি দেবে মাকে।
হঠাৎ শোরগোল শুরু হল অফিসে
চিন্তায় ব্যঘাত ঘটলো তার,
দেখলো ছোটাছুটি করছে সবাই।
কিছুক্ষণ পর জানতে পারলো
অফিস বিল্ডিংয়ে দেখা গিয়েছে ফাটল।
সেদিনের মত ছুটি।
পরের মাসের প্রথম দিন
আজ একমাস পরিশ্রমের পাওনা পাবে সে।
অফিস ভবনে ফাটল দেখা দেয়া সত্ত্বেও
সকলের আগে সে অফিসে গিয়ে উপস্থিত।
ওর সহকর্মীরা ফাটল ধরা অফিস বিল্ডিংয়ে
ঢুকতে করছিলো অনীহা প্রকাশ।
কিন্তু কর্তা বাবুদের মুখ নিশ্রিত নোংরা শব্দে
সকলে ঢুকেছিলো অফিসে।
একটি ফাটল ধরা বিল্ডিংয়ে
পাঁচ হাজার কর্মী প্রবেশ করেছিলো সেদিন।
সেও ঢুকেছিল সেদিন অফিসে
কিন্তু ফাটলের প্রতি মনোযোগ ছিলনা তার
মনোযোগ শুধু এটাতেই,
মাইনে পাবে আর মাকে শাড়ী দেবে।
এরকম ভাবতে ভাবতেই অফিসের কর্মযন্ত্রগুলো
চালু হল। কেপে উঠলো বিল্ডিং।
বিকট শব্দে একটি দেয়াল ভেঙ্গে পড়লো
ঠিক তার মাথার উপর।
ভাবারোই সময় পেলনা সে, আজই তার জীবণের শেষ দিন।
বৃদ্ধ মা ঘটনার তিন দিন পর ছুটে এলো,
ছেলের ছবি হাতে নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুণতে লাগলো।
কিন্তু দুঃখিনী মা কই পাবে ছেলের খোঁজ?
সে তো মিশে গেছে,
ভগ্ন দেয়ালের বালু, সিমেন্ট আর ইটের সাথে।
বিষয়: সাহিত্য
১২৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন