রাষ্ট্র ক্ষমতারোহন কিংবা ক্ষমতাবস্থান নয় কোন একক মঞ্চাভিনয় [শক্তি চর্চার রসায়নঃ সমাজ বিপ্লবীদের আবশ্যিক পাঠ (পর্ব-১)]
লিখেছেন লিখেছেন রামির ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৪:৪১:৩১ বিকাল
১.বিবর্তন- একটি সার্বজনীন ঘটনাঃ
জীব জগতের ন্যায় সামাজিক জীবনেও বিবর্তন সংঘটিত হয় বলে মতবাদ দিয়েছেন সমাজ বিজ্ঞানী হার্বাট স্পেন্সার। তার এই সূত্র কে সমর্থন করেছেন আরো অনেকেই। বিবর্তনবাদের এই সূত্র -যা দ্বান্দিক প্রক্রিয়ায় সংঘটিত হয়- সমাজ বিজ্ঞানে ‘সোশাল ডারউইনিজম’ বা ‘সামাজিক বিবর্তনবাদ’ যা হিসাবে পরিচিত। ম্যাক্স-ওয়েবারসহ অন্যান্য বিবর্তনবিরোধী সমাজ বিজ্ঞানীরা আবার দ্বান্দিক প্রক্রিয়ায় ঘটমান ‘সামাজিক বিবর্তনবাদ’ প্রক্রিয়াকে অস্বীকার করেছেন। কিন্তু বিবর্তনের এই প্রক্রিয়াকে অস্বীকার করলেও সমাজ বা রাষ্ট্র বিপ্লবের ক্ষেত্রে ঘটমান পুরো ‘বিবর্তন’ এর ঘটমান কে কিন্তু মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। আর এসব বিবর্তনের পেছনে লুক্কায়িত থাকে বিপ্লবী চিন্তক-পরিকল্পক-তাত্বিকদের চিন্তা, পরিকল্পনা ও দর্শন এবং/অথবা তাদের অনুসারীদের পর্যাপ্ত এসব কর্ম-প্রচেষ্টা।
২. বিবর্তনবাদ বনাম সামাজিক পরিবর্তনঃ
যে কোন পরিবর্তনের পেছনেই থাকে নানান কার্যকারণ প্রক্রিয়া। কারণ কোন কিছুই ঘটেনা কার্যকারণ ব্যতীত। সামাজিক যে কোন পরিবর্তনের মতই রাষ্ট্র-ব্যবস্থার বর্তমান যে ধারা এবং এর যে পরিবর্তন কৌশল তা ব্যাপক এবং সম্প্রসারিত। কারণ রাষ্ট্র-ব্যবস্থার এই পরিচালনার সাথে জড়িত থাকে শত-সহস্র মানুষের কর্ম, চিন্তা ও পরিশ্রম। রাষ্ট্র-ব্যবস্থার যে বৃহত্তর পরিসর তাকে ক্ষুদ্র সামাজিক ইউনিটে বিশ্লেষণ করলে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, সাধারণ পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে পাওয়া যায় ব্যক্তি, পরিবার, গোত্র, সমাজ। প্রশাসনিকভাবে এই রাষ্ট্র কাঠামোকে বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় গ্রাম/ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা/উপজেলা, জেলা, বিভাগ এবং দেশ। বর্তমান গণতান্ত্রিক কাঠামোয় পরিচালিত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় প্রচলিত ধারায় প্রবহমান বা বিশ্বাসী কোন ব্যক্তির চিন্তা ধারায় পরিবর্তন আনতে হলে টার্গেট নির্ধারণ করতে হবে ‘ব্যক্তি’কে। সমাজ পরিচালনা বা প্রশাসনিক ইউনিটে পরিবর্তন আনতে হলে টার্গেট নির্ধারণ করতে হবে ক্ষুদ্রতম প্রশাসনিক ইউনিট তথা ওয়ার্ড বা ইউনিয়ন পরিচালকদেরকে।
৩.গণতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোয় বিবর্তনঃ
বর্তমানে দেশে গণতন্ত্রের যে চলমান ধারা তাতে দেখা যায় কোন ব্যক্তি যখন তার নির্বাচনী এলাকায় প্রশাসনিক পদে কাউকে নির্বাচিত করার জন্য ভোট দেয় তখন সেই ব্যক্তি তার বসবাসরত সমাজের চারপাশের লোকজনের দ্বারা প্রভাবিত হয়েই তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তার এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকে নানান সামাজিক ঘটনা। এগুলো হচ্ছে ‘মানুষ’ হিসাবে পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে তার যে মৌলিক বিষয়গুলো পূরণ করা দরকার সেগুলো সম্পর্কিত ঘটনাবলী।
জাতিতাত্বিক নৃবিজ্ঞানের জনক নৃতাত্বিক ক্যাস্পার ম্যালিনোস্কির মতে, মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য দরকারি সাতটি মৌলিক চাহিদা হচ্ছে-Metabolic need, Reproduction, Bodily Comfort, Security, Movement, Growth and Health এবং এই সাতটি মৌলিক চাহিদা পূরণ করার জন্য প্রয়োজন যে সাতটি বিষয় সেগুলো হচ্ছে- খাবারের ব্যবস্থা, জ্ঞাতি সম্পর্ক, আশ্রয়, রক্ষণাবেক্ষণ, কর্ম-সম্পাদন, প্রশিক্ষণ এবং স্বাস্থ্যবিধি। যে কোন জনগণ তথা সামাজিক মানুষ প্রথমেই এই সাতটি কর্ম-সম্পাদনের মাধ্যমে নিজের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে রত হয় এবং এ অস্তিত্ব রক্ষার কাজকে সে সব চেয়ে প্রাধান্য দেয়।
কোন নির্বাচকমন্ডলী জনগোষ্ঠী যদি ইসলাম ধর্মের অনুসারী হয়ে থাকে তবে এসব বিষয়ের সাথে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষংগ যুক্ত হয়- যেটি হচ্ছে ধর্ম। ধর্ম কে কার্ল মার্ক্স সমাজের ‘ভিত্তি-কাঠামো’র পরিবর্তে ‘উপরি-কাঠামো’ হিসাবে বর্ণনা করলেও এবং ধর্মকে ভিত্তি কাঠামো তথা অর্থনৈতিক কাঠামোর অনুগামী হিসাবে ব্যাখ্যা করলেও মুসলিম সমাজের বিশ্বাস বোধের জায়গায় এটি চরম ভাবে স্থান করে নিতে পারেনি। কারণ মুসলিম কমিঊনিটিতে অর্থনীতি মানুষের অন্যান্য নানান বৈশিষ্ট্যকে প্রভাবিত করলেও মার্ক্স-কথিত অর্থনৈতিক কাঠামোও কিন্তু ধর্মের প্রভাবে পরিবর্তিত হয় যার ব্যাখ্যা মার্ক্স এড়িয়ে গেছেন।
তাই মুসলিম সমাজে আবশ্যিকভাবে যা দেখা যায় তা হচ্ছে, মানুষ যখন প্রচলিত ধারায় চলমান গণতান্ত্রিক পদ্ধতির কোন প্রশাসনিক শাখার জন্য কোন নেতৃত্ব নির্বাচন করে তখন সেখানে গুরত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়ায় তার জীবন-যাপনের উপায়-উৎপাদন এবং ধর্ম-দর্শন বা বিশ্বাসবোধের জায়গাটি। আর জীবন-জীবীকার ব্যবস্থার পাশাপাশি গণমানুষের বিশ্বাস বোধ নির্মাণের জায়গায় কাজ করে এদেশের শত-সহস্র উদ্যোক্তাগোষ্ঠী, ব্যবসায়ী-সমাজ, আলেম-উলামা, পীর-দরবেশ ও মুরুব্বিগণ। এখানে অঙ্গাঙ্গীভবে জড়িত রয়েছে এসব মানুষের ব্যক্তিক, পারিবারিক, সামাজিক ও সামষ্টিক শিক্ষা-প্রচেষ্টার ফল। কাজেই কোন ব্যক্তি যখন তার কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তখন সে এসব বিষয়-সম্পর্কিত অনেক ফ্যাক্টরকে সামনে রাখে। আর এসব ফ্যাক্টর তাৎক্ষণিক তৈরীকৃত নয়, বরং অনেক মানুষের দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফল।
৪. বিবর্তনের নয়া তত্ত্ব যখন উপনিবেশের নয়াকৌশল
বর্তমান বাংলাদেশ সহ অন্যান্য মুসলিম দেশগুলো সাম্রাজ্যবাদী কৌশলের নব নব তত্ত্বজালে বন্দী। পুরান ধারার কলোনী থেকে মুক্ত হলেও নূতন ধারার এ কলোনী মুসলমানরা চিহ্নিত করতে ব্যার্থ কিংবা চিহ্নিত করলেও তা থেকে মুক্তির যথার্থ কোন পথ অনুসরণ করতে পারেনি। ফলে এদেশের সাধারণ জনগোষ্ঠী মুসলমান নামধারী ব্যক্তিদের সমাজ, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিলেও ইসলামি ভাবধারার সমাজ-রাষ্ট্র ব্যবস্থা উপহার পায়নি। আর কোন মুসলিম জনগোষ্ঠীর নেতা নির্বাচিত হয়েও নির্বাচিত ব্যক্তির মুসলিম ধর্ম-বিশ্বাস পন্থী কাজ না করার যে ঘটনাটি ঘটে তা কিন্তু সুপার-ন্যাচারাল বা মেটা-ফিজিক্যাল নয়; বরং তার পেছনে রয়েছে অসংখ্য মানুষের নানান প্রচেষ্টার নানান কর্ম। এর পেছনে রয়েছে প্রচলিত বিশ্বব্যবস্থার (World Order) পরিচালকদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ। এসব বিনিয়োগ কার্যকর রয়েছে বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমা, নাটক, মিডিয়া, বিজ্ঞাপন, শিক্ষাব্যবস্থা, পত্র-পত্রিকা, ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি, সিভিল ও মিলিটারি প্রশাসন, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতি, অর্থনীতি, বই-পুস্তক প্রকাশনা শিল্প ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে।
হিসাব কশলে দেখা যায়, প্রতিদিন বাংলাদেশে ১০লক্ষ পত্রিকার ২০লক্ষ পৃষ্ঠা, শত শত ম্যাগাজিনের হাজার হাজার পৃষ্ঠা, প্রায় ১৫০টি ইলেক্ট্রোনিক মিডিয়ার হাজার হাজার কর্মঘন্টা, শত শত বিশ্ববিদ্যালয় প্রফেসরের শত শত কর্মঘন্টা, হাজার হাজার ডিস্কের লক্ষ লক্ষ অশালীন, অশোভন, তাওহীদ পরিপন্থী গান- কথা ও বাক্যমালা ইসলাম-বিরোধী তত্ব, দর্শন ও তথাকথিত বিজ্ঞানাশ্রিত জ্ঞান প্রচার করে চলছে। ইসলাম-পন্থীদের নিকট এসবের মোকাবিলায় পরিমাণে কম হলেও সঠিক তত্ব, দর্শন ও জ্ঞান রয়েছে কিন্তু প্রচার প্রসার ও মার্কেটিং টুলস এর অভাবে এসব জনসাধারণের নিকট একবারেই পৌঁছাচ্ছেনা। ফলে প্রচলিত সমাজব্যবস্থা থেকে আহরিত জ্ঞান-বিশ্বাসে দেখা দিচ্ছে দূর্বলতা, ফাটল। দেখা যাচ্ছে কর্ম-বিশ্বাসে বৈপরীত্য, দ্বন্দ। আর এভাবেই সমাজে ধর্মের বিশ্বাস ও তা অনুসরণের জায়গা হয়ে পড়ছে সংকুচিত। তা বৃত্ত বন্দী হচ্ছে রাষ্ট্র হতে সমাজে, সমাজ হতে গোত্রে, গোত্র হতে পরিবারে, পরিবার থেকে ব্যক্তিতে, ব্যক্তির আমল থেকে বিশ্বাসে, বিশ্বাস হতে তত্ত্বে, তত্ত্ব হতে পুরান সামাজিক কালচার বা কুসংস্কারে যা বর্তমানের অনুপযোগী এবং যা না মানলেও চলে এমন সব অভিধায়।
৫. রাজনীতি- যখন বিবর্তন প্রক্রিয়ার এজেন্টঃ
বাংলাদেশের মত রাষ্ট্রে ইসলাম ইন্সপায়ার্ড বা গাইডেড আদর্শিক ধারার কোন রাজনৈতিক দল যদি কাজ করতে চায় তাহলে তাকে অন্যান্য দল যেমন বিএনপি, আওয়ামি লীগ, জাতীয় পার্টি হতে অনেক বেশি ফ্রন্টে লড়তে হবে। কারণ অনাদর্শিক এসব রাজনৈতিক দলগুলো শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্য লড়ে, এদের দলগত কোন আদর্শিক অবস্থান নেই। যতটুকু আছে তা ব্যক্তিক এবং এটুকু পালন করা বা না করা নিয়েও তাদের কোন মাথাব্যথাও নেই। ক্ষমতা চর্চার স্বার্থে যা করা দরকার তারা তা করতে প্রস্তুত। এক্ষেত্রে বিশ্ব-সাম্রাজ্যবাদের যে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া তার সাথে সমান্তরালে চলতে তাদের কোন সমস্যা নেই, নেই কোন প্রশ্নও । তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব রাজনৈতিক দল হয় পড়ে এসব সাম্রাজ্যবাদী চিন্তক, পরিকল্পক ও বাস্তবায়কদের স্থানীয় প্রতিনিধি বা এজেন্ট।
এ প্রেক্ষাপটে যদি কোন ব্যক্তি বা দল ইসলাম-ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক বা সামাজিক ফ্রন্টে এসে হাজির হয় তাহলে তার সাথে তথাকথিত এসব স্থানীয় রাজনৈতিক দলের একটি মৌলিক পার্থক্য তৈরী হয়। কারণ এসব স্থানীয় রাজনৈতিক দল চমক লাগানো চটকদার কথা ও কৌশলের আড়ালে-আবডালে রাজনৈতিক বিজয় ছিনিয়ে আনতে চায়। আর সে ক্ষেত্রে তারা তুলনামূলকভাবে আপাত জনদরদী কথা বলে এবং এর আলোকে ইস্তেহার প্রস্তুত করে সেটা অর্জন করে। আর পাশাপাশি চলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সমর্থন জোগাড়ের পালা। চলে ছাড় দেয়ার প্রতিযোগীতা। সেটা করতে গিয়ে দেশীয় স্বার্থের বাইরে গিয়ে যে কোন ছাড় দিতে তারা দাসখত স্বাক্ষর করে। দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়া তখন তাদের জন্য আবশ্যিক হয়ে পড়ে।
আর জনগণও তাদের সাপোর্ট দেয়, কারণ পুঁজিবাদের লালসায় বিভোর জনসাধারণ তখন জ্ঞানশূন্য, পার্থিব প্রাপ্তির আশা-প্রত্যাশায় তারা পাগলপ্রায়, প্রকৃত লাভালাভ কে ভুলে আপাত লাভের নেশায় তারা উম্মাদ। তারা দেখে ইসলাম ইন্সপায়ার্ড বা গাইডেড কোন রাজনৈতিক দলের চেয়ে অন্য দলগুলোই তাদের জন্য সুবিধাজনক। কারণ সেখানে রয়েছে তাদের লালসা চরিতার্থ করার অনেক উপাদান যে অন্যাথায় হাত ছাড়া হতে পারে, কামনা-বাসনা-লালসাকে করতে হতে পারে শৃংখলিত।
৬. ইসলামী রাজনীতি- জাতীয় নয় আন্তর্জাতিকঃ
ইসলাম ইন্সপায়ার্ড বা গাইডেড কোন রাজনৈতিক দলের জন্য তাই রাজনৈতিক মাঠের লড়াই এর পরিধি, বিস্তৃতি ও পরিসর ব্যাপক। মূলত এই লড়াই তখন আর স্থানিক বা লোকাল থাকেনা। জাতীয়তার সীমানা পেরিয়ে তা স্বতঃই হয়ে পড়ে ট্রান্সন্যাশন্যাল বা ইন্টারন্যাশন্যাল। এর কর্মযজ্ঞ তখন বিস্তৃত হয় গ্রাম হতে রাজধানীর পরিবর্তে গ্রাম হতে রাজধানী টু সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব।
হালের গ্লোবাইলেজশন এই লড়াই এর পরিধিকে বিস্তারের পাশাপাশি এর গভীরতাকেও বাড়িয়ে দিয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের নামে অর্থনৈতিক শোষণের পাশাপাশি আমাদের কালচারাল বা ধর্মীয় সত্ত্বারও বিলোপ সাধন করে চলেছে। ফলে একদিকে ক্ষমতা চর্চার সর্বনিম্ন বিন্দুর একান্ত শিকড়ে গিয়ে আমাদের জনগণের চিন্তার পরিশুদ্ধি করা এবং বিপরীত পক্ষে ক্ষমতাচর্চার সর্বোচ্চ বিন্দুর আন্তর্জাতিক শোষকদের সাথে বুদ্ধিবৃত্তিক কূটকৌশল চালিয়ে নেয়ার যুগপৎ দায়িত্ব এসে পড়ে ইসলাম ইন্সপায়ার্ড বা গাইডেড সেই সকল রাজনৈতিক দলের উপর।
৭. ফল নয় কোন একক অর্জনঃ
জাতীয় পর্যায়ে হলেও তাই যে কোন দেশেই ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর লড়াই এসব কারণে হয়ে পড়ে বহুমাত্রিক, বহুপাক্ষিক, বহুধাভিত্তিক, বহুস্তরিক এবং জটাজালিক। এখানে তখন কাজ করতে হয় নানান পর্যায়ের নানান ধারায় বিভক্ত লোকদের। প্রয়োজন হয় সকল ধারায়, সকল শাখায় আত্মোৎস্বর্গী কর্মী যারা স্ব স্ব কাজ করে যায় স্ব স্ব স্থানে। সংশ্লিষ্ট স্তরের কর্মীরা কাংখিত পর্যায়ে উত্তীর্ণ হলেই কেবলমাত্র তখন সকলের সামষ্টিক প্রচেষ্টায় একটি ফললাভ করা সম্ভব হয়।
এক্ষেত্রে কাজের ধরণ, বৈশিষ্ট্য এবং চরিত্রের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয় সমাজকর্মীদের দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান হবার/থাকার বিষয়টি। কেউ হয় স্বীকৃত, কেউ অস্বীকৃত। কেউ জনসম্মুখে আসে কেউ বা রয়ে যায় জনান্তরালে। তাই বলা যায়, জাতীয় তথা আন্তর্জাতিক কলেবরে লড়াই করে বিজয় তথা ক্ষমতারোহন এবং পরবর্তীতে এর ধারাবাহিকতায় ক্ষমতাবস্থান নয় কোন একক মঞ্চাভিনয় (not a one-man show) । এটি নয় কোন ব্যক্তিক অর্জন বরং তা সামষ্টিক অর্জন (Not an individualistic/personal achievement rather a collective and comprehensive achievement)।
এই বিষয়টি ক্ষমতা চর্চার ক্ষেত্রে স্থান, কাল, পাত্রভেদে সার্বজনীন। ইসলাম ইন্সপায়ার্ড বা গাইডেড সকল রাজনৈতিক দলের জন্য তাই এর উপলব্ধি অতি গুরুত্বপূর্ণ। যত তাড়াতাড়ি এটি উপলব্ধ হবে, তত তাড়াতাড়ি নানামাত্রিক কার্যকারণ কে গুরুত্ব দিয়ে এর পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে যা ত্বরাণ্বতি করবে দলটির কাংখিত ফল লাভের গতিকে।
৮. তুরস্ক এবং আমাদের উপলব্ধিঃ
অতি সম্প্রতি তুরস্কের রাষ্ট্রপতি পদে রিসেপ তায়িপ এরদোগানের রাষ্ট্রপতি পদে পদারোহন কে আমাদের চারপাশে, অনেক ক্ষেত্রে, মূল্যায়ন করা হচ্ছে এরদোগানের একক ক্যারিশমা হিসাবে। সমাজবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান বা রাষ্ট্রবজ্ঞানের কোন সচেতন পাঠকের নিকট এটি একটি চরম হেঁয়ালিপনা যা মিসলিড করতে পারে লোকাল কোন সংগঠন, তাদের অধস্তন নেতা-কর্মী এবং অনুসারীদের। তাই সঠিক বিশ্লেষণ এবং কনক্লুশন যুগপৎ গুরুত্বপূর্ণ। সমাজ বিপ্লবাকাংখী কোন দলের নেতৃবৃন্দ বা কর্মীদের জন্য, তাই বলা যায়, এটি একটি আবশ্যিক পাঠ যার সঠিক বোধই কেবলমাত্র সে দলকে কাংখিত লক্ষ্যপানে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে কাংখিত গতিতে ।
বিষয়: রাজনীতি
১৩৭০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর বিশ্লেষন, অনেক ভাল লাগল। আপনাকে স্বাগতম ও অভিনন্দন একটি ধারাবাহিক পোষ্ট রচনায় হাত দিয়েছেন। আশা করি অনেক কিছু শিখতে পারব, জানতে পারব। অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন