ইসলামপন্থী তরুণ বুদ্ধিজীবীদের গবেষণার কিছু ক্ষেত্র
লিখেছেন লিখেছেন রামির ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০২:২৮:০৯ রাত
আমরা অনেক সময় ইসলামি আন্দোলনের বা রাজনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করি, সমালোচনা করি। নো ডাউট, আলোচনা, সমালোচনাই কোন বিষয় সম্পর্কে ভালাভাবে জানার বা তার দূর্বলতা বুঝার ভাল মাধ্যম। তাই তা অব্যাহত রাখতে হবে। কিন্তু আলোচনা, সমালোচনা শুধুমাত্র মৌখিকভাবে বা হালকাভাবে করলেই কিন্তু সমাধান আসবেনা। তাই এ বিষয়গুলো নিয়ে গভীর অধ্যায়ন ও গবেষণা দরকার।দরকার এ বিষয়গুলোর সব দিক বিবেচনায় এনে একটি রিসার্চ পেপার আকারে প্রকাশ করা। এগুলোকে পাবলিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক রিভিউ ও ক্রিটিসিজম এর জন্য ক্রস টক, সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের ব্যবস্থা করা। তারপর সুপারিশের আলোকে এগুলোকে সংশোধন করে বই/পুস্তিকা আকারে প্রকাশের ব্যবস্থা করা।ধীরে ধীরে এগুলো তখন ইসলামি আন্দোলনের জন্য আলোকবর্তিকা হিসাবে ভূমিকা রাখবে। সবার অলক্ষ্যে এগুলো ইসলামি আন্দোলনের বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি রচনা করবে ইনশাআল্লাহ।
ইসলামি আন্দোলনের করণীয় কাজগুলো নিয়ে আলোচনা করলেই ‘করণীয় নির্ধারণ’ এর পূর্বেই যে বিষয়টি সামনে আসে তা হলো- আমাদের সমস্যা গুলো কী তা খুঁজে বের করা দরকার। যে সকল সমস্যা আমাদের রয়েছে সেগুলো বের করতে পারলেই সমাধান বের হয়ে আসবে এবং কেবল মাত্র তখনই সম্ভব হবে আমাদের ভবিষ্যত কর্মপন্থা নির্ধারণ করা। ইসলামি আন্দোলনের জন্য যে বিষয়গুলো বর্তমান ও নিকট ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ এবং যে গুলোর কম্প্রিহেন্সিভ ডিশকাশন অত্যাবশ্যকীয় এমন কিছু বিষয় তরুণ ইসলামপন্থী বুদ্ধিজীবী ও সমাজকর্মীদের সৌজন্যে উপস্থাপন করা হলোঃ
০১. ইসলাম, ইসলামি আন্দোলন, ইসলামি সমাজ ও ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংজ্ঞায়ন। সুখি, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যবস্থা বনাম ইসলামি সমাজ ও ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থার একটি তুলনামূলক আলোচনা।
০২. নানা ধর্মীয় পরিচয়ের দেশে ইসলামি রাষ্ট্রের প্রাসঙ্গিকতা কতটুকু? ইসলামি রাষ্ট্র বনাম তারিক রামাদানের সিভিল স্টেট- একটি তুলনামূলক আলোচনা।
০৩.ইসলামপন্থি আন্দোলন হিসেবে জামায়াত ইসলামের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত। ইসলামি সমাজ ও ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থার আন্দোলনে জামায়াতের প্রাসঙ্গিকতা কতটুকু?
০৪.ইসলামি সমাজ ও ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থার আন্দোলনে ছাত্র শিবির ও ছাত্রী সংস্থার অবদান কতটুকু?
০৫.দাওয়াতি কাজ কি? ব্যক্তি গঠনের ক্ষেত্রে কত বয়স পর্যন্ত টার্গেট গ্রুপ রাখা বিজ্ঞান সম্মত? সমাজ কাঠামো পরিগঠনের ক্ষেত্রে দাওয়াতি কাজের গুরুত্ব কতটুকু?
০৬. মানুষ কেন, কিভাবে তার পৈতৃক ধর্ম ইসলাম হতে দূরে সরে যাচ্ছে? এ ক্ষেত্রে ইসলাম হতে দূরে সরে যাবার জন্য দাওয়াতি কাজ কারা করছে? কেন করছে ? এবং কিভাবে করছে ? তাদের অনুসৃত পথ-পদ্ধতি ও মাধ্যম গুলো বিস্তারিত। তাদের তুলনায় জামাত-শিবির-ছাত্রীসংস্থা, ফুলকুঁড়ির কাজগুলো কতটুকু কার্যকর?
০৭. বাংলাদেশের মুসলিম সমাজে ইসলামের জন্য দাওয়াতী কাজ করছে কারা কারা? তাদের নামের তালিকা। সমাজের কত পার্সেন্ট মানুষ জীবনের সকল কাজে ইসলামের নীতি অনুসরণ করতে চাই? এদের কত ভাগ কোন দাওয়াতি সংগঠনের মাধ্যমে এই অনুপ্রেরণা পেয়েছে ?
০৮. বাংলাদেশে মোট ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যার কত অংশ ইসলাম পন্থী দাওয়াতি সংগঠনের সাথে জড়িত? এ ক্ষেত্রে জামাত-শিবির-ছাত্রীসংস্থা, ফুলকুঁড়ির বাৎসরিক মোট কতজন লোক তৈরী হচ্ছে? সারা দেশে শিবিরের সদস্য সংখ্যা কত? শিবিরের সদস্যদের কত জন কোন সেক্টরে যাচ্ছে?
০৯.শিবির কিংবা তাবলিগ না করলে ইসলাম পন্থী হয়না, কিন্তু ছাত্রলীগ কিংবা ছাত্রদল না করেও অসংখ্য অইসলামি কালচারে অভ্যস্ত লোক তৈরী হচ্ছে কিভাবে?
১০. অরাজনৈতিক অইসলামিক দাওয়াতি সংগঠন কি? বাংলাদেশে এই রুপে কারা কাজ করছে ? রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে কাজ করার সুবিধাগুলো কি কি ?
১২. বাংলাদেশে অরাজনৈতিক ইসলামিক দাওয়াতি সংগঠন নেই কেন? এর ফলে সমাজে সমাজে যে নেগেটিভ ইম্প্যাক্ট পড়ছে তা কি কি ? বাংলাদেশে অরাজনৈতিক ইসলামিক দাওয়াতি সংগঠন চালু করার ক্ষেত্রে বাধাগুলো কি কি ? কিভাবে এই বাধা দূর করা যায় ?
১৩. বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি ইসলামের পক্ষে এবং বিপক্ষে কতটুকু ভূমিকা পালন করছে? ইস্লামের পক্ষে তাদের এই ভূমিকা কিভাবে বাড়ানো যেতে পারে ?
১৪. মুসলিম প্রধান দল হওয়া সত্বেও আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি ইসলামের জন্য জোরালো ভূমিকা রাখছেনা কেনো? কোন শক্তি তাদের এই ভূমিকার জন্য দায়ী ? কিভাবে সেই শক্তিকে দুর্বল করা যায়?
১৫. যেই শক্তি আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি কে ইসলামের জন্য পজিটিভ ভূমিকা রাখার সূযোগ দিচ্ছেনা, জামাতের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা কি ? জামাত-শিবির কি নিয়ে তাদের চিন্তা- কলা কৌশল কি?
১৬. অদৃশ্য সেই শক্তি মোকাবিলার জন্য ইসলাম পন্থীদের কি কলা -কৌশল নেয়া দরকার। সেই কাজের জন্য কোন মানের লোক দরকার হবে? সে মানের লোক তৈরীর জন্য যে পদক্ষেপ দরকার তা নেয়া হচ্ছে কিনা ? যতটুকু নেয়া হচ্ছে তা যথেষ্ঠ কিনা ?
১৭. দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল গুলোকে কিভাবে মালয়েশিয়ার মত প্রো-ইস্লামিক করা যায়? ইসলাম ইস্যুতে তাদের কে কিভাবে জামাতের সাথে একই লাইনে আনা যায়?
১৮. রাষ্ট্র পরিচালনায় কাদের ভূমিকা মুখ্য ? এমপি, মন্ত্রী, সচিব, মিলিটারি নাকি অন্য কোন প্রেসার গ্রুপের? যদি সেই প্রেসার গ্রুপের হয়ে থাকে, তাহলে কারা সেই প্রেসার গ্রুপ? কি তাদের পরিচয় ? কোথায় তাদের শিকড়? কিভাবে তারা কাজ করে? তারা দেশী নাকি বিদেশী? বিদেশী হলে, এই দেশে কারা তাদের দোসর?
১৯. যে কোন ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে কার ভুমিকা বেশি? রাষ্ট্র নাকি ধর্ম প্রচারকদের?
২০. গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোন দলের সব সময় ক্ষমতায় থাকার সূযোগ থাকেনা। আবার ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে ধর্ম প্রচার করা সম্ভব ও হয়না। সে ক্ষেত্রে অন্য কোন সামাজিক শক্তির প্রয়োজন কিনা ? কেমন হতে পারে সে সামাজিক শক্তি ?
২১. তুরস্কের মত সেকিঊলার দেশে ইসলামের এত বিরোধীতা সত্ত্বেও কিভাবে এরদোগান কে ভোট দেয়ার মত মানুষ তৈরী হলো? বাংলাদেশে এটা সম্ভব কিনা ? ক্ষমতায় না গিয়েই যদি লোক তৈরী করা যায়, তাহলে বাংলাদেশে এমন সিস্টেম গড়ে না ঊঠার কারণ কি কি ? কিভাবে সেই কারণগূলো দূর করা যায়?
২২. মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে সেকিঊলার সরকার ক্ষমতায় থাকার পরো কিভাবে ইসলাম পন্থী লোক তৈরী হচ্ছে? এ ক্ষেত্রে তাদের ব্যর্থতার কারণগুলো কি কি ? ইস্লাম পন্থী সরকার ক্ষতায় থাকলেও একই ভাবে ব্যর্থ হবে কিনা ? ব্যর্থ হতে না চাইলে করনীয় কি কি ?
২৩. তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ক্ষেত্রে বলা হয় যে, দেশ পরিচালিত হয়না দেশের লোক দ্বারা, বরং দেশ পরিচালিত হয় বিদেশী লোক দ্বারা। এই হাইপোথেসিস টি ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। ফাইনাল কনক্লুশন হাইপোথেসিস কে সমর্থন করতে পারে বা এর বিপরীতও হতে পারে।
২৪. একটি শিশুর জন্ম হতে শুরু করে ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত বাড়ে উঠার ক্ষেত্রে তার উপর কাদের অবদান থাকে এবং এই অবদান কার কতটুকু? একটি তুলনামূলক চার্টে এটি দেখানো যেতে পারে। এটি যদি বের করা যায়, তাহলে আমরা বের করতে পারবো, কোন শিশুর জন্মের পর হতে তাকে কী ধরণের ট্রীটমেন্ট দিতে হবে এবং কোন বয়সে কোন ধরণের দর্শন কী পদ্ধতিতে দেয়া দরকার ? এর উপর ভিত্তি করেই গবেষণা চলতে পারে এবং ইসলাম পন্থী সমাজ বিপ্লবের জন্য কাজের ব্যাপ্তি, পরিধি ও ধরণ নির্ণয় করা যেতে পারে।
২৫. মুসলিম সংখ্যালঘিষ্ঠ দেশে দাওয়াতি ছাত্র/ছাত্রী সংগঠন বা বৃহত্তর সংগঠন কিভাবে কাজ করে। এসবের বিস্তারিত নিয়ে লিখা প্রস্তত করা যেতে পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তা কতটুকু কার্যকর, সে বিষয়টিও বিশ্লেষণপূর্বক উপস্থাপিত হতে পারে।
২৬. ইসলামের আলোকে সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা কেমন হতে পারে? প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য দেশের আলোকে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা আসতে পারে।
২৭. নারী কেন্দ্রিক সংগঠন পরিচালনার বিষয়ে উদ্ভুত সমস্যা ও তার সমাধানের পথ নির্দেশিকা ।
২৮. মুসলমানদের জীবনে রাজনীতির গুরুত্ব ও প্রভাব কতটুকু? সাধারণ মানুষ যাদের একটি বড় অংশ গ্রামে বাস করে তারা রাজনীতির কোন কিছু নিয়ে কনাসার্নড নয় কিন্তু ধর্ম তাদের জীবনের একটি অত্যাবশ্যকীয় অংশ। সে ক্ষেত্রে তারা রাজনীতির বাইরে এসে ধর্ম চর্চা করতে চায়। এই বিষয়টিকে কিভাবে একোমোডেট করা যেতে পারে?
২৯. অতিরাজনীতিকীকরণের সুফলগুলো কী কী? এর সুফলই বা কী? যে পদ্ধতিতে বর্তমানে তা করা হচ্ছে এর বাইরে আরো কার্যকর কোন উপায় বের করা যায় কিনা? তার পজিটিভ ও নেগেটিভ ইম্প্যাক্টগুলো কো হতে পারে?
৩০. ছাত্রশিবির কিংবা ছাত্রীসংস্থার বাইরে বিদ্যমান ছাত্রলীগ, ছাত্রদল কিংবা অন্যান্য ছাত্র সংগঠন গুলোকে কিভাবে ইসলামের পক্ষে ভূমিকা পালন কারী হিসাবে গড়ে তোলা যায় তা ভেবে দেখা দরকার। কারণ এরা তো সবাই মুসলমান। তারা ইসলাম জনাতে চায়, মানতে চায়। সে ক্ষত্রে তাদের সমস্যা ও সম্ভাবনার দিক গুলো গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে। এ্যান্টি ইসলামিক শক্তি ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাদের কে ইসলামের বিপক্ষে ব্যবহার করতে পারলে আমরা কেন তাদের কে ইসলামের পক্ষে ব্যবহার করতে পারছিনা? এ কাজে আমাদের দূর্বলতাগুলো কী কী? এগুলো কিভাবে দূর করা যেতে পারে?
৩১. ইন্ডিয়া কিংবা আমেরিকা ৩০ বছর বয়সোর্ধ অফিসারদের উপর কাজ করে যদি অফিসারদের মাধ্যমে নিজ নিজ দেশবিরোধী ভুমিকা পয়ালন করাতে পারে, ইন্ডিয়া ও আমেরিকার কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে পারে তাহলে আমরা আমাদের মুসলিম দেশের মুসলিম অফিসারদের সাথে কাজ করে কেন তাদের দ্বারা দেশের পক্ষে ভূমিকা পালন করাতে সক্ষম হচ্ছিনা? এটাও কিন্তু একটি যুদ্ধ বা লড়াইয়ের ক্ষেত্র। এই লড়াইয়ের ক্ষেত্রেও আমাদের ভূমিকা পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভূমিকা পলন করার জন্য আমাদের করণীয় নির্ধারণ করতে হবে।এ ক্ষত্রটিকে সম্ভবত ‘ডিপ্লোমেসি’ বলে প্রাথমিকভাবে ডিফাইন্ড করা যাতে পারে। যদিও এর কর্মক্ষেত্র ব্যাপক।
৩২. আমাদের দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে বিদ্যামান যুদ্ধংদেহী অবস্থানের পরিবর্তন কিভাবে করা যেতে পারে? বিশেষ করে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ্বিএনপি, আওয়ামি লীগ তো বটেই এমন কি বিভিন্ন বামদলের সাথে সহযোগিতা ও সহমর্মিতার উপায় অনুসন্ধান করতে হবে। পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্প্রীতির ক্ষেত্র তৈরী করতে হবে।
আরো অনেক গুরত্বপূর্ণ বিষয় র্য়েছে যে গুলো আমাদের এ্যাড্রেস করতে হবে। ইনশাল্লাহ আমাদের সকলের অংশগ্রহণে এগুলো ঊঠে আসবে এবং আলোচিত হবে এবং সাথে সাথে সমাধানের পথ ও বের হবে।
…………
বিষয়: বিবিধ
১৮১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন