চীনের সফট পওয়ার পলিসি (কোমল শক্তি নীতি) এবং বহিঃর্বিশ্বে এর প্রভাব।
লিখেছেন লিখেছেন মেফতাউল ইসলাম ০৯ মে, ২০১৩, ০৩:০৭:০৪ দুপুর
পৃথিবীতে প্রত্যেকটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিই তার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে এবং বহিঃর্বিশ্বে তার প্রভাবকে টিকিয়ে রাখতে সর্বপ্রথমই সামরিক শক্তিকে প্রাধান্য দেয়। প্রাচীন ও মধ্যযুগে একটি জাতি বা একটি সম্প্রদায়ের মর্যাদা কেমন হবে তা তার শক্তিমত্তা দ্বারাই নির্ধারিত হত। শক্তির প্রমাণে পূর্বে গোত্র বা রাষ্ট্রগুলো সর্বপ্রথমেই বেছে নিত যুদ্ধের পথকে। কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীতে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থার উদ্ভব হয়েছে। প্রত্যেকটি রাষ্ট্রই এখন জনগণের নিরাপত্তা, জনগণের অধিকার এবং জনগণের আশা আকাঙ্খাকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দেয়। কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণা জোড়দার হওয়ায় রাষ্ট্রগুলো এখন যুদ্ধকে এড়িয়ে চলার নীতি গ্রহণ করে। পূর্বের তুলনায় রাষ্ট্রগুলো অনেক আধুনিক ও প্রযুক্তিসম্পন্ন অস্ত্রশস্ত্র নির্মাণ করে সামরিকীকরণে ব্যাপক এগিয়ে গেলেও রাষ্ট্রগুলো এখন তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরনেই সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত।
সাধারনত ধারনা করা হয় চীন পৃথিবীতে ভবিষ্যৎ নিরঙ্কুশ পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা এ ধারনা করে থাকি চীনের অর্থনৈতিক গতিশীলতা দেখে। চীন বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিরি দেশ। আর এই অর্থনৈতিক শক্তিকে কাজে লাগিয়েই চীন ভবিষ্যতে পৃথিবীতে নেতৃত্ব দেয়ার চিন্তায় বিভোর। এ জন্যই চীন পৃথিবীব্যাপী প্রভাব বিস্তারের আশায় সামরিক শক্তির পাশাপাশি তার পররাষ্ট্রনীতিতে বিভিন্ন সফট এলিমেন্ট যুক্ত করে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণে সচেষ্ট।
পূর্বে চীন বরাবরই পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার নীতি গ্রহণ করত। তবে তার মধ্যে সা¤্রাজ্যবাদী চরিত্র অনেক পূর্ব থেকেই বিদ্যমান ছিল। উনবিংশ শতকের প্রথমার্ধের দিকেও চীনারা মনে করত পৃথিবীর যে স্থানে স্বর্গের ছায়া পড়েছে সেই স্থানটাই হল চীন। জাত্যাভিমানি এ চীনের স¤্রাটগণ নিজেদেরকে স্বর্গের প্রতিনিধি ভাবত। আর চীনের জনগণ মনে করত চীনে চালু রয়েছে স্বর্গের শাসন। চীনারা ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও অন্যদের সমঅধিকার দিতে চাইতনা। তৎকালীন সময়ে নজরানা পদ্ধতিতে চীনারা পৃথিবীর অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীগুলোর সাথে ব্যবসা করত। কিন্তু পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদী শক্তির কূটকৌশলের নিকট চীনারা একসময় পরাজিত হয়েছিল। চীনাদের আহমিকাকে ধ্বংস করতে পরিকল্পিতভাবে ব্রিটিশরা চীনে আফিমের প্রবেশ ঘটিয়েছিল। আফিমের নেশায় চীনাদের এতটাই আসক্তি করে তুলেছিল যে চীনাদের নৈতিক মূল্যবোধ ওইসময় হ্রাস পেয়েছিলো। ফলে পরপর দুটি আফিম যুদ্ধে চীনারা পরাজিত হয়েছিলো। এরপর চীনাদের গর্ব ধুলিস্যাৎ হয়ে গিয়েছিল। চীনারা একের পর এক বহিঃশক্তিদের নিকট পরাজিত হয়েছিলো।
কিন্তু ১৯৪৯ সালে মাও জে ডং এর নেতৃত্বে চীনে সমাজতান্ত্রিক শাসন চালু হলে চীন আবার গতিশীল হয়ে উঠে। দেং জিয়াও পিং এর সংস্কার কর্মসূচীর মাধ্যমে চীনের অর্থনীতি আরো গতিশীলতা পায়। বর্তমান কালের চীন দেং জিয়াও পিং এর দেখানো পথেই এগিয়ে চলছে।
১৯৭৭ সালে দেং জিয়াও পিং ক্ষমতায় এসে মূলত চারটি বিষয়ে সংস্কার নিয়ে আসেন। ১. প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে প্রদেশগুলোকে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য সেগুলোকে যথেষ্ঠ স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হয়। ২. কৃষি ক্ষেত্রে সংস্কারের মাধ্যমে চাষাবাদের উপর সম্পূর্ণ সরকারি নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বাতিল করে পরিবার ভিত্তিক চাষাবাদের ব্যবস্থা চালু করা হয়। পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী চাষীদের জমি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। এ ব্যবস্থায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের একটা অংশ সরাসরি বাজারে বিক্রয় করে নিজস্বভাবেই সঞ্চয় করতে পারতেন। অথচ পূর্বে এটা ছিলনা। এই সংস্কারের ফলে কৃষিক্ষেত্রে অল্পদিনের মধ্যেই ব্যাপক উন্নতি লাভ করে চীন। ৩. শিল্প খাতে সংস্কারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের লোকসানের বোঝা কমানোর জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাসমূহকে আরো বিকেন্দ্রীকরণের উপর জোড় দেয়া হয়। কারখানাগুলো পরিচালনার জন্য চালু করা হয় দঞড়ি ঞরবৎ চৎরপরহম ঝুংঃবস’। এ পদ্ধতি অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় পুঁজি এবং ব্যক্তিগত পুঁজি উভয় দ্বারাই কারখানাগুলো পরিচালিত হবে। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত পুঁজির দ্বারা উৎপাদিত পণ্য শুধু রাষ্ট্রের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হবে। কিন্তু ব্যক্তিগত পুঁজি দ্বারা উৎপাদিত পণ্য কারখানাগুলো স্বাধীনভাবে বাজারে বিক্রি করতে পারবে এবং এর লভ্যাংশের মালিক তারা নিজেরাই হবে। তবে লভ্যাংশের উপরে সরকার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে কর আরোপ করত এবং কারখানাগুলোকে লভ্যাংশের একটি অংশ জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহারের জন্য রাষ্ট্রের নিকট জমা দিতে হত। এই নীতির ফলে রাষ্ট্র ও ব্যক্তিগত যৌথ উদ্যোগে অসংখ্য কারখানা গড়ে উঠতে থাকে। সাথে সাথে বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরকেও চীনে বিনিয়োগ করার জন্য উৎসাহিত করা হয়। ৪. বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং প্রতিরক্ষা খাতে সংস্কারের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চর্চার অবাধ সুযোগ করে দেয়া হয় এবং সামরিক বাজেট বাড়িয়ে অত্যাধুনিক সামরিক বাহিনী গড়ে তুলতে মনোযোগ দেয়া হয়।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়েনের সংস্কার কর্মসূচীর সাথে চীনের সংস্কার কর্মসূচীর পার্থক্য হল সোভিয়েত ইউনিয়ন একই সাথে ‘গ্লাসনস্ত’ এবং ‘পেরেস্ত্রোইকা’ নীতি বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল। অর্থাৎ পেরেস্ত্রোইকা বা পরিবর্তন, পরিবর্ধন নীতির মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি চালু করেছিল। আবার গ্লাসনস্ত বা দুয়ার খোলা নীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও সংস্কারে হাত দিয়েছিল। ফলে পার্টির একাধিপত্য তারা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেনি। কিন্তু চীন শুধুমাত্র পেরেস্ত্রোইকার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। কিন্তু গ্লাসনস্ত তারা গ্রহণ করেনি। অর্থাৎ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বা পার্টির সংস্কার সাধনে তারা ইচ্ছুক ছিলনা, বরং পার্টির হাতেই সমস্ত ক্ষমতা একীভূত রেখেছে। ফলে চীনে আজো পার্টির একাধিপত্য টিকে আছে এবং সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি টিকে আছে। আর দেং কতৃক প্রবর্তিত সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতির মাধ্যমেই চীনের অর্থনীতি হুহু করে এগিয়ে যাচ্ছে। ধারনা করা হচ্ছে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চীন বিশ্ব অর্থনীতিতে একাধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হবে। তাই চীনের অনুসৃত অর্থনৈতিক সমাজতান্ত্রিক মডেল এখন অনেক দেশই গ্রহণ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
চীন তার মতাদর্শকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে এক অভিনব পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছে। আর তা হলো সফট পাওয়ার ব্যবহার করে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর উপর প্রভাব বিস্তার করা। চীনের সফট পাওয়ার বলতে তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক শক্তি ইত্যাদি থেকে যে প্রভাব তৈরি হয় সেখান থেকে বিশ্বব্যাপী প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করাকে বুঝায়। চীন বিশ্বব্যাপী তার মতাদর্শ ছড়িয়ে দিতে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, সাংস্কৃতিক তৎপরতা, কূটনৈতিক তৎপরতা, রাষ্ট্রের প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং রাষ্ট্রের রাজনৈতিক দর্শণ ইত্যাদিকে ব্যবহার করে থাকে। চীনের সফট পাওয়ার ব্যবহারের কয়েকটি বিশষ লক্ষ্য রয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল- ১. অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান এবং কাঁচামালের প্রবাহ নিশ্চিত করা। ২. বিশ্বে নিজেদের ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা। ৩. তাইওয়ানকে সমস্ত বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা। এবং ৪. বিশ্ব রাজনীতিতে পশ্চিমা শক্তি বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিজ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। তাই অনেক তাত্ত্বিকই মনে করেন চীনের এ সফট পাওয়ার নীতি মার্কিন সফট পাওয়ার নীতিকে চ্যালেঞ্জর সম্মুখীন করবে।
প্রাচীন চৈনিক সভ্যতার ইতিহাস চীনাদের এখন ব্যাপকমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে। অতীত ঐতিহ্যের অনুপ্রেরণা থেকেই চীন ভবিষ্যতে পৃথিবীতে সুপার পাওয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখে। চীনারা আজ তাদের নিজস্ব ভাষায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করছে। মান্দারিন ভাষায় এখন পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি লোক কথা বলে। মান্দারিন ভাষাকে নিজ দেশের গন্ডি হতে অন্য দেশে ছড়িয়ে দিতে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ওঊখঞঝ বা এজঊ এর মাধ্যমে যেমন ইংরেজি ভাষার শিক্ষা এবং দক্ষতা যাচাই করা হয় তেমনি ঐঝক সিস্টেমের মাধ্যমে মান্দারিন ভাষার শিক্ষা এবং দক্ষতা যাচাই করা হয়। পাশ্চাত্য দেশগুলো যেমন তাদের সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান (যেমন ব্রিটিশ কাউন্সিল, অলিয়স ফ্রোসেস, আমেরিকান সেন্টার) প্রতিষ্ঠা করেছে তেমনি চীন তার সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিতে চালু করেছে কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট। ২০০৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে সর্বপ্রথম এ প্রতিষ্ঠান চালু করে চীন। ২০১০ সালে এসে দেখা যায় সমস্ত পৃথিবীতে প্রায় ২০০ এর মত কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট গড়ে উঠেছে।
সমাজতান্ত্রিক শাসন চালু হবার পর চীনারা শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি ব্যাপক গুরুত্ব আরোপ করেছে। বিশেষ করে কর্মমুখী শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। চীনারা এখন বিদেশী শিক্ষার্থীদেরকেও চীনে পড়ালেখা করার সুযোগ দিচ্ছে। বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশী পিএইচডি শিক্ষার্থীদের চীনে শিক্ষা গ্রহণে উৎসাহিত করতে দঠরংরঃরহম ঝপযড়ষধৎং ঋঁহফ’ এর ঘোষণা দিয়েছে। এসব শিক্ষার্থী চীনা ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত হচ্ছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রায় ৩০% মন্ত্রী চীনে লেখাপড়া করে এসছে এবং তারা চীনা সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত।
চীন তার রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত শক্তিশালী প্রচার মাধ্যমের সৃষ্টি করেছে। তিনটি সেক্টরে তিনটি প্রধান প্রচার মাধ্যম আছে। নিউজ পেপার সেক্টরে রয়েছে ‘পিপলস ডেইলী’, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আছে ‘সিনহুয়া’ এবং বিশ্লেষনমূলক গবেষণা ও জার্নাল প্রকাশ করছে ‘বেইজিং রিভিউ’।
চীনের কোমল শক্তির ব্যবহার সংক্রান্ত নীতি উন্নয়নশীল বিশ্বে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারে সহায়ক হয়েছে। বিশেষত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্য এশিয়া, লাতিন আমেরিকা এবং আফ্রিকায় চীনের কোমল শক্তির প্রভাব সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। চীন আফ্রিকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কৃষি এবং জ্বালানী খাতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করছে। ২০০৪ সালে চীন আফ্রিকায় ২১শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা প্রতিবছর বেড়েই চলেছে।
চীন সফট পওয়ারের উপাদান হিসেবে কূটনীতির মাধ্যমেও প্রভাব বিস্তারে আগ্রহী। পূর্বে চীন বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ছড়িয়ে দেয়ার নীতিতে বিশ্বাসী ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে দেং এটাকে বাতিল করেন। চীন ‘সৎ প্রতিবেশী নীতি’ (এড়ড়ফ ঘবরমযনড়ৎং চড়ষরপু) এর মাধ্যমে পাশ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করতে চায়। এই নীতির মাধ্যমে সে পাশ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে সীমান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি করতে চায়। এ নীতির মাধ্যমে চীন ইতিমধ্যে ২৩টি সীমান্ত বিরোধের মধ্যে ১৭টি বিরোধের নিষ্পত্তি করেছে। রাশিয়া, তাজিকিস্তান, কাজাকস্তান, কিরগিস্তান প্রভৃতি দেশের সাথে চীন সীমান্ত বিরোধ ‘সৎ প্রতেবেশী নীতি’র মাধ্যমে সমাধান করেছে। চীন বর্তমানে পৃথিবীর অনেক সংগঠনের প্রভাবশালী সদস্য। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ার মাধ্যমে সে বিশ্বে তার নিজস্ব ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। বিশ্বের প্রত্যেকটি বিষয়ে নিজের মত করে বক্তব্য দিচ্ছে। এসসিও এবং ব্রিকস এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে চীন আরো প্রভাবশালী হয়ে উঠবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
তবে চীনের এ সফট পওয়ার পলিসি বিভিন্ন কারণে সমালোচিতও হচ্ছে। চীনের গণতন্ত্রহীনতা এবং কর্তৃত্ববাদী সরকার ব্যবস্থা তার ইতিবাচক ভাবমূর্তির ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান অন্তরায় বলে বিবেচিত হচ্ছে। চীনের গণমাধ্যম এখনো স্বাধীন নয়। বিরুদ্ধ মতাবলম্বীদের চীন এখনো সহ্য করতে পারেনা। সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপের কারণে সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনগুলো অনেকটাই অকেজো। চীন তিব্বত এবং জিংজিয়াং এর অধিবাসীদের ওপর যে নির্মম নির্যাতন এবং হত্যাকান্ড চালাচ্ছে বিশ্ব তা কোনভাবেই মেনে নেয়নি। ফলে একবিংশ শতাব্দীতে চীনের সফট পাওয়ার সংক্রান্ত নীতির যে সুনাম গড়ে উঠেছে তা মুহুর্তের মধ্যেই নষ্ট হচ্ছে উপরোক্ত সমালোচনাগুলোর কারণে।
বিষয়: আন্তর্জাতিক
২৩৫৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন