''এডওয়ার্ড সাঈদ ও শাহ আব্দুল হান্নানের কলমে বুদ্ধিজীবী ও বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় (পর্ব-২)''

লিখেছেন লিখেছেন রামির ২৬ জুন, ২০১৩, ০৪:৩৯:২৪ বিকাল

(উৎস্বর্গ করা হলো অস্তগামি, উদিত ও উদীয়মান মানবতাবোধে উজ্জীবীত ইসলামের অনুসরণ-প্রয়াসী সমাজ-চিন্তক শাহ আব্দুল হান্নান, শাহ আব্দুল হালিম, ড. মাইমুল আহসান খান (ঢাবি), মো. মোজাম্মেল হক (চবি), এম এন হাসান, মো. ফখরুল ইসলাম (পিইউ), মো. শহিদুল হক, লোকমান বিন ইউসুপ, নাজমুসসাকিব নির্ঝর, টুডে ব্লগের ব্লগার দার্শনিক, রওশন জমির, ইবনে আহমাদ ও অন্যান্য সকল তরুণ সমাজ-চিন্তকদের.....)

তরুণ বুদ্ধিজীবীগোষ্ঠীর লালন ও বিকাশ

-মূল (ইংরেজী) শাহ আব্দুল হান্নান

-অনুবাদ: ব্লগার রামির

“বুদ্ধিজীবী জম্ম দেওয়া যায়না: স্ব প্রচেষ্টায় ব্যক্তিকেই বুদ্ধিজীবী হিসেবে গড়ে উঠতে হয়।” কথাটি চরম সত্য। তথাপি আমার অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে -এ চরম সত্যটির কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে। মেধাবী তরুণ / তরুণীদের সামান্য প্রচেষ্টায় বুদ্ধিজীবী হিসেবে গড়ে তোলা যায়।

১৯৮৯ সালের দিকে আমি অনুভব করলাম, গোটা মুসলিম বিশ্বেই, বিশেষ করে বাংলাদেশে, মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের অভাব প্রকট। তাই ঢাকাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ এবং প্রকৌশল বিদ্যার মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে দুইটি ক্লাস চালু করলাম (তরুণ-তরুণীদের জন্য পৃথক পৃথক ক্লাস) ।

প্রাথমিকভাবে প্রত্যেক ক্লসে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ১০ (দশ) জন ।

আমি তাদের জন্য একটি কারিকুলাম তৈরী করেছিলাম। এতে অন্তর্ভূক্ত ছিল আকীদাহ (মোহাম্মদ-আল-গাজালীর বই এর ভিত্তিতে), উসুল আল-ফিকহ (ভিত্তি ছিল ড. হাসিম কামালী), ফিকহ (ভিত্তি ছিল ফিকহ শাস্ত্রের অন্যান্য বই), মুসলিম ইতিহাস, জেন্ডার ইস্যুজ (ভিত্তি ছিল জামাল আল-বাদাবির লেকচার সমগ্র) ও অন্যান্য বিষয় (রাজনৈতিক, সামাজিক অর্থনৈতিক, আন্তর্জাতিক সর্ম্পক, নৈতিকতা ইত্যাদি- যেগুলোর ভিত্তি ছিল হামুদাহ আব্দুল আতি, জামাল বাদাবি, ড. ইউসুফ আল-কারজাভি, সাঈয়েদ মওদুদী প্রভৃতি লেখকের বই সমূহ)।

আমি সিলেবাসের একটা একটা করে বই পড়ানো শুরু করতাম । আর এতে সময় লাগত বইভেদে ৩ মাস, ৬ মাস কিংবা ৯ মাস। আমি বই-এ আলোচিত বিষয়গুলো বিস্তারিত ব্যাখা করতাম । প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ও আলোচনায় আনতাম। একই বিষয়ে বিভিন্ন লেখকের মতামত তুলে ধরতাম, সেগুলোর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ব্যাখা করতাম। আমি তাদেরকে শিক্ষা দিতাম ড. কারজাভীর বই Islamic Awakening between Rejection & Extremism, Priorities of the Islamic Movement in the Coming Phase, Halal-wal-Haram Fil Islam, The Status of Women, সাইয়েদ মওদুদীর Khalifat-wa-mulukat, Rasail-wa-masail (ছয় খন্ড), হাসিম কামালীর Usul & The Freedom of Expression, ড.ইসমাঈল রাজী আল-ফারুকীর Tauhid (এতে সময় লেগেছিল এক বছর), ড. আব্দুল হামিদ আবু সুলাইমানের The crisis of Muslim Mind, International Relations, ড. তারিক রামাযানের কিছু বই, ড. উমর চাপরার অর্থনীতি সংক্রান্ত বই, এবং সাঈদ আবুল হাসান আল-নাদভীর কিছু বই।

আমি তাদেরকে সমসাময়িক বিভিন্ন তাফসীর পড়তে বলতাম; যেমন- সাইয়েদ কুতুব, আসাদ, মওদুদী। যে অংশটুকু বুঝতে সমস্যা হতো শুধুমাত্র সেই অংশটুকু আমি ব্যাখা করতাম। একইভাবে আমি তাদেরকে ব্যাখ্যাত বুখারি ও মুসলিম শরিফ পড়াতাম। আমি উসুল আল-হাদিসের কিছু বিষয় তাদের নিকট ব্যাখ্যা করতাম এবং সমসাময়িক অন্যান্য বিষয়ে কিছু ধারণা সুস্পষ্ট করতাম।

স্টাডি ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রী সিলেকশনের ক্ষেত্রে মেধাবী ও অনার্স লেভেলের ছাত্র-ছাত্রীদের সিলেক্ট করতাম। প্রতি ক্লাসে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা থাকত অনুর্ধ্ব ১২ (বার) জন এবং অন্যুন ৫ (পাঁচ) জন। এর বেশী বা কম হলে ক্লাসে মনোযোগ দেওয়া কঠিন ।

এ জাতীয় ক্লাস কমপক্ষে ৫ বছর চালু থাকা উচিত । এটা হতে পারে সাপ্তাহিক কিংবা পাক্ষিকভিত্তিতে। সেক্ষেত্রে শিক্ষককে হতে হবে গভীর জ্ঞানের। আলোচক বা শিক্ষককে হতে হবে ক্লাশে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীর বন্ধু। তাকে হতে হবে খুবই আন্তরিক, সহানুভূতিশীল, সদালাপি ও মৌলিক মানবীয় গুনাবলীসম্পন্ন। অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীর যে কোন সমস্যা (এমনকি ব্যক্তিগতও) সমাধানে আলোচকের নিকট ছাত্র-ছাত্রীদের নিষ্কন্টক প্রবেশাধিকার থাকতে হবে। ক্লাসটি হতে পারে সংশ্লিষ্ট আলোচকের বাসায় অথবা তার প্রতিষ্ঠানে। এমন সময় ক্লাসটি হওয়া উচিত, যেন সে সময় আলোচকের অন্য কোন ব্যস্ততা না থাকে এবং তিনি পূর্ণ মনোযোগ সহকারে আলোচনায় অংশগ্রহন করতে পারেন।

আলোচক / শিক্ষককে হতে হবে সর্ব-প্রকার ঝোঁক-মুক্ত। প্রতিটি ক্লাসের ডিউরেশন হওয়া উচিত কমপক্ষে ২ ঘন্টা। সেশনগুলো হওয়া উচিত খোলা-প্রশ্নোত্তর টাইপের। সেখানে আলোচিত হবে পূর্ব-নির্ধারিত নির্দিষ্ট বই, আদর্শিক বিষয়, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিসহ অংশগ্রহণকারীদের উত্থাপিত যে কোন বিষয়। যে কোন মৌলিক বিষয় তাৎক্ষণিকভাবে আলোচনার সুযোগ থাকতে হবে । আলোচকের উচিত সকল প্রশ্নের উত্তরদানের চেষ্ঠা করা। কোন বিষয়ে সময়ের প্রয়োজন হলে তিনি সময় নেবেন এবং পরবর্তী ক্লাসে উত্তরদানের চেষ্টা করবেন । (একজন স্কলারের পক্ষে সাধারণত এ ধরনের ক্লাস জীবনে ২/৩ বার নেয়ার সুযোগ হয়ে থাকে)।

গত ১৭ বছরে আমি প্রায় ১০০ ছাত্র / ছাত্রীকে শিক্ষা দিয়েছি। তাদের প্রতি ১০ (দশ) জনের ০১ (একজন) কমপক্ষে মানসম্পন্ন বুদ্ধিজীবী (সিনিয়র বুদ্ধিজীবী) হিসেবে গড়ে উঠবে । আমার বিশ্বাস, ক্লাসের ছাত্রদের মাঝ হতে কমপক্ষে ২৫ জন বৃদ্ধিজীবী হিসাবে গড়ে উঠবে । তাদের কেউ হবে উঁচু মানের, কেউবা মাঝারি মানের । বাংলাদেশের বাইরে অস্ট্রেলেশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানী, জাপান, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে এদের অনেকেই বর্তমানে লোকাল কমিউনিটির লিডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে । তারা উদার মনের, ভারসান্যপূর্ণ চিন্তার অধিকারী এবং দৃষ্টিভঙ্গীর দিক থেকে খুবই বাস্তববাদী এবং প্রায়োগিক।

যে কোন ইসলাম-পন্থী মুসলিম ব্যক্তিত্ব বৃদ্ধিজীবী লালন ও বিকাশের এই কাজটি শুরু করতে পারেন। এছাড়াও বাস্তবতা ও প্রয়োজনের আলোকে প্রক্রিয়াটির পদ্ধতিগত এবং মানগত উৎকর্ষ সাধনও করতে পারেন ।

(১ম পর্ব: ১ম পর্ব)

বিষয়: বিবিধ

১৭২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File