“বাসর রাতে বউকে লিখা চিঠি এবং সে চিঠির আলোকে অতিক্রান্ত দুইটি বছর”
লিখেছেন লিখেছেন রামির ০২ জুলাই, ২০১৩, ০৪:০৪:৫৫ বিকাল
২০১১ সালে বিয়ের রাতে বউকে লিখা আমার চিঠি; বিয়ের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে শেয়ার করলাম।
“ আসসালামু আলাইকুম।........ওয়াআলাইকুমুস সালাম ....।
*** *** ***
আজ আমাদের জীবনের চলার নানান অনুষঙ্গে যুক্ত হলো আরেকটি অধ্যায়। নতুন এই অধ্যায়ের রয়েছে কিছু নতুন বৈশিষ্ট্য, নতুন ধর্ম। নতুন অধ্যায়কে ভালভাবে ম্যানেজ করতে চাই তার সম্যক পরিচিত, সঠিক ব্যবস্থাপনা ।
আমি মনে করি বিয়ে হচ্ছে একটি এগ্রিমেন্ট । দ্বিপাক্ষিক চুক্তি। জীবনের বাকী সময়টুকু সঠিক ও সহজভাবে পরিচালনা করার জন্য আমাদের এক সাথে হওয়া। এখানে উভয়ের কিছু লার্নিং দরকার । আমি যা জানি তা তোমাকে বলব। আর তুমি যা ভাল জান তা আমাকে বলবে । পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে আমরা অপেক্ষাকৃত ভালভাবে সমাজ–ব্যবস্থাপনা ম্যানেজ করতে পারব।
তবে হাঁ, আমি মানে শুধু ‘আমি’ না। আমার রয়েছে মা, ভাই-বোন, ভাবী, ভাতিজী –ভাগ্নী ও অন্যান্য পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজন। তাই সব বিষয়ে আমি তোমার কথা শুনব, তোমার সাথে পরামর্শ করব, তোমাকে খুশি করব- বিষয়টি এমন নয়। এমন অনেক বিষয় থাকবে যা তোমার সাথে পরামর্শ না করে বরং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শ করে সম্পন্ন করব। আর এটি ঠিক যেমন আমার ক্ষেত্রে- তেমনি তোমার ক্ষেত্রেও । তোমারও রয়েছে পিতা-মাতা, ভাই–বোন, আত্মায়ী স্বজন। তাই তোমার সব বিষয় আমাকে জানানোর প্রয়োজন নেই। কারন এমন অনেক বিষয় রয়েছে- যেগুলো তোমার জানার অধিকার রয়েছে ; আমার নয়। তাই সেগুলো আমাকে বলার প্রয়োজন নেই। এটা তোমার ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। তুমি তাদের দেয়া আমানত রক্ষা করবে । আর আমিও সেসব জানতে চেয়ে ছোট হতে চাইনা । তবে আমরা পরস্পর সম্পর্কিত বিষয়গুলো অবশ্যই শেয়ার করব এবং পরামর্শ ব্যতিরেকে বাইরে প্রকাশ করবোনা।
নারী- পুরুষের জন্মগত ব্রাহ্মন্য-শুদ্র, সুপিরিয়র-ইনফিরিয়র, উপর- নীচ কিংবা অন্য লৈঙ্গিক বৈষম্যে আমি বিশ্বাস করিনা। নারী-পুরুষ উভয়ই স্রষ্টার সৃষ্টি। উভয়ের সৃষ্টিতে রয়েছে কিছু মিল, কিছু অমিল। সৃষ্টিগত দক্ষতা, যোগ্যতা ও সক্ষমতায় রয়েছে কিছু ভিন্নতা। উভয়ের সৃষ্টির উৎস ও জীবনের শেষ বিন্দু একই। পৃথিবীর সর্বজনীন সকল আইন-কানুন উভয়ের জন্য সমান। তাই কিছু ক্ষেত্রে তোমার অর্জিত দক্ষতা বেশি, কিছু ক্ষেত্রে আমার অর্জিত দক্ষতা বেশি। যার যোগ্যতা ও সক্ষমতা যেখানে বেশি সে সেখানে সম্মানিত ও নেতৃত্বদানকারী । আমরা চেষ্টা করব পরস্পরকে সম্মান করার। আমি চেষ্টা করব পরকালের পরীক্ষায় ভালভাবে উত্তীর্ণ হবার, তুমি চেষ্টা করবে তোমার পরীক্ষায় উত্তীর্ন হবার। তোমার-আমার ভালবাসার সেতুবন্ধন ‘আল-কুরআন’। কুরআনের সাথে আমাদের সম্পর্ক যত গভীর হবে আমাদের আন্ত:সম্পর্ক ততই মধুর হবে। আমরা, তাই, প্রতিযোগীতা করব কুরআনের সাথে আমাদের সম্পর্ক দৃঢ় করার।
আমরা প্রতিযোগীতা করব উদারতার, পরস্পরকে ছাড় দেয়ার, পারস্পরিক সম্মানের, ভালবাসার, জ্ঞান-অর্জনের, মানব-সেবার, দাওয়াতী কাজ করার।
এই সংসার আমার-তোমার। এখানে অবদান থাকবে উভয়ের। যে কোন কর্মেই হোকনা কোন আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আমাদের সবটুকু শক্তি বিলিয়ে দেবার । অর্থ-বিত্ত, সময়-সম্পদ সব বিষয়েই আমরা সমান অংশীদার
তুমি হচ্ছো আমার ঘরে “আল্লাহর একজন পক্ষ হতে প্রেরিত একজন মেহমান” । তোমাকে এই সম্বোধন করলাম এই জন্য যে, অন্য কোন শব্দ বা বাক্য দিয়ে আমি তোমার অধিকার, সম্মান ও ব্যক্তিত্বকে আমার নিকট উপযুক্তভাবে উপস্থাপন করতে পারিনি। আমার লক্ষ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে আমার মেহমান হিসাবে তোমার সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা । তুমি কী করবা- সেটা তোমার ব্যাপার। আমি শুধু আমাকে নিয়েই ভাবি। আমি চাই- স্রষ্টার সৃষ্টির সাথে আমি সর্বোচ্চ ভাল ব্যবহার করতে । আমি শুধু আমার রবের নিকট পৌছাতেঁ চায়- নিজেকে নিষ্কলুষ রেখে । আমি আমার সকল ভাল কাজের বদলা চাই আমার রবের নিকট ।
যখন তোমার বাবার কিংবা অন্য আত্মীয় স্বজনের বাড়ী যেতে মন চাইবে তুমি তা আমাদের আলোচনায় আনতে পার। মৌলিক কোন কাজের ক্ষতি না হলে তুমি যেতে পার । তবে বিয়ের পর যেহেতু তোমার এবং আমার আত্মীয় –স্বজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে- তাই আমরা চেষ্টা করব ভারসাম্য রক্ষার।
যেহেতু আমরা উভয়েই সাংগঠনিক (ছাত্রজীবনে), তাই সংগঠন করার বিষয়ে আমার পক্ষ থেকে মৌলিক কোন বাধা থাকবেনা । তুমি যেভাবে চাইবে-সেভাবেই সংগঠন করতে পারবে। দান খয়রাত, দাওয়াত তাবলীগ ও সমাজ সেবার কাজে তোমার স্বাধীনতা থাকবে । ইসলামের মৌলিক বিধি বিধান অমান্য না করলে সুন্নাত -নফল-মুস্তাহাব ইত্যাকার বিষয়ে আমার কোন বাধা থাকবেনা । যেহেতু তোমার এবং আমার এক সঙ্গে বসবাস হবে খুব অল্প সময় (মাত্র ৩০/৪০ বছর) তাই আমি চেষ্টা করব আমার জীবন দিয়ে সর্বোচ্চ নেকী অর্জনের । আর তোমার নেকী অর্জনের পথে আমি তোমাকে কোন বাধা দিবনা।
আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করিনা - স্বামী স্ত্রীর পরকালে একসাথে বসবাসের বিষয়টি ( কারণ কুরআন-হাদীসে এ বিষয়ে কনক্রিট কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। যদি পাওয়া যায় তবে কোন সমস্যা নেই মানতে)। তবে আমি দৃঢ় বিশ্বাস করি, ঈমানদার ব্যক্তির কাছে স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করার চেষ্টা ভিন্ন অন্য কোন চেষ্টাই পরকালে গুরুত্ব পাবেনা । আর পরকালে খোদার সন্তুষ্টি লাভের একমাত্র জায়গা এই দুনিয়া । তাই সর্বোচ্চ চেষ্টা কর নেকী অর্জনের । সকল যোগ্যতা, দক্ষতা ও সক্ষমতা দিয়ে মানবসেবার কাজ করার।
তোমার দায়িত্ব শুধু স্বামী আর বাচ্চা-কাচ্চার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নই। পরিবারের বাইরে তোমার দায়িত্ব সমাজ দেশ, জাতি এবং সবার উর্ধ্বে বিশ্ব মানবতার; ক্রমান্বয়ে আমার ন্যায় তোমাকেও চেষ্টা করতে হবে তোমার কর্ম পরিধি বিস্তৃত করার। বিশ্বাস কর, পৃথিবীর কোন একজন মানুষ অভুক্ত থাকতে অন্য কোন মানুষ (নারী-পুরুষ নির্বিশেষে) বসে থাকতে পারেনা । আর তাই আমার-তোমার দায়িত্ব হচ্ছে মানব সেবার ক্ষেত্র ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত করা ।
নারীর শিক্ষাকে আমি পুরুষের শিক্ষার মতই অপরিহার্য জ্ঞান করি। আর এটাও বিশ্বাস করি যে, যোগ্যতা, দক্ষতা ও সক্ষমতা বলে শিক্ষার্থী মেয়েরা যেমন কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছেলেদের উপরে লৈঙ্গিক পরিচয়ের উর্ধ্বে উঠে সুপারিওরিটি অর্জন করতে পারে- তেমনি পরকালেও দক্ষতা, যোগ্যতা ও সক্ষমতা বলে অনেক পুরুষের আগে নারী জান্নাত লাভ করতে পারবে স্বামী বা বংশীয় কোন পুরুষের সহায়তা ছাড়াই । আর শিক্ষার্জনের মাধ্যমে যেহেতু নারী-পুরুষ ক্রমান্বয়ে তার যোগ্যতা বৃদ্ধি করতে পারে- তাই তুমি উচ্চশিক্ষা ( এম ফিল / পিএইচডি) অর্জনের চেষ্টা করতে পার ।
শিক্ষা সম্পর্কে প্রচলিত ব্যাখ্যায় ও আমি বিশ্বাসী করিনা । আমার বিশ্বাস সকল জ্ঞানের আধার স্রষ্টা তাই সকল সর্বজনীন জ্ঞান তার নিকট হতেই সৃষ্ট । প্রাচ্য কিংবা পাশ্চাত্য- সকল মানবতাবাদী, মানব কল্যাণকামী জ্ঞানই স্রষ্টার সৃষ্টি । কাজেই সব জ্ঞানই ইসলামী। তবে হাঁ, পাশ্চাত্য সমাজের জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নতির পাশাপাশি- কিছুকিছু মানব- বিধ্বংসীকর চর্চা বা নীতি সমাজকে ধ্বংস করে ফেলছে । সেসব অপচর্চা বা কুনীতি গুলোকে আমাদের নৈতিকতা, মানবতা, সততা ও মানব কল্যানাংখ্যা দিয়ে দূর করে হবে। জ্ঞান বিজ্ঞানের ক্রমাগত উন্নয়ন ছাড়া “আল্লার ভাষা-কুরআনকে” সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়। কুরআন যেহেতু সরাসরি আল্লার ভাষা- তাই প্রচলিত কোন টার্মিনোলজিই কুরআনের জন্য ১০০% সঠিক ও মানানসই তা বলা যাবেনা। বরং মৌলিক পরিভাষার বাইরে অন্যান্য পরিভাষা গুলো সদা পরিবর্তনশীল। তবে এসব পরিভাষার এমন সব অর্থ গ্রহণ করতে হবে যাতে তা মানব সমাজ ও মানবতার জন্য কল্যাণজনক হয়।
সবশেষে ‘কর্মসংস্থান’ এর বিষয়টি । এটি সবচেয়ে জটিল ও বিতর্কিত বর্তমানে আমাদের সমাজে। তবে কর্মসংস্থানের পরিবর্তে ‘চাকুরি’ শব্দটি ব্যবহার করায় এ নিয়ে বিতর্ক আরো বেড়েছে। বর্তমান সমাজে পুরুষের বহুগামিতা, লাম্পট্যবৃত্তি, কামুকতা, চৌর্যবৃত্তি, দূর্নীতিপরায়নতা আর শঠতার ফলে মানব সমাজ আজ বিপর্যয়ের সম্মুখ্খীন। আর, আজ এর সকল দায়ভার গিয়ে পড়ছে নারী সমাজের উপর। পুরুষের অন্যায়বৃত্তি আর লোভের কারণে সমাজ নারীর জন্য হয়ে পড়ছে ক্রমাগত বিপদজনক। আর বিপরীতক্রমে পুরুষের বদলে নারী পাচ্ছে তার শাস্তি। পুরুষের অন্যায়ের কারণে পুরুষের চলাচল সংকীর্ণ না করে উল্টা নারীর পড়ালেখা, চলাচল, গমনাগমন আর কাজকর্মের বাড়ছে খবরদারি। লজ্জার বিষয়, মুসলিম সমাজের অন্য কোন বিষয়ে ইসলামি কিংবা মুসলিম বিধি-বিধানের কঠোর প্রয়োগ না থাকলেও এক্ষেত্রে ইসলামের ছড়ি ঘোরানো হয় খুব সফলতার (!) সাথে।
কোন সমাজে মুষ্টিমেয় লোকজন চাকুরি করে – কিন্তু সকল জনশক্তি কোন না কোন ভাবে কর্মসংস্থান বা উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত। এমন মুসলিম সমাজ- যেখানে নারী ধর্ষন, নারী হত্যা, ব্যভিচার নেই- সে সমাজে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল জনগণ যদি উৎপাদনমূলক কাজে জড়িত থাকে তবে নি:সন্দেহে সেই সমাজে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে। এই অতিরিক্ত অর্থ শিক্ষা, সমাজ সেবা আর জ্ঞান-গবেষনায় নিয়োজিত হবে।ফলে সেখানে জ্ঞান-বিজ্ঞানে আসবে গতি। সে সমাজে নারী-পুরুষ তাদের অজির্ত অর্থ-বিত্ত, সম্পদ, যোগ্যতা আর মেধার সবটুকু ব্যয় করতে পারবে সমাজের গরীব-দু:খী, অনাথ-এতিম ও অসহায়দের সেবা করতে। গ্রামে গ্রামে তারা গড়ে তুলবে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা তথা শিক্ষা কেন্দ্র যা দূর করবে অন্ধকার ও অজ্ঞতা। গড়ে তুলবে শিশু, প্রসুতি ও বৃদ্ধদের সেবাকেন্দ্র। মানুসের যে কোন সমস্যায় তারা সকলে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
যদি সংশ্লিষ্ট গোত্র, সমাজ, দেশ ও জাতি অভাবমুক্ত, নিরক্ষরতামুক্ত, সুখী ও সমৃদ্ধ হয়, তাহলে তারা দেশ ও জাতির সীমানা পেরিয়ে অন্য দেশ ও জাতির নিকট এই জনসেবা, মানবসেবার ব্রত নিয়ে এগিয়ে যাবে। যেভাবে ইসলামের প্রাথমিক যুগে সাহাবী, তাবেঈন, তাবে তাবেঈনরা ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। হয়েছিলো আপন গোত্র, সমাজ ও জাতীয়তার উর্ধ্বে উঠে আন্তর্জাতিক মানবতাবাদী। বৃটিশ, ডাচ আর পর্তুগীজরা যেভাবে শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য আর লুটপাটের জন্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিলা তেমনি আমাদের ছড়িয়ে পড়তে হবে বিশ্বব্যাপি মানবকল্যাণের জন্য ।আর এখানেই মুসলিম ও ইসলাসের সর্বজনীননতা এ বিশ্বজনীনতা। আর এ বৈশ্বিক দৃষ্টিভংঙ্গি নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে, নিতে হবে সকল সিদ্ধান্ত। এক্ষেত্রে নবোদ্ভূত সকল সমস্যাকে সমাধোনের জন্য প্রাগ্রসর পলিসি ফরমুলেট করতে হবে। আমি তাই বিশ্বাস করি, কর্মসংস্থান ও উৎপাদনমূলক কাজে তোমার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করা উচিত।
কর্মসংস্থান- চাকুরি কিংবা অন্য যে কোন ফর্মেই হোকনা কেন- তা করতে গিয়ে কিছু সমস্যা দেখা দেবে। আর এর সমাধানের জন্য প্রয়োজন ‘ইসলাম চর্চাকারী উচ্চ শিক্ষিত নারী-পুরুষের যৌথ জ্ঞান-গবেষণা’ । ‘পুরানো সমস্যার নতুন সমাধান কিংবা নতুন সমস্যার নতুন সমাধান’ যাই হোকনা কেন সমাধান আমাদের বের করতে হবেই। মনে রাখতে হবে সমস্যার কোন সমাধানই সর্বজনীন নয়। আজকে যা উপযুক্ত তাই কালকে অনুপযুক্ত। আগামীকাল যা উপযুক্ত, তার পরদিনই তা অপর্যাপ্ত । এটাই চিরন্তন, সর্বজনীন, এটাই স্রষ্টার বিধান। তাই সমাজের সমস্যার সমাধানে এমন সব পথ-মত ও কৌশল অবলম্বন করতে হবে যা তুলনামূলকভাবে বেশি কল্যাণকর। স্থিতিশীলতা বা জড়তা নয় বরং যা হবে গতিশীলতার সহায়ক।
তুমি হয়তো বলবে, সমাজে অনেকেই তো চাকুরি বা টাকা অর্জন না করে বেশ ভাল আছে। আচ্ছা এটা কি ভেবে দেখেছ, মুসলিম সমাজে কোন ব্যক্তির একক ভাল থাকা না থাকার বিষয়টি কিন্তু একবারেই নগন্য। এখানে ভাল থাকা বলতে বুঝায় পুরো কমিউনিটির সুস্থতা। তাই ব্যক্তিগত কাজে কোন ব্যক্তির টাকা প্রয়োজন না হলেও তার উৎপাদনমূলক কাজে জড়িত থাকতে হবে। সমাজের উন্নয়নে লেগে থাকতে হবে। সমাজে নানামুখি প্রতিষ্ঠান চালু করতে হবে যা সমাজের জন্য সামগ্রিকভাবে কল্যানকর। এমনসব কাজ ও কলাকৌশল সমাজে গ্রহণ করতে হবে যাতে সমাজে নারীর অজির্ত শিক্ষার ক্রমোন্নয়ন ঘটে। অন্য নারী শিক্ষিত নারীর কর্ম, সামাজিক মূল্যায়ন ও সোশাল স্ট্যাটাস দেখে শিক্ষা গ্রহণ করতে উৎসাহিত হয়। অন্যথায় সমাজে শিক্ষার গুরুত্ব কমে যাবে, নারী উচ্চ শিক্ষার প্রতি অনুৎসাহিত হবে। ফলত শিক্ষার হার ও মাত্রা ব্যাপকভাবে কমে যাবে। মুসলিম নারী সমাজ হারিয়ে যাবে অন্ধকারের অতলে।
তুমি ভাববে সন্তান লালন-পালনের কথা। কিন্তু তুমিই বল, একজন মায়ের পক্ষে ‘সন্তান মানুষ করা’ বলতে যা বুঝায় তার কতটুকু করা সম্ভব। এক্ষেত্রে মায়েদের ভূমিকা নেই এমনটি নয় কিন্তু সে ভূমিকাই মুখ্য নয়। বর্তমান সমাজে একজন শিশু জন্মের থেকে শুরু করে ২০ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহনের বিভিন্ন স্তরে অবস্থান করে । এ সময় তাকে সমাজ কাঠামোর অনেক দরজায় কড়া নাড়তে হয় যেমন- স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন টেক্সট, স্কুল শিক্ষক, প্রাইভেট প্রাইভেট, কোচিং, বন্ধু-বান্ধব, চারপাশের পরিবেশ, বিনোদন-জগৎ, দৈনিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন, টিভি, নাটক, ইন্টারনেট, কম্পিউটার । এ সকল কাজের মধ্য দিয়ে শিশু যাবার সময় একজন মা কতটুকু ভূমিকা পালন করতে পারে। বর্তমানে দিন দিন ছেলেদের চরিত্র গঠনে মায়েদের এই ভুমিকা গৌণ হয়ে আসছে- আর সমাজ কাঠামোর অন্য ফ্যাক্টরগুলোর ভুমিকা মুখ্য হয়ে আসছে। এটা ঠিক যে, বাচ্চা জন্মদান, লালন-পালন কিংবা পরিবার গঠনে মায়েদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ- সেজন্য আমাদের মায়েদের এই ভুমিকা কিভাবে আরো সুন্দর ও কার্যকর করার পাশাপাশি সমাজ-পরিবার ও রাষ্ট্র কাঠামোয় তাদের অবদান বাড়ানো যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে। বিশ্ব সভ্যতায় সন্তান জন্মদান এর পাশাপাশি মানব সভ্যতায় কিভাবে মুসলমানদের (নারী-পুরুষ উভয়ের) অংশগ্রহণ বাড়ানো যায় এবং নারীদের সময়-শক্তি ও সূযোগের সদ্ব্যবহারের গ্যারান্টি দেওয়া যায় তা বের করতে হবে। এমন উপায় অবলম্বন করতে হবে যা প্রগতির সহায়ক, অন্তরায় নয় । তাছাড়াও, সমাজ গঠনের জন্য যে ‘মা’ এর ভুমিকা মুখ্য সেই দক্ষতাসম্পন্ন মা গড়ে তুলতেও চাই নানামুখী শিক্ষা । অতীত প্রিয়তা নয় হতে হবে দিগন্ত সন্ধানি; পশ্চাৎপদতা নয় হতে হবে সামনের দিকে অগ্রসরমান। সমস্যার ভয়ে ভীত হয়ে নয় বরঙ সকল সমস্যার সমাধান করেই পথ চলতে হবে। আর এ সকল কাজে আমাদের অবলম্বন হবে কুরআন প্রদত্ত নৈতিকতা ও সাহসীকতা।”
এই ছিল আমার পক্ষ থেকে নতুন বউ এর কাছে লিখিত আমার বাসর রাতের চিঠি। চিঠির প্রদত্ত অধিকার পরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারি নাই; কিন্তু চেষ্টাও ছাড়ি নাই। গত দুই বছর সামষ্টিক সাংসারিক জীবন পরিচালনা করতে গিয়ে ছোট-খাট কোন সমস্যা হয়নি এমন নয়। কিন্তু যখনই মনে পড়েছে তার স্বাধীনতার কথা, ইসলাম প্রদত্ত অধিকারের কথা, যখনই ভেবেছি ‘তাকে আমার ঘরে পাঠানো স্রষ্টার মেহমান’ হিসাবে তখনই সকল সমস্যার সমাধান খুব সহজেই সম্ভব হয়েছে । তার যে কোন ভুলের বিপরীতে সঠিক, ক্ষমাশীল, পরিশীলীত ব্যবহার করা আমার জন্য খুব সহজ হয়েছে। এর পর যখনই কোন ভুল আমার হয়েছে- আমি তখনই ক্ষমা চেয়েছি। কারণ আমি তো শংকিত আমার ভুল-ত্রুটি নিয়ে।
ইতোমধ্যে চাকুরির সুবাদে নারীবাদ ওর উপর দুটো আলোচনায় অংশগ্রহণ করা হয় এবং এক ভাইয়ের পরামর্শে আমিনা ওয়াদুদের “কুরআন এন্ড উইমেন” বইটি পড়ার সুযোগ হয় । আমিনা ওয়াদুদের “কুরআন এন্ড উইমেন” বইটি পড়ে আমার দৃষ্টিভঙ্গি আগের চাইতে আরো পাণ্টে যায় । মনে হয়েছে যেন নারীর অধিকার, তার দায়িত্ব ও নারীর প্রতি স্বামীর দায়-দায়িত্ব পুনর্ধাবন করলাম। । আগে স্ত্রীর প্রতি সংসারের যে দায়িত্ব অর্পন করেছিলাম তা কিছুটা সংকুচিত করে নিজের উপর নিয়ে এসেছি। আগে রান্না ঘরে কাজ করতে সংকুচিতবোধ করতাম, এখন সেটা দূর হয়েছে। এখন রান্না ঘরে কাজ করতে না পারলেও তার জন্য স্ত্রীর নিকট কৃতজ্ঞতা আদায় করি। এখন যে কোন কাজে তাকে সহযোগিতা করাকে যেন ইবাদত মনে হয়। মনে হয় যতটুকু তাকে সাহায্য করছি, ততটুকুই যেন পরকালের পাথেয় হিসাবে সঞ্চিত হচ্ছে।
আলহামদুলিল্লাহ। অতিক্রান্ত ২টি বছরে নারী সম্পর্কিত উপরোক্ত দৃষ্টিভঙ্গির কারণে আমার সংসারে আমি যার নাই খুশি, সুখী। জীবনে হয়তো অপ্রাপ্তি আছে; কিন্তু কোন দু:খ নেই। আমি আজকের এই লেখায় বউ এর কোন মতামত কিংবা মন্তব্য তুলে আনিনি কারণ আমি আমার দায়িত্ব আর ভুলত্রুটি নিয়েই শংকিত। শুধু আমার অনুভুতিটুকুই শেয়ার করলাম। তার অনুভুতি শেয়ার করার ক্ষেত্রে তার স্বাধীনতায় আমি বিশ্বাসী।
বিষয়: বিবিধ
৪৪০৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন