বই পাঠ- “Building Social Business”

লিখেছেন লিখেছেন রামির ১৩ এপ্রিল, ২০১৪, ০১:১৮:৫৬ দুপুর

......................................................

Dr Md Yunus এর Building Social Business বইটি পড়্লাম। বেশ সাজানো গুছানো। নতুন চিন্তা সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের কারো লিখা এমন নতুন চিন্তাশীল বই পড়তে পড়তে মনে কেমন যেন শিহরণ অনুভব করছিলাম। ভাবছিলাম ড. মুহাম্মদ ইউনুস কে মুস্লিমের কাতারে ফেলা যায় কিনা (!)। মুস্লিম কীর্তির যে অতীত নিয়ে আমরা গরব করি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম ইউনুস কে নিয়ে এমনটা করবে কিনা (?)। নাকি তারা হালের নব্য চেতনাধারীদের মতই শুধু বাংগালী কিংবা বাংলাদেশী বলেই একে চালিয়ে দেবে।



বইটি পড়ার সময় মনে হলো- এতদিন গ্রামীন ব্যাংক এর কাজ সম্পর্কে যে ধারণা চারপাশের সমাজ থেকে পেয়েছিলাম কিংবা যে সুদখোর মহাজন হিসাবে তাঁর সুখ্যাতি (!) শুনছিলাম, তিনি, কমপক্ষে তার নিজস্ব বণনামতে (Building Social Business), এসবের অনেক উধেব। যে জোবরা গ্রামে তিনি তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন শুরু করেছিলেন এবং এসব কাজের পেছনে তার যে চিন্তা তিনি দেখিয়েছেন তা অসাধারণ। মানুষ তথা মানব সমাজের জন্য তা অপরিহায। গ্রামীণ সমাজের গরীব-দুখী মানুষের জন্য ড. মোহাম্মদ ইউনুসের এসব কাজ ছিল নিঃসন্দেহে নেয়ামাত স্বরূপ।

ইউনুসের সে সময়ের দুটি ঘটনা অমানবিক ও পুঁজিবাদী এই সমাজে দারূণ ইন্সপায়ারিং। একটি হলো- যখন কনভেনশানাল ব্যাংক গ্রামীন গরীব-দুঃখী মানুষদের কে কোল্যাটেরাল/ গ্যারান্টর ছাড়া কোন লোন দিত না তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হিসাবে এ সকল অসহায় মানুষদের জন্য নিজে গ্যারান্টর থেকে তাদের লোনের ব্যবস্থা করতেন। এটি ছিল একটি অসাধ্য সাধন। কই, কতো প্রফেসরই তো দেখলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাদের কে তো এসব নিয়ে ভাবতে দেখলাম না।

নিজেও বিশ্ববিদ্যালোয়ে কাটিয়ে দিলাম প্রায় ৭টি বছর। সেখানেও ছিল জোবরা গ্রমের মতই কত অসহায় মানুশ। এক দিনও তো তাদের সমস্যা নিয়ে মাথায় কোন চিন্তা খেলা করেনি। দাওয়াতি কাজের জন্য অনেক গ্রামে ঘুর ঘুর করলেও তাদের ডে টু ডে সমস্যা নিয়ে কিছু করা দরকার – এসব তো মাথায় আসেনি কখনো।

আরেক টি বিষয় হলো-১৯৭৪ সালের সালে বাংলাদেশে যে চরম খাদ্যাভাব/দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল- তাতে জোবরা গ্রামসহ সসকল গ্রামেই ছিল চরম কষ্ট। চারপাশে ছিল বুভুক্ষ মানুষের হাহাকার। ইউনুস সে সময় ছুটে যান জোবরা গ্রামে। গ্রামে গিয়ে তিনি সে সকল মানুষদের ছোট ছোট ব্যবসার জন্য যে টাকার প্রয়োজন তা মেটানোর চিন্তা করেন। তিনি সে সময় জোবরা গ্রামের মোট ৪২ জন মানূষের জন্য মোট ৮৫৬ টাকা ধারের ব্যবস্থা করে তাদেরকে স্থানীয় মহাজনদের হাত থেকে রক্ষার ব্যবস্থা করেন। এই সাহায্যটুকুই সহায়-সম্বলহীন মানুষদের জন্য যে কত বড় অবলম্বন তা একটি নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে অনুভব করেছি।

আমাদের গ্রামে এক লোক ছিলেন ভারত ফেরত। তার নিকট সংসার চালানোর কোন অর্থ সে সময় ছিল না। আবার ব্যবসার মত কোন মূলধনও না। সময়টি –নব্বই দশকের শেষ দিক। তাকে দেখতাম কখনো আব্বার নিকট থেকে, কখন বড় ভাইয়ার নিকট থেকে ২০০/= টাকা ধার করে সে টাকা কাচা মরিচ কিনে বিক্রি করে বিকেল বেলায় আবার টাকা ফেরত দিতেন এবং লাভের টাকায় তার সংসারের চাল-ডাল কিনতেন। আব্বা কিংবা ভাইদের কাছে টাকা পেলে তার মুখে যে হাসির রেখা ফূটতে দেখতাম তা একটি মানুষের জীবনে স্বস্তি লাভের জন্য যথেষ্ঠ হতে পারে।


ড. ইউনুস প্রচলিত পুঁজিবাদী অথনীতির একটি ব্যথতার কথা তুলে ধরেছেন। এবং পুঁজিবাদী অথনীতি ব্যবস্থার একটি বিকল্প না হলেও তার পাশাপাশি যে আরেকটি সমান্তরাল অর্থনৈতিক সিস্টেমের প্রয়োজন তা চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। আর সে ব্যবস্থাটি হচ্ছে তার ভাষায় “Social Business” যার ধারণা অনেকটাই ইস্লামের কল্যাণমূলক অর্থনীতির যে কনন্সেপ্ট তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইসলামের যাকাত ব্যবস্থার যে গোল বা অব্জেক্টিভ তা অনেকটা সোশাল বিজিনেশের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব বলে মনে হয়। পার্থক্য এতটুকু যে- ইস্লামের যাকাত ব্যবস্থার মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ কিভাবে 'সেলফ সাস্টেইনিং মডেল' করা সম্ভব তা নিয়ে এখনো বিশ্বব্যাপি ইস্লামিস্টদের মাঝে কোন সার্বজনীন কোন ফরমূলা দাঁড় করানো সম্ভব হয় নি, যেমনটি ড. মোহাম্মদ ইউনুস করেছেন।

আধুনিক অর্থনীতির আরেকটি লুপ হোল তিনি উল্লেখ করেছেন। আধুনিক অর্থনীতিতে মানুষ কে মনে করা হয়- মুনাফাখোরী জীব (Profit seeking being)। সে শুধু পরিচালিত হয় তার Profit ইন্সটিংক্ট দ্বারা। এ বিষয়ে ড. ইউনুস দ্বিমত পোষণ করে দেখিয়েছেন যে, মানুষ শুধু একটি মুনাফাখোরী জীবই নয় বরং সে একটি পরোপকারী জীবও বটে। প্রফিট বা ব্যক্তিলাভের বাইরেও মানুষ অনেক কিছু করে যা তার সেলফ্লেস ইন্সটিংক্ট কেই সবার সামনে নিয়ে আসে। এ বিষয় টি মানুশ সম্পর্কে কোরানের যে দৃষ্টিভঙ্গি তার সাথে প্রাসঙ্গিক।

বর্তমানে মুসলিম সমাজের যে দূর্গতি এবং তা থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য উন্নয়ন অর্থনীতি, শিক্ষার হার বাড়ানোর পাশাপাশি নারী শিক্ষা, নারী সচেতনতা ইত্যাকার কাজের যে শ্লোগান শুনি তাতে গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণদান কর্মসূচীর জন্য নারীদের বাছাই করা এবং নারীদের শেখানো ১৬টি মূল মন্ত্রকে নারীকে সচেতন করার মাধ্যমে গোটা সমাজকে এগিয়ে নেয়ার একটি গুরুত্বপূণ স্টেপ বলেই মনে হয়।

সবশেষে, ড. মোহাম্মদ ইউনুসের “Social Bussiness” কনসেপ্টকে ইল্যাবোরেট করে কিভাবে বাংগাদেশের গ্রামীণ দারিদ্র দূর করার পাশাপাশি সামাজিক-অর্থনৈতিক (Socio-Economic) অবস্থার পজিটিভ পরিবর্তন করা যায় সে বিষয়টি আমাদের বের করে একে কাজে লাগানো দরকার। আশা করি এ ক্ষেত্রে দেশের তরুণ অর্থনীতিবিদরা এগিয়ে এসে হাল ধরবেন।

বিষয়: বিবিধ

১৩১৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

207037
১৩ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:৩১
আবদুল্লাহ বাংলাদেশী লিখেছেন : অনেক ভালো লাগলো, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আসলে বাংলাদেশে গুণী লোকের কদর নেই ভাই। বাংলাদেশে তারই কদর যিনি ঝগড়া করতে পটু।
১৪ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১১:৫৮
156531
রামির লিখেছেন : ধন্যবাদ। এক্কেরে ঠিক বলেছেন ভাই।
207393
১৪ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১২:৫৫
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : বাংলাদেশে গুনী লোকদের কদর নেই, মেধার মূল্যায়ন করা হয়না। কানাডার ইউনিভারসিটিতে ডক্টর ইউনুসের মাইক্রোক্রেডিট থিউরি এখন পড়ানো হয়। এখানে হোমলেসদের জন্য সামাজিক ব্যাবসাও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। অথচ আমাদের দেশে সবাই শুধু সমালোচনায় ব্যাস্ত। মেধাবীদের কাজ করার সুযোগ,পরিবেশ নেই বলে এভাবেই দেশ থেকে মেধা পাচার হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। ধন্যবাদ আপনাকে বিষয়টি তুলে ধরার জন্য Good Luck Rose
১৪ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১১:৫৯
156534
রামির লিখেছেন : জাস্ট বই পাঠটি তুলে ধরার জন্য বেশ সমালোচনার স্বীকার হয়েছি। মন্তব্যের জন্য মোবারকবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File