কলুষিত শিক্ষক রাজনীতি, শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ।
লিখেছেন লিখেছেন মেফতাউল ইসলাম ১১ মে, ২০১৩, ০৮:৩৪:১৬ সকাল
রাজনীতির বিষবাস্প আজ সমাজের প্রত্যেকটি স্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। সারাদেশে চলছে মানুষ হত্যার মহড়া। আর কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই একের পর এক হরতাল দেশবাসীকে চরম নাকালে পরিণত করেছে। কোমলমতি এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা পর্যন্ত স্বস্তিতে পরীক্ষা দিতে পারছেন না। রাজনীতি নামক জাঁদুর অভিশপ্ত ছোঁয়া আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণেও হানা দিয়েছে। পূর্বেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতি ও শিক্ষক রাজনীতি হত, তা ছিল গঠনমূলক। কিন্তু এখন যে রাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমরা দেখছি, তা শুধু স্বার্থের চাঁদরে মোড়া। শুধু নিছক স্বার্থগত কারণে শিক্ষকদের তামাসার নিকট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অসহায় শিক্ষার্থীরা আজ জিম্মি। সামান্য কারণে অকারণে ভিসি পতনের আন্দোলনে বারবার মুখরিত হচ্ছে জাবির অঙ্গন। আর আন্দোলন মানেই শ্রেণীকক্ষে তালা, শিক্ষকদের ক্লাস না নিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়ার মহড়া, অবরোধ ছলে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সুখে ঘরেই দিনাতিপাত এসব এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত চিত্র। বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা গ্রীষ্মের ছুটির আগেই নিজেরাই ছুটি ঘোষণা করে বাড়ীর পথে পা বাড়িয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে সব বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয় ধীরে ধীরে মুখোমুখি হচ্ছে ভয়াবহ সেশনজটের।
কোন কোন শিক্ষক নিজেদের নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে ক্লাস রুমে ঢুকতে না পেরে শহীদ মিনারে পর্যন্ত ক্লাস নিয়েছে। তারা অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। শিক্ষকরা হচ্ছেন জাতির পথপ্রদর্শিতা। তারা জাতিকে যেভাবে পথ দেখাবে জাতি সেভাবেই এগুবে। কিন্তু আমাদের শিক্ষকরা যেভাবে আমাদের পথ দেখাচ্ছেন তাতে ভবিষ্যতে শুধু জাতির সাথে কিভাবে প্রতারণা করা যায় সেই বিষয়টিই শিখছি।
এক ছাত্রলীগ নেতা কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক লাঞ্চিত হলে জাবির শিক্ষকরা এর সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে কর্মসূচী ঘোষণা করে। প্রথমে উপাচার্য ওই ছাত্রলীগ নেতাকে সমুচিত শাস্তি দিতে শিক্ষকদের সাথে একাত্মতা পোষণ করলেও অদৃশ্য কারণে হঠাই উপাচার্য তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। বাধ্য হয়েই শিক্ষকরা নেমে পড়েন কঠোর আন্দোলনে। কিন্তু রাজনীতির মারপ্যাচে স্বল্পকাল পরেই শিক্ষক লাঞ্চনার বিচারের দাবির পরিবর্তে উপাচার্যের পতনের দাবিই মূখ্য হয়ে ওঠে। উপাচার্যও তার সিদ্ধান্তে অনড়। একজন নির্বাচিত ভিসি হয়ে তিনি কেনই বা সামান্য অজুহাতে পদত্যাগ করবেন। আর শিক্ষকদের এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানের প্রেক্ষিতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আমাদের মত নিরীহ ছাত্রদের। আটটি কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা ২মে শেষ হবার কথা থাকলেও পরীক্ষা হয়েছে মাত্র তিনটি কোর্সের। রাজনীতির হরতাল, অবরোধ আর শিক্ষকদের স্বার্থবাদী কর্মকান্ডের নিকট আমাদের শুধুমাত্র তিনটি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা দিতে গিয়ে আমরা যে রাজনীতির ফন্দিজালে পড়ে গেছি, তেমনি ফন্দিতে পড়েছে আরো অনেক শিক্ষার্থী।
তাই শিক্ষকদের অবরোধে যাতে ক্লাস ও পরীক্ষা নির্বিঘেœ চলে তা নিশ্চিত করতে অনুরোধ করছি। উপাচার্য মহোদয়ের নিকট আবেদন দোষীকে উপযুক্ত শাস্তি দিন, সে যতই ক্ষমতাবান হোকনা কেন। একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন যাতে ভবিষ্যতে আর কোন শিক্ষার্থী পিতাতুল্য শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহার করার সুযোগ না পায়।
বিষয়: রাজনীতি
১১৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন